alt

সারাদেশ

করোনা: গ্রামের মানুষের রঙ্গরস

সামসুজ্জামান, কেশবপুর, যশোর : রোববার, ০৯ মে ২০২১

ফাইল ছবি

কেশবপুর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের শেষ সীমানা, যেখান থেকে শুরু হয়েছে সুজাপুর গ্রাম। ঠিক এই জায়গায় একটি চৌরাস্তা পাশের বিভিন্ন গ্রামের সাথে সংযোগ স্থাপন করেছে। চৌরাস্তাটি বর্ষা খোঁড়ার মোড় নামে পরিচিত। কারণ এখানেই বর্ষা নামে এক ব্যক্তি রয়েছেন। জন্ম থেকেই তিনি প্রতিবন্ধী। হাত-পা সবই অচল। এক কথায় বিকলাঙ্গ।

এই মোড়টিতে একটি একটি করে প্রায় ত্রিশটি দোকান চালু হয়ে গেছে। চায়ের দোকান থেকে মুদি খানা, ঔষধের দোকান, কাঁচামাল, মাছ-মাংস সবই পাওয়া যায়। এলাকাটিতে অসংখ্য মাছের ঘের থাকায় সন্ধ্যায় বেশ জমে ওঠে। মাছ ঘেরের মালিক, পাহারাদার সাধারণ মানুষ সবাই আড্ডা দিতে আসে এখানে। খুববেশী প্রয়োজন না হলে তিন কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে উপজেলা সদরে সাধারণত কেউ আসে না।

চায়ের দোকানের সামনে বেঞ্চ আকৃতির বাঁশের চড়াতের উপর বসে লাল চা খাচ্ছে ইসলাম নামের মাঝ বয়সী লোকটি। সন্ধ্যা তখন প্রায় সাড়ে সাতটা। চায়ের দোকানের টেলিভিশনে একটি বাংলা ছবি চলছে। অবাক বিষ্ময়ে তাকিয়ে দেখছে ইসলাম। মাঝে মধ্যে চায়ে চুমুক দিচ্ছে। হঠাৎ তার কাঁধে হাত পড়লো বন্ধু ইসলামের। দুজন দুজনকে বেয়াই বলে ডাকে।

কি বেয়াই তোর ‘করেনায়’ আজ ক’জন গেলো?’

‘দাঁড়া আগে নাচটা দেখেনি। দেখ দেখ কি ভাবে মুখ লুকাচ্ছে ছ্যামড়ার বুকের মদ্দি।’

একে ওকে চড়াতে আরও চারজন এসে বসেছে। এর মধ্যে অল্প বয়স্ক এক জনের দাঁড়িতে মাস্ক লাগানো। বাকী পাঁচ জনের কারও মুখে মাস্ক নেই।

এর মধ্যে আটটার খবর শুরু হয়েছে। মাস্ক লাগানো ছেলেটিকে একটি খারাপ কথা বলে ইসলাম বললো ও ঝুলিয়ে রেখেছিস ক্যান। ইসলামের এমন কথায় হাসির রোল উঠল। আরেকজন বললো, ‘শোন সবই আল্লার গজব, যখন গাছের পাতা পড়ে যাবে তখন তুই ও ফুড়–ত। একেবারে আসমানের উপর চলে যাবি। এখানে আর চা গিলতে আসবি না।’

এর মধ্যে সুকুমার বলে উঠলো, ‘মরে গেলে তো সবাই বেঁচে যায়। দেখছো না গৌতম নায়েবের বাড়ীতে চারজনের করোনা হয়েছে। ওদের বাড়ী লাল পতাকা উড়িয়ে দিয়ে গেছে ইউএনও অফিসের লোক। যাতে ওদের বাড়ীতে কেউ না যায়। তোমরা যাই বলো রোগটা আসলে মারাত্মক। কোনো করোনা রুগির গায়ের সাথে গা লাগলে তাঁর শরীরে ওই রোগ ঢুকে যায়।’

বসে থাকা কেউই সকুমারের কথা মানতে চায় না। ‘ও ঢাকার বড় লোকদের অসুখ, এতদূর আসবে না।’ এমনটাই বললো দ্বিতীয় ইসলাম।

সুকুমার খুলনায় একটি প্রাইভেট ফার্মে চাকুরী করে। আই,এ পাশ। বাস্তবতা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান রয়েছে। তাছাড়া বিভাগীয় শহরে থেকে বেশ চালু হয়ে গেছে। সুকুমার বললো, ‘তাহলে সরকার প্রতিদিন আক্রান্ত এবং মৃত্যুর যে খবর দিচ্ছে তাও তো ঠিক না।’

