২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণ হার দাঁড়িয়েছে ২১ শতাংশ
বেড়েই চলেছে করোনা সংক্রমণ। আগের দিন যেখানে কোভিড শনাক্তের হার ছিল ১৮ শতাংশের নিচে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় তা প্রায় ২১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। দ্রুতগতিতে বাড়লেও করোনা সংক্রমণের ধরন নিয়ে বিভ্রান্তিতে স্বাস্থ্যবিভাগ।
তবে দ্রুতগতিতে সংক্রমণ বাড়তে থাকায় ‘চিন্তিত’ ও ‘আতঙ্কিত’ সরকার। বর্তমানে যেভাবে সংক্রমণ বাড়ছে তাতে আগামী এক-দেড় মাসের মধ্যে হাসপাতালে কোন জায়গা থাকবে না বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশে ছয় হাজার ৬৭৬ জনের কোভিড শনাক্ত হয়েছে। এই সময়ে পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার দাঁড়াল ২০ দশমিক ৮৮ শতাংশ। একদিনে শনাক্তের এই সংখ্যা ও শনাক্তের হার গত প্রায় পাঁচমাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
সংক্রমণের ধরন নিয়ে বিভ্রান্তি
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, ঢাকায় এখন যারা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের ৬৯ শতাংশই নতুন ভ্যারিয়েন্ট-ওমিক্রনে সংক্রমিত।
তবে আগের দিন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম স্বাস্থ্য বুলেটিনে বলেন, অনেকেই ধারণা করছেন ওমিক্রনের কারণে দেশে সংক্রমণ বাড়ছে। কিন্তু এটি বৈজ্ঞানিক তথ্য-প্রমাণ দিয়ে নিশ্চিত তথ্য নয়। ধরে নিতে হবে দেশে এখনও ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট প্রাধান্য বিস্তার করে আছে। নতুন করে ঘটছে ওমিক্রনের সংক্রমণ। সারা বিশ্বে যেমন ডেল্টাকে সরিয়ে ওমিক্রন জায়গা দখল করেছে, ধীরে ধীরে হয়তো বাংলাদেশেও এমনটি হবে।
আর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন গত ১২ জানুয়ারি কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে ভার্চুয়াল বুলেটিনে বলেছিলেন, দেশে ওমিক্রনের পাশাপাশি ডেল্টা ভাইরাস-দুটোই কিন্তু অবস্থান করছে। সংক্রমণ হঠাৎ করে মাত্রাতিরিক্ত হয়ে গেলে ধরে নিতে হবে নতুন যে ভ্যারিয়েন্ট তারই সংক্রমণ বেশি হচ্ছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সোমবার (১৭ জানুয়ারি) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা ঢাকায় যে নমুনা পরীক্ষা করেছি, জেনোম সিকোয়েন্স করেছি, তাতে দেখা গেছে ওমিক্রন এখন ৬৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। যেটা আগে ১৩ শতাংশ ছিল। আমরা গত ১০ দিনের মধ্যেই এই তথ্য পেয়েছি। আমরা মনে করি ঢাকার বাইরেও একই হার হবে।’
এর আগে ১২ জানুয়ারি মন্ত্রী বলেছিলেন, কোভিড আক্রান্তদের ‘১৫-২০ শতাংশই’ করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত। দেশে ওমিক্রনের সামাজিক সংক্রমণ (কমিউনিটি ট্রান্সমিশন) শুরু হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।
সংক্রমণে চিন্তিত সরকার
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ডেল্টা এবং ওমিক্রনে আক্রান্ত লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। আমরা এ বিষয়ে কিছুটা হলেও চিন্তিত ও আতঙ্কিত। গত ১৫ দিনে ১৮ শতাংশে চলে এসেছে শনাক্তের হার। যেভাবে বাড়ছে তাতে শনাক্তের হার ৩০ শতাংশ ছাড়াতে বেশি সময় লাগবে না।’
হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়ে যাচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এখন যেভাবে বাড়ছে, তাতে আগামী এক-দেড় মাসের মধ্যে হাসপাতালে কোন জায়গা থাকবে না। তখন চিকিৎসা দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে। এ কারণে জনগণকে আহ্বান করছি, অনুরোধ করছি তারা যেন স্বাস্থ্যবিধি মানে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখে।’
কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে রোগী ইতোমধ্যে এক হাজার ২০০ হয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিদিন পাঁচ হাজার করে বাড়লে, একসময় তো পাঁচ হাজার থেকে সাত হাজার, দশ হাজারে যেতে সময় লাগবে না। দশ শতাংশ হলেও তো প্রতিদিন এক হাজার রোগী হাসপাতালে ভর্তি হবেন। আমাদের বেড আছে সবমিলিয়ে ২০ হাজার। তাহলে এটা ফিলাপ হতে খুব বেশি সময় লাগবে না। এক মাস বা তারও কম সময়ের মধ্যে এটা ফিলাপ হয়ে যাবে। যেটা আতঙ্কের বিষয়, সবাইকে মনে রাখতে হবে।’
