alt

news » bangladesh

সমতলে চা উৎপাদন কমছে সার সংকটে দিশেহারা চাষিরা

প্রতিনিধি, তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) : বুধবার, ২৭ আগস্ট ২০২৫

তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) : পাতাপচা রোগ ও পোকার আক্রমণে বিপর্যস্ত চা চাষিরা -সংবাদ

উত্তরের জেলা পঞ্চগড়, যাকে বলা হয় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চা উৎপাদন অঞ্চল, সেখানে এ বছর আশঙ্কাজনকভাবে কমছে চা উৎপাদন। পাতাপচা রোগ ও পোকার আক্রমণে বিপর্যস্ত বাগানগুলোতে ভালো ফল পাচ্ছেন না চাষিরা। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সার সংকট। ইউরিয়া ছাড়া অন্য কোনো সার পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। চাষিরা বলছেন, চা গাছের কুঁড়ি থেকে নতুন পাতা বের হওয়ার পরপরই তা পচে কালচে হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। ফলে কমছে কাঁচা পাতার উৎপাদন। কারখানাগুলোও সংকটে পড়েছে-কেউ চালাচ্ছে অর্ধেক শিফট, কেউবা সপ্তাহে মাত্র ২-৪ দিন কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

জানা যায়, ২০২৩ মৌসুমের তুলনায় কমেছে চায়ের উৎপাদন। গত মৌসুমে (২০২৪) উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলার সমতল ভূমিতে উৎপাদিত হয়েছে ১ কোটি ৪৩ লাখ ৯০ হাজার ১৫১ কেজি চা। যা আগের মৌসুমের চেয়ে ৩৫ লাখ ৫৭ হাজার কেজি কম। আর গত মৌসুমে জাতীয় উৎপাদনের ১৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ চা সমতল ভূমি থেকে যুক্ত হলেও এবার যুক্ত হয়েছে ১৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। অতিরিক্ত খরা, কাঁচা চা পাতার দাম না পেয়ে চাষিদের বাগান পরিচর্যায় অনেকটা অনীহা ও কিছু বাগান নষ্ট করে ফেলার কারণে উৎপাদন কিছুটা কমেছে বলে দাবি চা বোর্ডের।

জেলার তেঁতুলিয়ার দর্জিপাড়া গ্রামের আব্দুর রহমান,হাবিবুর রহমান, শমিরুল হকসহ কয়েকজন চা চাষি জানান, চলতি মৌসুমে চা পাতার দাম ২৪-২৫ টাকা পর্যন্ত কারখানায় দিতে পারছি। যদিও মৌসুমের শুরুতে ১৫ থেকে ১৬ টাকা ছিল। পরে পাতার দাম বেড়েছে। এরপরও বিভিন্ন সমস্যার কারণে পাতার উৎপাদন কমে যাওয়ায় এ দামে আমাদের পোষাচ্ছে না। নতুন করে পাতাপচা রোগে বিপাকে পড়েছি। চা বাগান টিকিয়ে রাখতে সার-কীটনাশকসহ নানা ওষুধ প্রয়োগ করতে গিয়ে উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যাচ্ছে। আরও কয়েকজন চা বাগান মালিক জানান, বাগানে লাল মাকড়, লোফার ও কারেন্ট পোকার আক্রমণের পাশাপাশি এখন নতুন সমস্যা পাতা পঁচা রোগ। ওষুধ প্রয়োগ করেও কাজ হচ্ছে না। এখন দাম বেশি হলেও আমাদের খরচও অনেক বেড়েছে।

আরেকদিকে চা শিল্পের তৃতীয় অঞ্চল ও উৎপাদনে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকার পরেও চা চাষে আলাদাভাবে নেই সারের বরাদ্দ। চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে পঞ্চগড়ে সারের চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ দেয়া হয় ইউরিয়া ৪৫ হাজার ৯থশ ৮২ মেট্রিক টন, টিএসপি ১৪ হাজার ৯শ ১৬, ডিএপি ১৭ হাজার ২থশ ৪৫, এমওপি ২২ হাজার ৫থশ ৪৬ মেট্রিক টন। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে আগের বছরের তুলনায় অতিরিক্ত ১ হাজার মেট্রিক টন সার বরাদ্দ দেয় মন্ত্রণালয়। এই বরাদ্দের ভিত্তিতে ৫ উপজেলায় সার বিভাজন করা হয়। কিন্তু এ বরাদ্দে নেই চা চাষের ক্ষেত্রে।

