মধুপুর(টাঙ্গাইল) : মধুপুরে বন গবেষনা কেন্দ্রের এমন জরাজীর্ণ অফিসে চলছে তাদের কার্যক্রম -সংবাদ
দেশের তৃতীয় বৃহত্তম বনাঞ্চল মধুপুরে অবস্থিত বন গবেষণা কেন্দ্রটি জরাজীর্ণ অফিস ভবন ও আবাসন সমস্যা নিয়ে চলছে। ভাঙা জরাজীর্ণ অফিস থেকে শুরু করে স্টাফ কোয়ার্টারের টিনের চালা দরজা জানালা ভেঙে খুলে খুলে পড়ে যাচ্ছে। জোড়াতালি দিয়ে আবাসিক কোয়াটারে বাস করছে স্টাফরা। কোয়ার্টারের কয়েকটির ঘরের দরজা ভেঙে খুলে পড়ে পরিত্যক্ত হয়ে আছে। টিনের চালারও নেই শক্ত অবস্থা। নড়বড়ে মরিচায় ছিদ্র হওয়ায় বৃষ্টিতে পানি ঝরে। কোয়ার্টারের কয়েকটির জানালা বাঁশ কাঠ আর রশি বেঁধে বসবাস করছে এখনকার কর্মকর্তা কর্মচারীরা। এসব সমস্যার মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানালেন মধুপুরের বন গবেষণা কেন্দ্রের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। তাদের দাবি নতুন ভবন, কোয়াটার নির্মাণের। তবে সাময়িক ভাবে সংস্কার জরুরি বলে মনে করছে তারা।
বন গবেষণা কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের এক মাত্র বন গবেষণা কেন্দ্রটি ১৯৬৮ সালে দেশের তৃতীয় বনাঞ্চল টাঙ্গাইলের মধুপুরে প্রতিষ্ঠিত হয়। বন ও বনজ সম্পদ উন্নয়নের লক্ষ্যে স্থাপিত গবেষণা কেন্দ্রটিট স্থাপনের ৫৬ বছর পেড়িয়ে গেলেও নতুন কোন অফিস, আবাসিক কোয়াটার, নার্সারি শেডসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে লাগেনি উন্নয়ন ও আধুনিকতার ছোঁয়া। চার যুগেরও আগে তৈরি করা অফিস থেকে কোয়াটার পর্যন্ত সকল স্থাপনা জরাজীর্ণ। টিন, কাঠ, বিল্ডিংয়ের পলেস্তার, দরজা জানালা খুলে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। অতিকষ্টে কার্যক্রম চালনার পাশাপাশি কোয়ার্টারে বসবাস করছে। বর্ষাকালে কষ্টের মাত্রা কয়েকগুণ বেড়ে যায় বলেও জানালেন তারা। ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠাকালিন সময়ে ৪শ’২৫ একর জায়গা নিয়ে শুরু করে গবেষণা কেন্দ্রটি। টাঙ্গাইল- ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে কাকরাইদ এলাকায় করা হয় অফিস ভবন,গবেষণা কর্মকর্তা, রেঞ্জ, ডেপুটি রেঞ্জ, মাঠ তদন্ত কর্মকর্তার কোয়ার্টারসহ স্টাফ কোয়াটার। করা হয় নার্সারি শেড, বেড ও পানির পাস্প ও একটি মসজিদ। কয়েক যুগ পেড়িয়ে যাওয়ায় স্থাপনাগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় অনেক কষ্টে এখানকার কর্মকর্তা কর্মচারীরা তাদের কার্যক্রম ও কোয়ার্টারগুলোতে বসবাস করছে। কয়েকটি কোয়াটার ইতিমধ্যে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে বলেও জানালেন গবেষণা কর্মকর্তা।