গত নভেম্বরের শেষের দিকে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম করোনার ওমক্রিন ধরন ধনাক্ত হয়। এরপর বিশ্বব্যাপী তা ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে প্রথম গত ১১ ডিসেম্বর জিম্বাবুয়ে ফেরত দুই নারী ক্রিকেটারের দেহে ওমিক্রন শনাক্তের তথ্য জানায় স্বাস্থ্যবিভাগ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সোমবার এক ভার্চুয়াল প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘আক্রান্তের হার বেড়ে যাওয়া অশুভ ইঙ্গিত। আমরা যদি নিজেদের সংবরণ না করি, এটাকে প্রতিহত করার চেষ্টা শক্তিশালী না করি তবে পরে বিপদের বড় আশঙ্কা আছে।’
নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে কোভিড শনাক্তের হার দুই সপ্তাহ আগেও দুই শতাংশের নিচে ছিল জানিয়ে মহাপরিচালক বলেন, ‘আজ ২০ দশমিক ৮৮ শতাংশ। দুই সপ্তাহের মধ্যে অনেকখানি বেড়েছে। অনেকে ভাবছে ওমিক্রনে ভয়ের কারণ নেই। কারণ এখানে মৃত্যুর হার কম।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং আইইডিসিআর (রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান) ‘জেনোম সিকোয়েন্স’ করছে উল্লেখ করে ডা. খুরশীদ আলম বলেন, ‘তারা বলছেন, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণের হার বেশি, প্রায় ৮০ শতাংশ। ওমিক্রন বাড়ছে, তবে সেটা ডেল্টার মতো না। ঢাকায় ওমিক্রনের হার বেশি। তবে সামগ্রিকভাবে ডেল্টার প্রাধান্য সব জায়গায় বেশি। অন্য শহরে ওমিক্রন নেই। এখানে যেটা বাড়ছে সেটা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। এই ভ্যারিয়েন্টের পরিণতি আপনারা আগেই দেখেছেন।’
রাজধানী ঢাকায় ওমিক্রন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি-উল্লেখ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, সে তুলনায় অন্য বিভাগে কম। ফলে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ সরকারি ১১ দফা নির্দেশনা মেনে না চললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
এখন যারা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের অধিকাংশই টিকা নেননি- জানিয়ে ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, এছাড়া কো-মরবিডিটির (ক্যানসার, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও উচ্চরক্তচাপজনিত) কারণেও মারা যাচ্ছে। দেশে এ পর্যন্ত ওমিক্রনে মোট কতজন মারা গেছে, এ সম্পর্কিত সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য নেই বলে জানান মহাপরিচালক।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, শুধু পরীক্ষা ও শনাক্ত করলেই চলবে না। ঢাকাসহ সারা দেশে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে বহু মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করছে। এতে সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
৫০ বছর বয়সীদের বুস্টার ডোজ
সংক্রমণ ঠেকাতে এখন থেকে ৫০ বছর বয়সীদের করোনা টিকার বুস্টার ডোজ দেয়া হবে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘আমাদের টিকা কার্যক্রম চলমান। আমরা টিকার বুস্টার ডোজ দিয়ে যাচ্ছি। বুস্টার ডোজে খুব বেশি অগ্রগতি লাভ করেনি। কারণ ছয় মাস সবার পূরণ হয়নি।’
এ পর্যন্ত সাত লাখের মতো মানুষকে বুস্টার ডোজ দেয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি প্রথমেই জানাচ্ছি যে, বুস্টার ডোজের বয়স ছিল ৬০ বছর। এখন থেকে ৫০ বছর বয়সীদের বুস্টার ডোজ দেয়া হবে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন রয়েছে।’
একদিনে শনাক্ত ছাড়ালো সাড়ে ৬ হাজার
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় আগের দিনের তুলনায় প্রায় দেড় হাজার কোভিড রোগী বেশি শনাক্ত হয়েছে।
সর্বশেষ এক দিনে ৩১ হাজার ৯৮০টি নমুনা পরীক্ষায় ছয় হাজার ৬৭৬ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। আগের দিন ২৯ হাজার ৩০৫টি নমুনা পরীক্ষা করে পাঁচ হাজার ২২২ জনের কোভিড শনাক্তের কথা জানিয়েছিল অধিদপ্তর।
