সাত মাসে ৯ জনের মৃত্যু
গত সাত মাসে চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন স্থানে ট্রেনে কাটা পড়ে ৯ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। অরক্ষিত রেলগেট, ত্রুটিযুক্ত ব্যারিয়ার, গেটম্যানের স্বল্পতাসহ নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলছে দামুড়হুদা, দর্শনাসহ এ জেলার রেলক্রসিংগুলো। সূত্রে জানা যায় চুয়াডাঙ্গায় ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে সাত মাসে ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছেন ৯ জন। জেলায় রেলপথ রয়েছে প্রায় ৪০ কিলোমিটার।
১৮৬২ সালে কলকাতা থেকে চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে রেলপথে প্রথম ট্রেন চলাচল শুরু হয়। সেই থেকে ট্রেন চলাচল রয়েছে। বর্তমানে রেলপথ দিয়ে আন্তঃনগর, মেইল ও পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। ট্রেনে যাওয়া আসা ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় মানুষ অনেকটা নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে ট্রেনে করে যাতায়াতে। অবৈধ রেলগেটগুলোতে দায়সারাভাবে একটি সাইনবোর্ড টানিয়ে রেখেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। গেট ও গেটম্যান না থাকা রেললাইনের ওপর দিয়ে চলাচল করা পথচারি, ছোট-বড় যানবাহন, বিভিন্ন ধরনের প্রাণীর অবাদ বিচরণ রয়েছে। এ সব এলাকার বৈধ ও অবৈধ গেট এলাকায় চলাচলকারীদের নিরাপত্তার জন্য কাজ করেন পথচারি ও দোকানিরা। ট্রেন আসার সময় হলেই তারা নিরাপত্তার স্বার্থে গেটের কাছে এসে সাবধানে যাতায়াতের জন্য নির্দেশনা দেন।
দামুড়হুদা দর্শনা বিজিবি ক্যাম্পের সামনের রেলগেটটি ভয়ংকর ঝুকিপূর্ণ, এখান থেকে কলকাতা-দর্শনা মালবাহী ওয়াগন দর্শনা আন্তর্জাতিক স্টেশনে আসে এ সময় চরম ঝুঁকিতে থাকে সাধারণ পথচারি মানুষ। দুর্ঘটনা এড়াতে ওখানে সাধারণ মানুষ ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর শাহরিয়ার তুহিন নামের একটি ছেলেকে প্রায় দেখা যায় গেটম্যানের দায়িত্ব পালন করতে। এদিকে চুয়াডাঙ্গা-জীবননগরের মহা সড়কের মাঝামাঝি দর্শনা রেলগেটটি অনেকটাই অরক্ষিত এখানে কোন গেটম্যান থাকে না, এই রেলগেটে কখনও দুর্ঘটনা ঘটলে বড় ধরনের প্রাণনাশের আশঙ্কা রয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক একটি দুর্ঘটনা, তরতাজা যুবক ছিলেন চুয়াডাঙ্গার আমিরপুর গ্রামের জীবন আলী (২৫)। ট্রেনে কাটা পড়ে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। এতটা নির্মমভাবে তার মৃত্যু হয় যা কল্পনাতীত। চুয়াডাঙ্গা থেকে একটি ট্রেন পোড়াদহ অভিমুখে যখন ছেড়ে যাচ্ছিলো তখন তিনি অরক্ষিত রেলগেটের নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু একই সময়ে আরও একটি আন্তঃনগর রূপসা এক্সপ্রেস ট্রেন আলমডাঙ্গা থেকে চুয়াডাঙ্গা অভিমুখে আসছিল। এটি খেয়াল না করেই রেললাইনের ওপর উঠে পড়েন জীবন। তারপর ঘটে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। ট্রেনের ইঞ্জিনে জড়িয়ে জীবন আলীর মরদেহ প্রায় ১০০ মিটার দূরে চলে যায়। আর তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি ঘটনাস্থল থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে টেংরামারি গ্রামে টেনে নিয়ে যায়। মরহেদ ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
এ ঘটনার পর স্থানীয় মানুষ আন্তঃনগর কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস ট্রেনটি আটকে অবরোধ করেন। এখানে স্থায়ীভাবে রেলগেট ও গেটম্যানের দাবি তোলেন। গত সাত মাসে প্রায়ই ঘটছে হতাহতের এত ঘটনাগুলো।
