alt

সারাদেশ

উপাচার্যদের দুর্নীতির তদন্ত, কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না

রাজনৈতিক ও বিভিন্ন মহলের তদবিরের কারণে অনিয়ম

রাকিব উদ্দিন : রোববার, ০৯ মে ২০২১

মেয়াদ শেষ হওয়ার পর অন্তত ছয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্যের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। কিন্তু মেয়াদ (উপাচার্য) থাকা অবস্থায়ও তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির তদন্ত করেছে শিক্ষা প্রশাসন। অনিয়মের প্রমাণও মেলেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কোন উপাচার্যের বিরুদ্ধেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নজির নেই। ইউজিসি অভিযুক্ত ব্যক্তি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে তদন্ত করলেও কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের এখতিয়ার নেই সংস্থাটির।

আবার কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা গেছে, উপাচার্যের পদে থাকা অবস্থায় কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠলে তারা উল্টো শিক্ষা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা ও ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য বিষোদ্গার করছেন। নিজেদের রাজনৈতিক আদর্শ ও মতাদর্শের সাফাই গাইছেন। এ কারণে শিক্ষা প্রশাসনও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন।

ইউজিসির সাবেক একাধিক চেয়ারম্যান ও শিক্ষাবিদ মনে করছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির দুর্বল তদারকি, অতিমাত্রায় রাজনৈতিক বিবেচনায় উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ, উপাচার্যের সঙ্গে অন্যদের দ্বন্দ্ব, নিয়োগপ্রাপ্তদের আর্থিক ও রাজনৈতিক উচ্চাবিলাস এবং নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন মহলের তদবিরের কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দুর্নীতি বাড়ছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউজিসি সচিব (ভারপ্রাপ্ত) ড. ফেরদৌস জামান সংবাদকে বলেন, ‘ইউজিসির কাছে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে অভিযোগ আসলে আমরা তদন্ত করি... কোন ফাইন্ডিংস (অভিযোগের প্রমাণ সংক্রান্ত) থাকলে তা সুপারিশসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়। এরপর ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্ব সরকারের (শিক্ষা মন্ত্রণালয়)।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেন, ‘কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হলে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ‘সম্মতির’ প্রয়োজন হয়। তাছাড়া উপাচার্যরা সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকলেও তারা নানাভাবে প্রভাবশালী। এসব বিষয় মাথায় নিয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হয়।’

উপাচার্যের দায়িত্ব থেকে বিদায় নেয়ার দু’দিনের মাথায় অনিয়ম ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগে তদন্তের মুখোমুখি হয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ডা. এম আবদুস সোবহান। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেরদিন নিয়মনীতি উপেক্ষা করে তিনি গত ৫ মে বিভিন্ন পদে ১৪১ জন শিক্ষক-কর্মচারী এদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে প্রতিষ্ঠিত ‘ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়’র নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বজনপ্রীতির অভিযোগেও তদন্ত চলমান রয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পাওয়া সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর যাবতীয় তথ্য চেয়েছে তদন্ত কমিটি। নিয়োগ, কেনাকাটা ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে অন্য একটি পক্ষের তীব্র বিরোধ চলছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

সরকার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে মাদ্রাসায় উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ২০১৩ সালে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। রাজধানীর মহাম্মদপুরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাস্পাস রয়েছে। শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্বে আছেন প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আহসান উল্লাহ। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন পদে নিয়োগে স্বজপ্রীতির অভিযোগ ওঠে। এগুলো তদন্ত করছে ইউজিসি।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা কেন বাড়ছে, জানতে চাইলে ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান ও শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. নজরুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে ‘দুষ্টু লোক’ ভরে গেছে। তাদের নিয়ন্ত্রণ করাও কঠিন হয়ে পরছে।

তিনি বলেন, ‘আমি যখন ইউজিসির চেয়ারম্যান ছিলাম, তার আগেও বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতি ছিল, আমাদের মেয়াদের পরেও ছিল। কিন্তু আমার দেয়াদকালে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এতটা বেপরোয়া ভাব ছিল না, সবকিছুই একটি নিয়ন্ত্রণে ছিল।’ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম ২০০৭ সালের ৭ মে থেকে ২০১১ সালের ৬ মে পর্যন্ত ইউজিসি চেয়ারম্যান ছিলেন।

