দুই মাস ধরে জলাবদ্ধতায় মণিরামপুরের শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ
মণিরামপুরে জলাবদ্ধতায় হরিদাসকাটি ইউনিয়নে ভুলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান চলছে এভাবেই -সংবাদ
মরণফাঁদ ভবদহের করাল গ্রাসে যশোরের মণিরামপুর ও কেশবপুরের নিচু এলাকাগুলো দুই মাস ধরে হাঁটুপানিতে তলিয়ে আছে। মণিরামপুরের প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আঙিনা কম-বেশি জলমগ্ন। কোথাও কোথাও বাড়ির উঠানে তাঁবু টানিয়ে চলছে পাঠদান কার্যক্রম।
এ রকমই একটি স্কুল চলছে তাঁবুর নিচে। সরেজমিন দেখা যাচ্ছে, ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষার দায়িত্ব পালন করছিলেন উপজেলার হরিদাসকাটি ইউনিয়নে নিভৃতপল্লী ভুলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শিপ্রা কুমার সরকার। তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চলছে সভাপতির বাড়ির আঙিনায়। শুধু এই বিদ্যালয় নয়, উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ প্রায় একশত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠ পানিতে থৈ-থৈ করছে। জলবদ্ধতার ফলে প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
ভবদহের জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে এভাবেই ভোগান্তিতে পড়েছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিন যশোর মণিরামপুর উপজেলার হরিদাসকাটি ইউনিয়নে গেলে, ভুলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এমন চিত্র চোখে পড়ে এই প্রতিবেদকের। কিন্তু সেদিন ছিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষার প্রথম দিন। এ সময় পরীক্ষার দায়িত্ব পালন করেন সহকারী শিক্ষক শিপ্রা।
শিক্ষার্থীদের বসতবাড়িতে পানি আর পানি। উপজেলার কুমারসীমা, চান্দুয়া, কাটাখালি, পাঁচবাড়িয়া, আঠারোপাখিয়া, প্রতাপকাটি, গাবুয়াখালী, হাটগাছ, আলীপুর, কুচলিয়া, পাঁচকাটিয়া, নেবুগাতি, মহিষদিয়াসহ জলাবদ্ধ অঞ্চলের প্রায় সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও বিকল্পভাবে চলছিল পাঠদান। বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী কামনা বিশ্বাস, চতুর্থ শ্রেণীর শ্রেয়া বিশ্বাস ও দেবব্রত বিশ্বাসসহ একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, বিদ্যালয়ে যাতায়াতের রাস্তায় কোমর থেকে গলা পর্যন্ত পানি রয়েছে। ফলে কেউ কেউ নৌকা ও কলার ভেলাতে যাতায়াত করছে। আবার স্কুল থেকে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে।
এ ব্যাপারে উপজেলার একজন প্রধান শিক্ষক প্রাণেশ বিশ্বাস জানান, গত দুই মাস ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আঙিনা পানিতে তলিয়ে রয়েছে।
বিদ্যালয়ের পিটিএ প্যারেন্টস টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নিত্য বিশ্বাসের নিজ বসতবাড়িতে পলিথিন টানিয়ে তার নিচে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম।
পিটিএ সভাপতি জানান, ছাত্রছাত্রীদের পাঠদান কার্যক্রম চলমান রাখতে এলাকা থেকে বাঁশসহ তাঁবু টানানোর সরঞ্জামদি সংগ্রহ করা হয় বাড়ির উঠানে। জানা যায়, সম্প্রতি বৃষ্টি ও উজানের ঢলে ভবদহ বিলপাড়ের প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ পানিবন্দী। একই সঙ্গে উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ প্রায় একশত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে রয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এএসএম জিল্লুর রশীদ জানান, উপজেলার কমপক্ষে অর্ধশত স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা মাঠ পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু মোতালেব বলেন, উপজেলার ২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ পানিতে তলিয়ে গেলেও বিকল্পভাবে শিক্ষা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্না জানান, উপজেলার যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্তি করে তাদের জন্য নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
