ট্রাইব্যুনাল
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
জুলাই আন্দোলনে প্রথম শহীদ আবু সাঈদের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক অভিযোগ করেছেন, পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার কথা উল্লেখ থাকায় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পরিবর্তনের জন্য সরকারের উচ্চমহল থেকে তাকে চাপ এমনকি মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয়া হয়। তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পরিবর্তনের জন্য চিকিৎসককে সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড ভ্রমণের প্রলোভন দেখানো হয়েছিল।’
রোববার,(২৪ আগস্ট ২০২৫) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল-১-এ এমন জবানবন্দী দিয়েছেন আবু সাঈদের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক রাজিবুল ইসলাম। গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা একটি মামলায় ১৮তম সাক্ষী হিসেবে তিনি এ জবানবন্দী দেন।
জবানবন্দীতে রাজিবুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছরের ৩০ জুলাই তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ মাহফুজুর রহমানের কক্ষে ডেকে নেয়া হয়। সেখানে মাহফুজুর রহমানসহ সিটি এসবির পুলিশ সুপার সিদ্দিক, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি মারুফ, স্বাচিপের রংপুর মেডিকেল কলেজ শাখার সভাপতি চন্দন উপস্থিত ছিলেন।’
‘বুলেটের আঘাতের পরিবর্তে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে’ আবু সাঈদের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রতিবেদনে তাকে উল্লেখ করতে বলা হয়েছিল বলেও অভিযোগ এ চিকিৎসকের। তিনি বলেন, ‘এ সময় ডিজিএফআই, এনএসআই ও পুলিশের অন্য কর্মকর্তারা বাইরে অবস্থান করছিলেন। তারা তাদের ইচ্ছেমতো ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার জন্য চাপ দেন।’
রাজিবুল ইসলাম আরও বলেন, উপাধ্যক্ষের কক্ষে ‘তাকে জানানো হয়’, তার বিরুদ্ধে গোয়েন্দা প্রতিবেদন আছে। তাই তাদের ‘ইচ্ছেমতো ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দিয়ে’ তাকে ‘সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড ভ্রমণের প্রলোভন’ দেখানো হয়। পাসপোর্ট নেই জানালে দুই সপ্তাহের জন্য ‘কক্সবাজার ঘুরে আসতে’ বলা হয়।
তিনি জবানবন্দীতে আরও বলেন, ‘২০২৪ সালের ১৬ জুলাই তিনি আবু সাঈদের মরদেহের ময়নাতদন্ত করেন। যথা নিয়মে ময়নাতদন্ত শেষে তিনি প্রতিবেদনে আবু সাঈদের শরীরে পিলেট পেয়েছেন বলে উল্লেখ করেন। অনেক পিলেট বিদ্ধ হয়ে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয় বলে প্রতিবেদনে লেখেন।’
তিনি বলেন, ‘আমি মতামত দেই এ মৃত্যু হোমিসাইডাল ইন-নেচার। এ ঘটনায় রংপুরের তাজহাট থানার মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে এই রিপোর্ট জমা দিতে গেলে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার পর আমার রিপোর্ট গ্রহণ না করে পুনরায় রিপোর্ট তৈরি করতে বলেন।’
ডা. রাজিবুল বলেন, ‘একই রিপোর্ট সামান্য এদিক-ওদিক করে তিনি আবার জমা দেন। কিন্তু দ্বিতীয় ও তৃতীয়বারও তার রিপোর্ট জমা নেয়া হয়নি।’
সাক্ষ্যে ডা. রাজিবুল বলেন, ‘তারা বারবার বলছিলেন যেন মাথায় আঘাতের কারণে আবু সাঈদের মৃত্যুর কথা উল্লেখ করা হয়। তখন আমি ভাইস প্রিন্সিপালকে বলি, স্যার আবু সাঈদের মৃত্যু যে গুলিতে হয়েছে তা পৃথিবীর সব মানুষ দেখেছে, মিডিয়াতে সম্প্রচারিত হয়েছে। আমি যদি এখন লিখি যে মাথায় আঘাতের কারণে আবু সাঈদের মৃত্যু হয়েছে, তাহলে সারাবিশ্বের লোক ডাক্তার সমাজকে ঘৃণা করবে।’
গত বছর কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় ১৬ জুলাই নিহত হন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। ওই আন্দোলন ঘিরে বিভিন্ন ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তৎকালীন প্রানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য নেয়া হয়।
ট্রাইব্যুনাল