উপাচার্যের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোন ত্রুটি আছে কিনা জানতে চাইলে প্রফেসর নজরুল ইসলাম রাবি’র সদ্য বিদায়ী উপাচার্যের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘এসব কোন সমস্যা নয়। যেমন প্রফেসর এম আবদুস সোবহান খুবই ভালো-দক্ষ একজন বিজ্ঞানী ছিলেন, নেতা ছিলেন। তার মধ্যে কী এমন হল যে.... দ্বিতীয় মেয়াদে এসে তার মাথাই খারাপ হয়ে গেল?’

কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত অনিয়মে ‘দুঃখ’ প্রকাশ করে শিক্ষাবিদ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আসলে ওনাদের (উপাচার্য) নিজস্ব....ব্যক্তিগত কোন চরিত্রই নেই। রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়সহ (বেগম রোকেয়া) আরও কয়েকটিতে যা হয়েছে তা খুবই দুঃখজনক।’

অধ্যাপক আবদুস সোবহান ২০১৭ সালের ৭ মে দ্বিতীয় মেয়াদে রাবি উপাচার্য পদে নিয়োগ পান। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে যোগ্যতা শিথিল করে মেয়ে-জামাতাকে নিয়োগ দানসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। গত বছর ইউজিসির তদন্তে এসব অভিযোগের প্রমাণ মেলে। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় রাবির সব ধরনের নিয়োগ স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয়।

এ নির্দেশ উপেক্ষা করেই ১৪১ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন উপাচার্য ড. আবদুস সোবহান। গত ৫ মে উপাচার্যের স্বাক্ষরে শিক্ষক পদে ৯ জন, কর্মকর্তা পদে ১৯ জন, তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী পদে ৮৫ জন, চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী পদে ২৪ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়।

ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে ৪৯টি অনুমোদিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৪৬টির শিক্ষা কার্যক্রম চলমান। বাকিগুলোর অবকাঠামো নির্মাণাধীন। ৪৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান মিলিয়ে সাত উপাচার্যের অনিয়মের অভিযোগে তদন্ত চলছে।

চলতি বছরেই অন্তত তিনজন উপাচার্যের ব্যাপারে তদন্ত প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হয়েছে, এগুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমাও দেয়া হয়েছে। এসব প্রতিবেদনে বেশ কিছু অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে। বিশেষ করে জনবল নিয়োগে স্বজনপ্রীতি, কেনাকাটায় অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা, অবকাঠামো নির্মাণ ও সংস্কারে অনিয়ম, ভুয়া ভাউচারে অর্থ আত্মসাৎ এবং কারও কারও বিরুদ্ধে নারীঘটিত অভিযোগও রয়েছে।

যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে তদন্ত চলমান

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্যের বিরুদ্ধে ওঠা নানা অনিয়মের তদন্ত চলছে।

এছাড়া রাবি, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য ও টাঙ্গাইলের মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্যের ব্যাপারে তদন্ত চলমান রয়েছে বলে ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে।

চলতি বছরে তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে রাবির সদ্য বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক এম আবদুস সোবহানের বিরুদ্ধে এর আগেও নানা অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে শিক্ষা প্রশাসন।

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহর বিরুদ্ধেও তদন্ত চলমান রয়েছে। তার বিরুদ্ধে একাধিক কমিটির তদন্ত চলমান রয়েছে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ড. কলিম উল্লাহর বিরুদ্ধে একটি প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়। এই প্রতিবেদন প্রত্যাখান করে তিনি তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ও ইউজিসিকে দায়ী করে ঢাকায় প্রেস কনফারেন্স করেন। ওইদিনই শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে ব্যাখ্যা দেয়া হয়।