গবেষণা কেন্দ্রের জমি বন বিভাগ ফেরত নেওয়ার পর বর্তমানে ৯১ একর জায়গায় চলছে কার্যক্রম। এ কেন্দ্রের নয়টি পদের বিপরীতে গবেষণা কর্মকর্তা, ডেপুটি রেঞ্জ কর্মকর্তা, নার্সারি সুপার ও একজন বীজ সংগ্রহকারি রয়েছে। স্বল্প জনবল, গাড়ী, কোয়াটারের সড়ক পাকা না থাকার পরও তাদের সফলতার কথা জানালেন গবেষণা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজিজুল হক। তিনি জানালেন,বিলুপ্ত প্রায় দেশি প্রজাতির পরিবেশ সম্মত চারা উত্তোলন বিতরণ নিয়মিত চলে। অফিস এরিয়া ও আশপাশে পাম ওয়েলের সৃজিত বাগানে ফল ধরা শুরু হয়েছে। এ বৃক্ষ ও ফলকে প্রক্রিয়াজাত করতে পারলে তেলের আমদানি নির্ভরতা কমানো যাবে বলে তার ধারনা। এ অঞ্চলের লাল মাটি আবহাওয়া সাথে পামওয়েল মানানসই। এছাড়াও লম্বু, আগর, নালিতা, শাল এসোসিয়েট জাতীয় লোহা, চাপালিশ, গামারি, তেলসুর, তুন, চিকরাশি তাদের গবেষণার মধ্যে অন্যতম বলে তিনি জানান।
এসোসিয়েট ন্যাচারাল রিজেনারেশনের কথা উল্লেখ করে বলেন, দুই একর জায়গায় তাদের গবেষণা চলছে। বৃক্ষের ফুল ফল বাতাস, ঝড়, বৃষ্টিতে উড়ে এসে আপনাআপনি গাছ গজানোর কার্যক্রম।
তালগাছ বজ্রপাত প্রতিরোধক থাকলেও তারা বোদ্ধ নারিকেলি ব্রক্ষের ২ হেক্টর বাগান পরিকল্পনার কথা জানিয়ে বলেন, এ বৃক্ষ বজ্রপাত প্রতিরোধক। এ গাছের উৎপাদন বিতরণ কার্যক্রম করা গেলে বজ্র প্রতিরোধক হবে বলেও জানান।
এছাড়াও তারা শালবনের মিশ্র বাগান নিয়েও কাজ করেন জানিয়ে বলেন, মধুপুর এ বন গবেষণা কেন্দ্রে দেশের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্রগ্রাম, খুলনাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা প্রতিবছর আসে। এ কেন্দ্রের মাধ্যমে এনজিও, কৃষক, নার্সারির মালিকদের প্রশিক্ষণও দিয়ে থাকে।
মধুপুর বন গবেষণা কেন্দ্রের নার্সারি সুপার ভাইজার খলিলুর রহমান জানান, তার থাকার কোয়ার্টারের জানালাগুলো ভাঙা রশি দিয়ে বেঁধে বসবাস করে। নার্সারি শেড, বেড অনেক আগের। বেড়াগুলোও পুরানো। অফিস থেকে শুরু করে পুরো ক্যাম্পাসের কোয়ার্টার জরাজীর্ণ। কয়েকটি পরিত্যক্ত। বর্ষাকালে পরিবার পরিজন নিয়ে তাদের কষ্ট হয় বলেও জানান। তার দাবি, অফিস ও কোয়াটারগুলো সংস্কার করা প্রয়োজন।
গবেষণা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজিজুল হক বলেন, বৃহত্তর ময়মনসিংহের মধ্যে এটি এক মাত্র বন গবেষণা কেন্দ্র। অফিস ভবনের মাটি পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য নেয়া হলেও নতুন ভবনের অনুমোদন তারা পাননি। তবে দীর্ঘ দিনের পুরাতন জরাজীর্ণ অফিস ও কোয়ার্টার। টিনের চাল, ঘরের পরেস্তার, জানালা দরজাসহ অবকাঠামোতে তাদের কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে নানা কষ্টে। তিনি অফিস কোয়ার্টারসহ অবকাঠামো উন্নয়ন ও সংস্কারের দাবি করেন। স্টাফদের জন্য যানবাহন প্রয়োজন বলেও মনে করেন।
টাঙ্গাইল উত্তরের সহকারী বন সংরক্ষক আশিকুর রহমান বলেন, বন উন্নয়নের ক্ষেত্রে বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের অবদান অনেক। যেখানে পদ্ধতি ও প্রজাতি নিয়ে করা হয়। বন ও বনজ সম্পদ উন্নয়নে বন গবেষণার গুরুত্ব অপরিসীম।
