ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের শহিদ আরাফাত মুন্সির বাবা ভ্যানচালক স্বপন মুন্সিকে (৩৬) মারপিট করা হয়েছে।
স্বপন মুন্সির মা বেগমের (৭০) একটি আহাজারি ভিডিও সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে গত শনিবার বিকেলে আপ করা হয়। ২৫ সেকেন্ডের এ ভিডিও মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে ও ভাইরাল হয়। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, স্বপন মুন্সির মা আমার ছাওয়াল স্বপন মুন্সি বলে আহাজারি করছেন। তার বাড়ি বণগ্রামে। তার ছেলে ভ্যান চালায় । তার কাছে ৩০ টাহা পাত ওর কাছে , তারা ওরে মারছে। আমার ছাওয়াল শ্যাস হয়ে গেছে।
এ ঘটনাটি ঘটেছে, গত শনিবার দুপুর আড়াইটায় গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের বড় বণগ্রামের মুন্সিবাড়ি ব্রিজ এলাকায়।
আহত স্বপন মুন্সি ছোট বণগ্রামের সাত্তার মুন্সির ছেলে। কিশোর আরাফাত মুন্সি (১৪) জুলাই আন্দোলনে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আশুলিয়া থানার সামনে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন। তারপর থেকে আরাফাতের বাবা স্বপন মুন্সি ও মা মায়া আক্তার ছোট বণগ্রামের বাড়িতে বসবাস করছেন।
গত শনিবার রাতে এ ঘটনায় স্বপন মুন্সির স্ত্রী মায়া আক্তার বাদী হয়ে মুকসুদপুর থানায় আ. ছামাদ শেখ (৫৫) , তার ছেলে জসিম শেখ (২৫), রাসেল শেখ (২২), রাজ শেখ (১৬) ও ভাই ইছাহাক শেখ (৬০)সহ ৬ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ তাৎক্ষনিকভাবে প্রধান আসামি আ. ছামাদ শেখকে গ্রেপ্তার করে। তাকে সোমবার, (২৫ আগস্ট ২০২৫) আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আহত স্বপন মুন্সিকে মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। আহত স্বপন মুন্সি অভিযোগ করে বলেন, গত বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বড় বণগ্রামের মুন্সিবাড়ি ব্রিজ থেকে ছামাদ ও তার ছেলে কাঁঠাল নিয়ে আমার ভ্যানে ওঠেন। বণগ্রাম বাজারে এসে নামেন। তারা আমাকে ৫০ টাকার একটি নোট দিয়ে ৩০ টাকা রাখতে বলে। আমার কাছে খুচরা টাকা ছিল না। তাই ২০ টাকা ফেরত দিতে পরিনি। বাজারে ভিরের কারণে টাকা না দিয়ে চলে যাই। গত শনিবার দুপুরে আমি ভ্যানে যাত্রী নিয়ে মুন্সিবাড়ি ব্রিজের পাশ দিয়ে বাটিকামারী যাচ্ছিলাম। তখন ছামাদ আমার ভ্যানের গতিরোধ করে পাওনা ২০ টাকা চেয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ছামাদ ও তার ৩ ছেলেসহ ৫/৬ জন আমাকে বেদম মারপিট করে। একপর্যায়ে তারা ইট দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করে। পরে আমি অজ্ঞান হয়ে পরি। স্থানীয়রা আমাকে ভ্যানসহ উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।
স্বপন মুন্সির বৃদ্ধ মা বেগম (৭০) বলেন, আমার ছাওয়ালরে অনেক মারছে। সে মইরে যাত। তার অবস্থা খারাপ। আমি এডার বিচার চাই। মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবারপরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রায়হান ইসলাম শোভন বলেন, আহত স্বপন মুন্সির শরীরে ২/৩ জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে কোনোটাই গুরুতর নয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মুকসুদপুর থানার এসআই মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মামলা দায়েরের পর প্রধান আসামিকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত ছামাদকে আদালতের মাধ্যমে সোমবার গোপালগঞ্জ জেলা কারগারে পাঠানো হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক গ্রামবাসী জানান, ১০/১৫ দিন আগে ছামাদ ৫০ টাকায় স্বপন মুন্সির কাছে ১টি কাঁঠাল বিক্রি করেন। তখন ৩০ টাকা পরিশোধ করে স্বপন। তখন স্বপন ২০ টাকা বাকি রাখেন। গত শনিবার মুন্সিবাড়ি ব্রিজের কাছে স্বপনকে পেয়ে পাওয়া ২০ টাকা চান ছামাদ। এ নিয়ে ২ জনের মধ্যে বিত-ার একপর্যায়ে স্বপন ক্ষিপ্ত হয়ে ছামাদের গলা চেপে ধরেন। পরে ছামাদের ছেলে জসিম শেখ (২৫), রাসেল শেখ (২২), রাজ শেখ (১৬) এগিয়ে আসে। এ সময় তাদের মধ্যে মারামারি হয়।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আশুলিয়া থানার সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে কিশোর আরাফাত মুন্সী (১৪) নিহত হন। তিনি আশুলিয়ার বার্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিলেন। তার বাবা স্বপন মুন্সি পেশায় রিক্সাচালক এবং মা মায়া আক্তার একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। আরাফাত বাবামায়ের সঙ্গে আশুলিয়ায় বসবাস করতো। আরাফাত মুন্সির মরদেহ ছোট বণগ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়। তারপর থেকে আরাফাতের মা-বাবা গ্রামের বাড়িতেই বসবাস করছেন। আরাফাতকে ‘জুলাই শহীদ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। সরকার প্রকাশিত গেজেটে তার ক্রমিক নম্বর ৭৫।
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
