মধুপুর (টাঙ্গাইল) : এভাবেই লাল মাটির মধুপুর গড়ে কাসাভা চাষ করা হচ্ছে। ছবিটি থানার বাইদ গ্রাম থেকে তোলা -সংবাদ
উষ্ণ এবং উপ-ক্রান্তীয় জলবায়ু অঞ্চলের ফসল কাসাভা টাঙ্গাইলের মধুপুরের গড়ের লাল মাটিতে বাণিজ্যিক ভাবে চাষ হচ্ছে। এ ফসল লাল মাটিতে যুগ যুগ ধরে চাষ হয়ে আসছে। যখন পানীয় জলের অভাব ছিল তখন বেশি চাষ হলে এখন অর্থকরি ফসলের বৈচিত্র্যের কারণে আগের চেয়ে কমে গেছে। এক সময় এ অঞ্চলের প্রায় বাড়িতে কম বেশি এ ফসলটি দেখা গেছে। পতিত জমি, বাড়ির আশপাশ, অনুর্বর অনাবাদি জমিতে বেশি চাষ হতো। কলা আনারস আদা হলুদ পেঁপেসহ নানা ফসলের চাষ বৃদ্ধির ফলে অনেক এলাকায় এখন কম চাষ হয়। এখন গারো সম্প্রদায়ের এলাকা ভেদে চাষ টিকে থাকা এ ফসলটি অনেকেই আবার বাণিজ্যিক ভাবে চাষাবাদে এগিয়ে যাচ্ছে। যাচ্ছে বিভিন্ন কোম্পানিতে তৈরি হচ্ছে ময়দা আটাসহ মেডিসিনের উপকরণ। আর কৃষি বিভাগ বলছে, কাসাভা চাষে কৃষকদের পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হয়ে থাকে।
সরেজমিনে মধুপুরের থানার বাইদ, পীরগাছা, বাঘাডোবা, সাইনামারি, মহিষমারা, বুড়াকুড়িসহ শোলাকুড়ি ইউনিয়নের কয়েক গ্রামে ঘুরে কৃষকদের সাথে কথা বলে যায়, ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া, মুক্তাগাছা, মধুপুর ও জামালপুর জেলার কিছু অংশে যুগ যুগ ধরে কাসাভা চাষ হয়ে আসছে। তবে তারা শিমুল বা শিমলাই আলু নামে চিনে জানে। প্রচুর চাষ হতো। ফাল্গুন চৈত্র মাসে বীজ গাছ কেটে খন্ড খন্ড করে রোপন করা হয়। ভাদ্র আশ্বিন মাসে ফলন আসে। জমির আইলে বেড়া হিসেবেও লাগানো হতো। জমির চার পাশ ও আনারসের বাগানেও লাগাতো। ছোট-বড় গৃহস্থরা নিজের সংসারের চাহিদা মিটানোর পর বাকিটা বিক্রি করতো। গারো সম্প্রদায়ের লোকেরাই বেশি আবাদ করতো। অভাবের দিনে তাদের অঞ্চলের মানুষেরা ভাতের পরিবর্তে এ আলু খেত। স্বাদও ছিল বেশি। অনেকেই আবার জমি থেকে আলু কিনে বাড়িতে সিদ্ধ করে হাট বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতো বলে জানা গেছে। এসব তথ্য স্থানীয়রা জানিয়েছে।
কথা হয় থানার বাইদ গ্রামের কাসাভা চাষী নশেন হাগিদক (৫৮) এর সাথে। তার বাড়ির পাশে নয়াপাড়ায় ৩ বিঘা জমিতে কাসাভা লাগিয়েছে। নাগ্রা জাতের কাসাভার বীজ তার নিজেরই ছিল। তিনি জানান, ১৯৮২ সাল থেকে তার পরিবার চাষ শুরু করে। সে প্রতিবছরই সে কম বেশি চাষ করে থাকে। অন্যান্য বছর খেত থেকেই ১২শ’ টাকা মন বিক্রি করেছে। তিন বিঘা জমিতে এ বছর ৪০-৫০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। তার ধারনা ২০০ মন ফলন পাবে।