গত অক্টোবরে রাবি উপাচার্য অধ্যাপক এম আবদুস সোবহান (সদ্য বিদায়ী) ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নানা অনিয়মের ব্যাপারে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। কিন্তু উপাচার্যের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। রাবির নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ রাখতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি নির্দেশনা দেয়া হলেও সেটি আমলে নেয়নি বিদায়ী উপাচার্য। সর্বশেষ উপাচার্যের বিদায়ের দিন গত ৬ মে আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহর অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার ৪৫টি অভিযোগ তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছে ইউজিসি। চলতি বছর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি ১০তলা ভবন ও একটি স্মৃতিস্তম্ভের নির্মাণকাজে উপাচার্যের অনিয়মের সত্যতা পেয়েছে ইউজিসির আরেকটি সরেজমিন তদন্ত কমিটি। এসব অনিয়মের দায়ে উপাচার্যসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয় তদন্ত প্রতিবেদনে।

ওই অবস্থায় গত ৪ মার্চ ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলন উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি উল্টো রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সৃষ্ট দূরাবস্থার জন্য শিক্ষামন্ত্রীকে দোষারোপ করেন। তিনি বলেন, এসব অভিযোগ ও ইউজিসির এমন তদন্ত শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির আশ্রয়, প্রশ্রয় ও আশকারায় হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রীর আশকারায় এ পরিস্থিতি হয়েছে। অধ্যাপক কলিম উল্লাহ বলেন, ইউজিসির প্রতিবেদন কেন এমন হয়েছে, তার জন্যও পরিপূর্ণভাবে দায়-দায়িত্ব শিক্ষামন্ত্রীর।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর তৈরি ইউজিসি তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রথমে নিয়োগকৃত পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা না করে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় দ্বিতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয়া হয়, এটি সরকারি ক্রয় পদ্ধতি বহিঃর্ভূত। নকশা পরিবর্তন করায় নির্মাণাধীন ভবনে এক ধরনের ঝুঁকিও তৈরি হয়েছে। এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে এবং শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টির পথে অন্তরায় সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের তিনটি অবকাঠামো নির্মাণে যে অবহেলা, দীর্ঘসূত্রতা ও অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, তা বর্তমান প্রশাসনের অনৈতিকতা, অদক্ষতা ও ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ।

শরণখোলার রেঞ্জে মাছ ধরার সময় পাঁচ জেলে আটক

নারায়ণগঞ্জ শহরে গরম কমাতে ‘তাপকর্ম পরিকল্পনা’

ছবি

কক্সবাজারে জামায়াত নেতার হামলা, বিএনপি নেতা নিহত

ছবি

শায়েস্তাগঞ্জ ও অলিপুরে উচ্ছেদ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা, উদ্বোধন হলো পুলিশ বক্স

ছবি

বিনা বিচারে ৩০ বছর, অবশেষে মুক্তি পেলেন কানু মিয়া

ছবি

ঐতিহাসিক ভবন ভাঙা ঠেকাতে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের চিঠি

ছবি

কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গাইনি বিশেষজ্ঞ নেই ১০ বছর

মহেশপুর আদালত চত্বরে জাল কোর্টফিতে সয়লাব

কমলগঞ্জে চা শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার

মোহনগঞ্জে হারিয়ে গেছে দেশি জাতের ধান

নবাবগঞ্জে নিখোঁজ শিশুর মরদেহ উদ্ধার

মোরেলগঞ্জ ভেটেরিনারি হাসপাতালে ১১ পদের মধ্যে ৮ পদেই কেউ নেই

রংপুর চেম্বারের নির্বাচন সম্পন্ন

ছবি

৭ বছর আগের সেই মর্মান্তিক ঘটনায় চোখের জলে বুক ভাসান স্বজনরা

চাঁদপুরে অপরাধে জড়িত সন্দেহে আটক ২২

তারাগঞ্জে চাষিদের বীজ, সার ও অর্থ বিতরণ

ছবি

হরিপুর-চিলমারী সেতুর উদ্বোধন ২ আগস্ট

বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস উপলক্ষে কলমাকান্দায় আলোচনা সভা

