alt

news » bangladesh

অভ্যুত্থান সরকার পরিবর্তন করেছে, চিন্তার পরিবর্তন করতে পারেনি: নারী মুক্তি কেন্দ্র

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : সোমবার, ২৫ আগস্ট ২০২৫

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

অভ্যুত্থানের পরে নারীরা আশা করেছিল যে, একটি ভয়হীন সমাজ ও রাষ্ট্র পাবে। অথচ অভ্যুত্থানের পর কুমিল্লার মুরাদনগরে নারীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও প্রচার, ভোলায় কিস্তির টাকা দিতে না পারায় ধর্ষণ, পাহাড়ে ত্রিপুরা কিশোরীকে ও তিন সন্তানের জননী খিয়াং নারীকে ধর্ষণ, জয়পুরহাট ও দিনাজপুরে নারীদের ফুটবল খেলা বন্ধ করে দেয়া, কক্সবাজারে পোশাকের কারণে নারীকে হেনস্তা করা, আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া নারীদের সাইবার হয়রানি মাধ্যমে ভয়ংকরভাবে নিপীড়ন- এসব ঘটনা প্রমাণ করে যে, অভ্যুত্থান সরকার পরিবর্তন করেছে, চিন্তার পরিবর্তন করতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্র।

রোববার,(২৪ আগস্ট ২০২৫) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের আয়োজনে ‘২৪ আগস্ট নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবসের ডাক’ শীর্ষক সেমিনারে পেপারে এসব কথা বলে সংগঠনটি। তারা বলেন, নারী সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর হেফাজতে ইসলাম বিরাট সমাবেশ করে কমিশনের প্রধানসহ সব সদস্যের চরিত্র হনন করেছে। সরকার এই কমিশন গঠন করেছিল, অথচ তাদের ওপর এই হীন আক্রমণে সরকার নীরব ভূমিকা পালন করেছে।

এদেশের প্রতিটি গণআন্দোলনে নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে উল্লেখ করে বলেন, ‘তারা আন্দোলন সংগঠিত করেছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন, পুলিশ-ছাত্রলীগের পেটোয়াবাহিনীকে মোকাবিলা করেছেন। আন্দোলনে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে নারীরা রাজনৈতিকভাবে সচেতন হয়েছেন। কিন্তু তাদের এই সচেতনতাই শাসকগোষ্ঠীর জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অভ্যুত্থান ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটায়নি। ফলে নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি আগের মতোই আছে। অভ্যুত্থানের তাৎক্ষণিক প্রয়োজন শেষ হওয়ার পর নারীকে ঘরে ফিরিয়ে নেয়ার, তার বিদ্রোহী কণ্ঠকে স্তব্ধ করার আয়োজন চলেছে। গণঅভ্যুত্থান সফল হওয়ার পর নারী তার অধিকার বুঝে নিতে চাইলে, লড়াইয়ের স্বীকৃতি চাইলে সব দিক থেকে তার ওপর নেমে আসে প্রবল আক্রমণ।’

আগামী সংসদ নির্বাচনে নারীদের ১০০ আসনে সরাসরি নির্বাচনের দাবি করে সংগঠনটির নেতারা বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম আকাক্সক্ষা ছিল নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন। বিগত সময়ে নারীরা সংসদে ছিলেন আলঙ্কারিক অর্থে। কারণ নারী আসনে নিয়োগ দেয়া হতো। তারা সংসদের শোভাবর্ধন করতেন, ভাতা পেতেন। মতামত তৈরিতে তাদের ভূমিকা রাখারও কোনো উপায় ছিল না। মূলত নেতাদের স্ত্রী বা আত্মীয়স্বজনদের নারী আসনে মনোনীত করা হতো। দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ শুদ্ধ আইনসভায় নীতিনির্ধারণ, আইনপ্রণয়নে নারীর কণ্ঠস্বর নিশ্চিত করতে সংরক্ষিত আসনে মনোনয়নের পরিবর্তে সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে নারীবান্ধব রাজনৈতিক পরিবেশ নির্মাণে রাজনৈতিক দলগুলোরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন নারী মুক্তি কেন্দ্র।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া তার আলোচনায় বলেন, ‘নারীর সমানাধিকারের দাবি শুধু নারীদের নয়, পুরুষেরও দাবি। নারীর সমান মূল্যায়ন কতটুকু হয়েছে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, নারীরা নিয়মিত নানমাত্রিক বৈষ্যমের শিকার হচ্ছে। নারী নির্যাতন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নারী নিপীড়নের মাত্র ৩০ শতাংশ পত্রিকায় রিপোর্ট হয়। আসল নিপীড়নের মাত্রা এর চেয়ে অনেক বেশি।