স্থানীয়রা বারবার এই সব বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তাগাদা দিলেও সমস্যার সমাধান হয়নি। অনেকেই বলছেন অসচেতনতার কারণে ঘটছে হতাহতের মতো ঘটনা। নিরাপত্তার স্বার্থে রেললাইনের ওপর দিয়ে দেখেশুনে চলাচল করতে হবে। এ ছাড়া ওই গ্রামের মানুষ রেললাইনের ওপর দিয়ে চলাচলের জন্য রাস্তা তৈরি করেছে। সেখান দিয়ে শিক্ষার্থী, পথচারীসহ ছোট-বড় যানবহনগুলো নিয়মিত চলাচল করে।
রেলওয়ের তথ্য মতে, চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৩০টি বৈধ গেট রয়েছে। এরমধ্যে ১৫টি গেটে গেটম্যান নেই যার কারণে বৈধ গেটগুলোও মৃত্যুকূপে পরিণত হচ্ছে। ৫টি অবৈধ গেট রয়েছে। রেলপথের ওপর দিয়ে চলাচলের জন্য মানব সৃষ্ট আরও ২৫টি রাস্তা রয়েছে। খুলনা থেকে ছেড়ে আসা আন্তঃনগর, মেইল ও পণ্যবাহী ট্রেন দিন-রাতে চলাচল করছে চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে। গেটের কাছে থাকা দোকানি ও সাধারণ মানুষ গেটম্যানের দায়িত্ব পালন করেন ট্রেন আসা-যাওয়ার সময়।
চুয়াডাঙ্গা জিআরপি ফাঁড়ির ইনচার্জ জগদীশ চন্দ্র বসু বলেন, গত সাত মাসে চুয়াডাঙ্গায় ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছে ৯ জন। পুলিশ প্রতিটি ঘটনার আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছে। চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা বলেন, চুয়াডাঙ্গা অংশে বৈধ রেলগেট রয়েছে ৩০টি যার মধ্য ১৫টি গেটে কোন গেটম্যান নেই। বৈধ গেটগুলো যেখানে ঝুঁকিপূর্ণ সেখানে অবৈধ স্থানে কীভাবে নিরাপত্তা দেব আমরা। মানুষ সহজে পায়ে হেঁটে চলাচলের জন্য রেললাইনের ওপর দিয়ে রাস্তা তৈরি করেছে। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। বৈধ গেটে লোকবল সংকটের বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
গেটম্যান পেলেই সমাধান সম্ভব।
সাত মাসে ৯ জনের মৃত্যু
শনিবার, ০২ আগস্ট ২০২৫
গত সাত মাসে চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন স্থানে ট্রেনে কাটা পড়ে ৯ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। অরক্ষিত রেলগেট, ত্রুটিযুক্ত ব্যারিয়ার, গেটম্যানের স্বল্পতাসহ নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলছে দামুড়হুদা, দর্শনাসহ এ জেলার রেলক্রসিংগুলো। সূত্রে জানা যায় চুয়াডাঙ্গায় ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে সাত মাসে ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছেন ৯ জন। জেলায় রেলপথ রয়েছে প্রায় ৪০ কিলোমিটার।
১৮৬২ সালে কলকাতা থেকে চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে রেলপথে প্রথম ট্রেন চলাচল শুরু হয়। সেই থেকে ট্রেন চলাচল রয়েছে। বর্তমানে রেলপথ দিয়ে আন্তঃনগর, মেইল ও পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। ট্রেনে যাওয়া আসা ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় মানুষ অনেকটা নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে ট্রেনে করে যাতায়াতে। অবৈধ রেলগেটগুলোতে দায়সারাভাবে একটি সাইনবোর্ড টানিয়ে রেখেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। গেট ও গেটম্যান না থাকা রেললাইনের ওপর দিয়ে চলাচল করা পথচারি, ছোট-বড় যানবাহন, বিভিন্ন ধরনের প্রাণীর অবাদ বিচরণ রয়েছে। এ সব এলাকার বৈধ ও অবৈধ গেট এলাকায় চলাচলকারীদের নিরাপত্তার জন্য কাজ করেন পথচারি ও দোকানিরা। ট্রেন আসার সময় হলেই তারা নিরাপত্তার স্বার্থে গেটের কাছে এসে সাবধানে যাতায়াতের জন্য নির্দেশনা দেন।