চা বোর্ডের আঞ্চলিক কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, উত্তরাঞ্চলের এ জেলায় নিবন্ধিত ক্ষুদ্রায়তন চা বাগান রয়েছে ১ হাজার ৬৫টি, বড় চা বাগান রয়েছে ৮টি। অনিবন্ধিত চা বাগান রয়েছে ৫ হাজার ৮৫৫, বড় চাবাগান রয়েছে ২০টি। জেলায় মোট নিবন্ধিত চা বাগান ১ হাজার ৪৭৩ ও অনিবন্ধিত চাবাগান রয়েছে ৫ হাজার ৮৭৫ টি। ১০ হাজার ২৬৭.২৮ একর জমিতে আবাদকৃত বাগানে সবুজ চা পাতা উৎপাদিত হচ্ছে চা। বৃহৎ এ অঞ্চল জুড়ে চা আবাদ হলেও এখন আলাদাভাবে চা চাষের জন্য আলাদাভাবে নেই সার বরাদ্দ। ফলে বোরো-আমনের বরাদ্দের সার ব্যবহার হওয়ায় চা চাষিরা ভুগে থাকেন সার সংকটে। আরেকদিকে বোরো-আমনের বরাদ্দের সার চা বাগানে ব্যবহার হওয়ায় সার সংকটে ভুগছেন আমন-বোরো চাষিরা।

উত্তরের এ চা শিল্পে কর্মসংস্থান হয়েছে হাজার হাজার নারী-পুরুষের। লক্ষাধিক মানুষ জড়িত চা শিল্পে। বেকারদের একটি বড় অংশ চাকরি ছেড়ে দিয়ে চা চাষে বিনিয়োগ করছেন। এতে করে হাজার হাজার নারী-পুরুষের কাজের কর্মসংস্থান হয়েছে। অর্থনীতিতেও স্বাবলম্বী হয়েছেন তারা।

চা অর্থকরী ফসল হিসেবে বছরের নয় মাস চলে বাগানের বিভিন্ন কাজ। বাগানের পরিচর্যা হিসেবে ফ্লাইং কাটিং অর্থাৎ গাছের মাথা ফ্লাইং কাটিং, সার ও কীটনাশক স্প্রে পানি নিষ্কাশনের কাজ করা হয়। প্রায় সারা বছরই কাজ চলে চা বাগানে। কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে চা কারখানাগুলোতেও।

এদিকে,সমতলের অর্থনীতির অন্যতম এ খাতে নেই আলাদা কোন সারের বরাদ্দ। চা চাষিদের অভিযোগ, জেলায় প্রচুর চা আবাদ হচ্ছে। কিন্তু চা আবাদের জন্য কোন সারের বরাদ্দ নেই। যা বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে তা চা চাষের জন্য সারের তীব্র সংকট। এ কারণে সারের ডিলার ও ক্ষুদ্র সার বিক্রেতাদের কাছ থেকে চড়া দামে সার কিনতে হচ্ছে। আর সার পাওয়া যাচ্ছে না। সারের ডিলাররা দাম বেশি দিলে অনেক সময় সার পাওয়া যায়। তাই এ শিল্পে বাণিজ্যমন্ত্রণালয়ের প্রতি চা চাষে আলাদা করে সার বরাদ্দ দিয়ে বার বার দাবি জানিয়ে আসছেন এ অঞ্চলের চাষিরা।

তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, চা বাগানের জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সার বরাদ্দ দেয় না। এটা দেয়ার কথা চা বোর্ডের। আমনের জন্য বরাদ্দকৃত সার চাষিরা চা বাগানসহ অন্যান্য ফসলে ব্যবহার করছেন। তাই এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তেঁতুলিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার তামান্না ফেরদৌস জানান, আগের মতোই সারের চাহিদা দেয়া হয়েছে। এবার চাহিদা অনুযায়ী বিভাজনও করা হয়েছে। কিন্তু চা-সহ বিভিন্ন আবাদের কারণে সারের সংকট দেখা দিতে পারে। আরও সারের প্রয়োজন রয়েছে। চা বোর্ডের পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ের উন্নয়ন কর্মকর্তা আমির হোসেন জানান, চা চাষের জন্য আলাদাভাবে কোন সার এর বরাদ্দ নেই। কৃষি উৎপাদনে যেসব সার বরাদ্দ হয়, তা থেকেই চা বাগানে সার ব্যবহৃত হয়।

চা বোর্ডের পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফ খান বলেন, প্রচন্ড খরা ও গরমের কারণে প্রথমে লাল মাকড়, পরে লোফারের আক্রমণ হয়। এগুলো দমনের পর শুরু হয়েছে পাতাপচা রোগ। আমরা চাষিদের কপার, হাইড্রোক্সাইড বা অক্সিক্লোরাইড জাতীয় ছত্রাকনাশক দুই দফায় স্প্রে করার পরামর্শ দিচ্ছি। এতে আক্রান্ত বাগানে রোগ কমছে। কয়েক দিন আগে দৈনিক পাতা সংগ্রহ নেমে গিয়েছিল তিন লাখ কেজিতে, যা এখন বেড়ে পাঁচ লাখে দাঁড়িয়েছে। আশা করা হচ্ছে, পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হবে এবং এবার সমতলে রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদন হবে।

আর সারের যে বিষয়টি, আমরা কৃষি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সারের চাহিদা বাণিজ্যমন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে থাকি। সেখান থেকে যা বরাদ্দ হয়ে আসে তা ডিলারের মাধ্যমে চাষিরা সংগ্রহ করে ব্যবহার করে থাকে।

চা উৎপাদন কমে যাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত বছর চা উৎপাদন কমে গিয়েছিল এটা সত্য। তবে এ বছর সরকারি রেকর্ডে বেড়েছে।

ছবি

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত আরও ৪৩০ জন

ছবি

বন্ধ যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের বৈকালিক সেবা

ছবি

ডিমলায় বধ্যভূমির জমি দখল করে স্থাপনা তৈরি

ছবি

জুলাই অভ্যুত্থান: সিলেটে নিরীহরাও মামলার আসামি

ছবি

ফকিরহাটে গাঁজাসহ নারী আটক

ছবি

ঘোড়াঘাটে পাশের ঘরে বরকে রেখে নববধূর আত্মহত্যা

ছবি

ভালুকায় বাড়ীর আঙ্গিনায় চন্দনের মিশ্র বাগান

ছবি

জন্মনিবন্ধন সনদে বয়স কম, ভাতাবঞ্চিত জাহেরন বিবি

ছবি

কসবায় ৫ বছর পর ধর্ষণ মামলার সত্য উদঘাটিত

ছবি

টঙ্গীবাড়ীর বালিগাঁওয়ে বাঁশের হাট জমজমাট

ছবি

পবিপ্রবিতে অর্থ কেলেঙ্কারিতে দুই কর্মকর্তা-কর্মচারী বরখাস্ত

ছবি

সিরাজদিখানে দুর্বৃত্তদের গুলিতে যুবক আহত

ছবি

টংকাবতী স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে গাছকাটার প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি

ছবি

সান্তাহার শহরে অসহনীয় যানজট

ছবি

সাড়ে ৯শ কোটি টাকায় বিএসসির বহরে যুক্ত হচ্ছে দুটি কার্গো জাহাজ

ছবি

তুরাগ নদে বেইলি সেতু নির্মাণ দাবি ফ্লাইওভার অবরোধ

ছবি

দেবিদ্বারে সড়কের অংশ দেবে গিয়ে ১২ গ্রামের মানুষের যাতায়াতে ভোগান্তি

ছবি

আত্মসমর্পণের আবেদন করে শুনানিতে আসেননি রংধনুর রফিকের স্ত্রী-সন্তানরা

ছবি

হত্যা মামলা : সাবেক মেয়র তাপসের আরেক সহযোগী টুটু গ্রেপ্তার

ছবি

আইএসডির কার্নেগি মেলন রোবোটিকস ট্রেনিং প্রোগ্রামে ভর্তির নিবন্ধন শুরু

ছবি

ক্যানসারে আক্রান্ত আনিছুর বাঁচতে চায়

ছবি

খুনি ভাড়া করে পুত্রবধূকে খুন

ছবি

রাজবাড়ীতে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

ছবি

দুমকির বগা ফেরিঘাটের ইজারা বাতিল

ছবি

পটিয়ায় ট্যাংকিতে পরে দুই শ্রমিকের মৃত্যু

ছবি

মাছ ধরতে না যাওয়ায় কমলনগরে জেলেকে নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল, গ্রেপ্তার ৩

ছবি

ধনবাড়ীতে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল পেয়ে খুশি উপকারভোগীরা

ছবি

চাঁপাইনবাবগঞ্জে বন্যার্তদের মাঝে ঔষধ বিতরণ

ছবি

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে আন্তর্জাতিক মহলের সন্তোষ

ছবি

সাদুল্লপুরে রোপা আমন চারার দাম চড়া, বিপাকে কৃষক

ছবি

কাঠের ঘানিতে বৈদ্যুতিক সংযোগ দিয়ে বাদাম তেল উৎপাদন সফল বিথী

ছবি

সিদ্ধিরগঞ্জের জুলাই হত্যা মামলার প্রথম অভিযোগপত্র দাখিল

ছবি

লক্ষ্মীপুরে গুদামে ভেজাল পণ্য রাখায় জরিমানা

ছবি

সিআইডির নজরধারীতে সাদা পাথর লুটকারীরা

ছবি

মসজিদের নামফলকে মেম্বারের নাম, ক্ষুব্ধ মুসল্লীরা

মহেশপুর সীমান্তে ভারতীয় জাল রুপিসহ আটক ১

tab

news » bangladesh

সমতলে চা উৎপাদন কমছে সার সংকটে দিশেহারা চাষিরা

প্রতিনিধি, তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়)

তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) : পাতাপচা রোগ ও পোকার আক্রমণে বিপর্যস্ত চা চাষিরা -সংবাদ

বুধবার, ২৭ আগস্ট ২০২৫

উত্তরের জেলা পঞ্চগড়, যাকে বলা হয় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চা উৎপাদন অঞ্চল, সেখানে এ বছর আশঙ্কাজনকভাবে কমছে চা উৎপাদন। পাতাপচা রোগ ও পোকার আক্রমণে বিপর্যস্ত বাগানগুলোতে ভালো ফল পাচ্ছেন না চাষিরা। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সার সংকট। ইউরিয়া ছাড়া অন্য কোনো সার পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। চাষিরা বলছেন, চা গাছের কুঁড়ি থেকে নতুন পাতা বের হওয়ার পরপরই তা পচে কালচে হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। ফলে কমছে কাঁচা পাতার উৎপাদন। কারখানাগুলোও সংকটে পড়েছে-কেউ চালাচ্ছে অর্ধেক শিফট, কেউবা সপ্তাহে মাত্র ২-৪ দিন কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

জানা যায়, ২০২৩ মৌসুমের তুলনায় কমেছে চায়ের উৎপাদন। গত মৌসুমে (২০২৪) উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলার সমতল ভূমিতে উৎপাদিত হয়েছে ১ কোটি ৪৩ লাখ ৯০ হাজার ১৫১ কেজি চা। যা আগের মৌসুমের চেয়ে ৩৫ লাখ ৫৭ হাজার কেজি কম। আর গত মৌসুমে জাতীয় উৎপাদনের ১৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ চা সমতল ভূমি থেকে যুক্ত হলেও এবার যুক্ত হয়েছে ১৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। অতিরিক্ত খরা, কাঁচা চা পাতার দাম না পেয়ে চাষিদের বাগান পরিচর্যায় অনেকটা অনীহা ও কিছু বাগান নষ্ট করে ফেলার কারণে উৎপাদন কিছুটা কমেছে বলে দাবি চা বোর্ডের।