পিরোজপুর গ্রামের আজাহার, ওব্ব পাগলা, নূরুল ইসলামসহ কয়েক তারা এক সময় তারা সাইনামারি থানার বাইদসহ বিভিন্ন গ্রাম থেকে শিমলাই আলু এনে সিদ্ধ করে হাট বাজারে বিক্রি করতো। তখন চাহিদাও ছিল বেশি। লাভ হতো বেশি।
এখন কোম্পানির জন্য আবাদকৃত কাসাভা দিয়ে ময়দা আটা ওষুধ কোম্পানির নানা উপকরণ তৈরি করা হচ্ছে বলেও স্থানীয়রা জানালেন। বানরিয়া গ্রামের জিতেজ রেমা (৬৮) তার জমিতেও কাসাভা চাষ করেছে। থানার বাইদের বিজয় মৃ (৬২) লাগিয়েছে এক বিঘা। এভাবে তাদের এলাকায় প্রায় বাড়িতেই কমবেশি কাসাভার আবাদ রয়েছে। মধুপুর কৃষি অফিসের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, লাল মাটির মধুপুরে এ অর্থ বছরে প্রায় ৫৩ হেক্টর জমিতে কাসাভার আবাদ হয়েছে। যার উৎপাদন সম্ভাবনা প্রায় ২০ মে.টন।
মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রকিব আল রানা বলেন, গড় অঞ্চলের মাটি আবহাওয়া কৃষি ফসলের জন্য উপযোগী। বন্যা মুক্ত। সহজেই পানি উঠে না। মাটির উর্বরতার কারণে সহজেই যে কোন ধরনের কৃষি ফসল চাষ করা হয়। আনারস কলাসহ অন্যান্য ফসলের মত কাসাভাও চাষ হয়। ফলন ভালো হয়।
দামও ভালো পেয়ে থাকে। কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগীতা করে থাকে বলে তিনি জানান।
মধুপুর (টাঙ্গাইল) : এভাবেই লাল মাটির মধুপুর গড়ে কাসাভা চাষ করা হচ্ছে। ছবিটি থানার বাইদ গ্রাম থেকে তোলা -সংবাদ
রোববার, ২৪ আগস্ট ২০২৫
উষ্ণ এবং উপ-ক্রান্তীয় জলবায়ু অঞ্চলের ফসল কাসাভা টাঙ্গাইলের মধুপুরের গড়ের লাল মাটিতে বাণিজ্যিক ভাবে চাষ হচ্ছে। এ ফসল লাল মাটিতে যুগ যুগ ধরে চাষ হয়ে আসছে। যখন পানীয় জলের অভাব ছিল তখন বেশি চাষ হলে এখন অর্থকরি ফসলের বৈচিত্র্যের কারণে আগের চেয়ে কমে গেছে। এক সময় এ অঞ্চলের প্রায় বাড়িতে কম বেশি এ ফসলটি দেখা গেছে। পতিত জমি, বাড়ির আশপাশ, অনুর্বর অনাবাদি জমিতে বেশি চাষ হতো। কলা আনারস আদা হলুদ পেঁপেসহ নানা ফসলের চাষ বৃদ্ধির ফলে অনেক এলাকায় এখন কম চাষ হয়। এখন গারো সম্প্রদায়ের এলাকা ভেদে চাষ টিকে থাকা এ ফসলটি অনেকেই আবার বাণিজ্যিক ভাবে চাষাবাদে এগিয়ে যাচ্ছে। যাচ্ছে বিভিন্ন কোম্পানিতে তৈরি হচ্ছে ময়দা আটাসহ মেডিসিনের উপকরণ। আর কৃষি বিভাগ বলছে, কাসাভা চাষে কৃষকদের পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হয়ে থাকে।