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
রোববার, ২৪ আগস্ট ২০২৫
জুলাই আন্দোলনে প্রথম শহীদ আবু সাঈদের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক অভিযোগ করেছেন, পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার কথা উল্লেখ থাকায় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পরিবর্তনের জন্য সরকারের উচ্চমহল থেকে তাকে চাপ এমনকি মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয়া হয়। তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পরিবর্তনের জন্য চিকিৎসককে সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড ভ্রমণের প্রলোভন দেখানো হয়েছিল।’
রোববার,(২৪ আগস্ট ২০২৫) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল-১-এ এমন জবানবন্দী দিয়েছেন আবু সাঈদের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক রাজিবুল ইসলাম। গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা একটি মামলায় ১৮তম সাক্ষী হিসেবে তিনি এ জবানবন্দী দেন।
জবানবন্দীতে রাজিবুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছরের ৩০ জুলাই তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ মাহফুজুর রহমানের কক্ষে ডেকে নেয়া হয়। সেখানে মাহফুজুর রহমানসহ সিটি এসবির পুলিশ সুপার সিদ্দিক, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি মারুফ, স্বাচিপের রংপুর মেডিকেল কলেজ শাখার সভাপতি চন্দন উপস্থিত ছিলেন।’
‘বুলেটের আঘাতের পরিবর্তে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে’ আবু সাঈদের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রতিবেদনে তাকে উল্লেখ করতে বলা হয়েছিল বলেও অভিযোগ এ চিকিৎসকের। তিনি বলেন, ‘এ সময় ডিজিএফআই, এনএসআই ও পুলিশের অন্য কর্মকর্তারা বাইরে অবস্থান করছিলেন। তারা তাদের ইচ্ছেমতো ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার জন্য চাপ দেন।’
রাজিবুল ইসলাম আরও বলেন, উপাধ্যক্ষের কক্ষে ‘তাকে জানানো হয়’, তার বিরুদ্ধে গোয়েন্দা প্রতিবেদন আছে। তাই তাদের ‘ইচ্ছেমতো ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দিয়ে’ তাকে ‘সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড ভ্রমণের প্রলোভন’ দেখানো হয়। পাসপোর্ট নেই জানালে দুই সপ্তাহের জন্য ‘কক্সবাজার ঘুরে আসতে’ বলা হয়।
তিনি জবানবন্দীতে আরও বলেন, ‘২০২৪ সালের ১৬ জুলাই তিনি আবু সাঈদের মরদেহের ময়নাতদন্ত করেন। যথা নিয়মে ময়নাতদন্ত শেষে তিনি প্রতিবেদনে আবু সাঈদের শরীরে পিলেট পেয়েছেন বলে উল্লেখ করেন। অনেক পিলেট বিদ্ধ হয়ে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয় বলে প্রতিবেদনে লেখেন।’
তিনি বলেন, ‘আমি মতামত দেই এ মৃত্যু হোমিসাইডাল ইন-নেচার। এ ঘটনায় রংপুরের তাজহাট থানার মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে এই রিপোর্ট জমা দিতে গেলে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার পর আমার রিপোর্ট গ্রহণ না করে পুনরায় রিপোর্ট তৈরি করতে বলেন।’
ডা. রাজিবুল বলেন, ‘একই রিপোর্ট সামান্য এদিক-ওদিক করে তিনি আবার জমা দেন। কিন্তু দ্বিতীয় ও তৃতীয়বারও তার রিপোর্ট জমা নেয়া হয়নি।’
সাক্ষ্যে ডা. রাজিবুল বলেন, ‘তারা বারবার বলছিলেন যেন মাথায় আঘাতের কারণে আবু সাঈদের মৃত্যুর কথা উল্লেখ করা হয়। তখন আমি ভাইস প্রিন্সিপালকে বলি, স্যার আবু সাঈদের মৃত্যু যে গুলিতে হয়েছে তা পৃথিবীর সব মানুষ দেখেছে, মিডিয়াতে সম্প্রচারিত হয়েছে। আমি যদি এখন লিখি যে মাথায় আঘাতের কারণে আবু সাঈদের মৃত্যু হয়েছে, তাহলে সারাবিশ্বের লোক ডাক্তার সমাজকে ঘৃণা করবে।’
গত বছর কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় ১৬ জুলাই নিহত হন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। ওই আন্দোলন ঘিরে বিভিন্ন ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তৎকালীন প্রানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য নেয়া হয়।