জেলার তেঁতুলিয়ার দর্জিপাড়া গ্রামের আব্দুর রহমান,হাবিবুর রহমান, শমিরুল হকসহ কয়েকজন চা চাষি জানান, চলতি মৌসুমে চা পাতার দাম ২৪-২৫ টাকা পর্যন্ত কারখানায় দিতে পারছি। যদিও মৌসুমের শুরুতে ১৫ থেকে ১৬ টাকা ছিল। পরে পাতার দাম বেড়েছে। এরপরও বিভিন্ন সমস্যার কারণে পাতার উৎপাদন কমে যাওয়ায় এ দামে আমাদের পোষাচ্ছে না। নতুন করে পাতাপচা রোগে বিপাকে পড়েছি। চা বাগান টিকিয়ে রাখতে সার-কীটনাশকসহ নানা ওষুধ প্রয়োগ করতে গিয়ে উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যাচ্ছে। আরও কয়েকজন চা বাগান মালিক জানান, বাগানে লাল মাকড়, লোফার ও কারেন্ট পোকার আক্রমণের পাশাপাশি এখন নতুন সমস্যা পাতা পঁচা রোগ। ওষুধ প্রয়োগ করেও কাজ হচ্ছে না। এখন দাম বেশি হলেও আমাদের খরচও অনেক বেড়েছে।

আরেকদিকে চা শিল্পের তৃতীয় অঞ্চল ও উৎপাদনে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকার পরেও চা চাষে আলাদাভাবে নেই সারের বরাদ্দ। চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে পঞ্চগড়ে সারের চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ দেয়া হয় ইউরিয়া ৪৫ হাজার ৯থশ ৮২ মেট্রিক টন, টিএসপি ১৪ হাজার ৯শ ১৬, ডিএপি ১৭ হাজার ২থশ ৪৫, এমওপি ২২ হাজার ৫থশ ৪৬ মেট্রিক টন। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে আগের বছরের তুলনায় অতিরিক্ত ১ হাজার মেট্রিক টন সার বরাদ্দ দেয় মন্ত্রণালয়। এই বরাদ্দের ভিত্তিতে ৫ উপজেলায় সার বিভাজন করা হয়। কিন্তু এ বরাদ্দে নেই চা চাষের ক্ষেত্রে।

চা বোর্ডের আঞ্চলিক কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, উত্তরাঞ্চলের এ জেলায় নিবন্ধিত ক্ষুদ্রায়তন চা বাগান রয়েছে ১ হাজার ৬৫টি, বড় চা বাগান রয়েছে ৮টি। অনিবন্ধিত চা বাগান রয়েছে ৫ হাজার ৮৫৫, বড় চাবাগান রয়েছে ২০টি। জেলায় মোট নিবন্ধিত চা বাগান ১ হাজার ৪৭৩ ও অনিবন্ধিত চাবাগান রয়েছে ৫ হাজার ৮৭৫ টি। ১০ হাজার ২৬৭.২৮ একর জমিতে আবাদকৃত বাগানে সবুজ চা পাতা উৎপাদিত হচ্ছে চা। বৃহৎ এ অঞ্চল জুড়ে চা আবাদ হলেও এখন আলাদাভাবে চা চাষের জন্য আলাদাভাবে নেই সার বরাদ্দ। ফলে বোরো-আমনের বরাদ্দের সার ব্যবহার হওয়ায় চা চাষিরা ভুগে থাকেন সার সংকটে। আরেকদিকে বোরো-আমনের বরাদ্দের সার চা বাগানে ব্যবহার হওয়ায় সার সংকটে ভুগছেন আমন-বোরো চাষিরা।

উত্তরের এ চা শিল্পে কর্মসংস্থান হয়েছে হাজার হাজার নারী-পুরুষের। লক্ষাধিক মানুষ জড়িত চা শিল্পে। বেকারদের একটি বড় অংশ চাকরি ছেড়ে দিয়ে চা চাষে বিনিয়োগ করছেন। এতে করে হাজার হাজার নারী-পুরুষের কাজের কর্মসংস্থান হয়েছে। অর্থনীতিতেও স্বাবলম্বী হয়েছেন তারা।

