alt

news » bangladesh

বাঘায় একদিকে কমছে পানি অন্যদিকে ভাঙছে নদীর পাড়

জেলা বার্তা পরিবেশক, রাজশাহী : শনিবার, ২৩ আগস্ট ২০২৫

রাজশাহী : পানি কমার সাথে সাথে শুরু হয়েছে পাড় ভাঙন -সংবাদ

রাজশাহীর বাঘায় পদ্মার একদিকে পানি কমছে, অন্যদিকে ভাঙছে পাড়। এতে পদ্মার চরের মানুষ রয়েছে ঝুঁকিতে। বন্যার পানিতে রাস্তা-ঘাট ভেঙে চলাচলে সমস্যায় পড়েছেন চরের মানুষ।

জানা গেছে, পদ্মার পানি বৃদ্ধির কারণে পদ্মার মধ্যে প্রতিটি বাড়ি উঠান দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। এতে সপ্তাহখানে চরের মানুষ চরম দূর্ভোগের মধ্যে দিন পার করতে হয়। ১৫টি চরের মানুষ পানিবন্দি হয়ে যায়। তিন/চারদিন থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। কিন্তু দুর্ভোগ কমেনি।

চকরাজাপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের আতারপাড়া চরের সোলেমান হোসেন বলেন, পানি কমলেও দুর্ভোগ কমেনি। কোন কোন স্থানে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে।

৫ নম্বর ওয়াডে কালিদাসখালী চরের সাবেক মেম্বার শহিদুল ইসলাম বলেন, বন্যা আর ভাঙনে মধ্য দিয়ে চরের মানুষ বসবাস করে। এবারের বন্যায় যে পরিমান ক্ষতি হয়েছে, তবে পানি একদিকে কমছে, অন্যদিকে পদ্মার পাড় ভাঙছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাম্মী আক্তার বলেন, চৌমাদিয়া, আতারপাড়া ও দিয়ারকাদিপুর চরে সরকারিভাবে ২২০ পরিবারকে চাল ও খানপুর গুচ্ছগ্রামের ৭৬ পরিবারকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। বাদপড়াদেও সহায়তা করা হবে।

এবছরে আষাঢ়-শ্রাবণে বৃষ্টির রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। গেল ২৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে এ বছরে। তবে এই স্বস্তির মধ্যে স্বপ্ন নষ্ট হচ্ছে চাষিদের। অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে পানিতে তলিয়ে গেছে রাজশাহী বিভাগের সাড়ে ৭ হাজার হেক্টর ফসলি জমির শাকসবজি ও আমন ধানের চারা। নষ্টও হয়েছে অনেক শাকসবজির গাছ আর আমন ধান। এতে চাষিদের মাথায় হাত পড়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য মতে, বিভাগের ৮ জেলায় প্রায় সাড়ে ৭ হাজার হেক্টর আবাদি জমির শাকসবজি ও আমন ধানের চারা অতিবৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গেছে। জমির পানি নামতে শুরু করায় কিছু কিছু জেলায় আবার বিভিন্ন শাক সবজি ও আমন ধান চারা রোপণ বাড়ছে উৎপাদন ব্যয়।

এদিকে সরবরাহের অজুহাতে বাড়ছে সবজির দাম। মোকাম ও আড়তে প্রতিদিনই বাড়ানো হচ্ছে সবজির দাম। খুচরা বাজারেও এর প্রভাব পড়ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন নিন্মআয়ের ক্রেতারা।

বিক্রেতাদের দাবি, বৃষ্টি ও বন্যায় অনেক সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। তাঁদের ধারণা, বৃষ্টি কমে গেলে ও বন্যার পানি নেমে গেলে বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক হবে এবং দামও কমতে পারে। তবে অন্তত এক মাস দাম এমন উচ্চ অবস্থায় থাকতে পারে।

