ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
চিত্রনায়ক সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলায় তার মায়ের করা রিভিশন আবেদনের শুনানির জন্য আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর দিন ঠিক করেছে আদালত। মঙ্গলবার,(২৬ আগস্ট ২০২৫) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ জাকির হোসেনের আদালতে রিভিশন পিটিশনের ওপর শুনানি হওয়ার কথা ছিল। তবে সালমান শাহের মা নীলা চৌধুরী এদিন আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় শুনানি পিছিয়ে নতুন তারিখ দিয়েছেন বিচারক।
বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. ওবায়দুল্লাহ বলেন, ‘সালমান শাহ মামলায় পিবিআইয়ের দেয়া তদন্ত রিপোর্ট সঠিক হয়নি মর্মে আমরা আদালতে দাবি করেছি। এ মামলার আসামি রিজভী আহমেদ পিবিআইকে মেইলে একটি অডিও ক্লিপ পাঠায়। ‘আমরা সংশ্লিষ্ট আদালতে অডিও ক্লিপটা দাবি করেছিলাম। কিন্তু আদালত আমাদের তা সরবরাহ করেনি। ওই আদেশে সংক্ষুদ্ধ হয়ে আমরা রিভিশন দায়ের করি।’
তিনি বলেন, ‘রিভিশন আবেদনকারী হলেন সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ইংল্যান্ডে রয়েছেন। তিনি অসুস্থও। তার ভাই আলমগীর কুমকুমকে রিভিশনকারী হিসেবে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিয়েছেন। তিনি আদালতে আসেননি। এ কারণে রিভিশন শুনানি হয়নি। আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর শুনানির পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন আদালত।’
এদিকে সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবিতে তার কিছু ভক্তকে মহানগর দায়রা জজ আদালতের সামনে এদিন ব্যানার হাতে দাঁড়াতে দেখা যায়। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর চিত্রনায়ক সালমান শাহ (চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন) ঢাকার ইস্কাটনের ফ্ল্যাটে মারা যান। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে সে সময় তার জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে।
ছেলের মৃত্যুর পর প্রথমে একটি অপমৃত্যু মামলা করেন সালমান শাহর বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী। কিন্তু পরে ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে- এমন অভিযোগে ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই অভিযোগটি হত্যা মামলায় রূপান্তর করার আবেদন জানান তিনি। তখন অপমৃত্যু মামলার সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করতে সিআইডিকে নির্দেশ দেন আদালত। ১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে সিআইডি জানায়, সালমান শাহ ‘আত্মহত্যা’ করেন।
সিআইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে কমরউদ্দিন চৌধুরী রিভিশন মামলা দায়ের করেন। পরে ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠায় আদালত। দীর্ঘ ১১ বছর পর ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট সেই প্রতিবেদন দাখিল করেন মহানগর হাকিম ইমদাদুল হক। তাতেও হত্যার অভিযোগ নাকচ করা হয়। সালমান শাহের বাবার মৃত্যুর পর তার মা নীলা চৌধুরী মামলটি চালিয়ে যান। ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি নীলা চৌধুরী বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনে ‘নারাজি’ দেন। তিনি ১১ জনের নাম উল্লেখ করে দাবি করেন, এরা তার ছেলের হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে।
মামলাটি এরপর তদন্ত করে র্যাব। তখন রাষ্ট্রপক্ষ আপত্তি তুললে ২০১৬ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ ৬-এর বিচারক ইমরুল কায়েশ র্যাবকে মামলাটি আর তদন্ত না করার আদেশ দেন। তখন তদন্তের দায়িত্বে আসে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। চার বছর তদন্তের পর ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তারা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। সেখানেও বলা হয়, ঘটনার সময় উপস্থিত ও ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ৫৪ জন সাক্ষীর জবানবন্দী বিশ্লেষণ করে, জব্দ করা আলামত পর্যালোচনা করে হত্যার অভিযোগের কোনো প্রমাণ মেলেনি।
পিবিআই তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে বলে, চিত্রনায়িকা শাবনূরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে পারিবারিক কলহ আর স্ত্রী সামিরা হকের কারণে মা নিলুফা চৌধুরী ওরফে নীলা চৌধুরীকে ছেড়ে থাকার মানসিক যন্ত্রণায় ভুগেই অভিমানী সালমান শাহ আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন।
ওই প্রতিবেদনেও সন্তুষ্ট নন সালমানের মা নীলা চৌধুরী। ছেলের মৃত্যু কীভাবে হয়েছিল, তা জানতে তিনি আরও তদন্ত চান। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদ ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর পিবিআইয়ের প্রতিবেদন আমলে নিয়ে আসামিদের অব্যাহতির আদেশ দেন।
এরপর আবার সালমান শাহর পরিবারের পক্ষ থেকে কয়েকটি বিষয় নিয়ে মহানগর দায়রা জজ আদালতে রিভিশন দায়েরের আবেদন করা হয়। ২০২২ সালের ১২ জুন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে রিভিশন আবেদন গ্রহণ করেন। তবে বিভিন্ন কারণে আর রিভিশন শুনানি হয়নি। ১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেটের দারিয়াপাড়ায় নানা বাড়িতে সালমান শাহের জন্ম। এ নায়কের মৃত্যু হয় ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর। নব্বইয়ের শুরুতে সালমান শাহ মাত্র যে চারটি বছর কাজ করেছিলেন, তাতেই হয়েছিলেন খ্যাতিমান।
