কিশোরগঞ্জে হাওড় উন্নয়নে সভা
হাওড়ে মাছের ১২০ প্রজাতি
কিশোরগঞ্জে হাওড়ের বন্যা ব্যবস্থাপনা ও জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্প বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের উদ্যোগে একটি পরামর্শ সভা হয়েছে। এতে বর্তমানে হাওড়ে স্বাদু পানির মাছের ১২০টি প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে বলে জানানো হয়েছে। সভায় কোন কোন অংশগ্রহণকারী হাওড়ের মাছ রক্ষা ও উৎপাদন বৃদ্ধির স্বার্থে অন্তত ১০ বছর বা ১৫ বছর অন্তর দুই বছরের জন্য জলমহাল ইজারা বন্ধ বা ‘লিজ হলিডে’ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন।
সোমবার জেলা এলজিইডি কার্যালয়ের কামরুল ইসলাম সিদ্দিক মিলনায়তনে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আমিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভাটি প্রধান অতিথি হিসেবে উদ্বোধন করেন এলজিইডির নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের তত্ত্বাবধায় প্রকৌশলী মো. আব্দুল বাসেদ। প্রশিক্ষণ সমন্বয়ক আমজাদ হোসেন ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় সভায় বিশেষ অতিথি প্রকল্প উপ-পরিচালক রায়হান সিদ্দিকসহ কমিউনিটি রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিশষজ্ঞ মোস্তাফিজুর রহমান, আব্দুল হাই চৌধুরী, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কুমার পাল, ওয়ার্ল্ড ফিশ বিশেষজ্ঞ শোয়েব হোসেন তালুকদার প্রমুখ প্রকল্প নিয়ে বিস্তারিত ধারণা দেন। সভায় বিভিন্ন উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা, উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলীসহ বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ অংশ নেন।
কর্মশালায় বলা হয়, জাইকার অর্থায়নে কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলার ৩৩টি উপজেলায় ৮৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এলজিইডির মাধ্যমে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে ২০১৪ সালের জুলাই মাস থেকে। প্রকপ্লের সমাপ্তি ধরা হয়েছে চলতি বছরের জুন মাসে। কিশোরগঞ্জের ভৈরব ছাড়া বাকি ১২টি উপজেলায় এই প্রকল্পের কাজ চলছে। সরকারের ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নেও এই প্রকল্প অবদান রাখবে বলে কর্মকর্তাগণ জানিয়েছেন।
এই প্রকল্পে সাবমার্সেবল সড়ক, বিল খনন, খাল খনন, মাছের অভয়াশ্রম তৈরি, বৃক্ষ রোপণ, গ্রোথ সেন্টার নির্মাণসহ হাওড়ের মৎস্য সম্পদ ও জীবনমান উন্নয়নে কাজ চলছে। প্রকল্পের শুরুতে হাওরে স্বাদু পানির মাছের ১০৫টি প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। এখন শনাক্ত প্রজাতির সংখ্যা ১২০টি। তবে ইজাদাররা জলমাহল ইজারা নিয়ে কেবল আর্থিক লাভের কথা চিন্তা করে পোনা মাছ এবং ডিমওয়ালা মাছসহ নির্বিচারে মাছ নিধন করার কারণে হাওরের মৎস্য সম্পদ এখন হুমকির মুখে বলে কেউ কেউ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সেই কারণে তারা প্রতি ১০ বছর বা ১৫ বছর অন্তর অন্তত দুই বছরের জন্য জলমহাল ইজারা বন্ধ রেখে ‘লিজ হলিডে’ ঘোষণা করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।
হাওরের মৎস্য সম্পদ ও গবাদি পশুসহ সামগ্রিক জীব বৈচিত্র্য, হাওরাঞ্চলের যোগাযোগ অবকাঠামো ও হাওরবাসীর পেশার উন্নয়নসহ হাওরের সামগ্রিক উন্নয়ন নিয়ে কর্মশালায় আলোচনা করা হয়। ৭৫১ কোটি টাকা খরচের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত সামগ্রিক প্রকল্পের ৮৭ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ১২৭টি জলমহাল গরিব মৎস্যজীবীদের দেয়া হয়েছে। এর ফলে ৪ হাজার ২৫৬টি পরিবার উপকার পাচ্ছে। আর সরকার এই বাবদ ৬ কোটি টাকা রাজস্ব পেয়েছে। এছাড়া প্রকল্পের শুরুর দিকে মৎস্য উৎপাদন ছিল ১০৬ মেট্রিকটন। এখন উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ১৬৫ টনে। আর একেকটি পরিবারের বার্ষিক আয় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ২২টি বিলের মধ্যে ২০টি খনন হয়েছে। ৩০ কিলোমিটার খাল খনন হয়েছে। ১১টি মৎস্য অভয়াশ্রম তৈরি করা হয়েছে।
কর্মকর্তাগণ জানিয়েছেন, আগামীতে উপরোক্ত ৫টি জেলার সঙ্গে সিলেট ও মৌলভীবাজার যুক্ত হয়ে ৭টি জেলার ৫৮টি উপজেলায় নতুন প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। সেখানে বরাদ্দ থাকবে ৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। তখন ৮৫০টি জলমহাল নিয়ে কাজ হবে। উপকার পাবে ২২ হাজার ৫০০ জন মৎস্যজীবী।
কিশোরগঞ্জে হাওড় উন্নয়নে সভা