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এবং পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের চিত্র দেখেও সাধারণ মানুষের মনে কোন উদবেগ উৎকণ্ঠা নেই।

একজনের উক্তি সরকার এখন যা বলছে তা কোনো কিছুই ঠিকনা। ‘আল্লাহর ডাক পড়লে আর সময় পাওয়া যাবেন।’ এমনি সব বিক্ষিপ্ত আলাপ চলছে। কয়েক মিনিট শুনে মোটর ভ্যানে চললাম সামনের দিকে।

পাকা পিচের রাস্তা। প্রায় তিন কিলোমিটার পর মাগুরখালী বাজার। প্রতিদিন প্রায় সারা দিনই বাজার চলে। গ্রামের মধ্যে বেশ বড় বাজার। সব ধরণের দোকান পাট রয়েছে। একটি ঔষধের দোকানের সামনে দেখি বেশ ভীড়। লোকজন ঔষধ কিনছে। আবার চলে যাচ্ছে। বাজারের মধ্যে এ দোকানটিই বেশ বড়। দোকানী আমাকে চেনে। তখন খরিদদার শূন্য। দোকানী লম্বা একটা সালাম দিয়ে কর্মচারীকে একটি চেয়ার দিতে বললো। বললাম না এই মহামারীর সময় বাইরে কিছুই খাচ্ছি না। থাক।

‘কি মনে করে ভাই এদিকে।’

বললাম ‘না এমনিই একটু বেরুলাম। ঠিক তা না আমার এক বাল্য বন্ধুর অসুখের খবর শুনে তাকে দেখাই উদ্দেশ্য।’

‘তা বাজার তো বেশ বড় হয়ে গেছে। যা ভাই বর্তমান সরকার সব গ্রামকে শহর বানাচ্ছে না। তাই মনে হয় বাজারও বড় হচ্ছে।’

ডাক্তার আবার গ্রাম্য ডাক্তারের সার্টিফিকেট নিয়ে টুকটাক রোগী দেখে। এর মধ্যে ভ্যানে শোয়ানো পঞ্চাশোর্ধ এক ব্যক্তিকে নিয়ে তাঁর ছেলে এসেছে ডাক্তার দেখাতে। কয়েক দিন ধরে জ্বর। কিছুতেই দুয়ের নীচে নামছে না। ডাক্তার বললো ‘কিছু না ইনফ্লুয়েঞ্জা। ঔষুধ দিচ্ছি ভাল হয়ে যাবে।’

সেই একই ডায়ালগ ‘করেনা’র ভয় নেই। আরে করোনা কোনো রোগ না। ইনফ্লুয়েঞ্জার নতুন নাম হয়েছে করেনা। কিছু ঔষুধ দিয়ে পঞ্চাশ টাকা নিয়ে বিদায় দিল।

ডাক্তার তাঁর তিন বন্ধুকে নিয়ে একেবারে গায়ে গা ঘেসে বসে মুড়ি চানাচুর খাচ্ছে খবরের কাগজের উপর রেখে। ডাক্তারসহ কারো মুখে মাস্ক নেই। নেই সামাজিক দূরত্বের বালাই।

‘বুঝলে ভাই সরকার একেক সময় এক এক হুজুগ তুলে মানুষকে আতংক গ্রস্থ করে তোলে। এর কোনো ভিত্তি নেই। ¯্রফে ইনফ্লুয়েঞ্জার গায়ে রং লাগিয়ে করোনা বানানো হয়েছে।’ বললাম ‘তাহলে এই যে নামী-দামী লোকসহ এত লোক মারা যাচ্ছে প্রতিদিন, এর কারণ কি? ’ ‘ইনফ্লুয়েঞ্জা,’ ডাক্তারের উত্তর। ‘শোনেন ভাই ভগবান যখন যাকে খুশী তাঁকে নিয়ে নিতে পারেন।’

পাশে একটি বেশ বড় আকারের মুদি খানা। তিন জন কর্মচারী খরিদ্দার সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। একমাত্র দোকানী ক্যাশে বসে টাকা নিচ্ছেন। তাঁর এককানে ঝুলছে একটি মাস্ক। খরিদ্দার এবং দোকান কর্মচারী কারও মুখে নেই কোনো মাস্ক। বাজারের অধিকাংশ মানুষই মাস্ক ছাড়া। কোনো দ্বিধা দ্বন্দ নেই। গায়ে গায়ে মিশে চলছে। হ্যান্ড শেইক করছে।