চা অর্থকরী ফসল হিসেবে বছরের নয় মাস চলে বাগানের বিভিন্ন কাজ। বাগানের পরিচর্যা হিসেবে ফ্লাইং কাটিং অর্থাৎ গাছের মাথা ফ্লাইং কাটিং, সার ও কীটনাশক স্প্রে পানি নিষ্কাশনের কাজ করা হয়। প্রায় সারা বছরই কাজ চলে চা বাগানে। কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে চা কারখানাগুলোতেও।

এদিকে,সমতলের অর্থনীতির অন্যতম এ খাতে নেই আলাদা কোন সারের বরাদ্দ। চা চাষিদের অভিযোগ, জেলায় প্রচুর চা আবাদ হচ্ছে। কিন্তু চা আবাদের জন্য কোন সারের বরাদ্দ নেই। যা বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে তা চা চাষের জন্য সারের তীব্র সংকট। এ কারণে সারের ডিলার ও ক্ষুদ্র সার বিক্রেতাদের কাছ থেকে চড়া দামে সার কিনতে হচ্ছে। আর সার পাওয়া যাচ্ছে না। সারের ডিলাররা দাম বেশি দিলে অনেক সময় সার পাওয়া যায়। তাই এ শিল্পে বাণিজ্যমন্ত্রণালয়ের প্রতি চা চাষে আলাদা করে সার বরাদ্দ দিয়ে বার বার দাবি জানিয়ে আসছেন এ অঞ্চলের চাষিরা।

তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, চা বাগানের জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সার বরাদ্দ দেয় না। এটা দেয়ার কথা চা বোর্ডের। আমনের জন্য বরাদ্দকৃত সার চাষিরা চা বাগানসহ অন্যান্য ফসলে ব্যবহার করছেন। তাই এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তেঁতুলিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার তামান্না ফেরদৌস জানান, আগের মতোই সারের চাহিদা দেয়া হয়েছে। এবার চাহিদা অনুযায়ী বিভাজনও করা হয়েছে। কিন্তু চা-সহ বিভিন্ন আবাদের কারণে সারের সংকট দেখা দিতে পারে। আরও সারের প্রয়োজন রয়েছে। চা বোর্ডের পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ের উন্নয়ন কর্মকর্তা আমির হোসেন জানান, চা চাষের জন্য আলাদাভাবে কোন সার এর বরাদ্দ নেই। কৃষি উৎপাদনে যেসব সার বরাদ্দ হয়, তা থেকেই চা বাগানে সার ব্যবহৃত হয়।

চা বোর্ডের পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফ খান বলেন, প্রচন্ড খরা ও গরমের কারণে প্রথমে লাল মাকড়, পরে লোফারের আক্রমণ হয়। এগুলো দমনের পর শুরু হয়েছে পাতাপচা রোগ। আমরা চাষিদের কপার, হাইড্রোক্সাইড বা অক্সিক্লোরাইড জাতীয় ছত্রাকনাশক দুই দফায় স্প্রে করার পরামর্শ দিচ্ছি। এতে আক্রান্ত বাগানে রোগ কমছে। কয়েক দিন আগে দৈনিক পাতা সংগ্রহ নেমে গিয়েছিল তিন লাখ কেজিতে, যা এখন বেড়ে পাঁচ লাখে দাঁড়িয়েছে। আশা করা হচ্ছে, পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হবে এবং এবার সমতলে রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদন হবে।

আর সারের যে বিষয়টি, আমরা কৃষি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সারের চাহিদা বাণিজ্যমন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে থাকি। সেখান থেকে যা বরাদ্দ হয়ে আসে তা ডিলারের মাধ্যমে চাষিরা সংগ্রহ করে ব্যবহার করে থাকে।

চা উৎপাদন কমে যাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত বছর চা উৎপাদন কমে গিয়েছিল এটা সত্য। তবে এ বছর সরকারি রেকর্ডে বেড়েছে।

back to top