ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
সব কিছু চলছে আগের মতই। কমেনি ঘুষের পরিমান। শুধু দায়িত্ব পেয়েছে এক জনের স্থলে অন্যজন। বিগত সরকারের আমলে সব নিয়ন্ত্রণ করতেন নাসির চৌধুরী ওরফে নাসির চেয়ারম্যান। এখন তার স্থলে দায়িত্ব পেয়েছেন অন্যজন। সম্প্রতি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে দলিল প্রতি এক হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সাব-রেজিস্ট্রার রিপন মুন্সীর বিরুদ্ধে। এছাড়াও জীবন সত্ত্বা জমি রেজিস্ট্রি করতে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকাও ঘুষ নেন সাব রেজিস্ট্রার।
সাব রেজিস্ট্রার অফিস সুত্র জানায়, পৌরসভার আওতাধীন জমি আবাসিক হলে শতক প্রতি ২০ হাজার টাকা, বাস্ত এবং স্থাপনা না থাকলে শতক প্রতি ৫ হাজার টাকা এবং ওয়ারেশ সত্ত্বের প্রতি এক শতক জমি রেজিস্ট্রি করতে এক হাজার টাকা বাড়তি গুনতে হয়। এদিকে হিন্দু বিধবা নারী তার স্বামীর জমিও বিক্রি করতে গেলে ১০ হাজার টাকা ও নামের যদি ভুল থাকে তাহলে ৫ হাজার টাকা ঘুষ নেন সাব রেজিস্ট্রার। এছাড়াও পাওয়ার দলিল থেকে কবলা করতে গেলে ৫ থেকে ১০হাজার টাকা ঘুষ নেন সাব রেজিস্ট্রার। এসব বিষয় নিয়ে গত ৩০ জুলাই জমি গ্রহীতাদের ভোগান্তি নিয়ে উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায়ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন আইন শৃংখলা কমিটির সদস্যরা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সম্প্রতি পৌরসভার ১৭নং কালীগঞ্জ মৌজার ধানী শ্রেণির সাড়ে ৩ শতক জমি ক্রয় করেন মো. সোহেল রানা নামের এক ব্যক্তি। এরপর গত ৭ আগস্ট সাব রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে ক্রয়কৃত জমিটি রেজিস্ট্রি করাতে যান। এই জমি রেজিস্ট্রি করাতে সাব রেজিস্ট্রার প্রথমে সরকারি খরচ বাদেই বাড়তি ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। এরপর দেনদরবার করে ২৩ হাজার টাকায় নিষ্পত্তি হয়। নকল নবিস নাজমুন সাহাদৎ শিমুল সাব রেজিস্ট্রারের ঘুষের টাকার ক্যাশিয়ার হিসেবে কাজ করেন বলে অভিযোগ দলিল লেখকদের। এ ছাড়াও গত ৬ আগস্ট পৌরসভার ৪ শতক জমি রেজিস্ট্রি করতে যান আমিরুল ইসলাম। জমির মূল্য ধরা হয়েছে ১২ লাখ টাকা। সেই হিসেবে রেজিস্ট্রি করতে সরকারি খরচ ১ লাখ ৫ হাজার টাকা। কিন্তু তার কাছ থেকে নেওয়া হয় ২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। এদিকে জমির মর্টগেজ বাবদ ১৫ হাজার টাকা নেন নকল নবিস শিমুল। কিন্তু তাকে ৫ হাজার টাকার রশিদ দেওয়া হয়। সকল ঘুষের টাকা নকল নবিস নাজমুন সাহাদৎ শিমুলের মাধ্যমে হাতিয়ে নেন সাব রেজিস্ট্রার।
একাধিক দলিল লেখক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সম্প্রতি উপজেলা পরিষদের মধ্যে থেকে সরিয়ে অফিসটি নিশ্চিন্তপুর এলাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে। জমি রেজিস্ট্রির দিন কোটি কোটি টাকা লেনদেন হয়। এখানকার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন লেখকরা। কারণ তাদের বসবার কোন নির্দিষ্ট জায়গা নেই। এছাড়াও বিগত সরকারের আমলে তখনকার দলিল লেখক নাসির চৌধুরি যেভাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ঠিক একইভাবে নকল নবিস নাজমুন সাহাদৎ শিমুলের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন সাব রেজিস্ট্রার রিপন মুন্সী। এই নকল নবিস নাজমুন সাহাদৎ শিমুল যেন বিগত সরকারের আমলের নাসিরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। কিন্ত তারা লাইসেন্স হারানোর ভয়ে মুখ খুলতে পারেন না।
