ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) : ভারত থেকে শূন্য হাতে ফেরা একটি পরিবার -সংবাদ
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়িতে পরিবার নিয়ে একটু সুখে থাকার আশায় শতশত পরিবার অবৈধ পথে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে পাড়ি জমান। সেখানে গিয়ে দিল্লিসহ বিভিন্ন রাজ্যে ইটভাটা, কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকের কাজ করে সুখের স্বপ্ন বুনেছিলেন।
কিন্তু তাদের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়েছে। শূন্য হাতে এক কাপড়ে তাদের বাংলাদেশে ফেরত আসতে হয়েছে। একটু সুখের আশায় তবুও হাহাকার অবস্থা থেকে মুক্তি মিলছে না ফেরত আসা পরিবার গুলোর। এমন পরিস্থিতির কথাই জানিয়েছেন, সম্প্রতি ভারত থেকে পুশইন হয়ে দেশে ফিরে আসা বেশিরভাগ পরিবারগুলো।
উপজেলার ঘোগারকুটি গ্রামের দিনমজুর রুবেল মিয়া (২৭) জানান, অভাবের সংসারে একটু স্বচ্ছলতার আশায় স্ত্রী রোকসানা বেগম (২১) ও শিশু কন্যা রুবাইয়াকে সাথে নিয়ে দালালের সহযোগিতায় সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দিল্লিতে যান।
সেখানে গিয়ে সাত বছর ধরে বিভিন্ন ইটভাটায় স্বামী-স্ত্রী মিলে কাজ করেন। সেখানে আরেক সন্তান খাদিজার (১) জন্ম হয়। দুই জনে মিলে অক্লান্ত পরিশ্রম করে প্রায় দুই লক্ষ টাকা জমা করেন। তাদের স্বপ্ন ছিল সেই টাকা নিয়ে দেশে ফেরত আসবেন। সাম্প্রতিক সময়ের ইট ভাটা গুলোতে দিল্লি পুলিশ ব্যাপক ধরপাকড় চালায়। পুলিশি অভিযানে আটক হন রুবেল মিয়া ও তার পরিবার। তাদের সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে রাতের আঁধারে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ধর্মপুর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পুশইন করে বিএসএফ। শূন্য হাতে শুধু মাত্র পড়নের কাপড় নিয়ে নিজ বাড়ি ঘোগারকুটিতে ফেরত আসেন রুবেল মিয়া ও তার পরিবার। দেশ ছেড়ে যাওয়ার সময় তার যে বসতঘর ছিল তা দীর্ঘদিন মেরামতের অভাবে দুমড়েমুচড়ে গেছে। বর্তমানে বাবার বাড়িতে গাদাগাদি করে বসবাস করছেন। কর্মহীন রুবেল মিয়া পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
একই এলাকার সেকেন্দার আলী (৩৫) জানান, পরিবার নিয়ে ওপারে পাড়ি জমান ২০১১ সালে। কাজ করেন রাজস্থান ও হরিয়ানার ইট ভাটায়। সেখানে চৌদ্দ বছর কাজ করে মহাজনের কাজে টাকা জমা রেখেছেন। কিন্তু সবকিছু ফেলে তাকেও ফেরত আসতে হয়েছে খালি হাতে। দেশে ফিরে পরিবার নিয়ে ছোটভাইয়ের বাড়িতে ঠাঁই নিয়েছেন। নিঃস্ব সেকেন্দার আলী বর্তমানে খেয়ে না খেয়ে পরিবার নিয়ে দিনযাপন করছেন।
সম্প্রতি ওপারে নিষ্ঠুরতার শিকার হয়ে দেশে ফেরত এসেছেন উত্তর বড়ভিটা গ্রামের হতদরিদ্র দিনমজুর আব্দুল জলিল। তিনি জানান, ২০১৫ সালে ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করতে দালালের সহযোগিতায় দিনাজপুরের হিলি সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাড়ি জমান।