হাওড়ে মাছের ১২০ প্রজাতি
বুধবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২২
কিশোরগঞ্জে হাওড়ের বন্যা ব্যবস্থাপনা ও জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্প বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের উদ্যোগে একটি পরামর্শ সভা হয়েছে। এতে বর্তমানে হাওড়ে স্বাদু পানির মাছের ১২০টি প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে বলে জানানো হয়েছে। সভায় কোন কোন অংশগ্রহণকারী হাওড়ের মাছ রক্ষা ও উৎপাদন বৃদ্ধির স্বার্থে অন্তত ১০ বছর বা ১৫ বছর অন্তর দুই বছরের জন্য জলমহাল ইজারা বন্ধ বা ‘লিজ হলিডে’ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন।
সোমবার জেলা এলজিইডি কার্যালয়ের কামরুল ইসলাম সিদ্দিক মিলনায়তনে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আমিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভাটি প্রধান অতিথি হিসেবে উদ্বোধন করেন এলজিইডির নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের তত্ত্বাবধায় প্রকৌশলী মো. আব্দুল বাসেদ। প্রশিক্ষণ সমন্বয়ক আমজাদ হোসেন ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় সভায় বিশেষ অতিথি প্রকল্প উপ-পরিচালক রায়হান সিদ্দিকসহ কমিউনিটি রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিশষজ্ঞ মোস্তাফিজুর রহমান, আব্দুল হাই চৌধুরী, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কুমার পাল, ওয়ার্ল্ড ফিশ বিশেষজ্ঞ শোয়েব হোসেন তালুকদার প্রমুখ প্রকল্প নিয়ে বিস্তারিত ধারণা দেন। সভায় বিভিন্ন উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা, উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলীসহ বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ অংশ নেন।
কর্মশালায় বলা হয়, জাইকার অর্থায়নে কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলার ৩৩টি উপজেলায় ৮৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এলজিইডির মাধ্যমে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে ২০১৪ সালের জুলাই মাস থেকে। প্রকপ্লের সমাপ্তি ধরা হয়েছে চলতি বছরের জুন মাসে। কিশোরগঞ্জের ভৈরব ছাড়া বাকি ১২টি উপজেলায় এই প্রকল্পের কাজ চলছে। সরকারের ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নেও এই প্রকল্প অবদান রাখবে বলে কর্মকর্তাগণ জানিয়েছেন।
এই প্রকল্পে সাবমার্সেবল সড়ক, বিল খনন, খাল খনন, মাছের অভয়াশ্রম তৈরি, বৃক্ষ রোপণ, গ্রোথ সেন্টার নির্মাণসহ হাওড়ের মৎস্য সম্পদ ও জীবনমান উন্নয়নে কাজ চলছে। প্রকল্পের শুরুতে হাওরে স্বাদু পানির মাছের ১০৫টি প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। এখন শনাক্ত প্রজাতির সংখ্যা ১২০টি। তবে ইজাদাররা জলমাহল ইজারা নিয়ে কেবল আর্থিক লাভের কথা চিন্তা করে পোনা মাছ এবং ডিমওয়ালা মাছসহ নির্বিচারে মাছ নিধন করার কারণে হাওরের মৎস্য সম্পদ এখন হুমকির মুখে বলে কেউ কেউ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সেই কারণে তারা প্রতি ১০ বছর বা ১৫ বছর অন্তর অন্তত দুই বছরের জন্য জলমহাল ইজারা বন্ধ রেখে ‘লিজ হলিডে’ ঘোষণা করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।
হাওরের মৎস্য সম্পদ ও গবাদি পশুসহ সামগ্রিক জীব বৈচিত্র্য, হাওরাঞ্চলের যোগাযোগ অবকাঠামো ও হাওরবাসীর পেশার উন্নয়নসহ হাওরের সামগ্রিক উন্নয়ন নিয়ে কর্মশালায় আলোচনা করা হয়। ৭৫১ কোটি টাকা খরচের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত সামগ্রিক প্রকল্পের ৮৭ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ১২৭টি জলমহাল গরিব মৎস্যজীবীদের দেয়া হয়েছে। এর ফলে ৪ হাজার ২৫৬টি পরিবার উপকার পাচ্ছে। আর সরকার এই বাবদ ৬ কোটি টাকা রাজস্ব পেয়েছে। এছাড়া প্রকল্পের শুরুর দিকে মৎস্য উৎপাদন ছিল ১০৬ মেট্রিকটন। এখন উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ১৬৫ টনে। আর একেকটি পরিবারের বার্ষিক আয় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ২২টি বিলের মধ্যে ২০টি খনন হয়েছে। ৩০ কিলোমিটার খাল খনন হয়েছে। ১১টি মৎস্য অভয়াশ্রম তৈরি করা হয়েছে।
কর্মকর্তাগণ জানিয়েছেন, আগামীতে উপরোক্ত ৫টি জেলার সঙ্গে সিলেট ও মৌলভীবাজার যুক্ত হয়ে ৭টি জেলার ৫৮টি উপজেলায় নতুন প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। সেখানে বরাদ্দ থাকবে ৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। তখন ৮৫০টি জলমহাল নিয়ে কাজ হবে। উপকার পাবে ২২ হাজার ৫০০ জন মৎস্যজীবী।