রংপুর অঞ্চলে এবার মাঘের মাঝামাঝিতে প্রচন্ড শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে ঘনকুয়াশা আর হিমেল বাতাস শীতের তীব্রতাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শুক্রবার (২৮ জানুয়ারি) কুড়িগ্রামে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস যা শীত মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। একইভাবে রংপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছে যা এবারের শীত মেসৈুমে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বলেও তারা জানিয়েছে।
প্রচন্ড শৈত্যপ্রবাহ সেই সঙ্গে প্রচন্ড হিমেল বাতাসে জনজীবন একেবারে অচল হয়ে পড়েছে। এদিকে শৈত্যপ্রবাহে ২৪ ঘণ্টায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৯ ও ১০ নম্বর শিশু ওয়ার্ডে নিউমোনিয়া শ্বাসকষ্ট আর কোল্ড ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৫ শিশু মারা গেছে। হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার সাখাওয়াত হোসেন মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অন্যদিকে প্রচন্ড শীতে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে দিনে রোজগার করা স্বল্প আয়ের শ্রমিক, খেত মজুরসহ সহায়-সম্বলহীন মানুষ। প্রচন্ড শীতের কারণে প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র না থাকায় তারা ঘর থেকে বের হতে পারছে না। তার পরেও শত শত খেটে খাওয়া মানুষ বিভাগীয় নগরীর বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিক বেচা-কেনার বাজারে ভোর বেলা থেকে অবস্থান করলেও কাজ না পেয়ে অনেকেই ফিরে গেছে। সেই সঙ্গে ভাসমান মানুষের দুর্ভোগের অন্ত নেই। একদিকে প্রচন্ড শৈত্যপ্রবাহ অন্যদিকে বৃষ্টির মতো কুয়াশা তাদের জবুথবু অবস্থায় দিন কেটেছে।
এদিকে শহরের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে শীতের তীব্রতা অনেকটাই বেশি। সে কারণে শীত বস্ত্রের অভাবে খড়কুটা জ্বালিয়ে দিনভর আগুন পোহাতে দেখা গেছে।
২ দিন ধরে সুর্যের আলো দেখা না যাওয়ায় এবং শীতের তীব্রতার কারণে বিভাগীয় নগরী রংপুরে সড়কগুলো ছিল প্রায় ফাঁকা। শুক্রবার হওয়ায় বেশির ভাগ শপিংমল ও মার্কেটগুলো বন্ধ থাকলেও নগরীতে প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বের হয়নি।
রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা জেলার তিস্তা, ধরলা ও যমুনা বেষ্টিত চরাঞ্চলে বসবাসকারী লাখ লাখ পরিবার শীতবস্ত্রের অভাবে খড়কুটো জ্বালিয়ে না ঘুমিয়ে রাত কাটিয়েছে। সরকারি বেসরকারিভাবে এবার শীতবস্ত্র বিতরণ করার কথা বলা হলেও কাজীর গরু কেতাবে আছে গোয়ালে নেই এমনি অবস্থা। বেসরকারি সাহায্য সংস্থাগুলোর শীতবস্ত্র বিতরণের তেমন একটা দৃশ্য রংপুর নগরীর লালবাগ বস্তিতে বাস করে দেড় হাজার পরিবার। তারা জানিয়েছে, শীতবস্ত্রের অভাবে তারা রাতভর আগুন জ্বালিয়ে রাতপার করেছেন। ভ্যান শ্রমিক রাজা মিয়া, রং মিস্ত্রি সালাম, শ্রমিক আফলাতুন বেগম জানান, এমনিতেই তাদের খুপড়ি ঘরে হিমেল বাতাসের কারণে ঘরে টেকাই দায়, সেখানে শীতবস্ত্র না থাকায় মানবেতর দিন কাটছে তাদের।
এদিকে প্রচন্ড শৈত্যপ্রবাহের কারণে রংপুর অঞ্চলে ব্যাপকভাবে নিউমোনিয়া কোল্ড ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগ-বালাই ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। আক্রান্তদের বেশিরভাগই শিশু ও বয়স্ক মানুষ। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে এক হাজারেরও বেশি শিশু ভর্তি আছে। জায়গার সংকুলান না হওয়ায় ফ্লোরিং করে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছে।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. রেজাউল ইসলাম জানিয়েছেন, শীতের তীব্রতা আর হিমেল বাতাসের কারণে শিশুদের পর্যাপ্ত কাপড় পরাতে হবে। কোন অবস্থাতেই ঘরের বাইরে বের করা যাবে না।
এদিকে রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান জানিয়েছেন, শুক্রবার কুড়িগ্রামের রাজারহাটে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৬ দশমিক ১ এবং রংপুরে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তিনি জানান, মাঘ মাসের আগামী এক সপ্তাহ তাপমাত্রা আরও কমে আসতে পারে।