এ সময় তিনি সঙ্গে নেন স্ত্রী সাফিয়া বেগম (৩৩), ছেলে সফিয়ার (২২) মেয়ে জেসমিনকে (৯)। ভারতে গিয়ে আব্দুল জলিল তার পরিবার নিয়ে বিহার, হরিয়ানা ও রাজস্থানের বিভিন্ন ইট ভাটায় কাজ করেন। দেখতে দেখতে কেটে যায় দশ বছর। সবশেষ পরিবার নিয়ে রাজস্থানের একটি ইট ভাটায় কাজ করতেন।
ধরপাকড় শুরু হলে পরিবারের ৯ জনসহ স্বেচ্ছায় ধরা দেন আব্দুল জলিল। এরপর টাকা পয়সা ঘটিবাটি সবকিছু কেড়ে নিয়ে সিলেটের মৌলভীবাজার সীমান্ত দিয়ে বিএসএফ গভীর রাতে তাদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠায়। শূন্য হাতে দেশে ফেরত এসে তিনি পরিবার নিয়ে বর্তমানে সীমাহীন দুর্দশায় দিনা যাপন করছেন।
আব্দুল জলিল, সেকেন্দার আলী কিংবা রুবেল মিয়াই শুধু নয়, অনেক শ্রমিক পরিবার দীর্ঘদিন ভারতে অবস্থানকালে তাদের কষ্টার্জিত টাকা স্থানীয় মহাজনদের কাছে জমা রেখেছিলেন। কিন্তু পুশইনের সময় তারা কিছুই সাথে আনতে পারেননি। স্ত্রী-পরিজনসহ প্রাণ বাঁচিয়ে দেশে ফিরতে হয়েছে তাদের। ফলে দেশে ফিরে এখন তারা নিঃস্ব ও সর্বস্বান্ত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তারা জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতিতে সরকারি সহায়তা ছাড়া বেঁচে থাকার অন্য কোন উপায় দেখছেন না।
ফেরত আসা পরিবারগুলোর ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রেহেনুমা তারান্নুম জানান, সাম্প্রতিক সময়ে যারা দেশে ফেরত এসেছেন তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি কর্মহীন যুব ও যুব মহিলাদের সরকারিভাবে দীর্ঘ ও স্বল্প মেয়াদি বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) : ভারত থেকে শূন্য হাতে ফেরা একটি পরিবার -সংবাদ
মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট ২০২৫
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়িতে পরিবার নিয়ে একটু সুখে থাকার আশায় শতশত পরিবার অবৈধ পথে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে পাড়ি জমান। সেখানে গিয়ে দিল্লিসহ বিভিন্ন রাজ্যে ইটভাটা, কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকের কাজ করে সুখের স্বপ্ন বুনেছিলেন।
কিন্তু তাদের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়েছে। শূন্য হাতে এক কাপড়ে তাদের বাংলাদেশে ফেরত আসতে হয়েছে। একটু সুখের আশায় তবুও হাহাকার অবস্থা থেকে মুক্তি মিলছে না ফেরত আসা পরিবার গুলোর। এমন পরিস্থিতির কথাই জানিয়েছেন, সম্প্রতি ভারত থেকে পুশইন হয়ে দেশে ফিরে আসা বেশিরভাগ পরিবারগুলো।
উপজেলার ঘোগারকুটি গ্রামের দিনমজুর রুবেল মিয়া (২৭) জানান, অভাবের সংসারে একটু স্বচ্ছলতার আশায় স্ত্রী রোকসানা বেগম (২১) ও শিশু কন্যা রুবাইয়াকে সাথে নিয়ে দালালের সহযোগিতায় সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দিল্লিতে যান।