মধুপুর(টাঙ্গাইল) : মধুপুরে বন গবেষনা কেন্দ্রের এমন জরাজীর্ণ অফিসে চলছে তাদের কার্যক্রম -সংবাদ
সোমবার, ২৫ আগস্ট ২০২৫
দেশের তৃতীয় বৃহত্তম বনাঞ্চল মধুপুরে অবস্থিত বন গবেষণা কেন্দ্রটি জরাজীর্ণ অফিস ভবন ও আবাসন সমস্যা নিয়ে চলছে। ভাঙা জরাজীর্ণ অফিস থেকে শুরু করে স্টাফ কোয়ার্টারের টিনের চালা দরজা জানালা ভেঙে খুলে খুলে পড়ে যাচ্ছে। জোড়াতালি দিয়ে আবাসিক কোয়াটারে বাস করছে স্টাফরা। কোয়ার্টারের কয়েকটির ঘরের দরজা ভেঙে খুলে পড়ে পরিত্যক্ত হয়ে আছে। টিনের চালারও নেই শক্ত অবস্থা। নড়বড়ে মরিচায় ছিদ্র হওয়ায় বৃষ্টিতে পানি ঝরে। কোয়ার্টারের কয়েকটির জানালা বাঁশ কাঠ আর রশি বেঁধে বসবাস করছে এখনকার কর্মকর্তা কর্মচারীরা। এসব সমস্যার মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানালেন মধুপুরের বন গবেষণা কেন্দ্রের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। তাদের দাবি নতুন ভবন, কোয়াটার নির্মাণের। তবে সাময়িক ভাবে সংস্কার জরুরি বলে মনে করছে তারা।
বন গবেষণা কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের এক মাত্র বন গবেষণা কেন্দ্রটি ১৯৬৮ সালে দেশের তৃতীয় বনাঞ্চল টাঙ্গাইলের মধুপুরে প্রতিষ্ঠিত হয়। বন ও বনজ সম্পদ উন্নয়নের লক্ষ্যে স্থাপিত গবেষণা কেন্দ্রটিট স্থাপনের ৫৬ বছর পেড়িয়ে গেলেও নতুন কোন অফিস, আবাসিক কোয়াটার, নার্সারি শেডসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে লাগেনি উন্নয়ন ও আধুনিকতার ছোঁয়া। চার যুগেরও আগে তৈরি করা অফিস থেকে কোয়াটার পর্যন্ত সকল স্থাপনা জরাজীর্ণ। টিন, কাঠ, বিল্ডিংয়ের পলেস্তার, দরজা জানালা খুলে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। অতিকষ্টে কার্যক্রম চালনার পাশাপাশি কোয়ার্টারে বসবাস করছে। বর্ষাকালে কষ্টের মাত্রা কয়েকগুণ বেড়ে যায় বলেও জানালেন তারা। ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠাকালিন সময়ে ৪শ’২৫ একর জায়গা নিয়ে শুরু করে গবেষণা কেন্দ্রটি। টাঙ্গাইল- ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে কাকরাইদ এলাকায় করা হয় অফিস ভবন,গবেষণা কর্মকর্তা, রেঞ্জ, ডেপুটি রেঞ্জ, মাঠ তদন্ত কর্মকর্তার কোয়ার্টারসহ স্টাফ কোয়াটার। করা হয় নার্সারি শেড, বেড ও পানির পাস্প ও একটি মসজিদ। কয়েক যুগ পেড়িয়ে যাওয়ায় স্থাপনাগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় অনেক কষ্টে এখানকার কর্মকর্তা কর্মচারীরা তাদের কার্যক্রম ও কোয়ার্টারগুলোতে বসবাস করছে। কয়েকটি কোয়াটার ইতিমধ্যে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে বলেও জানালেন গবেষণা কর্মকর্তা।