সরেজমিনে মধুপুরের থানার বাইদ, পীরগাছা, বাঘাডোবা, সাইনামারি, মহিষমারা, বুড়াকুড়িসহ শোলাকুড়ি ইউনিয়নের কয়েক গ্রামে ঘুরে কৃষকদের সাথে কথা বলে যায়, ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া, মুক্তাগাছা, মধুপুর ও জামালপুর জেলার কিছু অংশে যুগ যুগ ধরে কাসাভা চাষ হয়ে আসছে। তবে তারা শিমুল বা শিমলাই আলু নামে চিনে জানে। প্রচুর চাষ হতো। ফাল্গুন চৈত্র মাসে বীজ গাছ কেটে খন্ড খন্ড করে রোপন করা হয়। ভাদ্র আশ্বিন মাসে ফলন আসে। জমির আইলে বেড়া হিসেবেও লাগানো হতো। জমির চার পাশ ও আনারসের বাগানেও লাগাতো। ছোট-বড় গৃহস্থরা নিজের সংসারের চাহিদা মিটানোর পর বাকিটা বিক্রি করতো। গারো সম্প্রদায়ের লোকেরাই বেশি আবাদ করতো। অভাবের দিনে তাদের অঞ্চলের মানুষেরা ভাতের পরিবর্তে এ আলু খেত। স্বাদও ছিল বেশি। অনেকেই আবার জমি থেকে আলু কিনে বাড়িতে সিদ্ধ করে হাট বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতো বলে জানা গেছে। এসব তথ্য স্থানীয়রা জানিয়েছে।
কথা হয় থানার বাইদ গ্রামের কাসাভা চাষী নশেন হাগিদক (৫৮) এর সাথে। তার বাড়ির পাশে নয়াপাড়ায় ৩ বিঘা জমিতে কাসাভা লাগিয়েছে। নাগ্রা জাতের কাসাভার বীজ তার নিজেরই ছিল। তিনি জানান, ১৯৮২ সাল থেকে তার পরিবার চাষ শুরু করে। সে প্রতিবছরই সে কম বেশি চাষ করে থাকে। অন্যান্য বছর খেত থেকেই ১২শ’ টাকা মন বিক্রি করেছে। তিন বিঘা জমিতে এ বছর ৪০-৫০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। তার ধারনা ২০০ মন ফলন পাবে।
পিরোজপুর গ্রামের আজাহার, ওব্ব পাগলা, নূরুল ইসলামসহ কয়েক তারা এক সময় তারা সাইনামারি থানার বাইদসহ বিভিন্ন গ্রাম থেকে শিমলাই আলু এনে সিদ্ধ করে হাট বাজারে বিক্রি করতো। তখন চাহিদাও ছিল বেশি। লাভ হতো বেশি।
এখন কোম্পানির জন্য আবাদকৃত কাসাভা দিয়ে ময়দা আটা ওষুধ কোম্পানির নানা উপকরণ তৈরি করা হচ্ছে বলেও স্থানীয়রা জানালেন। বানরিয়া গ্রামের জিতেজ রেমা (৬৮) তার জমিতেও কাসাভা চাষ করেছে। থানার বাইদের বিজয় মৃ (৬২) লাগিয়েছে এক বিঘা। এভাবে তাদের এলাকায় প্রায় বাড়িতেই কমবেশি কাসাভার আবাদ রয়েছে। মধুপুর কৃষি অফিসের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, লাল মাটির মধুপুরে এ অর্থ বছরে প্রায় ৫৩ হেক্টর জমিতে কাসাভার আবাদ হয়েছে। যার উৎপাদন সম্ভাবনা প্রায় ২০ মে.টন।
মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রকিব আল রানা বলেন, গড় অঞ্চলের মাটি আবহাওয়া কৃষি ফসলের জন্য উপযোগী। বন্যা মুক্ত। সহজেই পানি উঠে না। মাটির উর্বরতার কারণে সহজেই যে কোন ধরনের কৃষি ফসল চাষ করা হয়। আনারস কলাসহ অন্যান্য ফসলের মত কাসাভাও চাষ হয়। ফলন ভালো হয়।
দামও ভালো পেয়ে থাকে। কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগীতা করে থাকে বলে তিনি জানান।