বাগাতিপাড়ায় সড়ক প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ, দুদকের অভিযান

ভিডব্লিউবি কার্ডধারীদের কাছে ট্যাক্সের নামে টাকা আদায়

ছবি

দশমিনায় বাড়ির আঙিনায় বস্তায় আদা চাষে সাফল্য

কাঁঠালিয়ায় জিপিএ৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা

চিতলমারীতে মাদক বিক্রেতা গ্রেপ্তার

ছবি

বারবার প্রতিশ্রুতির পরও পাকাকরণ হয়নি সড়ক

পাঁচবিবি উপজেলা প্রশাসন ভবন উদ্বোধন

মা হত্যার দায়ে পুত্রের আমৃত্যু কারাদণ্ড

ছবি

মাদারগঞ্জে স্বেচ্ছাশ্রমে কাঠের সেতু পুনর্নির্মাণ

শ্রীমঙ্গলে চাঞ্চল্যকর হৃদয় হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন দুই বন্ধু গ্রেপ্তার

ভুক্তভোগী দুই নারীকে হুমকির অভিযোগ ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে

ছবি

বড়াল নদীতে মাছ ধরার উৎসব

স্বজনদের আপত্তির মুখে লাশ উত্তোলন না করেই ফিরে গেল পিবিআই টিম

মোরেলগঞ্জে মাদ্রাসাছাত্রকে কুপিয়ে জখম

ছবি

চাঁদাবাজি বন্ধে বিএনপির সমাবেশ

অটোরিকশা চালককে মারধর করায় বিএনপি নেতার পদ স্থগিত

খাগড়াছড়িতে এনসিপির নেতানেত্রীর পাল্টাপাল্টি জিডি

ছবি

দোয়ারাবাজারে সেতু না থাকায় বাঁশের সাঁকোতে পারাপার

tab

সারাদেশ

উপাচার্যদের দুর্নীতির তদন্ত, কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না

রাজনৈতিক ও বিভিন্ন মহলের তদবিরের কারণে অনিয়ম

রাকিব উদ্দিন

রোববার, ০৯ মে ২০২১

মেয়াদ শেষ হওয়ার পর অন্তত ছয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্যের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। কিন্তু মেয়াদ (উপাচার্য) থাকা অবস্থায়ও তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির তদন্ত করেছে শিক্ষা প্রশাসন। অনিয়মের প্রমাণও মেলেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কোন উপাচার্যের বিরুদ্ধেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নজির নেই। ইউজিসি অভিযুক্ত ব্যক্তি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে তদন্ত করলেও কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের এখতিয়ার নেই সংস্থাটির।

আবার কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা গেছে, উপাচার্যের পদে থাকা অবস্থায় কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠলে তারা উল্টো শিক্ষা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা ও ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য বিষোদ্গার করছেন। নিজেদের রাজনৈতিক আদর্শ ও মতাদর্শের সাফাই গাইছেন। এ কারণে শিক্ষা প্রশাসনও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন।

ইউজিসির সাবেক একাধিক চেয়ারম্যান ও শিক্ষাবিদ মনে করছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির দুর্বল তদারকি, অতিমাত্রায় রাজনৈতিক বিবেচনায় উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ, উপাচার্যের সঙ্গে অন্যদের দ্বন্দ্ব, নিয়োগপ্রাপ্তদের আর্থিক ও রাজনৈতিক উচ্চাবিলাস এবং নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন মহলের তদবিরের কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দুর্নীতি বাড়ছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউজিসি সচিব (ভারপ্রাপ্ত) ড. ফেরদৌস জামান সংবাদকে বলেন, ‘ইউজিসির কাছে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে অভিযোগ আসলে আমরা তদন্ত করি... কোন ফাইন্ডিংস (অভিযোগের প্রমাণ সংক্রান্ত) থাকলে তা সুপারিশসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়। এরপর ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্ব সরকারের (শিক্ষা মন্ত্রণালয়)।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেন, ‘কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হলে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ‘সম্মতির’ প্রয়োজন হয়। তাছাড়া উপাচার্যরা সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকলেও তারা নানাভাবে প্রভাবশালী। এসব বিষয় মাথায় নিয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হয়।’