একদিনে এর চেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল গত বছরের ১৮ আগস্ট, ওইদিন সাত হাজার ২৪৮ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছিল।
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্ত হয়েছে ২০ দশমিক ৮৮ শতাংশের, যা গত বছরের ১৩ আগস্টের পর সর্বোচ্চ। ওইদিন শানাক্তের হার ছিল ২৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হওয়া রোগী নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত করোনা শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৬ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৭ জনে।
আর এক দিনে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে দশ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে দেশে করোনায় মোট ২৮ হাজার ১৫৪ জনের মৃত্যু হলো। একদিনে মারা যাওয়া লোকজনের মধ্যে পুরুষ চারজন এবং ছয়জন ছিলেন নারী।
নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে দেশে এ পর্যন্ত করোনা শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আর শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৫ দশমিক ৬২ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার এক দশমিক ৭৩ শতাংশ।
শনাক্ত রোগীর মধ্যে এক দিনে সুস্থ হয়েছেন ৪২৭ জন। তাদের নিয়ে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ১৫ লাখ ৫৩ হাজার ৩২০ জন।
বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, একদিনে মৃত্যু হওয়া দশজনের মধ্যে দুইজনের বয়স ৮১ থেকে ৯০ বছর, দুইজনের বয়স ৭১ থেকে ৮০ বছর, তিনজনের বয়স ৬১ থেকে ৭০ বছর, একজনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছর এবং দুইজনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ছিল। তাদের মধ্যে ঢাকা বিভাগের সাত জন, চট্টগ্রামের দুই জন এবং বরিশালের বাসিন্দা ছিলেন এক জন।
২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণ হার দাঁড়িয়েছে ২১ শতাংশ
সোমবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২২
বেড়েই চলেছে করোনা সংক্রমণ। আগের দিন যেখানে কোভিড শনাক্তের হার ছিল ১৮ শতাংশের নিচে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় তা প্রায় ২১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। দ্রুতগতিতে বাড়লেও করোনা সংক্রমণের ধরন নিয়ে বিভ্রান্তিতে স্বাস্থ্যবিভাগ।
তবে দ্রুতগতিতে সংক্রমণ বাড়তে থাকায় ‘চিন্তিত’ ও ‘আতঙ্কিত’ সরকার। বর্তমানে যেভাবে সংক্রমণ বাড়ছে তাতে আগামী এক-দেড় মাসের মধ্যে হাসপাতালে কোন জায়গা থাকবে না বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশে ছয় হাজার ৬৭৬ জনের কোভিড শনাক্ত হয়েছে। এই সময়ে পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার দাঁড়াল ২০ দশমিক ৮৮ শতাংশ। একদিনে শনাক্তের এই সংখ্যা ও শনাক্তের হার গত প্রায় পাঁচমাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
সংক্রমণের ধরন নিয়ে বিভ্রান্তি
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, ঢাকায় এখন যারা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের ৬৯ শতাংশই নতুন ভ্যারিয়েন্ট-ওমিক্রনে সংক্রমিত।
তবে আগের দিন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম স্বাস্থ্য বুলেটিনে বলেন, অনেকেই ধারণা করছেন ওমিক্রনের কারণে দেশে সংক্রমণ বাড়ছে। কিন্তু এটি বৈজ্ঞানিক তথ্য-প্রমাণ দিয়ে নিশ্চিত তথ্য নয়। ধরে নিতে হবে দেশে এখনও ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট প্রাধান্য বিস্তার করে আছে। নতুন করে ঘটছে ওমিক্রনের সংক্রমণ। সারা বিশ্বে যেমন ডেল্টাকে সরিয়ে ওমিক্রন জায়গা দখল করেছে, ধীরে ধীরে হয়তো বাংলাদেশেও এমনটি হবে।