ধর্ষিত নারীকে ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে দেয়া প্রসঙ্গে জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘রেপ ভিক্টিমকে বিয়ে করলে জামিন দেয়া হবে এমন শর্ত দিয়ে ধর্ষকে জামিন দেয়া হচ্ছে। ধর্ষণ, নারী নিপীড়ন আপোসযোগ্য নয়। আদালতের করা আপোস করা নয়। আইনজীবীরা আপোস করার কথা বলেন, এগুলো প্রফেশনাল মিসকন্ডাক্ট। তিনি বলেন, ধর্ষণ পুরুষের অসুস্থ ক্ষমতা প্রদর্শনের নিদর্শন। ধর্ষণ আইনে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখলে ভিক্টিমকে ফেরে ফেলার ঘটনা আরও বাড়বে। মৃত্যুদণ্ড দিয়ে ধর্ষণ কমানো যাবে না।’ বিচারকরাও সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে নন উল্লেখ করে এই আইনজীবী বলেন, ‘আমাদের বিচারকরাও সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে নন। নারী প্রশ্নে তাদের আরও সংবেদনশীল হওয়া উচিত।

আইনজীবী আবেদা বুলবুল বলেন, ‘কয়েক রঙের সরকার দেখেছি, নারী অধিকার ও নিরাপত্তার প্রশ্নে প্রত্যেকের বৈশিষ্ট্য একই। এক সরকার আরেকটার ধারাবাহিকতা।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নারীরা না এলে আন্দোলন বেগবান হতো না। কিন্তু এরপর কোথাও নারী নেই। কোথাও কোথাও টোকেন হিসেব দুই-একজনকে রাখা হচ্ছে। ঐকমত্য কমিশনে কোনো নারী নেই। এই পরিস্থিতিতে নারীরা আজকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, ভীতি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা বলেন, ‘নারীদের ক্ষমতাকাঠামো থেকে সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়া থেকে জোর করে দূরে ঠেলে দেয়া হয়েছে। ৫১ শতাংশ হওয়ার পরও সংখ্যার গুরুত্ব নিয়ে নারীরা জনপরিসরে হাজির হতে পারে না।’ নারীরা প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে থাকলেও, আন্দোলন শেষে পেছনে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

সামিনা লুৎফা আরও বলেন, জুলাই নারীদের বিরুদ্ধে অনলাইনে সম্মিলিত ঘৃণা কর্মসূচি শুরু হয়েছে। যারা পুলিশের গুলি ভয় পায় নাই তারা সাইবার বুলিং ভয় পাচ্ছে।’

নারীদের রাজনৈতিক পরিসরে হাজির করতে রাজনৈতিক দলগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সমী দত্তের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন স্থপতি ফারহানা শারমীন ইমু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুলতানা, মিরনঝিল্লা ভূমি রক্ষা আন্দোলন কমিটির নেত্রী পূজা রানী দাস, অটোচালক শাহেদা আক্তার ও জুলাই আন্দোলনে শহীদ সোহাগের বোন সাথী।

ছবি

ডিসির আল্টিমেটামের পর ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে সাদা পাথর