কিছু সময় বাজারে ঘোরাঘুরি করলাম। কয়েক জন বাড়ী মুখি লোকের সাথে কথা বললাম মাক্স ব্যবহাররে ব্যাপারে। কিন্তু উত্তর একই। ‘আজরাইল এসে গেলে কারও ধরে রাখার ক্ষমতা নেই। সোজা বুকে বসবে আর জান টা নিয়ে চলে যাবে।’ বললাম, ‘আল্লাহ তো জ্ঞান, বুদ্ধি বিবেক সব কিছু দিয়ে তাঁর শ্রেষ্ঠ নিদর্শন মানুষকে বানিয়েছেন। তিনি নিজেকে নিরাপদ রাখার উপদেশ দিয়ে আমাদেরকে মর্তে পাঠিয়েছেন। তাহলে আমাদের নিরাপদ থাকার সমস্যা কোথায়?’ কয়েক জনের উত্তর মাস্ক পরলেই কি নিরাপদ থাকা যাবে? মরতে হবে না কোন দিন? এমন গ্যারান্টি থাকলে আমি এখনই মাস্ক পরবো। একথায় জবাব দেবার ভাষা আমি খুজে পাইনি। বুঝলাম ধর্মান্ধতা গ্রামের মানুষকে এখনও আঁকড়ে আছে।

বয়সে তরুণ তিন চার বন্ধু রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছে। ওদের কথোপকথন শোনার আগ্রহে আমিও এককাপ চায়ের কথা বলে কাছাকাছি দাঁড়ালাম। ‘সোহাগ শোন এই করেনা আমাদের কোন দিনও করতে আসবে না। ও সব বুঝুক শহরে যারা বাস করে।’ সহপাঠিরা হো হো করে হেসে উঠলো। সোহাগ বললো ‘ও করেনা আমাদের কাছে আসবে না ক্যান জানিস আমাদের বাড়ী খতিয়াখালি। আমাদের খালি কতিতে ও কোন দিনও ঢুকবে না।’

এই গ্রামের পাশেই খতিয়ালি নামের একটি গ্রাম আছে। গ্রামটিতে ঋষি সম্প্রদায়ের বাস। বুঝলাম ওরা ওই গ্রামেরই ছেলে।

ছবি

মুরাদনগরে ধর্ষণ-নির্যাতনের ঘটনার নিন্দা, সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি ৩৮ বিশিষ্ট নাগরিকের

ছবি

নওগাঁয় ৯০টি খামারে তৈরি হচ্ছে কেঁচো সার

বরমচাল চা বাগানের ইতি এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী

সিরাজগঞ্জে হত্যা মামলায় ৬ জনের যাবজ্জীবন

ছবি

তারাগঞ্জ প্রাণীসম্পদ অফিস চত্বরে ফুলের চারাগাছ রোপন

বটিয়াঘাটায় ব্যবসায়ীদের মাঝে পরিবেশ বান্ধব ব্যাগ বিতরণ

কলারোয়ায় আইসক্রিম ফ্যাক্টরিতে অভিযান

পীরগাছায় ছেলের অপরাধে মধ্যযুগীয় কায়দায় বাবার ওপর নির্যাতন

নোয়াখালীতে বিধবাকে গণধর্ষণ

কাজে ফিরেছেন হিলি কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

ছবি

প্লাস্টিকের বস্তায় চাল বাজারজাত করার জরিমানা

শিক্ষার্থীকে বস্তায় ভরে নির্যাতনের ঘটনায় শিক্ষক কারাগারে

সমিতির জমানো টাকা ফেরত না পেয়ে শোকে মৃত্যু

ছবি

নবীগঞ্জে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার ১৩

কুষ্টিয়ায় সেতুর টোল আদায় বন্ধে দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ, যানজট, ভোগান্তি

নড়াইলে এইচএসসিতে সেট পরিবর্তন কেন্দ্র সচিব ও ট্যাগ অফিসারকে অব্যাহতি

ছবি

ভৈরবে তুচ্ছ ঘটনায় সংঘর্ষ বাড়িঘর ভাঙচুর, আহত ১০

চিলমারী তেল ডিপো রক্ষায় কুড়িগ্রামে শ্রমিকদের মানববন্ধন

মোহনগঞ্জে হারিয়ে যাচ্ছে মৃৎশিল্পের জৌলুস

ছবি

চিলমারীতে অসময়ের বন্যা পাটচাষিরা চিন্তিত

ছবি

সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার পণ্য আটক করল সুনামগঞ্জ বিজিবি