আর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন গত ১২ জানুয়ারি কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে ভার্চুয়াল বুলেটিনে বলেছিলেন, দেশে ওমিক্রনের পাশাপাশি ডেল্টা ভাইরাস-দুটোই কিন্তু অবস্থান করছে। সংক্রমণ হঠাৎ করে মাত্রাতিরিক্ত হয়ে গেলে ধরে নিতে হবে নতুন যে ভ্যারিয়েন্ট তারই সংক্রমণ বেশি হচ্ছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সোমবার (১৭ জানুয়ারি) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা ঢাকায় যে নমুনা পরীক্ষা করেছি, জেনোম সিকোয়েন্স করেছি, তাতে দেখা গেছে ওমিক্রন এখন ৬৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। যেটা আগে ১৩ শতাংশ ছিল। আমরা গত ১০ দিনের মধ্যেই এই তথ্য পেয়েছি। আমরা মনে করি ঢাকার বাইরেও একই হার হবে।’
এর আগে ১২ জানুয়ারি মন্ত্রী বলেছিলেন, কোভিড আক্রান্তদের ‘১৫-২০ শতাংশই’ করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত। দেশে ওমিক্রনের সামাজিক সংক্রমণ (কমিউনিটি ট্রান্সমিশন) শুরু হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।
সংক্রমণে চিন্তিত সরকার
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ডেল্টা এবং ওমিক্রনে আক্রান্ত লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। আমরা এ বিষয়ে কিছুটা হলেও চিন্তিত ও আতঙ্কিত। গত ১৫ দিনে ১৮ শতাংশে চলে এসেছে শনাক্তের হার। যেভাবে বাড়ছে তাতে শনাক্তের হার ৩০ শতাংশ ছাড়াতে বেশি সময় লাগবে না।’
হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়ে যাচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এখন যেভাবে বাড়ছে, তাতে আগামী এক-দেড় মাসের মধ্যে হাসপাতালে কোন জায়গা থাকবে না। তখন চিকিৎসা দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে। এ কারণে জনগণকে আহ্বান করছি, অনুরোধ করছি তারা যেন স্বাস্থ্যবিধি মানে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখে।’
কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে রোগী ইতোমধ্যে এক হাজার ২০০ হয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিদিন পাঁচ হাজার করে বাড়লে, একসময় তো পাঁচ হাজার থেকে সাত হাজার, দশ হাজারে যেতে সময় লাগবে না। দশ শতাংশ হলেও তো প্রতিদিন এক হাজার রোগী হাসপাতালে ভর্তি হবেন। আমাদের বেড আছে সবমিলিয়ে ২০ হাজার। তাহলে এটা ফিলাপ হতে খুব বেশি সময় লাগবে না। এক মাস বা তারও কম সময়ের মধ্যে এটা ফিলাপ হয়ে যাবে। যেটা আতঙ্কের বিষয়, সবাইকে মনে রাখতে হবে।’
গত নভেম্বরের শেষের দিকে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম করোনার ওমক্রিন ধরন ধনাক্ত হয়। এরপর বিশ্বব্যাপী তা ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে প্রথম গত ১১ ডিসেম্বর জিম্বাবুয়ে ফেরত দুই নারী ক্রিকেটারের দেহে ওমিক্রন শনাক্তের তথ্য জানায় স্বাস্থ্যবিভাগ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সোমবার এক ভার্চুয়াল প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘আক্রান্তের হার বেড়ে যাওয়া অশুভ ইঙ্গিত। আমরা যদি নিজেদের সংবরণ না করি, এটাকে প্রতিহত করার চেষ্টা শক্তিশালী না করি তবে পরে বিপদের বড় আশঙ্কা আছে।’
নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে কোভিড শনাক্তের হার দুই সপ্তাহ আগেও দুই শতাংশের নিচে ছিল জানিয়ে মহাপরিচালক বলেন, ‘আজ ২০ দশমিক ৮৮ শতাংশ। দুই সপ্তাহের মধ্যে অনেকখানি বেড়েছে। অনেকে ভাবছে ওমিক্রনে ভয়ের কারণ নেই। কারণ এখানে মৃত্যুর হার কম।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং আইইডিসিআর (রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান) ‘জেনোম সিকোয়েন্স’ করছে উল্লেখ করে ডা. খুরশীদ আলম বলেন, ‘তারা বলছেন, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণের হার বেশি, প্রায় ৮০ শতাংশ। ওমিক্রন বাড়ছে, তবে সেটা ডেল্টার মতো না। ঢাকায় ওমিক্রনের হার বেশি। তবে সামগ্রিকভাবে ডেল্টার প্রাধান্য সব জায়গায় বেশি। অন্য শহরে ওমিক্রন নেই। এখানে যেটা বাড়ছে সেটা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। এই ভ্যারিয়েন্টের পরিণতি আপনারা আগেই দেখেছেন।’
