সারাদেশে করোনা মহামারীর এক বছরে আত্মহত্যা করেছে ১৪ হাজার ৪৩৬ নারী-পুরুষ। ২০১৯ এর চেয়ে ২০২০ সালে করোনাকালে আত্মহত্যার পরিমাণ বেড়েছে ৪৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ। পারিবারিক জটিলতা, সম্পর্কের অবনতি, পড়াশোনা নিয়ে হতাশা, আর্থিক সংকট এসব আত্মহত্যার ঘটনার মূল কারণ। আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে নারীর সংখ্যা বেশি। তবে কারণ বিশ্লেষণে দেখা যায়, এরমধ্যে ৩২ শতাংশেরই কোন কারণ জানা যায়নি।
তরুণদের সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশনের এক প্রতিবেদনে দেশের আত্মহত্যার এমন চিত্র উঠে এসেছে। ১৩ মার্চ শনিবার অনলাইনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় আত্মহত্যার পরিসংখ্যান ও কারণ তুলে ধরা হয়।
২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩টি জাতীয় পত্রিকা, ১৯টি স্থানীয় পত্রিকা, হাসপাতাল ও থানা থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। পর্যবেক্ষণের জন্য ৩২২টি আত্মহত্যার ঘটনাকে বেছে নেয়া হয়।
আঁচল ফাউন্ডেশন দাবি করছে, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে আত্মহত্যা ৪৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেড়েছে। তারা তুলনা করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর গত বছরের এ সংক্রান্ত নিহতের সংখ্যার সঙ্গে। সংগঠনটির হিসাবে এক বছরে আত্মহত্যা করার সংখ্যা ১৪ হাজারের বেশি। আর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে, ২০১৯ সালে সারাদেশে আত্মহত্যা করেছে ১০ হাজারের বেশি মানুষ। এই এক বছরের ব্যবধানে আত্মহত্যার পরিমাণ বাড়াটা অশনিসংকেত।
আত্মহত্যার পরিসংখ্যান তুলে ধরেন সংগঠনটির জরিপ টিমের প্রধান এএসএম শাহরিয়ার সিদ্দিকী।
দেশে করোনাভাইরাসে প্রথম শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। গত এক বছরের একটা দীর্ঘ সময় মানুষ গৃহবন্দী থেকেছে। এ সময় মানুষের মধ্যে নানা কারণে হতাশা, বিষণœœতা বেড়েছে। যার নানামুখী প্রভাব পড়েছে মানসিক স্বাস্থ্যে। এসব কারণে কেউ কেউ আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে।
নারীর আত্মহত্যা বেশি : সারাদেশে করোনাকালে পুরুষের চেয়ে বেশি নারী আত্মহত্যা করেছে বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। নারীদের ক্ষেত্রে এ সংখ্যাটা ৫৭ শতাংশ এবং পুরুষের ক্ষেত্রে ৪৩ শতাংশ। মোট আত্মহত্যার ঘটনা ১৪ হাজার ৪৩৬টি। এরমধ্যে নারীর আত্মহত্যার ঘটনা ৮ হাজার ২২৮টি এবং পুরুষের আত্মহত্যার ঘটনা ৬ হাজার ২০৮টি।
আত্মহত্যার ঘটনা পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ২০ থেকে ৩৫ বছর বয়সী রয়েছেন ৪৯ শতাংশ, ৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী ৩৫ শতাংশ, ৩৬ থেকে ৪৫ বছর বয়সী ১১ শতাংশ। সবচেয়ে কম আত্মহননকারী হচ্ছেন ৪৬ থেকে ৮০ বছর বয়সীরা ৫ শতাংশ।
আত্মহত্যার কারণ : বিভিন্ন ধরনের পারিবারিক সমস্যার কারণে আত্মহত্যা করেছে ৩৫ শতাংশ নারী-পুরুষ। এর বাইরে ২৪ শতাংশ সম্পর্কে টানাপোড়েনের কারণে এবং অজানা কারণে ৩২ শতাংশ মানুষ আত্মহত্যা করেছে। আর্থিক ও লেখাপড়ার কারণে আত্মহত্যা করেছে ৪ ও ১ শতাংশ।
মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষ হতাশ হলে ঠুনকো কারণে নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারে না। তখন তিনি নিজেকে একা মনে করে এবং আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। আপাতদৃষ্টিতে অন্যদের কাছে মৃত্যুর কারণ ছোট মনে হলেও ওই কারণ ওই মুহূর্তে ওই ব্যক্তির জন্য অনেক বড় কারণ হয়ে সামনে এসেছিল।
মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আজহারুল ইসলাম বলেন, বিষণ্নতা থেকেই মূলত মানুষ আত্মহত্যা করে। দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ থেকে মানুষ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। আত্মহত্যার কারণগুলো যত তুচ্ছই হোক না কেন, আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তির কাছে তা অনেক বড় একটি ঘটনা।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি : গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে আত্মহত্যা করেন গাজীপুরের এক শিক্ষার্র্থী। সে রাতে তার বাবা মুঠোফোন কেড়ে নেয়ায় অভিমানে মৃত্যুর পথ বেছে নেন উচ্চমাধ্যমিকের প্রথম বর্ষের এই শিক্ষার্থী। করোনাকালে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার এমন প্রবণতার ঘটনা বেশি দেখা গেছে উল্লেখ করে আঁচল ফাউন্ডশনের প্রতিষ্ঠাতা তানসেন রোজ বলেন, মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর আরও গুরুত্ব দিয়ে নাগরিকের বেঁচে থাকার পরিবেশ তৈরি রাষ্ট্র ও পরিবারের দায়িত্ব। তিনি বলেন, তরুণ প্রজন্ম বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে হারে আত্মহত্যা বাড়ছে, সে হারে সচেতনতা বাড়ছে না। মানসিক রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোসহ ১১টি সুপারিশ তুলে ধরা হয় ওই প্রতিবেদনে। এরমধ্যে অন্যতম হলো আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তিকে একা না রাখা, ক্রাইসিস সেন্টার ও হটলাইন চালু করা, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাউন্সিলর নিয়োগ করা প্রমুখ। আঁচল ফাউন্ডেশনের যাত্রা ২০১৯ সালের ২৫ এপ্রিল। তরুণদের এ সংগঠনটি মূলত শিক্ষার্থীদের দক্ষতা ও মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করে থাকে। প্রশিক্ষণ, কর্মশালার মাধ্যমে তারা করোনাকালেও শিক্ষার্থীদের নানা কাউন্সিলিং দিয়েছে।
শনিবার, ১৩ মার্চ ২০২১
সারাদেশে করোনা মহামারীর এক বছরে আত্মহত্যা করেছে ১৪ হাজার ৪৩৬ নারী-পুরুষ। ২০১৯ এর চেয়ে ২০২০ সালে করোনাকালে আত্মহত্যার পরিমাণ বেড়েছে ৪৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ। পারিবারিক জটিলতা, সম্পর্কের অবনতি, পড়াশোনা নিয়ে হতাশা, আর্থিক সংকট এসব আত্মহত্যার ঘটনার মূল কারণ। আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে নারীর সংখ্যা বেশি। তবে কারণ বিশ্লেষণে দেখা যায়, এরমধ্যে ৩২ শতাংশেরই কোন কারণ জানা যায়নি।
তরুণদের সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশনের এক প্রতিবেদনে দেশের আত্মহত্যার এমন চিত্র উঠে এসেছে। ১৩ মার্চ শনিবার অনলাইনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় আত্মহত্যার পরিসংখ্যান ও কারণ তুলে ধরা হয়।
২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩টি জাতীয় পত্রিকা, ১৯টি স্থানীয় পত্রিকা, হাসপাতাল ও থানা থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। পর্যবেক্ষণের জন্য ৩২২টি আত্মহত্যার ঘটনাকে বেছে নেয়া হয়।
আঁচল ফাউন্ডেশন দাবি করছে, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে আত্মহত্যা ৪৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেড়েছে। তারা তুলনা করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর গত বছরের এ সংক্রান্ত নিহতের সংখ্যার সঙ্গে। সংগঠনটির হিসাবে এক বছরে আত্মহত্যা করার সংখ্যা ১৪ হাজারের বেশি। আর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে, ২০১৯ সালে সারাদেশে আত্মহত্যা করেছে ১০ হাজারের বেশি মানুষ। এই এক বছরের ব্যবধানে আত্মহত্যার পরিমাণ বাড়াটা অশনিসংকেত।
আত্মহত্যার পরিসংখ্যান তুলে ধরেন সংগঠনটির জরিপ টিমের প্রধান এএসএম শাহরিয়ার সিদ্দিকী।