ছবি

নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে রোহিঙ্গা যুবক আহত

ছবি

কম্প্রেসর বিস্ফোরণ: এক মাস বয়সী শিশুর মৃত্যু

ছবি

জলাবদ্ধতা: বসতবাড়ির আঙিনায় তাঁবু টাঙিয়ে চলছে ক্লাস-পরীক্ষা

ছবি

অবশেষে শহীদুলকে অব্যাহতি, রসিকের নয়া প্রশাসক আশরাফুল

ছবি

প্রলোভন, হুমকি ছিল, বললেন আবু সাঈদের ময়নাতদন্তকারী

ছবি

ফটিকছড়িতে কিশোর হত্যা: বাবার আকুতিতে সাড়া দেয়নি কেউ

ছবি

ডেঙ্গু: এ বছর ১১৫ মৃত্যুর অর্ধেকের বেশি রাজধানীতে

ছবি

৮ দফা দাবিতে শ্রীমঙ্গলে সর্বস্তরের মানুষের মানববন্ধন

ছবি

রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষাজীবন ঝুঁকিতে: প্রাথমিক স্তরের প্রায় দেড় লাখ শিশু স্কুলে যেতে পারছে না

ছবি

সভাপতি মজিবুর, সাধারণ সম্পাদক হারুন

ছবি

বরিশাল মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা হত্যায় গ্রেপ্তার ১

ছবি

সিলেটে পাথর লুটপাট সচিবের মন্তব্যের পর ঘুম ভাঙলো বিজিবির

ছবি

সিদ্ধান্ত স্থগিত করে বাসভাড়া বাড়ানোর পথ খোলা রাখা হয়েছে : রফিউর রাব্বি

ছবি

খুলনার ডুমুরিয়ায় যুবদল নেতা শামীম হত্যায় বহুমুখী তদন্ত, মামলা হয়নি এখনো

ছবি

২৪ ঘণ্টায় টেকনাফ থেকে আরও ১৪ জেলে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি

ছবি

বাউফলে নিখোঁজ মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার

ছবি

কেশবপুরে সাবেক ভাইস চেয়ারম্যানসহ গ্রেপ্তার ৪

ছবি

শিবচরে সেতুর পাশ থেকে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন

ছবি

ঠাকুরগাঁওয়ে এক নারী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার গ্রেপ্তার ২

ছবি

টাঙ্গাইল-দেলদুয়ার সড়কের বেইলি ব্রিজের পাটাতনই যেন মরণ ফাঁদ

ছবি

পূর্বধলায় ডাকাতি মামলার প্রধান আসামি বুলবুল গ্রেপ্তার

ছবি

সিলেটে রবিউল দাফনের ১৭ দিন পর জীবিত উদ্ধার

ছবি

গফরগাঁওয়ে দখল-চাঁদাবাজির প্রতিবাদে মানববন্ধন

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু

ছবি

বাগেরহাটে ৪টি সংসদীয় আসন বহাল রাখার দাবিতে অবরোধ-হরতাল

ছবি

ভোমরা বন্দর দিয়ে আদা আমদানি বেড়েছে দশগুণ

ছবি

পাথরঘাটায় ট্রলিং জাহাজের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছোট ট্রলার মালিকদের মানববন্ধন

ছবি

রাউজানে আগুনে পুড়েছে ৫ বসতঘর, দগ্ধ ১

ছবি

শাহজাদপুরে হত্যা মামলায় সাতজনের যাবজ্জীবন

ছবি

সিরাজগঞ্জে কষ্টি পাথরের মূর্তি উদ্ধার, আটক ২

ছবি

স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি সব সময় চলে আসছে-স্বাস্থ্য উপদেষ্টা