সাবেক চেয়ারম্যান ইলিয়াস রহমান মিঠু বলেন, সর্বশেষ আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় জমি গ্রহীতাদের ভোগান্তি নিয়ে বক্তব্য দিয়েছি। বিগত সরকারের সময়ে যেভাবে জমি রেজিস্ট্রি করাতে বাড়তি টাকা গুনতে হতো এখনো বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে। কোন পরিবর্তন আসেনি। এই টাকা দলিল লেখদের মাধ্যমে সাব রেজিস্ট্রার হাতিয়ে নিচ্ছেন। সপ্তাহে তিনদিন জমি রেজিস্ট্রির কাজ হয়। এই তিনদিনে প্রায় ৪/৫ লাখ টাকা জমি গ্রহীতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এরসঙ্গে যারা জড়িত তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি এই সাবেক জনপ্রতিনিধির।
মোশররফ হোসেন নামে এক ব্যক্তি বলেন, গত ৬ আগস্ট শহরের আড়পাড়া এলাকার ৪ শতক জমি রেজিস্ট্রি করাতে সাব রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে যান। সেই জমির সরকারি রেজিস্ট্রি খরচ আসে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা। কিন্তু মোট ২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। এই অতিরিক্ত টাকা প্রতি জমি রেজিস্ট্রি করতে দেওয়া লাগে।
ফারুক হোসেন নামে আরেক ব্যক্তি বলেন, তিনি ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার জন্য একটি মর্টগেজ দলিল করতে গেলে তার কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা নেন নকল নবিস শিমুল। কিন্তু তাকে ৫ হাজার টাকার রশিদ দেওয়া হয়। বাকি টাকার কোন হিসাব নেই।
এ ব্যাপারে সাব রেজিস্ট্রার অফিসের নকল নবিস নাজমুন সাহাদৎ শিমুল বলেন, তিনি ‘স্যারকে’ কাগজপত্র দেখিয়ে সহযোগিতা করেন।
এছাড়া কোন টাকা-পয়সা তিনি গ্রহণ করেন না। তিনি কোন ক্যাশিয়ারের ভূমিকাও পালন করেন না।
কালীগঞ্জ উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার মো. রিপন মুন্সীর মুঠোফোনে কল দিলে তিনি প্রথমে কথা বলতে রাজি হননি। তিনি সাংবাদিকের পরিচয় পেলে বলেন, অফিসে আসেন। আর আপনি ঢাকার সাংবাদিক হলে ফোনে কথা বলবো অন্যথায় বলবো না। পরে সব অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, তিনি কোন অতিরিক্ত টাকা নেন না। এ সব টাকা নেওয়ার প্রশ্নই আসে না।
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
শনিবার, ২৩ আগস্ট ২০২৫
সব কিছু চলছে আগের মতই। কমেনি ঘুষের পরিমান। শুধু দায়িত্ব পেয়েছে এক জনের স্থলে অন্যজন। বিগত সরকারের আমলে সব নিয়ন্ত্রণ করতেন নাসির চৌধুরী ওরফে নাসির চেয়ারম্যান। এখন তার স্থলে দায়িত্ব পেয়েছেন অন্যজন। সম্প্রতি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে দলিল প্রতি এক হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সাব-রেজিস্ট্রার রিপন মুন্সীর বিরুদ্ধে। এছাড়াও জীবন সত্ত্বা জমি রেজিস্ট্রি করতে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকাও ঘুষ নেন সাব রেজিস্ট্রার।
সাব রেজিস্ট্রার অফিস সুত্র জানায়, পৌরসভার আওতাধীন জমি আবাসিক হলে শতক প্রতি ২০ হাজার টাকা, বাস্ত এবং স্থাপনা না থাকলে শতক প্রতি ৫ হাজার টাকা এবং ওয়ারেশ সত্ত্বের প্রতি এক শতক জমি রেজিস্ট্রি করতে এক হাজার টাকা বাড়তি গুনতে হয়। এদিকে হিন্দু বিধবা নারী তার স্বামীর জমিও বিক্রি করতে গেলে ১০ হাজার টাকা ও নামের যদি ভুল থাকে তাহলে ৫ হাজার টাকা ঘুষ নেন সাব রেজিস্ট্রার। এছাড়াও পাওয়ার দলিল থেকে কবলা করতে গেলে ৫ থেকে ১০হাজার টাকা ঘুষ নেন সাব রেজিস্ট্রার। এসব বিষয় নিয়ে গত ৩০ জুলাই জমি গ্রহীতাদের ভোগান্তি নিয়ে উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায়ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন আইন শৃংখলা কমিটির সদস্যরা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সম্প্রতি পৌরসভার ১৭নং কালীগঞ্জ মৌজার ধানী শ্রেণির সাড়ে ৩ শতক জমি ক্রয় করেন মো. সোহেল রানা নামের এক ব্যক্তি। এরপর গত ৭ আগস্ট সাব রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে ক্রয়কৃত জমিটি রেজিস্ট্রি করাতে যান। এই জমি রেজিস্ট্রি করাতে সাব রেজিস্ট্রার প্রথমে সরকারি খরচ বাদেই বাড়তি ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। এরপর