রাজশাহীতে সপ্তাহ দুয়েকের ব্যবধানে সবজির দাম কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে। নগরীর মাস্টারপাড়া কাঁচাবাজারে ভোরে পাইকারি এবং পরে খুচরা বিক্রি হয়। গত ১৫ দিনের মধ্যে কাঁচা মরিচের দাম কেজিতে ১৫০ থেকে বেড়ে ২৫০ টাকা, পটল ৫০ থেকে বেড়ে ৭০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৫০ থেকে বেড়ে ৭০ টাকা, বেগুন ৭০ থেকে বেড়ে ১০০ টাকা, করলা ৬০ থেকে বেড়ে ৮০ টাকা, দেশি লাউ ৫০ থেকে বেড়ে ৭০ টাকা, কচুর লতি ৬০ থেকে বেড়ে ৭০ টাকা হয়েছে। ফুলকপির দাম আগের মতোই কেজিপ্রতি ১০০ টাকা। কমেছে শুধু পেঁপের দাম; ৫ টাকা কমে এখন ৩০ টাকা কেজি। আলুর দাম স্থিতিশীল আছে, কেজি ২০ টাকা। তবে পেঁয়াজের কেজি ৬০ টাকা থেকে বেড়ে ৮০ টাকা হয়েছে।

মাস্টারপাড়া বাজারে কথা হয় কাঁচামাল ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বেগুন ও কাঁচা মরিচ কিনছিলেন। একটু বেশি করে কিনে নিয়ে তিনি অন্য জায়গায় বিক্রি করেন। তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে আনন্দ নাই, আমাদের মধ্যেও নাই। সবজির দাম বেশি হইলে ক্রেতা কিনতে চায় না। আগে ১৫ টাকা কেজি কিনে ২৫ টাকায় বিক্রি করা যেত। কিন্তু এখন ৭০ টাকায় কিনে ৮০ টাকায় বিক্রি করা যায় না।

মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে রাজশাহীতে। গত কয়েক বছরের মধ্যে জেলায় চলতি মৌসুমে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রাজশাহীতে বৃষ্টি হয়েছে ৪৭ মিলিমিটার। এর আগের দিন বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে ১০ মিলিমিটার। তবে এবার পুরো আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসজুড়ে বৃষ্টি ছিল। এতেই সর্বনাশ হয়েছে চাষিদের।

জেলার পবা, মোহনপুর, তানোর, দুর্গাপুর ও বাগমারাসহ ৯টি উপজেলার ১ হাজার ৬শ’ হেক্টর আবাদি জমি অতিবৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে বেগুন, পটল, করলা, মরিচসহ বিভিন্ন শাকসবজি জমিতে পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও পদ্মার পানি বৃদ্ধির কারণে তলিয়ে গেছে চরের জমি। একই অবস্থা বাঘা উপজেলার চরাঞ্চলে।

মোহনপুর উপজেলার বিষহরা গ্রামের আলমগীর হোসেন জানান, আমার ১০ কাঠা মরিচ, দশ কাঠা পটল, পাঁচ কাঠা বেগুন আবাদ ছিল। টানা বৃষ্টির কারণে সব পানির নিচে তলিয়ে আছে। পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গাছগুলো মরে যাবে। আমি এ ক্ষতি কীভাবে পুষিয়ে উঠব বুঝতে পারছি না।

পবা উপজেলার আলিমগঞ্জ গ্রামের কৃষক মাহবুবুর রহমান জানান, আমার দুই বিঘা জমির ধান তলিয়ে গেছে। পানি কবে নামবে জানি না। পানি নেমে গেলে আবারও ধানের চারা রোপণ করতে হবে। কিন্তু এখন চারা পাব কোথায়।

আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের দেয়া তথ্য মতে, গেল ২ সপ্তাহের বৃষ্টিতে রাজশাহী অঞ্চলের দেড় হাজার হেক্টর জমির নানা শাকসবজি পানিতে তলিয়ে যায়। এতে মারাত্মক ক্ষতি মুখে পড়েছেন কৃষকরা।

রাজশাহী চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক সাইফুল ইসলাম হীরক জানান, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে শাকসবজির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫শ’ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। কোন কোন কৃষক সর্বশান্ত হয়ে গেছেন। যাদের অল্পপূঁজি তারাও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।

রাজশাহী বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক ড. আজিজুর রহমান বলেন, অতিবৃষ্টি ও নদীর পানি বাড়ার কারণে ফসলের ভালো ক্ষতি হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের চরাঞ্চল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সেখানে আউশ আমন ধান লাগানো হয়েছিল যা পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়াও বিভিন্ন জেলায় নিম্নাঞ্চলে পানি উঠে সবজির ক্ষতি হয়েছে। এখন পানি নামতে শুরু করেছে। আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি।