গবেষণা কেন্দ্রের জমি বন বিভাগ ফেরত নেওয়ার পর বর্তমানে ৯১ একর জায়গায় চলছে কার্যক্রম। এ কেন্দ্রের নয়টি পদের বিপরীতে গবেষণা কর্মকর্তা, ডেপুটি রেঞ্জ কর্মকর্তা, নার্সারি সুপার ও একজন বীজ সংগ্রহকারি রয়েছে। স্বল্প জনবল, গাড়ী, কোয়াটারের সড়ক পাকা না থাকার পরও তাদের সফলতার কথা জানালেন গবেষণা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজিজুল হক। তিনি জানালেন,বিলুপ্ত প্রায় দেশি প্রজাতির পরিবেশ সম্মত চারা উত্তোলন বিতরণ নিয়মিত চলে। অফিস এরিয়া ও আশপাশে পাম ওয়েলের সৃজিত বাগানে ফল ধরা শুরু হয়েছে। এ বৃক্ষ ও ফলকে প্রক্রিয়াজাত করতে পারলে তেলের আমদানি নির্ভরতা কমানো যাবে বলে তার ধারনা। এ অঞ্চলের লাল মাটি আবহাওয়া সাথে পামওয়েল মানানসই। এছাড়াও লম্বু, আগর, নালিতা, শাল এসোসিয়েট জাতীয় লোহা, চাপালিশ, গামারি, তেলসুর, তুন, চিকরাশি তাদের গবেষণার মধ্যে অন্যতম বলে তিনি জানান।
এসোসিয়েট ন্যাচারাল রিজেনারেশনের কথা উল্লেখ করে বলেন, দুই একর জায়গায় তাদের গবেষণা চলছে। বৃক্ষের ফুল ফল বাতাস, ঝড়, বৃষ্টিতে উড়ে এসে আপনাআপনি গাছ গজানোর কার্যক্রম।
তালগাছ বজ্রপাত প্রতিরোধক থাকলেও তারা বোদ্ধ নারিকেলি ব্রক্ষের ২ হেক্টর বাগান পরিকল্পনার কথা জানিয়ে বলেন, এ বৃক্ষ বজ্রপাত প্রতিরোধক। এ গাছের উৎপাদন বিতরণ কার্যক্রম করা গেলে বজ্র প্রতিরোধক হবে বলেও জানান।
এছাড়াও তারা শালবনের মিশ্র বাগান নিয়েও কাজ করেন জানিয়ে বলেন, মধুপুর এ বন গবেষণা কেন্দ্রে দেশের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্রগ্রাম, খুলনাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা প্রতিবছর আসে। এ কেন্দ্রের মাধ্যমে এনজিও, কৃষক, নার্সারির মালিকদের প্রশিক্ষণও দিয়ে থাকে।
মধুপুর বন গবেষণা কেন্দ্রের নার্সারি সুপার ভাইজার খলিলুর রহমান জানান, তার থাকার কোয়ার্টারের জানালাগুলো ভাঙা রশি দিয়ে বেঁধে বসবাস করে। নার্সারি শেড, বেড অনেক আগের। বেড়াগুলোও পুরানো। অফিস থেকে শুরু করে পুরো ক্যাম্পাসের কোয়ার্টার জরাজীর্ণ। কয়েকটি পরিত্যক্ত। বর্ষাকালে পরিবার পরিজন নিয়ে তাদের কষ্ট হয় বলেও জানান। তার দাবি, অফিস ও কোয়াটারগুলো সংস্কার করা প্রয়োজন।
গবেষণা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজিজুল হক বলেন, বৃহত্তর ময়মনসিংহের মধ্যে এটি এক মাত্র বন গবেষণা কেন্দ্র। অফিস ভবনের মাটি পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য নেয়া হলেও নতুন ভবনের অনুমোদন তারা পাননি। তবে দীর্ঘ দিনের পুরাতন জরাজীর্ণ অফিস ও কোয়ার্টার। টিনের চাল, ঘরের পরেস্তার, জানালা দরজাসহ অবকাঠামোতে তাদের কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে নানা কষ্টে। তিনি অফিস কোয়ার্টারসহ অবকাঠামো উন্নয়ন ও সংস্কারের দাবি করেন। স্টাফদের জন্য যানবাহন প্রয়োজন বলেও মনে করেন।
টাঙ্গাইল উত্তরের সহকারী বন সংরক্ষক আশিকুর রহমান বলেন, বন উন্নয়নের ক্ষেত্রে বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের অবদান অনেক। যেখানে পদ্ধতি ও প্রজাতি নিয়ে করা হয়। বন ও বনজ সম্পদ উন্নয়নে বন গবেষণার গুরুত্ব অপরিসীম।