রাজধানীর বাজারগুলোতে মানভেদে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়। যদিও গত বছরের এই সময়ে প্রতি কেজি আলুর দাম ছিল প্রায় তিনগুণ। আলুর এমন দরপতনে উৎপাদন খরচই উঠছে না কৃষকের। বড় অঙ্কের লোকসানে পড়েছেন আলু ব্যবসার সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে যুক্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে হিমাগার মালিকরাও।
দেশে আলুর বার্ষিক চাহিদা কমবেশি ৯০ লাখ টন, চলতি বছর উৎপাদন ১ কোটি ২৯ লাখ টন
আলুর ন্যূনতম দাম বেঁধে দেয়ার সুপারিশ হিমাগার মালিকদের
সরকারি বিভিন্ন সংস্থার রেশন ব্যবস্থায় আলু যুক্ত করার পরামর্শ
সরকারিভাবে আলু কেনার কথা জানালেন উপদেষ্টা
কৃষক ও ব্যবসায়ীদের এই দুরবস্থার প্রধান কারণ বাড়তি উৎপাদন। গতবার বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় কৃষক এবার উৎপাদন বাড়িয়ে দেন। ফলে এ বছর চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি আলু উৎপাদন হয়েছে।
কৃষি অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এবার দাম না পেয়ে বড় লোকসান হলে আগামী বছর কৃষক আলুর উৎপাদন আবার কমিয়ে দেবেন। তারা বলছেন এটা উৎপাদন ব্যবস্থাপনার বড় ব্যর্থতা। কৃষকদের বড় অঙ্কের লোকসান থেকে বাঁচাতে সরকারের পক্ষ থেকে মূল্য সহায়তা দেয়ার কথাও বলছেন তারা।
দেশের বিভিন্ন এলাকার চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর এক কেজি আলু উৎপাদন করতে ৮-৯ টাকা খরচ হয়েছে। হিমাগার ভাড়া কেজিতে ৬ টাকা। বস্তা কেনাসহ পরিবহন ও শ্রমিক খরচ মিলিয়ে রয়েছে আরও তিন টাকা। অর্থাৎ একজন কৃষকের উৎপাদন থেকে হিমাগারে এক কেজি আলু সংরক্ষণ করতে ১৮-২০ টাকা খরচ হয়। সংরক্ষণের পাঁচ মাস পরে এখন হিমাগারে পাইকারিতে সাড়ে ১৫ থেকে ১৬ টাকা কেজি দরে আলু বেচাকেনা হচ্ছে। অর্থাৎ প্রতি কেজি আলুতে ৪-৫ টাকার মতো লোকসান গুনতে হচ্ছে।
আর যেসব কৃষক বা ব্যবসায়ী আলু কিনে হিমাগারে রাখেন তাদের খরচ বেশি হয়। কৃষকের খরচ যেখানে ১৮-২০ টাকা সেখানে ওই ব্যবসায়ীদের গুনতে হয় ২২-২৪ টাকা। তাদের লোকসান প্রতি কেজিতে ১০ টাকা।
কৃষকের দুরবস্থা
রংপুরের পীরগঞ্জের চতরা বাজারে আলু বিক্রি করতে আসা কৃষক প্রদীপ চন্দ্র বলেন, ‘কিছু আলু জমিতে বিক্রি করেছি, তাতে উৎপাদন খরচ ওঠেনি। লাভের আশায় ধারদেনা করে হিমাগারে আলু রেখেছি। কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষণ করা বস্তাপ্রতি খরচ হয়েছে এক হাজার ৩০০ টাকা। বর্তমানে কোল্ড স্টোরেজে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতি বস্তা আলু। এতে বস্তাপ্রতি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা গচ্চা যাচ্ছে। অন্যান্য বছর লাভবান না হলেও মূলধন টিকানো গেছে। কিন্তু এ বছর আলু উৎপাদন করে মূলধন হারাতে হচ্ছে।’
ওই এলাকার আলুচাষি আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আমি এ বছর দেড় একর জমিতে আলুর আবাদ করেছি। বাড়ির নিকট স্টোরেজে সব আলু রেখেছি। এখন আমার মূলধন হারাতে হবে।’
দেশের অন্যতম শীর্ষ আলু উৎপাদনের জেলা মুন্সীগঞ্জ। সেখানকার কৃষক আবেদ আলী বলেন, ‘যদি সরকার দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে নভেম্বরের মধ্যে নতুন আলু বাজারে চলে আসবে। তখন পুরনো আলু নদীতে ফেলে দিতে হবে। আমরা চাই, সরকার আলু রপ্তানি করুক বা ভিজিএফের মাধ্যমে বিতরণ করুক। তাহলে কৃষক উপকৃত হবেন।’
জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার কৃষক চঞ্চল হোসেন বলেন, ‘আট বিঘা জমিতে কার্ডিনাল আলু লাগিয়েছি। প্রতি কেজি বীজ ১১০ টাকা দরে কিনেছি, সারসহ অন্যান্য খরচও বেশি হয়েছে। খরচ পড়েছে কেজিপ্রতি ২২ টাকা। এখন আলু বিক্রি করতে হচ্ছে ১০ টাকায়। গত বছর এই সময়ে কেজিপ্রতি আলু ৪৫-৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।’
আলুর উৎপাদন সবচেয়ে বেশি হয় মুন্সীগঞ্জ, রংপুর, বগুড়া, রাজশাহী, নওগাঁ ও জয়পুরহাট জেলায়।