দেশে করোনাভাইরাসে প্রথম শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। গত এক বছরের একটা দীর্ঘ সময় মানুষ গৃহবন্দী থেকেছে। এ সময় মানুষের মধ্যে নানা কারণে হতাশা, বিষণœœতা বেড়েছে। যার নানামুখী প্রভাব পড়েছে মানসিক স্বাস্থ্যে। এসব কারণে কেউ কেউ আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে।
নারীর আত্মহত্যা বেশি : সারাদেশে করোনাকালে পুরুষের চেয়ে বেশি নারী আত্মহত্যা করেছে বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। নারীদের ক্ষেত্রে এ সংখ্যাটা ৫৭ শতাংশ এবং পুরুষের ক্ষেত্রে ৪৩ শতাংশ। মোট আত্মহত্যার ঘটনা ১৪ হাজার ৪৩৬টি। এরমধ্যে নারীর আত্মহত্যার ঘটনা ৮ হাজার ২২৮টি এবং পুরুষের আত্মহত্যার ঘটনা ৬ হাজার ২০৮টি।
আত্মহত্যার ঘটনা পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ২০ থেকে ৩৫ বছর বয়সী রয়েছেন ৪৯ শতাংশ, ৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী ৩৫ শতাংশ, ৩৬ থেকে ৪৫ বছর বয়সী ১১ শতাংশ। সবচেয়ে কম আত্মহননকারী হচ্ছেন ৪৬ থেকে ৮০ বছর বয়সীরা ৫ শতাংশ।
আত্মহত্যার কারণ : বিভিন্ন ধরনের পারিবারিক সমস্যার কারণে আত্মহত্যা করেছে ৩৫ শতাংশ নারী-পুরুষ। এর বাইরে ২৪ শতাংশ সম্পর্কে টানাপোড়েনের কারণে এবং অজানা কারণে ৩২ শতাংশ মানুষ আত্মহত্যা করেছে। আর্থিক ও লেখাপড়ার কারণে আত্মহত্যা করেছে ৪ ও ১ শতাংশ।
মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষ হতাশ হলে ঠুনকো কারণে নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারে না। তখন তিনি নিজেকে একা মনে করে এবং আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। আপাতদৃষ্টিতে অন্যদের কাছে মৃত্যুর কারণ ছোট মনে হলেও ওই কারণ ওই মুহূর্তে ওই ব্যক্তির জন্য অনেক বড় কারণ হয়ে সামনে এসেছিল।
মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আজহারুল ইসলাম বলেন, বিষণ্নতা থেকেই মূলত মানুষ আত্মহত্যা করে। দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ থেকে মানুষ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। আত্মহত্যার কারণগুলো যত তুচ্ছই হোক না কেন, আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তির কাছে তা অনেক বড় একটি ঘটনা।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি : গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে আত্মহত্যা করেন গাজীপুরের এক শিক্ষার্র্থী। সে রাতে তার বাবা মুঠোফোন কেড়ে নেয়ায় অভিমানে মৃত্যুর পথ বেছে নেন উচ্চমাধ্যমিকের প্রথম বর্ষের এই শিক্ষার্থী। করোনাকালে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার এমন প্রবণতার ঘটনা বেশি দেখা গেছে উল্লেখ করে আঁচল ফাউন্ডশনের প্রতিষ্ঠাতা তানসেন রোজ বলেন, মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর আরও গুরুত্ব দিয়ে নাগরিকের বেঁচে থাকার পরিবেশ তৈরি রাষ্ট্র ও পরিবারের দায়িত্ব। তিনি বলেন, তরুণ প্রজন্ম বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে হারে আত্মহত্যা বাড়ছে, সে হারে সচেতনতা বাড়ছে না। মানসিক রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোসহ ১১টি সুপারিশ তুলে ধরা হয় ওই প্রতিবেদনে। এরমধ্যে অন্যতম হলো আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তিকে একা না রাখা, ক্রাইসিস সেন্টার ও হটলাইন চালু করা, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাউন্সিলর নিয়োগ করা প্রমুখ। আঁচল ফাউন্ডেশনের যাত্রা ২০১৯ সালের ২৫ এপ্রিল। তরুণদের এ সংগঠনটি মূলত শিক্ষার্থীদের দক্ষতা ও মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করে থাকে। প্রশিক্ষণ, কর্মশালার মাধ্যমে তারা করোনাকালেও শিক্ষার্থীদের নানা কাউন্সিলিং দিয়েছে।