তিনি বলেন, আমরা প্রতিদিন প্রতিবেদন দিচ্ছি। কৃষকদের প্রণোদনার কথাও বলা হয়েছে। আশাকরি কিছুটা হলেও ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের সহায়তা দেওয়া হবে।

ছবি

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মুক্তিযোদ্ধা রুকুনউদ্দৌলাহ্’র দাফন সম্পন্ন

ছবি

এসআই প্রত্যাহার, সেবাপ্রার্থী থেকে টাকা নেয়ার ভিডিও ভাইরাল

ছবি

বর্ষায় মাচা পদ্ধতিতে সবজি চাষে হাসি ফুটেছে চুয়াডাঙ্গার চাষিদের মুখে

ছবি

গ্যাস ও এসি বিস্ফোরণে দুই পরিবারের ১৪ জন দগ্ধ

ছবি

৫ দিন পর লাখ টাকায় ব্যবসায়ীর মুক্তি

ছবি

১২ জেলেকে ধরে নিয়ে গেল ‘আরাকান আর্মি’

ছবি

অ্যাপেন্ডিসাইটিস অপারেশনে ‘পায়ুপথের নালি’ কেটে দেয়ার অভিযোগ

ছবি

আমাকেও হয়তো বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে: অমর্ত্য সেন

ছবি

টেকনাফে নাফ নদীর মোহনা থেকে ১২ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি

আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আগে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে রোহিঙ্গা বাংলাদেশ সীমান্তে পৌঁছানোর চেষ্টা

ছবি

বাগেরহাটে মাছের ঘেরে বিষ প্রয়োগে ৫ লাখ টাকার ক্ষতি

ছবি

ডিমলা হাসপাতালে চিকিৎসক ও ঔষধ সংকট, ভোগান্তিতে রোগীরা

ছবি

নবীগঞ্জে বীজনা নদী থেকে শিশুর মরদেহ উদ্ধার

ছবি

চাটখিলে শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা

ছবি

মাদারগঞ্জে ফোয়ারার ১০৪টি কল চুরি

ছবি

ফকিরহাটে ট্রাক-বাইক সংঘর্ষে যুবকের মৃত্যু

ছবি

মোংলা বন্দরে কার্গোজাহাজের ক্রু নদীতে পড়ে নিখোঁজ

ছবি

বালুনদ ব্রিজ-ভাটারা নতুনবাজার সড়ক বেহাল

ছবি

উল্লাপাড়ায় কবর থেকে সাত কঙ্কাল উধাও

ছবি

রাজশাহীতে ৬ জুয়াড়ি আটক

ছবি

ঝালকাঠি মাদক বিরোধী র‌্যালী অনুষ্ঠিত

ছবি

সিদ্ধিরগঞ্জে ফ্রিজের কম্প্রেসার বিস্ফোরণে নারী-শিশুসহ দগ্ধ ৯

ছবি

খানাখন্দে ভরা মাদারগঞ্জ-ভাটারা সড়ক

ছবি

দেশের মানুষ তাদের নিজের ইচ্ছানুযায়ী ভোট দিবে

ছবি

চাঁপাইনবাবগঞ্জে পুকুর রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন

ছবি

দামুড়হদায় এক গাভির তিনটি বাছুর প্রসব

ছবি

নিহতের বাবার আকুতি : ছেলে হত্যার বিচার চাওয়া আমার জন্য অভিশাপ

ছবি

রায়পুরে দুস্থদের মাঝে অনুদান

তালার যুবদল নেতা শামীমকে জবাই করে হত্যা

ছবি

তিস্তার ওপর ভাসানী সেতুর ল্যাম্পপোষ্টের তার চুরি

ছবি

সিরাজগঞ্জে মহাসড়কের পাশে অজ্ঞাত নারীর মরদেহ

ছবি

যশোর-৬ সংসদীয় আসন অক্ষুন্ন রাখার দাবিতে মানববন্ধন

ছবি

দশমিনায় জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ পালিত

ছবি

শেরপুর-খানপুর আঞ্চলিক সড়কটি ভাঙনের কবলে

ছবি

কালীগঞ্জে জমি রেজিস্ট্রিতে ঘুষ অব্যাহত

ছবি

দশমিনায় আউশের বাম্পার ফলনে কৃষকের মনে প্রশান্তি

tab

news » bangladesh

বাঘায় একদিকে কমছে পানি অন্যদিকে ভাঙছে নদীর পাড়

জেলা বার্তা পরিবেশক, রাজশাহী

রাজশাহী : পানি কমার সাথে সাথে শুরু হয়েছে পাড় ভাঙন -সংবাদ

শনিবার, ২৩ আগস্ট ২০২৫

রাজশাহীর বাঘায় পদ্মার একদিকে পানি কমছে, অন্যদিকে ভাঙছে পাড়। এতে পদ্মার চরের মানুষ রয়েছে ঝুঁকিতে। বন্যার পানিতে রাস্তা-ঘাট ভেঙে চলাচলে সমস্যায় পড়েছেন চরের মানুষ।