#### দেশে আলুর চাহিদা ও উৎপাদন কত?
বাংলাদেশে যে পরিমাণ আলু উৎপাদন হয় তার এক শতাংশও রপ্তানি হয় না। যে কারণে আলু উৎপাদনে বাংলাদেশ সপ্তম হলেও দশটি রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে বাংলাদেশের নাম নেই।
দেশে আলুর সর্বোচ্চ বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৯০ লাখ টন। কিন্তু কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে আলু উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ২৯ লাখ টন, যা গত বছরের চেয়ে ২৩ লাখ টন বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আলুর উৎপাদন ছিল ১ কোটি ৬ লাখ টন।
হিমাগার মালিকদের সংগঠন বলছে, দেশের ৩৫৩টি হিমাগারে সংরক্ষিত আলুর পরিমাণ ৩৪ লাখ ৯০ হাজার টনের বেশি। যেখানে গত বছর সংরক্ষিত আলুর পরিমাণ ছিল সাড়ে ২৪ লাখ টন। এখন পর্যন্ত হিমাগার থেকে মাত্র ১৫ শতাংশ আলু বের হয়েছে। অথচ গত বছর একই সময়ে ৪৮ শতাংশ আলু বাজারে নিয়েছিলেন কৃষকরা।
সারাদেশে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের করা ৬৫৩টি মডেল ঘর আছে। সেখানকার প্রতিটি ঘরে অন্তত ৩০ টন আলু সংরক্ষণ করছেন কৃষকরা।
কৃষি অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আগেও এমন হয়েছে। আমাদের দেশে চাহিদার চেয়ে আলুর উৎপাদন বেশি। আবার রপ্তানি ও আলু প্রক্রিয়াকরণে আমরা অনেক পিছিয়ে। সবচেয়ে বড় কথা আলু প্রক্রিয়াকরণ সুবিধা ও রপ্তানি না বাড়িয়ে উৎপাদন বাড়িয়ে লাভ নেই।’
##### টিসিবির মাধ্যমে আলু বিক্রির প্রস্তাব
রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে আলু বিক্রির একটি প্রস্তাব সরকারের বিবেচনাধীন। তেল, চিনি, ডালের সঙ্গে আলু দেয়ার দাবি করেছে হিমাগার মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন। তারা অর্থ, খাদ্য, বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে।
হিমাগার মালিকদের ওই সংগঠন বলছে, দেশে এবার চাহিদার তুলনায় ৪০ লাখ টন বেশি আলু উৎপাদন হয়েছে। এখন কোল্ড স্টোরেজ গেটে এলাকাভেদে আলু বিক্রি হচ্ছে ১৩ থেকে ১৫ টাকা। অথচ এক কেজি আলুর এবার উৎপাদন খরচ অন্তত ১৭ টাকার বেশি। এর সঙ্গে হিমাগার ভাড়া ও আনুষঙ্গিক খরচ যোগ করলে এ খরচ দাঁড়ায় ২৫ টাকা।
কোল্ডস্টোরেজ বা হিমাগার মালিক সমিতির সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী সংবাদকে বলেন, ‘কৃষক দাম না পেলে আমরাও ভাড়া পাব না। আট মাস আলু সংরক্ষণ করে আমাদের দুই হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হবে। হিমাগারশিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। আমরা ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে পারব না।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচিতে আলু বিতরণ করা হলে অতিরিক্ত আলু সরবরাহ হয়ে যেত। কৃষকও বাঁচতো।’
তিনি বলেন, ‘গত বছর যখন আলুর দাম বেড়ে গেল, তখন সরকার দাম বেঁধে দিয়েছে। কোল্ড স্টোরেজে অভিযান চালিয়েছে। এবার কমে গেলেও কৃষকের দায়িত্ব সরকারের নেয়া উচিত।’