প্রেমের টানে ভারতীয় যুবক লালমনিরহাটে

মহাদেবপুরে অতিরিক্ত ধানচাল মজুদ জেল-জরিমানা, ধান কেনা বন্ধ

ছবি

৬৭০ টাকার বীজ ধান ৭’শ ৫০ টাকা বিক্রি!

সন্তান জন্ম দিয়ে পরীক্ষা দিলেন অদম্য ইশা

জেলা আ.লীগের সভাপতি নাছির দুই দিনের রিমান্ডে

ছবি

বেনাপোল বন্দরে পানি নিষ্কাশনের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে পণ্য খালাস

চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনে হত্যা মামলার আসামি গ্রেপ্তার

সিদ্ধিরগঞ্জে ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে ফারিহা

ছবি

বেড়িবাঁধের দুই কিলোমিটার রাস্তাটি এখন গলার কাঁটায়

কালীগঞ্জে হোল্ডিং ট্যাক্স ইস্যুতে পৌরবাসীর সঙ্গে ইউএনওর সরাসরি সংলাপ

ছবি

এনবিআরের আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেয়ায় বেনাপোল বন্দরে কার্যক্রম শুরু

নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে বিজিবির অভিযানে ৯,৬২০ পিস ইয়াবা উদ্ধার

চট্টগ্রামে জন্ম থেকে ১৫ মাস বয়সী শিশুদের জন্য নতুন প্রকল্প : কার্যক্রম চলবে ৬ জেলায়

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অভিযান আটক ৩

ছবি

নেত্রকোনায় চক্ষু চিকিৎসার নামে প্রতারণা

tab

সারাদেশ

করোনা: গ্রামের মানুষের রঙ্গরস

সামসুজ্জামান, কেশবপুর, যশোর

ফাইল ছবি

রোববার, ০৯ মে ২০২১

কেশবপুর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের শেষ সীমানা, যেখান থেকে শুরু হয়েছে সুজাপুর গ্রাম। ঠিক এই জায়গায় একটি চৌরাস্তা পাশের বিভিন্ন গ্রামের সাথে সংযোগ স্থাপন করেছে। চৌরাস্তাটি বর্ষা খোঁড়ার মোড় নামে পরিচিত। কারণ এখানেই বর্ষা নামে এক ব্যক্তি রয়েছেন। জন্ম থেকেই তিনি প্রতিবন্ধী। হাত-পা সবই অচল। এক কথায় বিকলাঙ্গ।

এই মোড়টিতে একটি একটি করে প্রায় ত্রিশটি দোকান চালু হয়ে গেছে। চায়ের দোকান থেকে মুদি খানা, ঔষধের দোকান, কাঁচামাল, মাছ-মাংস সবই পাওয়া যায়। এলাকাটিতে অসংখ্য মাছের ঘের থাকায় সন্ধ্যায় বেশ জমে ওঠে। মাছ ঘেরের মালিক, পাহারাদার সাধারণ মানুষ সবাই আড্ডা দিতে আসে এখানে। খুববেশী প্রয়োজন না হলে তিন কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে উপজেলা সদরে সাধারণত কেউ আসে না।

চায়ের দোকানের সামনে বেঞ্চ আকৃতির বাঁশের চড়াতের উপর বসে লাল চা খাচ্ছে ইসলাম নামের মাঝ বয়সী লোকটি। সন্ধ্যা তখন প্রায় সাড়ে সাতটা। চায়ের দোকানের টেলিভিশনে একটি বাংলা ছবি চলছে। অবাক বিষ্ময়ে তাকিয়ে দেখছে ইসলাম। মাঝে মধ্যে চায়ে চুমুক দিচ্ছে। হঠাৎ তার কাঁধে হাত পড়লো বন্ধু ইসলামের। দুজন দুজনকে বেয়াই বলে ডাকে।

কি বেয়াই তোর ‘করেনায়’ আজ ক’জন গেলো?’