উপাচার্যের দায়িত্ব থেকে বিদায় নেয়ার দু’দিনের মাথায় অনিয়ম ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগে তদন্তের মুখোমুখি হয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ডা. এম আবদুস সোবহান। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেরদিন নিয়মনীতি উপেক্ষা করে তিনি গত ৫ মে বিভিন্ন পদে ১৪১ জন শিক্ষক-কর্মচারী এদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে প্রতিষ্ঠিত ‘ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়’র নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বজনপ্রীতির অভিযোগেও তদন্ত চলমান রয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পাওয়া সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর যাবতীয় তথ্য চেয়েছে তদন্ত কমিটি। নিয়োগ, কেনাকাটা ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে অন্য একটি পক্ষের তীব্র বিরোধ চলছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

সরকার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে মাদ্রাসায় উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ২০১৩ সালে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। রাজধানীর মহাম্মদপুরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাস্পাস রয়েছে। শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্বে আছেন প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আহসান উল্লাহ। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন পদে নিয়োগে স্বজপ্রীতির অভিযোগ ওঠে। এগুলো তদন্ত করছে ইউজিসি।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা কেন বাড়ছে, জানতে চাইলে ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান ও শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. নজরুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে ‘দুষ্টু লোক’ ভরে গেছে। তাদের নিয়ন্ত্রণ করাও কঠিন হয়ে পরছে।

তিনি বলেন, ‘আমি যখন ইউজিসির চেয়ারম্যান ছিলাম, তার আগেও বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতি ছিল, আমাদের মেয়াদের পরেও ছিল। কিন্তু আমার দেয়াদকালে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এতটা বেপরোয়া ভাব ছিল না, সবকিছুই একটি নিয়ন্ত্রণে ছিল।’ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম ২০০৭ সালের ৭ মে থেকে ২০১১ সালের ৬ মে পর্যন্ত ইউজিসি চেয়ারম্যান ছিলেন।

উপাচার্যের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোন ত্রুটি আছে কিনা জানতে চাইলে প্রফেসর নজরুল ইসলাম রাবি’র সদ্য বিদায়ী উপাচার্যের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘এসব কোন সমস্যা নয়। যেমন প্রফেসর এম আবদুস সোবহান খুবই ভালো-দক্ষ একজন বিজ্ঞানী ছিলেন, নেতা ছিলেন। তার মধ্যে কী এমন হল যে.... দ্বিতীয় মেয়াদে এসে তার মাথাই খারাপ হয়ে গেল?’

কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত অনিয়মে ‘দুঃখ’ প্রকাশ করে শিক্ষাবিদ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আসলে ওনাদের (উপাচার্য) নিজস্ব....ব্যক্তিগত কোন চরিত্রই নেই। রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়সহ (বেগম রোকেয়া) আরও কয়েকটিতে যা হয়েছে তা খুবই দুঃখজনক।’

অধ্যাপক আবদুস সোবহান ২০১৭ সালের ৭ মে দ্বিতীয় মেয়াদে রাবি উপাচার্য পদে নিয়োগ পান। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে যোগ্যতা শিথিল করে মেয়ে-জামাতাকে নিয়োগ দানসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। গত বছর ইউজিসির তদন্তে এসব অভিযোগের প্রমাণ মেলে। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় রাবির সব ধরনের নিয়োগ স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয়।

এ নির্দেশ উপেক্ষা করেই ১৪১ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন উপাচার্য ড. আবদুস সোবহান। গত ৫ মে উপাচার্যের স্বাক্ষরে শিক্ষক পদে ৯ জন, কর্মকর্তা পদে ১৯ জন, তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী পদে ৮৫ জন, চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী পদে ২৪ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়।

ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে ৪৯টি অনুমোদিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৪৬টির শিক্ষা কার্যক্রম চলমান। বাকিগুলোর অবকাঠামো নির্মাণাধীন। ৪৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান মিলিয়ে সাত উপাচার্যের অনিয়মের অভিযোগে তদন্ত চলছে।