দেশের ১৭ জেলার তাপমাত্রা এখন ১০ এর নিচে অবস্থান করছে। এছাড়া ১০ ডিগ্রির মধ্যে আছে আরও সাত জেলার তাপমাত্রা। এগুলোর মধ্যে রাজারহাট ছাড়াও বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) ছিল তেঁতুলিয়ায় ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। এ হিসাবে তাপমাত্রা কমেছে প্রায় ৩ ডিগ্রি। এছাড়া বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে শুক্রবার ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৭, আজ ৪ ডিগ্রি কমে দাঁড়িয়েছেন ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ময়মনসিংহে ছিল ১৬, আজ ৬ ডিগ্রি কমে দাঁড়িয়েছে ১০, চট্টগ্রামে ছিল ১৬ দশমিক ৩, আজ ১৫ দশমিক ৭ এবং সিলেটে শুক্রবারের তাপমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক ২, আজ ২ ডিগ্রি কমে হয়েছে ১৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়াও রাজশাহীতে ছিল ১২ দশমিক ৮, আজ ৪ ডিগ্রি কমে ৮ দশমিক ৫, রংপুরে ছিল ১৩ দশমিক ৪, আজ ৫ ডিগ্রি কমে হয়েছে ৮, খুলনায় ছিল ১৬ দশমিক ৩, আজ ৪ ডিগ্রি কমে ১২ এবং বরিশালে ছিল ১৭ দশমিক ২, আজ ৬ ডিগ্রি কমে ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
শুক্রবার এই মৌসুমে পঞ্চগড়ের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। তাপমাত্রা ক্রমেই কমছে। আবহাওয়া অফিসের দেয়া তথ্যমতে গত কয়েকদিন ধরে পঞ্চগড়ের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে চলেছে। শীতের তীব্রতা অনেকখানি বেড়েছে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে। কুয়াশা তেমন না থাকলেও বইছে হিমালয় থেকে আসা কনকনে ঠান্ডা বাতাস। আকাশ পরিষ্কার থাকায় বাতাসের বেগ আরও বেড়েছে। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে হাটবাজার ফাঁকা হতে শুরু করে। পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম জানান, এই শীতে এখন পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারিভাবে জেলার অসহায় দরিদ্রদের মাঝে ৪০ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। আরও শীতবস্ত্রের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। পাওয়া মাত্রই বিতরণ করা হবে। এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের উত্তরপশ্চিমাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে, এর বর্ধিতাংশ উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত।
আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, অস্থায়ীভাবে আকাশ আংশিক মেঘলাসহ সারাদেশের আবহাওয়া বন্ধ থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘনকুয়াশা এবং এছাড়া দেশের অন্য এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।
গোপালগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, যশোর ও কুষ্টিয়া জেলাসহ এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে এবং বিস্তার লাভ করতে পারে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।
২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে নোয়াখালীর মাইজদী কোর্টে ৯ মিলিমিটার। এছাড়া ভোলায় ৩, ফেনীতে ২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া সিলেট, কুমিল্লা ও বরিশালে সামান্য বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, ঘন কুয়াশা আর হিম ঠান্ডা বাতাসে জনজীবনে স্থবিরতা নেমে এসেছে। বিপাকে পরেছে খেটে খাওয়া মানুষ। শুক্রবার জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। যা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। জেলাজুড়ে শুরু হয়েছে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। এ অবস্থা আরো ২-৩ দিন থাকতে করতে পারে বলে জানিয়েছে স্থানীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর। তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পরেছে শ্রমজীবী ও কর্মজীবী মানুষ। কৃষি ক্ষেতে শ্রমিকরা এবং যানবাহন চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা মানুষগুলো পড়েছেন বিপাকে।