জানা গেছে, পদ্মার পানি বৃদ্ধির কারণে পদ্মার মধ্যে প্রতিটি বাড়ি উঠান দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। এতে সপ্তাহখানে চরের মানুষ চরম দূর্ভোগের মধ্যে দিন পার করতে হয়। ১৫টি চরের মানুষ পানিবন্দি হয়ে যায়। তিন/চারদিন থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। কিন্তু দুর্ভোগ কমেনি।

চকরাজাপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের আতারপাড়া চরের সোলেমান হোসেন বলেন, পানি কমলেও দুর্ভোগ কমেনি। কোন কোন স্থানে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে।

৫ নম্বর ওয়াডে কালিদাসখালী চরের সাবেক মেম্বার শহিদুল ইসলাম বলেন, বন্যা আর ভাঙনে মধ্য দিয়ে চরের মানুষ বসবাস করে। এবারের বন্যায় যে পরিমান ক্ষতি হয়েছে, তবে পানি একদিকে কমছে, অন্যদিকে পদ্মার পাড় ভাঙছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাম্মী আক্তার বলেন, চৌমাদিয়া, আতারপাড়া ও দিয়ারকাদিপুর চরে সরকারিভাবে ২২০ পরিবারকে চাল ও খানপুর গুচ্ছগ্রামের ৭৬ পরিবারকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। বাদপড়াদেও সহায়তা করা হবে।

এবছরে আষাঢ়-শ্রাবণে বৃষ্টির রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। গেল ২৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে এ বছরে। তবে এই স্বস্তির মধ্যে স্বপ্ন নষ্ট হচ্ছে চাষিদের। অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে পানিতে তলিয়ে গেছে রাজশাহী বিভাগের সাড়ে ৭ হাজার হেক্টর ফসলি জমির শাকসবজি ও আমন ধানের চারা। নষ্টও হয়েছে অনেক শাকসবজির গাছ আর আমন ধান। এতে চাষিদের মাথায় হাত পড়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য মতে, বিভাগের ৮ জেলায় প্রায় সাড়ে ৭ হাজার হেক্টর আবাদি জমির শাকসবজি ও আমন ধানের চারা অতিবৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গেছে। জমির পানি নামতে শুরু করায় কিছু কিছু জেলায় আবার বিভিন্ন শাক সবজি ও আমন ধান চারা রোপণ বাড়ছে উৎপাদন ব্যয়।

এদিকে সরবরাহের অজুহাতে বাড়ছে সবজির দাম। মোকাম ও আড়তে প্রতিদিনই বাড়ানো হচ্ছে সবজির দাম। খুচরা বাজারেও এর প্রভাব পড়ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন নিন্মআয়ের ক্রেতারা।

বিক্রেতাদের দাবি, বৃষ্টি ও বন্যায় অনেক সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। তাঁদের ধারণা, বৃষ্টি কমে গেলে ও বন্যার পানি নেমে গেলে বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক হবে এবং দামও কমতে পারে। তবে অন্তত এক মাস দাম এমন উচ্চ অবস্থায় থাকতে পারে।

রাজশাহীতে সপ্তাহ দুয়েকের ব্যবধানে সবজির দাম কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে। নগরীর মাস্টারপাড়া কাঁচাবাজারে ভোরে পাইকারি এবং পরে খুচরা বিক্রি হয়। গত ১৫ দিনের মধ্যে কাঁচা মরিচের দাম কেজিতে ১৫০ থেকে বেড়ে ২৫০ টাকা, পটল ৫০ থেকে বেড়ে ৭০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৫০ থেকে বেড়ে ৭০ টাকা, বেগুন ৭০ থেকে বেড়ে ১০০ টাকা, করলা ৬০ থেকে বেড়ে ৮০ টাকা, দেশি লাউ ৫০ থেকে বেড়ে ৭০ টাকা, কচুর লতি ৬০ থেকে বেড়ে ৭০ টাকা হয়েছে। ফুলকপির দাম আগের মতোই কেজিপ্রতি ১০০ টাকা। কমেছে শুধু পেঁপের দাম; ৫ টাকা কমে এখন ৩০ টাকা কেজি। আলুর দাম স্থিতিশীল আছে, কেজি ২০ টাকা। তবে পেঁয়াজের কেজি ৬০ টাকা থেকে বেড়ে ৮০ টাকা হয়েছে।