ছবি

গোবিন্দগঞ্জ পৌরবাসী স্থায়ী জলাবদ্ধতার শিকার

ছবি

বদ্যুৎস্পৃষ্টে যুবকের মৃত্যু

ছবি

ঈশ্বরদী ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গ্রেপ্তার

ছবি

দখল ও দূষণে বিপর্যস্ত বটিয়াঘাটার খাল

tab

news » bangladesh

অভ্যুত্থান সরকার পরিবর্তন করেছে, চিন্তার পরিবর্তন করতে পারেনি: নারী মুক্তি কেন্দ্র

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

সোমবার, ২৫ আগস্ট ২০২৫

অভ্যুত্থানের পরে নারীরা আশা করেছিল যে, একটি ভয়হীন সমাজ ও রাষ্ট্র পাবে। অথচ অভ্যুত্থানের পর কুমিল্লার মুরাদনগরে নারীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও প্রচার, ভোলায় কিস্তির টাকা দিতে না পারায় ধর্ষণ, পাহাড়ে ত্রিপুরা কিশোরীকে ও তিন সন্তানের জননী খিয়াং নারীকে ধর্ষণ, জয়পুরহাট ও দিনাজপুরে নারীদের ফুটবল খেলা বন্ধ করে দেয়া, কক্সবাজারে পোশাকের কারণে নারীকে হেনস্তা করা, আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া নারীদের সাইবার হয়রানি মাধ্যমে ভয়ংকরভাবে নিপীড়ন- এসব ঘটনা প্রমাণ করে যে, অভ্যুত্থান সরকার পরিবর্তন করেছে, চিন্তার পরিবর্তন করতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্র।

রোববার,(২৪ আগস্ট ২০২৫) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের আয়োজনে ‘২৪ আগস্ট নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবসের ডাক’ শীর্ষক সেমিনারে পেপারে এসব কথা বলে সংগঠনটি। তারা বলেন, নারী সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর হেফাজতে ইসলাম বিরাট সমাবেশ করে কমিশনের প্রধানসহ সব সদস্যের চরিত্র হনন করেছে। সরকার এই কমিশন গঠন করেছিল, অথচ তাদের ওপর এই হীন আক্রমণে সরকার নীরব ভূমিকা পালন করেছে।

এদেশের প্রতিটি গণআন্দোলনে নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে উল্লেখ করে বলেন, ‘তারা আন্দোলন সংগঠিত করেছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন, পুলিশ-ছাত্রলীগের পেটোয়াবাহিনীকে মোকাবিলা করেছেন। আন্দোলনে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে নারীরা রাজনৈতিকভাবে সচেতন হয়েছেন। কিন্তু তাদের এই সচেতনতাই শাসকগোষ্ঠীর জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অভ্যুত্থান ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটায়নি। ফলে নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি আগের মতোই আছে। অভ্যুত্থানের তাৎক্ষণিক প্রয়োজন শেষ হওয়ার পর নারীকে ঘরে ফিরিয়ে নেয়ার, তার বিদ্রোহী কণ্ঠকে স্তব্ধ করার আয়োজন চলেছে। গণঅভ্যুত্থান সফল হওয়ার পর নারী তার অধিকার বুঝে নিতে চাইলে, লড়াইয়ের স্বীকৃতি চাইলে সব দিক থেকে তার ওপর নেমে আসে প্রবল আক্রমণ।’

