ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
ডিমলা বাসীর চিকিৎসার জন্য একমাত্র ভরসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। প্রতিদিন শত শত রোগীরা হাসপাতালে চিকিৎসার নেয়ার জন্য আসে। ডাক্তার ও পর্যাপ্ত ঔষধ না থাকায় চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, ডাক্তার ও ঔষধের অভাব, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ এবং প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনার কারণে ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা নিতে গিয়ে তারা আরও বেশী অসুস্থ হয়ে পড়ছেন ।
উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের তিস্তার চর এলাকার ভেণ্ডাবাড়ি গ্রামের দিনমজুর আক্কেল আলী বলেন, আমি গরিব মানুষ, ভ্যানে চালিয়ে যা আয় হয়, তা দিয়েই সংসারের ৮ জনের খাবার কোন রকমে জোটে। হঠাৎ আমার বাবার ডায়রিয়া শুরু হলে তাকে ডিমলা হাসপাতালে ভর্তি করাই। ডাক্তার দেখেছেন, কিন্তু কোনো ওষুধ দেননি । সবকিছু বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়েছে। হাসপাতালের খাবারও ভালো নয়। সরকারি হাসপাতালে যদি চিকিৎসা ও ঔষধ না পাই, তাহলে আমরা গরিব মানুষ চিকিৎসার জন্য কোথায় যাব?
টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের চরখরিবাড়ি গ্রামের ছাইদুল ইসলাম জানান, আমার স্ত্রী প্রসব ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। কিন্তু ডেলিভারির সময় প্রয়োজনীয় ওষুধ থেকে শুরু করে গ্লাবস পর্যন্ত সবকিছু বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়েছে। এমনকি স্যালাইনও হাসপাতালে নেই।
চিকিৎসা নিতে আসা পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের মৃত আ. রহমানের ছেলে মামুদ আলী বলেন, ডাক্তারের দেখা পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। অনেক সময় নার্স বা ওয়ার্ড বয়ই রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। আমরা যদি বেসরকারি হাসপাতালে যেতে পারতাম, তাহলে এখানে আসার প্রয়োজন হতো না।
বালাপাড়া ইউনিয়নের শোভানগঞ্জ গুচ্ছগ্রাম এলাকার মৃত কাদিমুদ্দিনের স্ত্রী হনুফা বেগম (১০১) শ্বাসকষ্ট ও পায়ের ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে ৫ দিনে ২ দিন মাত্র ডাক্তারের দেখা মিলেছে । একই গ্রামের রশিদুল ইসলামের অভিযোগ, তার ছেলে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়। ডাক্তার মাত্র একবার দেখে গেছে, পরে আর দেখা যায়নি। রাতে জরুরি ঔষধের জন্য বাজারে যেতে হয়েছে।
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ২০১০ সালে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও, ১৪ বছর পেরিয়ে গেলেও উপজেলার ৩ লাখ ১৬ হাজার ৮৪৬ জন মানুষ কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে । কাগজে-কলমে ৩২ টি চিকিৎসকের পদ থাকলেও, বর্তমানে কার্যত উপস্থিত আছেন মাত্র একজন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, একজন আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ১ জন মেডিকেল অফিসার সহ ৩ জন । এছাড়া ডা: রিপন কুমার সরকার, ডা. নিরঞ্জন কুমার রায়, আসমানী সুলতানা, মো. আশিকুর রহমান ও মৌসুমী বৈষ্ণব সহ পাঁচজন চিকিৎসক অন্যত্র প্রেষণে থাকলেও বেতন ও সকল সুবিধাদি এই হাসপাতাল থেকেই নিচ্ছেন। জেনারেটর দীর্ঘদিন ধরে অচল। বিদ্যুৎ চলে গেলে জরুরি বিভাগে মোমবাতি ও মোবাইলের আলোতে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। হাসপাতালের জুনিয়র মেকানিক ২৪ ঘণ্টা থাকার কথা থাকলেও থাকেন না। অকেজো হয়ে আছে এনালগ এক্স-রে মেশিন, আলট্রাসনোগ্রাম ও ইসিজি সুবিধা। ফলে রোগীরা বাধ্য হয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা করাচ্ছেন এবং সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