দেনদরবার করে ২৩ হাজার টাকায় নিষ্পত্তি হয়। নকল নবিস নাজমুন সাহাদৎ শিমুল সাব রেজিস্ট্রারের ঘুষের টাকার ক্যাশিয়ার হিসেবে কাজ করেন বলে অভিযোগ দলিল লেখকদের। এ ছাড়াও গত ৬ আগস্ট পৌরসভার ৪ শতক জমি রেজিস্ট্রি করতে যান আমিরুল ইসলাম। জমির মূল্য ধরা হয়েছে ১২ লাখ টাকা। সেই হিসেবে রেজিস্ট্রি করতে সরকারি খরচ ১ লাখ ৫ হাজার টাকা। কিন্তু তার কাছ থেকে নেওয়া হয় ২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। এদিকে জমির মর্টগেজ বাবদ ১৫ হাজার টাকা নেন নকল নবিস শিমুল। কিন্তু তাকে ৫ হাজার টাকার রশিদ দেওয়া হয়। সকল ঘুষের টাকা নকল নবিস নাজমুন সাহাদৎ শিমুলের মাধ্যমে হাতিয়ে নেন সাব রেজিস্ট্রার।
একাধিক দলিল লেখক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সম্প্রতি উপজেলা পরিষদের মধ্যে থেকে সরিয়ে অফিসটি নিশ্চিন্তপুর এলাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে। জমি রেজিস্ট্রির দিন কোটি কোটি টাকা লেনদেন হয়। এখানকার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন লেখকরা। কারণ তাদের বসবার কোন নির্দিষ্ট জায়গা নেই। এছাড়াও বিগত সরকারের আমলে তখনকার দলিল লেখক নাসির চৌধুরি যেভাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ঠিক একইভাবে নকল নবিস নাজমুন সাহাদৎ শিমুলের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন সাব রেজিস্ট্রার রিপন মুন্সী। এই নকল নবিস নাজমুন সাহাদৎ শিমুল যেন বিগত সরকারের আমলের নাসিরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। কিন্ত তারা লাইসেন্স হারানোর ভয়ে মুখ খুলতে পারেন না।
সাবেক চেয়ারম্যান ইলিয়াস রহমান মিঠু বলেন, সর্বশেষ আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় জমি গ্রহীতাদের ভোগান্তি নিয়ে বক্তব্য দিয়েছি। বিগত সরকারের সময়ে যেভাবে জমি রেজিস্ট্রি করাতে বাড়তি টাকা গুনতে হতো এখনো বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে। কোন পরিবর্তন আসেনি। এই টাকা দলিল লেখদের মাধ্যমে সাব রেজিস্ট্রার হাতিয়ে নিচ্ছেন। সপ্তাহে তিনদিন জমি রেজিস্ট্রির কাজ হয়। এই তিনদিনে প্রায় ৪/৫ লাখ টাকা জমি গ্রহীতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এরসঙ্গে যারা জড়িত তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি এই সাবেক জনপ্রতিনিধির।
মোশররফ হোসেন নামে এক ব্যক্তি বলেন, গত ৬ আগস্ট শহরের আড়পাড়া এলাকার ৪ শতক জমি রেজিস্ট্রি করাতে সাব রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে যান। সেই জমির সরকারি রেজিস্ট্রি খরচ আসে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা। কিন্তু মোট ২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। এই অতিরিক্ত টাকা প্রতি জমি রেজিস্ট্রি করতে দেওয়া লাগে।
ফারুক হোসেন নামে আরেক ব্যক্তি বলেন, তিনি ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার জন্য একটি মর্টগেজ দলিল করতে গেলে তার কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা নেন নকল নবিস শিমুল। কিন্তু তাকে ৫ হাজার টাকার রশিদ দেওয়া হয়। বাকি টাকার কোন হিসাব নেই।
এ ব্যাপারে সাব রেজিস্ট্রার অফিসের নকল নবিস নাজমুন সাহাদৎ শিমুল বলেন, তিনি ‘স্যারকে’ কাগজপত্র দেখিয়ে সহযোগিতা করেন।
এছাড়া কোন টাকা-পয়সা তিনি গ্রহণ করেন না। তিনি কোন ক্যাশিয়ারের ভূমিকাও পালন করেন না।
কালীগঞ্জ উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার মো. রিপন মুন্সীর মুঠোফোনে কল দিলে তিনি প্রথমে কথা বলতে রাজি হননি। তিনি সাংবাদিকের পরিচয় পেলে বলেন, অফিসে আসেন। আর আপনি ঢাকার সাংবাদিক হলে ফোনে কথা বলবো অন্যথায় বলবো না। পরে সব অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, তিনি কোন অতিরিক্ত টাকা নেন না। এ সব টাকা নেওয়ার প্রশ্নই আসে না।