‘দাঁড়া আগে নাচটা দেখেনি। দেখ দেখ কি ভাবে মুখ লুকাচ্ছে ছ্যামড়ার বুকের মদ্দি।’

একে ওকে চড়াতে আরও চারজন এসে বসেছে। এর মধ্যে অল্প বয়স্ক এক জনের দাঁড়িতে মাস্ক লাগানো। বাকী পাঁচ জনের কারও মুখে মাস্ক নেই।

এর মধ্যে আটটার খবর শুরু হয়েছে। মাস্ক লাগানো ছেলেটিকে একটি খারাপ কথা বলে ইসলাম বললো ও ঝুলিয়ে রেখেছিস ক্যান। ইসলামের এমন কথায় হাসির রোল উঠল। আরেকজন বললো, ‘শোন সবই আল্লার গজব, যখন গাছের পাতা পড়ে যাবে তখন তুই ও ফুড়–ত। একেবারে আসমানের উপর চলে যাবি। এখানে আর চা গিলতে আসবি না।’

এর মধ্যে সুকুমার বলে উঠলো, ‘মরে গেলে তো সবাই বেঁচে যায়। দেখছো না গৌতম নায়েবের বাড়ীতে চারজনের করোনা হয়েছে। ওদের বাড়ী লাল পতাকা উড়িয়ে দিয়ে গেছে ইউএনও অফিসের লোক। যাতে ওদের বাড়ীতে কেউ না যায়। তোমরা যাই বলো রোগটা আসলে মারাত্মক। কোনো করোনা রুগির গায়ের সাথে গা লাগলে তাঁর শরীরে ওই রোগ ঢুকে যায়।’

বসে থাকা কেউই সকুমারের কথা মানতে চায় না। ‘ও ঢাকার বড় লোকদের অসুখ, এতদূর আসবে না।’ এমনটাই বললো দ্বিতীয় ইসলাম।

সুকুমার খুলনায় একটি প্রাইভেট ফার্মে চাকুরী করে। আই,এ পাশ। বাস্তবতা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান রয়েছে। তাছাড়া বিভাগীয় শহরে থেকে বেশ চালু হয়ে গেছে। সুকুমার বললো, ‘তাহলে সরকার প্রতিদিন আক্রান্ত এবং মৃত্যুর যে খবর দিচ্ছে তাও তো ঠিক না।’

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এবং পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের চিত্র দেখেও সাধারণ মানুষের মনে কোন উদবেগ উৎকণ্ঠা নেই।

একজনের উক্তি সরকার এখন যা বলছে তা কোনো কিছুই ঠিকনা। ‘আল্লাহর ডাক পড়লে আর সময় পাওয়া যাবেন।’ এমনি সব বিক্ষিপ্ত আলাপ চলছে। কয়েক মিনিট শুনে মোটর ভ্যানে চললাম সামনের দিকে।

পাকা পিচের রাস্তা। প্রায় তিন কিলোমিটার পর মাগুরখালী বাজার। প্রতিদিন প্রায় সারা দিনই বাজার চলে। গ্রামের মধ্যে বেশ বড় বাজার। সব ধরণের দোকান পাট রয়েছে। একটি ঔষধের দোকানের সামনে দেখি বেশ ভীড়। লোকজন ঔষধ কিনছে। আবার চলে যাচ্ছে। বাজারের মধ্যে এ দোকানটিই বেশ বড়। দোকানী আমাকে চেনে। তখন খরিদদার শূন্য। দোকানী লম্বা একটা সালাম দিয়ে কর্মচারীকে একটি চেয়ার দিতে বললো। বললাম না এই মহামারীর সময় বাইরে কিছুই খাচ্ছি না। থাক।

‘কি মনে করে ভাই এদিকে।’

বললাম ‘না এমনিই একটু বেরুলাম। ঠিক তা না আমার এক বাল্য বন্ধুর অসুখের খবর শুনে তাকে দেখাই উদ্দেশ্য।’

‘তা বাজার তো বেশ বড় হয়ে গেছে। যা ভাই বর্তমান সরকার সব গ্রামকে শহর বানাচ্ছে না। তাই মনে হয় বাজারও বড় হচ্ছে।’

ডাক্তার আবার গ্রাম্য ডাক্তারের সার্টিফিকেট নিয়ে টুকটাক রোগী দেখে। এর মধ্যে ভ্যানে শোয়ানো পঞ্চাশোর্ধ এক ব্যক্তিকে নিয়ে তাঁর ছেলে এসেছে ডাক্তার দেখাতে। কয়েক দিন ধরে জ্বর। কিছুতেই দুয়ের নীচে নামছে না। ডাক্তার বললো ‘কিছু না ইনফ্লুয়েঞ্জা। ঔষুধ দিচ্ছি ভাল হয়ে যাবে।’