সোমবার, ২৫ আগস্ট ২০২৫
তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের শহিদ আরাফাত মুন্সির বাবা ভ্যানচালক স্বপন মুন্সিকে (৩৬) মারপিট করা হয়েছে।
স্বপন মুন্সির মা বেগমের (৭০) একটি আহাজারি ভিডিও সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে গত শনিবার বিকেলে আপ করা হয়। ২৫ সেকেন্ডের এ ভিডিও মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে ও ভাইরাল হয়। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, স্বপন মুন্সির মা আমার ছাওয়াল স্বপন মুন্সি বলে আহাজারি করছেন। তার বাড়ি বণগ্রামে। তার ছেলে ভ্যান চালায় । তার কাছে ৩০ টাহা পাত ওর কাছে , তারা ওরে মারছে। আমার ছাওয়াল শ্যাস হয়ে গেছে।
এ ঘটনাটি ঘটেছে, গত শনিবার দুপুর আড়াইটায় গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের বড় বণগ্রামের মুন্সিবাড়ি ব্রিজ এলাকায়।
আহত স্বপন মুন্সি ছোট বণগ্রামের সাত্তার মুন্সির ছেলে। কিশোর আরাফাত মুন্সি (১৪) জুলাই আন্দোলনে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আশুলিয়া থানার সামনে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন। তারপর থেকে আরাফাতের বাবা স্বপন মুন্সি ও মা মায়া আক্তার ছোট বণগ্রামের বাড়িতে বসবাস করছেন।
গত শনিবার রাতে এ ঘটনায় স্বপন মুন্সির স্ত্রী মায়া আক্তার বাদী হয়ে মুকসুদপুর থানায় আ. ছামাদ শেখ (৫৫) , তার ছেলে জসিম শেখ (২৫), রাসেল শেখ (২২), রাজ শেখ (১৬) ও ভাই ইছাহাক শেখ (৬০)সহ ৬ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ তাৎক্ষনিকভাবে প্রধান আসামি আ. ছামাদ শেখকে গ্রেপ্তার করে। তাকে সোমবার, (২৫ আগস্ট ২০২৫) আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আহত স্বপন মুন্সিকে মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। আহত স্বপন মুন্সি অভিযোগ করে বলেন, গত বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বড় বণগ্রামের মুন্সিবাড়ি ব্রিজ থেকে ছামাদ ও তার ছেলে কাঁঠাল নিয়ে আমার ভ্যানে ওঠেন। বণগ্রাম বাজারে এসে নামেন। তারা আমাকে ৫০ টাকার একটি নোট দিয়ে ৩০ টাকা রাখতে বলে। আমার কাছে খুচরা টাকা ছিল না। তাই ২০ টাকা ফেরত দিতে পরিনি। বাজারে ভিরের কারণে টাকা না দিয়ে চলে যাই। গত শনিবার দুপুরে আমি ভ্যানে যাত্রী নিয়ে মুন্সিবাড়ি ব্রিজের পাশ দিয়ে বাটিকামারী যাচ্ছিলাম। তখন ছামাদ আমার ভ্যানের গতিরোধ করে পাওনা ২০ টাকা চেয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ছামাদ ও তার ৩ ছেলেসহ ৫/৬ জন আমাকে বেদম মারপিট করে। একপর্যায়ে তারা ইট দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করে। পরে আমি অজ্ঞান হয়ে পরি। স্থানীয়রা আমাকে ভ্যানসহ উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।
স্বপন মুন্সির বৃদ্ধ মা বেগম (৭০) বলেন, আমার ছাওয়ালরে অনেক মারছে। সে মইরে যাত। তার অবস্থা খারাপ। আমি এডার বিচার চাই। মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবারপরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রায়হান ইসলাম শোভন বলেন, আহত স্বপন মুন্সির শরীরে ২/৩ জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে কোনোটাই গুরুতর নয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মুকসুদপুর থানার এসআই মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মামলা দায়েরের পর প্রধান আসামিকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত ছামাদকে আদালতের মাধ্যমে সোমবার গোপালগঞ্জ জেলা কারগারে পাঠানো হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক গ্রামবাসী জানান, ১০/১৫ দিন আগে ছামাদ ৫০ টাকায় স্বপন মুন্সির কাছে ১টি কাঁঠাল বিক্রি করেন। তখন ৩০ টাকা পরিশোধ করে স্বপন। তখন স্বপন ২০ টাকা বাকি রাখেন। গত শনিবার মুন্সিবাড়ি ব্রিজের কাছে স্বপনকে পেয়ে পাওয়া ২০ টাকা চান ছামাদ। এ নিয়ে ২ জনের মধ্যে বিত-ার একপর্যায়ে স্বপন ক্ষিপ্ত হয়ে ছামাদের গলা চেপে ধরেন। পরে ছামাদের ছেলে জসিম শেখ (২৫), রাসেল শেখ (২২), রাজ শেখ (১৬) এগিয়ে আসে। এ সময় তাদের মধ্যে মারামারি হয়।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আশুলিয়া থানার সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে কিশোর আরাফাত মুন্সী (১৪) নিহত হন। তিনি আশুলিয়ার বার্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিলেন। তার বাবা স্বপন মুন্সি পেশায় রিক্সাচালক এবং মা মায়া আক্তার একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। আরাফাত বাবামায়ের সঙ্গে আশুলিয়ায় বসবাস করতো। আরাফাত মুন্সির মরদেহ ছোট বণগ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়। তারপর থেকে আরাফাতের মা-বাবা গ্রামের বাড়িতেই বসবাস করছেন। আরাফাতকে ‘জুলাই শহীদ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। সরকার প্রকাশিত গেজেটে তার ক্রমিক নম্বর ৭৫।