আগামী সংসদ নির্বাচনে নারীদের ১০০ আসনে সরাসরি নির্বাচনের দাবি করে সংগঠনটির নেতারা বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম আকাক্সক্ষা ছিল নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন। বিগত সময়ে নারীরা সংসদে ছিলেন আলঙ্কারিক অর্থে। কারণ নারী আসনে নিয়োগ দেয়া হতো। তারা সংসদের শোভাবর্ধন করতেন, ভাতা পেতেন। মতামত তৈরিতে তাদের ভূমিকা রাখারও কোনো উপায় ছিল না। মূলত নেতাদের স্ত্রী বা আত্মীয়স্বজনদের নারী আসনে মনোনীত করা হতো। দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ শুদ্ধ আইনসভায় নীতিনির্ধারণ, আইনপ্রণয়নে নারীর কণ্ঠস্বর নিশ্চিত করতে সংরক্ষিত আসনে মনোনয়নের পরিবর্তে সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে নারীবান্ধব রাজনৈতিক পরিবেশ নির্মাণে রাজনৈতিক দলগুলোরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন নারী মুক্তি কেন্দ্র।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া তার আলোচনায় বলেন, ‘নারীর সমানাধিকারের দাবি শুধু নারীদের নয়, পুরুষেরও দাবি। নারীর সমান মূল্যায়ন কতটুকু হয়েছে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, নারীরা নিয়মিত নানমাত্রিক বৈষ্যমের শিকার হচ্ছে। নারী নির্যাতন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নারী নিপীড়নের মাত্র ৩০ শতাংশ পত্রিকায় রিপোর্ট হয়। আসল নিপীড়নের মাত্রা এর চেয়ে অনেক বেশি।

ধর্ষিত নারীকে ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে দেয়া প্রসঙ্গে জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘রেপ ভিক্টিমকে বিয়ে করলে জামিন দেয়া হবে এমন শর্ত দিয়ে ধর্ষকে জামিন দেয়া হচ্ছে। ধর্ষণ, নারী নিপীড়ন আপোসযোগ্য নয়। আদালতের করা আপোস করা নয়। আইনজীবীরা আপোস করার কথা বলেন, এগুলো প্রফেশনাল মিসকন্ডাক্ট। তিনি বলেন, ধর্ষণ পুরুষের অসুস্থ ক্ষমতা প্রদর্শনের নিদর্শন। ধর্ষণ আইনে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখলে ভিক্টিমকে ফেরে ফেলার ঘটনা আরও বাড়বে। মৃত্যুদণ্ড দিয়ে ধর্ষণ কমানো যাবে না।’ বিচারকরাও সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে নন উল্লেখ করে এই আইনজীবী বলেন, ‘আমাদের বিচারকরাও সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে নন। নারী প্রশ্নে তাদের আরও সংবেদনশীল হওয়া উচিত।

আইনজীবী আবেদা বুলবুল বলেন, ‘কয়েক রঙের সরকার দেখেছি, নারী অধিকার ও নিরাপত্তার প্রশ্নে প্রত্যেকের বৈশিষ্ট্য একই। এক সরকার আরেকটার ধারাবাহিকতা।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নারীরা না এলে আন্দোলন বেগবান হতো না। কিন্তু এরপর কোথাও নারী নেই। কোথাও কোথাও টোকেন হিসেব দুই-একজনকে রাখা হচ্ছে। ঐকমত্য কমিশনে কোনো নারী নেই। এই পরিস্থিতিতে নারীরা আজকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, ভীতি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা বলেন, ‘নারীদের ক্ষমতাকাঠামো থেকে সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়া থেকে জোর করে দূরে ঠেলে দেয়া হয়েছে। ৫১ শতাংশ হওয়ার পরও সংখ্যার গুরুত্ব নিয়ে নারীরা জনপরিসরে হাজির হতে পারে না।’ নারীরা প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে থাকলেও, আন্দোলন শেষে পেছনে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

সামিনা লুৎফা আরও বলেন, জুলাই নারীদের বিরুদ্ধে অনলাইনে সম্মিলিত ঘৃণা কর্মসূচি শুরু হয়েছে। যারা পুলিশের গুলি ভয় পায় নাই তারা সাইবার বুলিং ভয় পাচ্ছে।’

নারীদের রাজনৈতিক পরিসরে হাজির করতে রাজনৈতিক দলগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সমী দত্তের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন স্থপতি ফারহানা শারমীন ইমু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুলতানা, মিরনঝিল্লা ভূমি রক্ষা আন্দোলন কমিটির নেত্রী পূজা রানী দাস, অটোচালক শাহেদা আক্তার ও জুলাই আন্দোলনে শহীদ সোহাগের বোন সাথী।

back to top