চলতি বছরেই অন্তত তিনজন উপাচার্যের ব্যাপারে তদন্ত প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হয়েছে, এগুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমাও দেয়া হয়েছে। এসব প্রতিবেদনে বেশ কিছু অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে। বিশেষ করে জনবল নিয়োগে স্বজনপ্রীতি, কেনাকাটায় অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা, অবকাঠামো নির্মাণ ও সংস্কারে অনিয়ম, ভুয়া ভাউচারে অর্থ আত্মসাৎ এবং কারও কারও বিরুদ্ধে নারীঘটিত অভিযোগও রয়েছে।

যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে তদন্ত চলমান

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্যের বিরুদ্ধে ওঠা নানা অনিয়মের তদন্ত চলছে।

এছাড়া রাবি, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য ও টাঙ্গাইলের মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্যের ব্যাপারে তদন্ত চলমান রয়েছে বলে ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে।

চলতি বছরে তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে রাবির সদ্য বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক এম আবদুস সোবহানের বিরুদ্ধে এর আগেও নানা অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে শিক্ষা প্রশাসন।

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহর বিরুদ্ধেও তদন্ত চলমান রয়েছে। তার বিরুদ্ধে একাধিক কমিটির তদন্ত চলমান রয়েছে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ড. কলিম উল্লাহর বিরুদ্ধে একটি প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়। এই প্রতিবেদন প্রত্যাখান করে তিনি তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ও ইউজিসিকে দায়ী করে ঢাকায় প্রেস কনফারেন্স করেন। ওইদিনই শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে ব্যাখ্যা দেয়া হয়।

গত অক্টোবরে রাবি উপাচার্য অধ্যাপক এম আবদুস সোবহান (সদ্য বিদায়ী) ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নানা অনিয়মের ব্যাপারে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। কিন্তু উপাচার্যের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। রাবির নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ রাখতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি নির্দেশনা দেয়া হলেও সেটি আমলে নেয়নি বিদায়ী উপাচার্য। সর্বশেষ উপাচার্যের বিদায়ের দিন গত ৬ মে আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহর অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার ৪৫টি অভিযোগ তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছে ইউজিসি। চলতি বছর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি ১০তলা ভবন ও একটি স্মৃতিস্তম্ভের নির্মাণকাজে উপাচার্যের অনিয়মের সত্যতা পেয়েছে ইউজিসির আরেকটি সরেজমিন তদন্ত কমিটি। এসব অনিয়মের দায়ে উপাচার্যসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয় তদন্ত প্রতিবেদনে।

ওই অবস্থায় গত ৪ মার্চ ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলন উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি উল্টো রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সৃষ্ট দূরাবস্থার জন্য শিক্ষামন্ত্রীকে দোষারোপ করেন। তিনি বলেন, এসব অভিযোগ ও ইউজিসির এমন তদন্ত শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির আশ্রয়, প্রশ্রয় ও আশকারায় হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রীর আশকারায় এ পরিস্থিতি হয়েছে। অধ্যাপক কলিম উল্লাহ বলেন, ইউজিসির প্রতিবেদন কেন এমন হয়েছে, তার জন্যও পরিপূর্ণভাবে দায়-দায়িত্ব শিক্ষামন্ত্রীর।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর তৈরি ইউজিসি তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রথমে নিয়োগকৃত পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা না করে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় দ্বিতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয়া হয়, এটি সরকারি ক্রয় পদ্ধতি বহিঃর্ভূত। নকশা পরিবর্তন করায় নির্মাণাধীন ভবনে এক ধরনের ঝুঁকিও তৈরি হয়েছে। এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে এবং শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টির পথে অন্তরায় সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের তিনটি অবকাঠামো নির্মাণে যে অবহেলা, দীর্ঘসূত্রতা ও অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, তা বর্তমান প্রশাসনের অনৈতিকতা, অদক্ষতা ও ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ।

back to top