নার্সদের বিরুদ্ধেও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। তারা হর হামেশা রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। এছাড়া নার্স ডিউটি রুমের পাশে ব্যবহৃত ইনজেকশনের সুচ, স্যালাইনের বোতল, গজ ও ওষুধের বাক্স ফেলে রাখা হয়। পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা অপরিচ্ছন্ন। লাইট ও পাখা মেরামতের কিছুক্ষণের মধ্যেই বিকল হয়ে যায়। রোগীদের খাবারের মানও নি¤œমানের। যা দেওয়া হয় তা খাওয়ার উপযুক্ত নয়। হাসপাতালের প্রবেশদ্বারসহ আশপাশ ময়লা-আবর্জনায় ভরা।
টিকিট ও ভর্তি ফি নিয়েও চলছে নিয়মবিরোধী কার্যক্রম। আউটডোর টিকিটের মূল্য সরকারি নিয়মে ৩ টাকা হলেও বাস্তবে নেওয়া হচ্ছে ৫ টাকা। ভর্তি ফি ৭ টাকা হওয়ার কথা, নেওয়া হচ্ছে ১০ টাকা। দুটি অ্যাম্বুলেন্সের একটি দীর্ঘদিন ধরে বিকল। সরকারি ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১০ টাকা হলেও বাস্তবে ডিমলা থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (৮০ কিমি) পর্যন্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা।
ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও প,প কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান জানান, চিকিৎসক না থাকার বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের। চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি আমি একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে জানিয়েছি। যারা পোস্টিং নিয়ে এই হাসপাতালে আসে তারা আবার উপর মহলে যোগাযোগ করে নিজের সুবিধামত স্থানে পোস্টিং নিয়ে চলে যায়। নীলফামারী সিভিল সার্জন আব্দুর রাজ্জাক জানান, ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অভিযোগগুলো তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
শনিবার, ২৩ আগস্ট ২০২৫
ডিমলা বাসীর চিকিৎসার জন্য একমাত্র ভরসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। প্রতিদিন শত শত রোগীরা হাসপাতালে চিকিৎসার নেয়ার জন্য আসে। ডাক্তার ও পর্যাপ্ত ঔষধ না থাকায় চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, ডাক্তার ও ঔষধের অভাব, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ এবং প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনার কারণে ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা নিতে গিয়ে তারা আরও বেশী অসুস্থ হয়ে পড়ছেন ।
উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের তিস্তার চর এলাকার ভেণ্ডাবাড়ি গ্রামের দিনমজুর আক্কেল আলী বলেন, আমি গরিব মানুষ, ভ্যানে চালিয়ে যা আয় হয়, তা দিয়েই সংসারের ৮ জনের খাবার কোন রকমে জোটে। হঠাৎ আমার বাবার ডায়রিয়া শুরু হলে তাকে ডিমলা হাসপাতালে ভর্তি করাই। ডাক্তার দেখেছেন, কিন্তু কোনো ওষুধ দেননি । সবকিছু বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়েছে। হাসপাতালের খাবারও ভালো নয়। সরকারি হাসপাতালে যদি চিকিৎসা ও ঔষধ না পাই, তাহলে আমরা গরিব মানুষ চিকিৎসার জন্য কোথায় যাব?
টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের চরখরিবাড়ি গ্রামের ছাইদুল ইসলাম জানান, আমার স্ত্রী প্রসব ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। কিন্তু ডেলিভারির সময় প্রয়োজনীয় ওষুধ থেকে শুরু করে গ্লাবস পর্যন্ত সবকিছু বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়েছে। এমনকি স্যালাইনও হাসপাতালে নেই।
চিকিৎসা নিতে আসা পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের মৃত আ. রহমানের ছেলে মামুদ আলী বলেন, ডাক্তারের দেখা পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। অনেক সময় নার্স বা ওয়ার্ড বয়ই রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। আমরা যদি বেসরকারি হাসপাতালে যেতে পারতাম, তাহলে এখানে আসার প্রয়োজন হতো না।
বালাপাড়া ইউনিয়নের শোভানগঞ্জ গুচ্ছগ্রাম এলাকার মৃত কাদিমুদ্দিনের স্ত্রী হনুফা বেগম (১০১) শ্বাসকষ্ট ও পায়ের ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে ৫ দিনে ২ দিন মাত্র ডাক্তারের দেখা মিলেছে । একই গ্রামের রশিদুল ইসলামের অভিযোগ, তার ছেলে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়। ডাক্তার মাত্র একবার দেখে গেছে, পরে আর দেখা যায়নি। রাতে জরুরি ঔষধের জন্য বাজারে যেতে হয়েছে।
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ২০১০ সালে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও, ১৪ বছর পেরিয়ে গেলেও উপজেলার ৩ লাখ ১৬ হাজার ৮৪৬ জন মানুষ কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে । কাগজে-কলমে ৩২ টি চিকিৎসকের পদ থাকলেও, বর্তমানে কার্যত উপস্থিত আছেন মাত্র একজন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, একজন আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ১ জন মেডিকেল অফিসার সহ ৩ জন । এছাড়া ডা: রিপন কুমার সরকার, ডা. নিরঞ্জন কুমার রায়, আসমানী সুলতানা, মো. আশিকুর রহমান ও মৌসুমী বৈষ্ণব সহ পাঁচজন চিকিৎসক অন্যত্র প্রেষণে থাকলেও বেতন ও সকল সুবিধাদি এই হাসপাতাল থেকেই নিচ্ছেন। জেনারেটর দীর্ঘদিন ধরে অচল। বিদ্যুৎ চলে গেলে জরুরি বিভাগে মোমবাতি ও মোবাইলের আলোতে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। হাসপাতালের জুনিয়র মেকানিক ২৪ ঘণ্টা থাকার কথা থাকলেও থাকেন না। অকেজো হয়ে আছে এনালগ এক্স-রে মেশিন, আলট্রাসনোগ্রাম ও ইসিজি সুবিধা। ফলে রোগীরা বাধ্য হয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা করাচ্ছেন এবং সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
নার্সদের বিরুদ্ধেও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। তারা হর হামেশা রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। এছাড়া নার্স ডিউটি রুমের পাশে ব্যবহৃত ইনজেকশনের সুচ, স্যালাইনের বোতল, গজ ও ওষুধের বাক্স ফেলে রাখা হয়। পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা অপরিচ্ছন্ন। লাইট ও পাখা মেরামতের কিছুক্ষণের মধ্যেই বিকল হয়ে যায়। রোগীদের খাবারের মানও নি¤œমানের। যা দেওয়া হয় তা খাওয়ার উপযুক্ত নয়। হাসপাতালের প্রবেশদ্বারসহ আশপাশ ময়লা-আবর্জনায় ভরা।
টিকিট ও ভর্তি ফি নিয়েও চলছে নিয়মবিরোধী কার্যক্রম। আউটডোর টিকিটের মূল্য সরকারি নিয়মে ৩ টাকা হলেও বাস্তবে নেওয়া হচ্ছে ৫ টাকা। ভর্তি ফি ৭ টাকা হওয়ার কথা, নেওয়া হচ্ছে ১০ টাকা। দুটি অ্যাম্বুলেন্সের একটি দীর্ঘদিন ধরে বিকল। সরকারি ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১০ টাকা হলেও বাস্তবে ডিমলা থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (৮০ কিমি) পর্যন্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা।
ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও প,প কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান জানান, চিকিৎসক না থাকার বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের। চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি আমি একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে জানিয়েছি। যারা পোস্টিং নিয়ে এই হাসপাতালে আসে তারা আবার উপর মহলে যোগাযোগ করে নিজের সুবিধামত স্থানে পোস্টিং নিয়ে চলে যায়। নীলফামারী সিভিল সার্জন আব্দুর রাজ্জাক জানান, ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অভিযোগগুলো তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।