মাস্টারপাড়া বাজারে কথা হয় কাঁচামাল ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বেগুন ও কাঁচা মরিচ কিনছিলেন। একটু বেশি করে কিনে নিয়ে তিনি অন্য জায়গায় বিক্রি করেন। তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে আনন্দ নাই, আমাদের মধ্যেও নাই। সবজির দাম বেশি হইলে ক্রেতা কিনতে চায় না। আগে ১৫ টাকা কেজি কিনে ২৫ টাকায় বিক্রি করা যেত। কিন্তু এখন ৭০ টাকায় কিনে ৮০ টাকায় বিক্রি করা যায় না।

মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে রাজশাহীতে। গত কয়েক বছরের মধ্যে জেলায় চলতি মৌসুমে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রাজশাহীতে বৃষ্টি হয়েছে ৪৭ মিলিমিটার। এর আগের দিন বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে ১০ মিলিমিটার। তবে এবার পুরো আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসজুড়ে বৃষ্টি ছিল। এতেই সর্বনাশ হয়েছে চাষিদের।

জেলার পবা, মোহনপুর, তানোর, দুর্গাপুর ও বাগমারাসহ ৯টি উপজেলার ১ হাজার ৬শ’ হেক্টর আবাদি জমি অতিবৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে বেগুন, পটল, করলা, মরিচসহ বিভিন্ন শাকসবজি জমিতে পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও পদ্মার পানি বৃদ্ধির কারণে তলিয়ে গেছে চরের জমি। একই অবস্থা বাঘা উপজেলার চরাঞ্চলে।

মোহনপুর উপজেলার বিষহরা গ্রামের আলমগীর হোসেন জানান, আমার ১০ কাঠা মরিচ, দশ কাঠা পটল, পাঁচ কাঠা বেগুন আবাদ ছিল। টানা বৃষ্টির কারণে সব পানির নিচে তলিয়ে আছে। পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গাছগুলো মরে যাবে। আমি এ ক্ষতি কীভাবে পুষিয়ে উঠব বুঝতে পারছি না।

পবা উপজেলার আলিমগঞ্জ গ্রামের কৃষক মাহবুবুর রহমান জানান, আমার দুই বিঘা জমির ধান তলিয়ে গেছে। পানি কবে নামবে জানি না। পানি নেমে গেলে আবারও ধানের চারা রোপণ করতে হবে। কিন্তু এখন চারা পাব কোথায়।

আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের দেয়া তথ্য মতে, গেল ২ সপ্তাহের বৃষ্টিতে রাজশাহী অঞ্চলের দেড় হাজার হেক্টর জমির নানা শাকসবজি পানিতে তলিয়ে যায়। এতে মারাত্মক ক্ষতি মুখে পড়েছেন কৃষকরা।

রাজশাহী চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক সাইফুল ইসলাম হীরক জানান, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে শাকসবজির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫শ’ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। কোন কোন কৃষক সর্বশান্ত হয়ে গেছেন। যাদের অল্পপূঁজি তারাও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।

রাজশাহী বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক ড. আজিজুর রহমান বলেন, অতিবৃষ্টি ও নদীর পানি বাড়ার কারণে ফসলের ভালো ক্ষতি হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের চরাঞ্চল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সেখানে আউশ আমন ধান লাগানো হয়েছিল যা পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়াও বিভিন্ন জেলায় নিম্নাঞ্চলে পানি উঠে সবজির ক্ষতি হয়েছে। এখন পানি নামতে শুরু করেছে। আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি।

তিনি বলেন, আমরা প্রতিদিন প্রতিবেদন দিচ্ছি। কৃষকদের প্রণোদনার কথাও বলা হয়েছে। আশাকরি কিছুটা হলেও ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের সহায়তা দেওয়া হবে।

back to top