রাজধানী ঢাকায় ওমিক্রন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি-উল্লেখ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, সে তুলনায় অন্য বিভাগে কম। ফলে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ সরকারি ১১ দফা নির্দেশনা মেনে না চললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
এখন যারা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের অধিকাংশই টিকা নেননি- জানিয়ে ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, এছাড়া কো-মরবিডিটির (ক্যানসার, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও উচ্চরক্তচাপজনিত) কারণেও মারা যাচ্ছে। দেশে এ পর্যন্ত ওমিক্রনে মোট কতজন মারা গেছে, এ সম্পর্কিত সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য নেই বলে জানান মহাপরিচালক।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, শুধু পরীক্ষা ও শনাক্ত করলেই চলবে না। ঢাকাসহ সারা দেশে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে বহু মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করছে। এতে সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
৫০ বছর বয়সীদের বুস্টার ডোজ
সংক্রমণ ঠেকাতে এখন থেকে ৫০ বছর বয়সীদের করোনা টিকার বুস্টার ডোজ দেয়া হবে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘আমাদের টিকা কার্যক্রম চলমান। আমরা টিকার বুস্টার ডোজ দিয়ে যাচ্ছি। বুস্টার ডোজে খুব বেশি অগ্রগতি লাভ করেনি। কারণ ছয় মাস সবার পূরণ হয়নি।’
এ পর্যন্ত সাত লাখের মতো মানুষকে বুস্টার ডোজ দেয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি প্রথমেই জানাচ্ছি যে, বুস্টার ডোজের বয়স ছিল ৬০ বছর। এখন থেকে ৫০ বছর বয়সীদের বুস্টার ডোজ দেয়া হবে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন রয়েছে।’
একদিনে শনাক্ত ছাড়ালো সাড়ে ৬ হাজার
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় আগের দিনের তুলনায় প্রায় দেড় হাজার কোভিড রোগী বেশি শনাক্ত হয়েছে।
সর্বশেষ এক দিনে ৩১ হাজার ৯৮০টি নমুনা পরীক্ষায় ছয় হাজার ৬৭৬ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। আগের দিন ২৯ হাজার ৩০৫টি নমুনা পরীক্ষা করে পাঁচ হাজার ২২২ জনের কোভিড শনাক্তের কথা জানিয়েছিল অধিদপ্তর।
একদিনে এর চেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল গত বছরের ১৮ আগস্ট, ওইদিন সাত হাজার ২৪৮ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছিল।
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্ত হয়েছে ২০ দশমিক ৮৮ শতাংশের, যা গত বছরের ১৩ আগস্টের পর সর্বোচ্চ। ওইদিন শানাক্তের হার ছিল ২৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হওয়া রোগী নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত করোনা শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৬ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৭ জনে।
আর এক দিনে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে দশ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে দেশে করোনায় মোট ২৮ হাজার ১৫৪ জনের মৃত্যু হলো। একদিনে মারা যাওয়া লোকজনের মধ্যে পুরুষ চারজন এবং ছয়জন ছিলেন নারী।
নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে দেশে এ পর্যন্ত করোনা শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আর শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৫ দশমিক ৬২ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার এক দশমিক ৭৩ শতাংশ।
শনাক্ত রোগীর মধ্যে এক দিনে সুস্থ হয়েছেন ৪২৭ জন। তাদের নিয়ে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ১৫ লাখ ৫৩ হাজার ৩২০ জন।
বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, একদিনে মৃত্যু হওয়া দশজনের মধ্যে দুইজনের বয়স ৮১ থেকে ৯০ বছর, দুইজনের বয়স ৭১ থেকে ৮০ বছর, তিনজনের বয়স ৬১ থেকে ৭০ বছর, একজনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছর এবং দুইজনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ছিল। তাদের মধ্যে ঢাকা বিভাগের সাত জন, চট্টগ্রামের দুই জন এবং বরিশালের বাসিন্দা ছিলেন এক জন।