দুই মাস ধরে জলাবদ্ধতায় মণিরামপুরের শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ
মণিরামপুরে জলাবদ্ধতায় হরিদাসকাটি ইউনিয়নে ভুলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান চলছে এভাবেই -সংবাদ
রোববার, ২৪ আগস্ট ২০২৫
মরণফাঁদ ভবদহের করাল গ্রাসে যশোরের মণিরামপুর ও কেশবপুরের নিচু এলাকাগুলো দুই মাস ধরে হাঁটুপানিতে তলিয়ে আছে। মণিরামপুরের প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আঙিনা কম-বেশি জলমগ্ন। কোথাও কোথাও বাড়ির উঠানে তাঁবু টানিয়ে চলছে পাঠদান কার্যক্রম।
এ রকমই একটি স্কুল চলছে তাঁবুর নিচে। সরেজমিন দেখা যাচ্ছে, ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষার দায়িত্ব পালন করছিলেন উপজেলার হরিদাসকাটি ইউনিয়নে নিভৃতপল্লী ভুলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শিপ্রা কুমার সরকার। তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চলছে সভাপতির বাড়ির আঙিনায়। শুধু এই বিদ্যালয় নয়, উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ প্রায় একশত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠ পানিতে থৈ-থৈ করছে। জলবদ্ধতার ফলে প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
ভবদহের জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে এভাবেই ভোগান্তিতে পড়েছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিন যশোর মণিরামপুর উপজেলার হরিদাসকাটি ইউনিয়নে গেলে, ভুলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এমন চিত্র চোখে পড়ে এই প্রতিবেদকের। কিন্তু সেদিন ছিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষার প্রথম দিন। এ সময় পরীক্ষার দায়িত্ব পালন করেন সহকারী শিক্ষক শিপ্রা।
শিক্ষার্থীদের বসতবাড়িতে পানি আর পানি। উপজেলার কুমারসীমা, চান্দুয়া, কাটাখালি, পাঁচবাড়িয়া, আঠারোপাখিয়া, প্রতাপকাটি, গাবুয়াখালী, হাটগাছ, আলীপুর, কুচলিয়া, পাঁচকাটিয়া, নেবুগাতি, মহিষদিয়াসহ জলাবদ্ধ অঞ্চলের প্রায় সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও বিকল্পভাবে চলছিল পাঠদান। বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী কামনা বিশ্বাস, চতুর্থ শ্রেণীর শ্রেয়া বিশ্বাস ও দেবব্রত বিশ্বাসসহ একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, বিদ্যালয়ে যাতায়াতের রাস্তায় কোমর থেকে গলা পর্যন্ত পানি রয়েছে। ফলে কেউ কেউ নৌকা ও কলার ভেলাতে যাতায়াত করছে। আবার স্কুল থেকে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে।
এ ব্যাপারে উপজেলার একজন প্রধান শিক্ষক প্রাণেশ বিশ্বাস জানান, গত দুই মাস ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আঙিনা পানিতে তলিয়ে রয়েছে।
বিদ্যালয়ের পিটিএ প্যারেন্টস টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নিত্য বিশ্বাসের নিজ বসতবাড়িতে পলিথিন টানিয়ে তার নিচে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম।
পিটিএ সভাপতি জানান, ছাত্রছাত্রীদের পাঠদান কার্যক্রম চলমান রাখতে এলাকা থেকে বাঁশসহ তাঁবু টানানোর সরঞ্জামদি সংগ্রহ করা হয় বাড়ির উঠানে। জানা যায়, সম্প্রতি বৃষ্টি ও উজানের ঢলে ভবদহ বিলপাড়ের প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ পানিবন্দী। একই সঙ্গে উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ প্রায় একশত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে রয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এএসএম জিল্লুর রশীদ জানান, উপজেলার কমপক্ষে অর্ধশত স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা মাঠ পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু মোতালেব বলেন, উপজেলার ২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ পানিতে তলিয়ে গেলেও বিকল্পভাবে শিক্ষা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্না জানান, উপজেলার যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্তি করে তাদের জন্য নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।