#### কেন বাড়ছে না রপ্তানি?
এখন পর্যন্ত দেশে ৯১টি নতুন আলুর জাত অবমুক্ত করা হয়েছে। ২৬ বছর ধরে রপ্তানি হলেও দেশের বাজারের রপ্তানি উপযোগী জাতের অভাব রয়ে গেছে। জাতের এ সংকটের কারণে রপ্তানিকারকরা বিদেশি ক্রেতার চাহিদা পূরণ করতে পারছেন না।
বাংলাদেশ আলু রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি ও ফেরদৌস বায়োটেক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ড. ফেরদৌসী বেগম সংবাদকে বলেন, ‘বাংলাদেশের আলুতে শুষ্ক পদার্থের উপস্থিতি কম থাকায় যখন এ আলু দিয়ে শিল্প-কারখানায় চিপস বা ফ্রেঞ্চ ফ্রাই বানানো হয়, সেটা জ্বালানি সাশ্রয়ী হয় না। এছাড়া ওইসব আলুতে স্টার্চ বেশি বলে মচমচে হয় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাল্টিপারপাস কোল্ড স্টোরেজ করতে হবে। আর কৃষকদের প্রচুর ট্রেনিং করাতে হবে, সঙ্গে প্রচুর সহায়তা দিতে হবে।’
‘তবে কোনো ব্যবস্থাই কার্যকর হবে না যদি জেলার জোনিংটা ঠিকভাবে করা না হয়। জোনিংয়ের ফলে; সারাদেশের কোন জেলার কতটুকু জমিতে আলু চাষ করা যাবে তা নির্ধারণ করে দেয়া হলে মৌসুম ভেদে আলুর উৎপাদনে তারতম্য কমে যাবে,’ বলে তার পরামর্শ।
### আলু কেনার কথা ভাবছে সরকার
কৃষি উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, এ বছর উৎপাদন বেশি হওয়ায় কৃষকরা আলুর দাম পাচ্ছে না। তাদের ক্ষতি কমাতে সরকারিভাবে কিছু আলু কেনা হবে।
সোমবার, ২৫ আগস্ট ২০২৫
রাজধানীর বাজারগুলোতে মানভেদে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়। যদিও গত বছরের এই সময়ে প্রতি কেজি আলুর দাম ছিল প্রায় তিনগুণ। আলুর এমন দরপতনে উৎপাদন খরচই উঠছে না কৃষকের। বড় অঙ্কের লোকসানে পড়েছেন আলু ব্যবসার সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে যুক্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে হিমাগার মালিকরাও।
দেশে আলুর বার্ষিক চাহিদা কমবেশি ৯০ লাখ টন, চলতি বছর উৎপাদন ১ কোটি ২৯ লাখ টন
আলুর ন্যূনতম দাম বেঁধে দেয়ার সুপারিশ হিমাগার মালিকদের
সরকারি বিভিন্ন সংস্থার রেশন ব্যবস্থায় আলু যুক্ত করার পরামর্শ
সরকারিভাবে আলু কেনার কথা জানালেন উপদেষ্টা
কৃষক ও ব্যবসায়ীদের এই দুরবস্থার প্রধান কারণ বাড়তি উৎপাদন। গতবার বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় কৃষক এবার উৎপাদন বাড়িয়ে দেন। ফলে এ বছর চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি আলু উৎপাদন হয়েছে।
কৃষি অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এবার দাম না পেয়ে বড় লোকসান হলে আগামী বছর কৃষক আলুর উৎপাদন আবার কমিয়ে দেবেন। তারা বলছেন এটা উৎপাদন ব্যবস্থাপনার বড় ব্যর্থতা। কৃষকদের বড় অঙ্কের লোকসান থেকে বাঁচাতে সরকারের পক্ষ থেকে মূল্য সহায়তা দেয়ার কথাও বলছেন তারা।