দামুড়হুদা দর্শনা বিজিবি ক্যাম্পের সামনের রেলগেটটি ভয়ংকর ঝুকিপূর্ণ, এখান থেকে কলকাতা-দর্শনা মালবাহী ওয়াগন দর্শনা আন্তর্জাতিক স্টেশনে আসে এ সময় চরম ঝুঁকিতে থাকে সাধারণ পথচারি মানুষ। দুর্ঘটনা এড়াতে ওখানে সাধারণ মানুষ ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর শাহরিয়ার তুহিন নামের একটি ছেলেকে প্রায় দেখা যায় গেটম্যানের দায়িত্ব পালন করতে। এদিকে চুয়াডাঙ্গা-জীবননগরের মহা সড়কের মাঝামাঝি দর্শনা রেলগেটটি অনেকটাই অরক্ষিত এখানে কোন গেটম্যান থাকে না, এই রেলগেটে কখনও দুর্ঘটনা ঘটলে বড় ধরনের প্রাণনাশের আশঙ্কা রয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক একটি দুর্ঘটনা, তরতাজা যুবক ছিলেন চুয়াডাঙ্গার আমিরপুর গ্রামের জীবন আলী (২৫)। ট্রেনে কাটা পড়ে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। এতটা নির্মমভাবে তার মৃত্যু হয় যা কল্পনাতীত। চুয়াডাঙ্গা থেকে একটি ট্রেন পোড়াদহ অভিমুখে যখন ছেড়ে যাচ্ছিলো তখন তিনি অরক্ষিত রেলগেটের নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু একই সময়ে আরও একটি আন্তঃনগর রূপসা এক্সপ্রেস ট্রেন আলমডাঙ্গা থেকে চুয়াডাঙ্গা অভিমুখে আসছিল। এটি খেয়াল না করেই রেললাইনের ওপর উঠে পড়েন জীবন। তারপর ঘটে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। ট্রেনের ইঞ্জিনে জড়িয়ে জীবন আলীর মরদেহ প্রায় ১০০ মিটার দূরে চলে যায়। আর তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি ঘটনাস্থল থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে টেংরামারি গ্রামে টেনে নিয়ে যায়। মরহেদ ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
এ ঘটনার পর স্থানীয় মানুষ আন্তঃনগর কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস ট্রেনটি আটকে অবরোধ করেন। এখানে স্থায়ীভাবে রেলগেট ও গেটম্যানের দাবি তোলেন। গত সাত মাসে প্রায়ই ঘটছে হতাহতের এত ঘটনাগুলো।
স্থানীয়রা বারবার এই সব বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তাগাদা দিলেও সমস্যার সমাধান হয়নি। অনেকেই বলছেন অসচেতনতার কারণে ঘটছে হতাহতের মতো ঘটনা। নিরাপত্তার স্বার্থে রেললাইনের ওপর দিয়ে দেখেশুনে চলাচল করতে হবে। এ ছাড়া ওই গ্রামের মানুষ রেললাইনের ওপর দিয়ে চলাচলের জন্য রাস্তা তৈরি করেছে। সেখান দিয়ে শিক্ষার্থী, পথচারীসহ ছোট-বড় যানবহনগুলো নিয়মিত চলাচল করে।
রেলওয়ের তথ্য মতে, চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৩০টি বৈধ গেট রয়েছে। এরমধ্যে ১৫টি গেটে গেটম্যান নেই যার কারণে বৈধ গেটগুলোও মৃত্যুকূপে পরিণত হচ্ছে। ৫টি অবৈধ গেট রয়েছে। রেলপথের ওপর দিয়ে চলাচলের জন্য মানব সৃষ্ট আরও ২৫টি রাস্তা রয়েছে। খুলনা থেকে ছেড়ে আসা আন্তঃনগর, মেইল ও পণ্যবাহী ট্রেন দিন-রাতে চলাচল করছে চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে। গেটের কাছে থাকা দোকানি ও সাধারণ মানুষ গেটম্যানের দায়িত্ব পালন করেন ট্রেন আসা-যাওয়ার সময়।
চুয়াডাঙ্গা জিআরপি ফাঁড়ির ইনচার্জ জগদীশ চন্দ্র বসু বলেন, গত সাত মাসে চুয়াডাঙ্গায় ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছে ৯ জন। পুলিশ প্রতিটি ঘটনার আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছে। চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা বলেন, চুয়াডাঙ্গা অংশে বৈধ রেলগেট রয়েছে ৩০টি যার মধ্য ১৫টি গেটে কোন গেটম্যান নেই। বৈধ গেটগুলো যেখানে ঝুঁকিপূর্ণ সেখানে অবৈধ স্থানে কীভাবে নিরাপত্তা দেব আমরা। মানুষ সহজে পায়ে হেঁটে চলাচলের জন্য রেললাইনের ওপর দিয়ে রাস্তা তৈরি করেছে। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। বৈধ গেটে লোকবল সংকটের বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
গেটম্যান পেলেই সমাধান সম্ভব।