সেখানে গিয়ে সাত বছর ধরে বিভিন্ন ইটভাটায় স্বামী-স্ত্রী মিলে কাজ করেন। সেখানে আরেক সন্তান খাদিজার (১) জন্ম হয়। দুই জনে মিলে অক্লান্ত পরিশ্রম করে প্রায় দুই লক্ষ টাকা জমা করেন। তাদের স্বপ্ন ছিল সেই টাকা নিয়ে দেশে ফেরত আসবেন। সাম্প্রতিক সময়ের ইট ভাটা গুলোতে দিল্লি পুলিশ ব্যাপক ধরপাকড় চালায়। পুলিশি অভিযানে আটক হন রুবেল মিয়া ও তার পরিবার। তাদের সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে রাতের আঁধারে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ধর্মপুর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পুশইন করে বিএসএফ। শূন্য হাতে শুধু মাত্র পড়নের কাপড় নিয়ে নিজ বাড়ি ঘোগারকুটিতে ফেরত আসেন রুবেল মিয়া ও তার পরিবার। দেশ ছেড়ে যাওয়ার সময় তার যে বসতঘর ছিল তা দীর্ঘদিন মেরামতের অভাবে দুমড়েমুচড়ে গেছে। বর্তমানে বাবার বাড়িতে গাদাগাদি করে বসবাস করছেন। কর্মহীন রুবেল মিয়া পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
একই এলাকার সেকেন্দার আলী (৩৫) জানান, পরিবার নিয়ে ওপারে পাড়ি জমান ২০১১ সালে। কাজ করেন রাজস্থান ও হরিয়ানার ইট ভাটায়। সেখানে চৌদ্দ বছর কাজ করে মহাজনের কাজে টাকা জমা রেখেছেন। কিন্তু সবকিছু ফেলে তাকেও ফেরত আসতে হয়েছে খালি হাতে। দেশে ফিরে পরিবার নিয়ে ছোটভাইয়ের বাড়িতে ঠাঁই নিয়েছেন। নিঃস্ব সেকেন্দার আলী বর্তমানে খেয়ে না খেয়ে পরিবার নিয়ে দিনযাপন করছেন।
সম্প্রতি ওপারে নিষ্ঠুরতার শিকার হয়ে দেশে ফেরত এসেছেন উত্তর বড়ভিটা গ্রামের হতদরিদ্র দিনমজুর আব্দুল জলিল। তিনি জানান, ২০১৫ সালে ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করতে দালালের সহযোগিতায় দিনাজপুরের হিলি সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাড়ি জমান।
এ সময় তিনি সঙ্গে নেন স্ত্রী সাফিয়া বেগম (৩৩), ছেলে সফিয়ার (২২) মেয়ে জেসমিনকে (৯)। ভারতে গিয়ে আব্দুল জলিল তার পরিবার নিয়ে বিহার, হরিয়ানা ও রাজস্থানের বিভিন্ন ইট ভাটায় কাজ করেন। দেখতে দেখতে কেটে যায় দশ বছর। সবশেষ পরিবার নিয়ে রাজস্থানের একটি ইট ভাটায় কাজ করতেন।
ধরপাকড় শুরু হলে পরিবারের ৯ জনসহ স্বেচ্ছায় ধরা দেন আব্দুল জলিল। এরপর টাকা পয়সা ঘটিবাটি সবকিছু কেড়ে নিয়ে সিলেটের মৌলভীবাজার সীমান্ত দিয়ে বিএসএফ গভীর রাতে তাদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠায়। শূন্য হাতে দেশে ফেরত এসে তিনি পরিবার নিয়ে বর্তমানে সীমাহীন দুর্দশায় দিনা যাপন করছেন।
আব্দুল জলিল, সেকেন্দার আলী কিংবা রুবেল মিয়াই শুধু নয়, অনেক শ্রমিক পরিবার দীর্ঘদিন ভারতে অবস্থানকালে তাদের কষ্টার্জিত টাকা স্থানীয় মহাজনদের কাছে জমা রেখেছিলেন। কিন্তু পুশইনের সময় তারা কিছুই সাথে আনতে পারেননি। স্ত্রী-পরিজনসহ প্রাণ বাঁচিয়ে দেশে ফিরতে হয়েছে তাদের। ফলে দেশে ফিরে এখন তারা নিঃস্ব ও সর্বস্বান্ত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তারা জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতিতে সরকারি সহায়তা ছাড়া বেঁচে থাকার অন্য কোন উপায় দেখছেন না।
ফেরত আসা পরিবারগুলোর ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রেহেনুমা তারান্নুম জানান, সাম্প্রতিক সময়ে যারা দেশে ফেরত এসেছেন তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি কর্মহীন যুব ও যুব মহিলাদের সরকারিভাবে দীর্ঘ ও স্বল্প মেয়াদি বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।