দেশের বিভিন্ন এলাকার চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর এক কেজি আলু উৎপাদন করতে ৮-৯ টাকা খরচ হয়েছে। হিমাগার ভাড়া কেজিতে ৬ টাকা। বস্তা কেনাসহ পরিবহন ও শ্রমিক খরচ মিলিয়ে রয়েছে আরও তিন টাকা। অর্থাৎ একজন কৃষকের উৎপাদন থেকে হিমাগারে এক কেজি আলু সংরক্ষণ করতে ১৮-২০ টাকা খরচ হয়। সংরক্ষণের পাঁচ মাস পরে এখন হিমাগারে পাইকারিতে সাড়ে ১৫ থেকে ১৬ টাকা কেজি দরে আলু বেচাকেনা হচ্ছে। অর্থাৎ প্রতি কেজি আলুতে ৪-৫ টাকার মতো লোকসান গুনতে হচ্ছে।
আর যেসব কৃষক বা ব্যবসায়ী আলু কিনে হিমাগারে রাখেন তাদের খরচ বেশি হয়। কৃষকের খরচ যেখানে ১৮-২০ টাকা সেখানে ওই ব্যবসায়ীদের গুনতে হয় ২২-২৪ টাকা। তাদের লোকসান প্রতি কেজিতে ১০ টাকা।
কৃষকের দুরবস্থা
রংপুরের পীরগঞ্জের চতরা বাজারে আলু বিক্রি করতে আসা কৃষক প্রদীপ চন্দ্র বলেন, ‘কিছু আলু জমিতে বিক্রি করেছি, তাতে উৎপাদন খরচ ওঠেনি। লাভের আশায় ধারদেনা করে হিমাগারে আলু রেখেছি। কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষণ করা বস্তাপ্রতি খরচ হয়েছে এক হাজার ৩০০ টাকা। বর্তমানে কোল্ড স্টোরেজে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতি বস্তা আলু। এতে বস্তাপ্রতি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা গচ্চা যাচ্ছে। অন্যান্য বছর লাভবান না হলেও মূলধন টিকানো গেছে। কিন্তু এ বছর আলু উৎপাদন করে মূলধন হারাতে হচ্ছে।’
ওই এলাকার আলুচাষি আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আমি এ বছর দেড় একর জমিতে আলুর আবাদ করেছি। বাড়ির নিকট স্টোরেজে সব আলু রেখেছি। এখন আমার মূলধন হারাতে হবে।’
দেশের অন্যতম শীর্ষ আলু উৎপাদনের জেলা মুন্সীগঞ্জ। সেখানকার কৃষক আবেদ আলী বলেন, ‘যদি সরকার দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে নভেম্বরের মধ্যে নতুন আলু বাজারে চলে আসবে। তখন পুরনো আলু নদীতে ফেলে দিতে হবে। আমরা চাই, সরকার আলু রপ্তানি করুক বা ভিজিএফের মাধ্যমে বিতরণ করুক। তাহলে কৃষক উপকৃত হবেন।’
জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার কৃষক চঞ্চল হোসেন বলেন, ‘আট বিঘা জমিতে কার্ডিনাল আলু লাগিয়েছি। প্রতি কেজি বীজ ১১০ টাকা দরে কিনেছি, সারসহ অন্যান্য খরচও বেশি হয়েছে। খরচ পড়েছে কেজিপ্রতি ২২ টাকা। এখন আলু বিক্রি করতে হচ্ছে ১০ টাকায়। গত বছর এই সময়ে কেজিপ্রতি আলু ৪৫-৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।’
আলুর উৎপাদন সবচেয়ে বেশি হয় মুন্সীগঞ্জ, রংপুর, বগুড়া, রাজশাহী, নওগাঁ ও জয়পুরহাট জেলায়।