সেই একই ডায়ালগ ‘করেনা’র ভয় নেই। আরে করোনা কোনো রোগ না। ইনফ্লুয়েঞ্জার নতুন নাম হয়েছে করেনা। কিছু ঔষুধ দিয়ে পঞ্চাশ টাকা নিয়ে বিদায় দিল।

ডাক্তার তাঁর তিন বন্ধুকে নিয়ে একেবারে গায়ে গা ঘেসে বসে মুড়ি চানাচুর খাচ্ছে খবরের কাগজের উপর রেখে। ডাক্তারসহ কারো মুখে মাস্ক নেই। নেই সামাজিক দূরত্বের বালাই।

‘বুঝলে ভাই সরকার একেক সময় এক এক হুজুগ তুলে মানুষকে আতংক গ্রস্থ করে তোলে। এর কোনো ভিত্তি নেই। ¯্রফে ইনফ্লুয়েঞ্জার গায়ে রং লাগিয়ে করোনা বানানো হয়েছে।’ বললাম ‘তাহলে এই যে নামী-দামী লোকসহ এত লোক মারা যাচ্ছে প্রতিদিন, এর কারণ কি? ’ ‘ইনফ্লুয়েঞ্জা,’ ডাক্তারের উত্তর। ‘শোনেন ভাই ভগবান যখন যাকে খুশী তাঁকে নিয়ে নিতে পারেন।’

পাশে একটি বেশ বড় আকারের মুদি খানা। তিন জন কর্মচারী খরিদ্দার সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। একমাত্র দোকানী ক্যাশে বসে টাকা নিচ্ছেন। তাঁর এককানে ঝুলছে একটি মাস্ক। খরিদ্দার এবং দোকান কর্মচারী কারও মুখে নেই কোনো মাস্ক। বাজারের অধিকাংশ মানুষই মাস্ক ছাড়া। কোনো দ্বিধা দ্বন্দ নেই। গায়ে গায়ে মিশে চলছে। হ্যান্ড শেইক করছে।

কিছু সময় বাজারে ঘোরাঘুরি করলাম। কয়েক জন বাড়ী মুখি লোকের সাথে কথা বললাম মাক্স ব্যবহাররে ব্যাপারে। কিন্তু উত্তর একই। ‘আজরাইল এসে গেলে কারও ধরে রাখার ক্ষমতা নেই। সোজা বুকে বসবে আর জান টা নিয়ে চলে যাবে।’ বললাম, ‘আল্লাহ তো জ্ঞান, বুদ্ধি বিবেক সব কিছু দিয়ে তাঁর শ্রেষ্ঠ নিদর্শন মানুষকে বানিয়েছেন। তিনি নিজেকে নিরাপদ রাখার উপদেশ দিয়ে আমাদেরকে মর্তে পাঠিয়েছেন। তাহলে আমাদের নিরাপদ থাকার সমস্যা কোথায়?’ কয়েক জনের উত্তর মাস্ক পরলেই কি নিরাপদ থাকা যাবে? মরতে হবে না কোন দিন? এমন গ্যারান্টি থাকলে আমি এখনই মাস্ক পরবো। একথায় জবাব দেবার ভাষা আমি খুজে পাইনি। বুঝলাম ধর্মান্ধতা গ্রামের মানুষকে এখনও আঁকড়ে আছে।

বয়সে তরুণ তিন চার বন্ধু রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছে। ওদের কথোপকথন শোনার আগ্রহে আমিও এককাপ চায়ের কথা বলে কাছাকাছি দাঁড়ালাম। ‘সোহাগ শোন এই করেনা আমাদের কোন দিনও করতে আসবে না। ও সব বুঝুক শহরে যারা বাস করে।’ সহপাঠিরা হো হো করে হেসে উঠলো। সোহাগ বললো ‘ও করেনা আমাদের কাছে আসবে না ক্যান জানিস আমাদের বাড়ী খতিয়াখালি। আমাদের খালি কতিতে ও কোন দিনও ঢুকবে না।’

এই গ্রামের পাশেই খতিয়ালি নামের একটি গ্রাম আছে। গ্রামটিতে ঋষি সম্প্রদায়ের বাস। বুঝলাম ওরা ওই গ্রামেরই ছেলে।

back to top