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট ২০২৫
চিত্রনায়ক সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলায় তার মায়ের করা রিভিশন আবেদনের শুনানির জন্য আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর দিন ঠিক করেছে আদালত। মঙ্গলবার,(২৬ আগস্ট ২০২৫) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ জাকির হোসেনের আদালতে রিভিশন পিটিশনের ওপর শুনানি হওয়ার কথা ছিল। তবে সালমান শাহের মা নীলা চৌধুরী এদিন আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় শুনানি পিছিয়ে নতুন তারিখ দিয়েছেন বিচারক।
বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. ওবায়দুল্লাহ বলেন, ‘সালমান শাহ মামলায় পিবিআইয়ের দেয়া তদন্ত রিপোর্ট সঠিক হয়নি মর্মে আমরা আদালতে দাবি করেছি। এ মামলার আসামি রিজভী আহমেদ পিবিআইকে মেইলে একটি অডিও ক্লিপ পাঠায়। ‘আমরা সংশ্লিষ্ট আদালতে অডিও ক্লিপটা দাবি করেছিলাম। কিন্তু আদালত আমাদের তা সরবরাহ করেনি। ওই আদেশে সংক্ষুদ্ধ হয়ে আমরা রিভিশন দায়ের করি।’
তিনি বলেন, ‘রিভিশন আবেদনকারী হলেন সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ইংল্যান্ডে রয়েছেন। তিনি অসুস্থও। তার ভাই আলমগীর কুমকুমকে রিভিশনকারী হিসেবে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিয়েছেন। তিনি আদালতে আসেননি। এ কারণে রিভিশন শুনানি হয়নি। আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর শুনানির পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন আদালত।’
এদিকে সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবিতে তার কিছু ভক্তকে মহানগর দায়রা জজ আদালতের সামনে এদিন ব্যানার হাতে দাঁড়াতে দেখা যায়। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর চিত্রনায়ক সালমান শাহ (চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন) ঢাকার ইস্কাটনের ফ্ল্যাটে মারা যান। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে সে সময় তার জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে।
ছেলের মৃত্যুর পর প্রথমে একটি অপমৃত্যু মামলা করেন সালমান শাহর বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী। কিন্তু পরে ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে- এমন অভিযোগে ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই অভিযোগটি হত্যা মামলায় রূপান্তর করার আবেদন জানান তিনি। তখন অপমৃত্যু মামলার সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করতে সিআইডিকে নির্দেশ দেন আদালত। ১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে সিআইডি জানায়, সালমান শাহ ‘আত্মহত্যা’ করেন।
সিআইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে কমরউদ্দিন চৌধুরী রিভিশন মামলা দায়ের করেন। পরে ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠায় আদালত। দীর্ঘ ১১ বছর পর ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট সেই প্রতিবেদন দাখিল করেন মহানগর হাকিম ইমদাদুল হক। তাতেও হত্যার অভিযোগ নাকচ করা হয়। সালমান শাহের বাবার মৃত্যুর পর তার মা নীলা চৌধুরী মামলটি চালিয়ে যান। ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি নীলা চৌধুরী বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনে ‘নারাজি’ দেন। তিনি ১১ জনের নাম উল্লেখ করে দাবি করেন, এরা তার ছেলের হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে।
মামলাটি এরপর তদন্ত করে র্যাব। তখন রাষ্ট্রপক্ষ আপত্তি তুললে ২০১৬ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ ৬-এর বিচারক ইমরুল কায়েশ র্যাবকে মামলাটি আর তদন্ত না করার আদেশ দেন। তখন তদন্তের দায়িত্বে আসে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। চার বছর তদন্তের পর ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তারা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। সেখানেও বলা হয়, ঘটনার সময় উপস্থিত ও ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ৫৪ জন সাক্ষীর জবানবন্দী বিশ্লেষণ করে, জব্দ করা আলামত পর্যালোচনা করে হত্যার অভিযোগের কোনো প্রমাণ মেলেনি।
পিবিআই তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে বলে, চিত্রনায়িকা শাবনূরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে পারিবারিক কলহ আর স্ত্রী সামিরা হকের কারণে মা নিলুফা চৌধুরী ওরফে নীলা চৌধুরীকে ছেড়ে থাকার মানসিক যন্ত্রণায় ভুগেই অভিমানী সালমান শাহ আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন।
ওই প্রতিবেদনেও সন্তুষ্ট নন সালমানের মা নীলা চৌধুরী। ছেলের মৃত্যু কীভাবে হয়েছিল, তা জানতে তিনি আরও তদন্ত চান। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদ ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর পিবিআইয়ের প্রতিবেদন আমলে নিয়ে আসামিদের অব্যাহতির আদেশ দেন।
এরপর আবার সালমান শাহর পরিবারের পক্ষ থেকে কয়েকটি বিষয় নিয়ে মহানগর দায়রা জজ আদালতে রিভিশন দায়েরের আবেদন করা হয়। ২০২২ সালের ১২ জুন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে রিভিশন আবেদন গ্রহণ করেন। তবে বিভিন্ন কারণে আর রিভিশন শুনানি হয়নি। ১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেটের দারিয়াপাড়ায় নানা বাড়িতে সালমান শাহের জন্ম। এ নায়কের মৃত্যু হয় ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর। নব্বইয়ের শুরুতে সালমান শাহ মাত্র যে চারটি বছর কাজ করেছিলেন, তাতেই হয়েছিলেন খ্যাতিমান।