#### দেশে আলুর চাহিদা ও উৎপাদন কত?
বাংলাদেশে যে পরিমাণ আলু উৎপাদন হয় তার এক শতাংশও রপ্তানি হয় না। যে কারণে আলু উৎপাদনে বাংলাদেশ সপ্তম হলেও দশটি রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে বাংলাদেশের নাম নেই।
দেশে আলুর সর্বোচ্চ বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৯০ লাখ টন। কিন্তু কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে আলু উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ২৯ লাখ টন, যা গত বছরের চেয়ে ২৩ লাখ টন বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আলুর উৎপাদন ছিল ১ কোটি ৬ লাখ টন।
হিমাগার মালিকদের সংগঠন বলছে, দেশের ৩৫৩টি হিমাগারে সংরক্ষিত আলুর পরিমাণ ৩৪ লাখ ৯০ হাজার টনের বেশি। যেখানে গত বছর সংরক্ষিত আলুর পরিমাণ ছিল সাড়ে ২৪ লাখ টন। এখন পর্যন্ত হিমাগার থেকে মাত্র ১৫ শতাংশ আলু বের হয়েছে। অথচ গত বছর একই সময়ে ৪৮ শতাংশ আলু বাজারে নিয়েছিলেন কৃষকরা।
সারাদেশে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের করা ৬৫৩টি মডেল ঘর আছে। সেখানকার প্রতিটি ঘরে অন্তত ৩০ টন আলু সংরক্ষণ করছেন কৃষকরা।
কৃষি অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আগেও এমন হয়েছে। আমাদের দেশে চাহিদার চেয়ে আলুর উৎপাদন বেশি। আবার রপ্তানি ও আলু প্রক্রিয়াকরণে আমরা অনেক পিছিয়ে। সবচেয়ে বড় কথা আলু প্রক্রিয়াকরণ সুবিধা ও রপ্তানি না বাড়িয়ে উৎপাদন বাড়িয়ে লাভ নেই।’
##### টিসিবির মাধ্যমে আলু বিক্রির প্রস্তাব
রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে আলু বিক্রির একটি প্রস্তাব সরকারের বিবেচনাধীন। তেল, চিনি, ডালের সঙ্গে আলু দেয়ার দাবি করেছে হিমাগার মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন। তারা অর্থ, খাদ্য, বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে।
হিমাগার মালিকদের ওই সংগঠন বলছে, দেশে এবার চাহিদার তুলনায় ৪০ লাখ টন বেশি আলু উৎপাদন হয়েছে। এখন কোল্ড স্টোরেজ গেটে এলাকাভেদে আলু বিক্রি হচ্ছে ১৩ থেকে ১৫ টাকা। অথচ এক কেজি আলুর এবার উৎপাদন খরচ অন্তত ১৭ টাকার বেশি। এর সঙ্গে হিমাগার ভাড়া ও আনুষঙ্গিক খরচ যোগ করলে এ খরচ দাঁড়ায় ২৫ টাকা।
কোল্ডস্টোরেজ বা হিমাগার মালিক সমিতির সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী সংবাদকে বলেন, ‘কৃষক দাম না পেলে আমরাও ভাড়া পাব না। আট মাস আলু সংরক্ষণ করে আমাদের দুই হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হবে। হিমাগারশিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। আমরা ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে পারব না।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচিতে আলু বিতরণ করা হলে অতিরিক্ত আলু সরবরাহ হয়ে যেত। কৃষকও বাঁচতো।’
তিনি বলেন, ‘গত বছর যখন আলুর দাম বেড়ে গেল, তখন সরকার দাম বেঁধে দিয়েছে। কোল্ড স্টোরেজে অভিযান চালিয়েছে। এবার কমে গেলেও কৃষকের দায়িত্ব সরকারের নেয়া উচিত।’
#### কেন বাড়ছে না রপ্তানি?
এখন পর্যন্ত দেশে ৯১টি নতুন আলুর জাত অবমুক্ত করা হয়েছে। ২৬ বছর ধরে রপ্তানি হলেও দেশের বাজারের রপ্তানি উপযোগী জাতের অভাব রয়ে গেছে। জাতের এ সংকটের কারণে রপ্তানিকারকরা বিদেশি ক্রেতার চাহিদা পূরণ করতে পারছেন না।
বাংলাদেশ আলু রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি ও ফেরদৌস বায়োটেক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ড. ফেরদৌসী বেগম সংবাদকে বলেন, ‘বাংলাদেশের আলুতে শুষ্ক পদার্থের উপস্থিতি কম থাকায় যখন এ আলু দিয়ে শিল্প-কারখানায় চিপস বা ফ্রেঞ্চ ফ্রাই বানানো হয়, সেটা জ্বালানি সাশ্রয়ী হয় না। এছাড়া ওইসব আলুতে স্টার্চ বেশি বলে মচমচে হয় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাল্টিপারপাস কোল্ড স্টোরেজ করতে হবে। আর কৃষকদের প্রচুর ট্রেনিং করাতে হবে, সঙ্গে প্রচুর সহায়তা দিতে হবে।’
‘তবে কোনো ব্যবস্থাই কার্যকর হবে না যদি জেলার জোনিংটা ঠিকভাবে করা না হয়। জোনিংয়ের ফলে; সারাদেশের কোন জেলার কতটুকু জমিতে আলু চাষ করা যাবে তা নির্ধারণ করে দেয়া হলে মৌসুম ভেদে আলুর উৎপাদনে তারতম্য কমে যাবে,’ বলে তার পরামর্শ।
### আলু কেনার কথা ভাবছে সরকার
কৃষি উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, এ বছর উৎপাদন বেশি হওয়ায় কৃষকরা আলুর দাম পাচ্ছে না। তাদের ক্ষতি কমাতে সরকারিভাবে কিছু আলু কেনা হবে।