এছাড়াও কুয়াশা ও ঠান্ডা বাতাসের কারণে বোরো বীজতলা ও আলু ক্ষেত নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে কৃষক। ছত্রাকের আক্রমন থেকে আলু ক্ষেত রক্ষা করতে ঘন ঘন ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হচ্ছে কৃষকদের। তীব্র ঠান্ডা উপেক্ষা করে কৃষকরা করছেন বোরো রোপণের কাজ। কুড়িগ্রামের হলোখানা ইউনিয়নের টাপুরচরের কৃষক আবদার হোসেন জানান, এবারে অনেক খরচ করে আলু লাগিয়েছি। তীব্র ঠান্ডার কারণে সদ্য বেড়ে ওঠা আলু ক্ষেত নিয়ে চিন্তায় আছি।কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. শামসুদ্দিন মিঞা জানান, শৈত্যপ্রবাহ ক্ষণস্থায়ী হওয়ায় আবাদের তেমন কোন ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার জানান, এখন পর্যন্ত জেলায় শীতার্তদের জন্য এক কোটি ৮ লক্ষ টাকার কম্বল ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত আরো ৩৫ হাজার ৭শ কম্বল বিভিন্ন উপজেলায় প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত ৬ হাজার সোয়েটার ও ৫ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।
শুক্রবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২২
রংপুর অঞ্চলে এবার মাঘের মাঝামাঝিতে প্রচন্ড শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে ঘনকুয়াশা আর হিমেল বাতাস শীতের তীব্রতাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শুক্রবার (২৮ জানুয়ারি) কুড়িগ্রামে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস যা শীত মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। একইভাবে রংপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছে যা এবারের শীত মেসৈুমে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বলেও তারা জানিয়েছে।
প্রচন্ড শৈত্যপ্রবাহ সেই সঙ্গে প্রচন্ড হিমেল বাতাসে জনজীবন একেবারে অচল হয়ে পড়েছে। এদিকে শৈত্যপ্রবাহে ২৪ ঘণ্টায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৯ ও ১০ নম্বর শিশু ওয়ার্ডে নিউমোনিয়া শ্বাসকষ্ট আর কোল্ড ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৫ শিশু মারা গেছে। হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার সাখাওয়াত হোসেন মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অন্যদিকে প্রচন্ড শীতে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে দিনে রোজগার করা স্বল্প আয়ের শ্রমিক, খেত মজুরসহ সহায়-সম্বলহীন মানুষ। প্রচন্ড শীতের কারণে প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র না থাকায় তারা ঘর থেকে বের হতে পারছে না। তার পরেও শত শত খেটে খাওয়া মানুষ বিভাগীয় নগরীর বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিক বেচা-কেনার বাজারে ভোর বেলা থেকে অবস্থান করলেও কাজ না পেয়ে অনেকেই ফিরে গেছে। সেই সঙ্গে ভাসমান মানুষের দুর্ভোগের অন্ত নেই। একদিকে প্রচন্ড শৈত্যপ্রবাহ অন্যদিকে বৃষ্টির মতো কুয়াশা তাদের জবুথবু অবস্থায় দিন কেটেছে।
এদিকে শহরের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে শীতের তীব্রতা অনেকটাই বেশি। সে কারণে শীত বস্ত্রের অভাবে খড়কুটা জ্বালিয়ে দিনভর আগুন পোহাতে দেখা গেছে।
২ দিন ধরে সুর্যের আলো দেখা না যাওয়ায় এবং শীতের তীব্রতার কারণে বিভাগীয় নগরী রংপুরে সড়কগুলো ছিল প্রায় ফাঁকা। শুক্রবার হওয়ায় বেশির ভাগ শপিংমল ও মার্কেটগুলো বন্ধ থাকলেও নগরীতে প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বের হয়নি।
রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা জেলার তিস্তা, ধরলা ও যমুনা বেষ্টিত চরাঞ্চলে বসবাসকারী লাখ লাখ পরিবার শীতবস্ত্রের অভাবে খড়কুটো জ্বালিয়ে না ঘুমিয়ে রাত কাটিয়েছে। সরকারি বেসরকারিভাবে এবার শীতবস্ত্র বিতরণ করার কথা বলা হলেও কাজীর গরু কেতাবে আছে গোয়ালে নেই এমনি অবস্থা। বেসরকারি সাহায্য সংস্থাগুলোর শীতবস্ত্র বিতরণের তেমন একটা দৃশ্য রংপুর নগরীর লালবাগ বস্তিতে বাস করে দেড় হাজার পরিবার। তারা জানিয়েছে, শীতবস্ত্রের অভাবে তারা রাতভর আগুন জ্বালিয়ে রাতপার করেছেন। ভ্যান শ্রমিক রাজা মিয়া, রং মিস্ত্রি সালাম, শ্রমিক আফলাতুন বেগম জানান, এমনিতেই তাদের খুপড়ি ঘরে হিমেল বাতাসের কারণে ঘরে টেকাই দায়, সেখানে শীতবস্ত্র না থাকায় মানবেতর দিন কাটছে তাদের।
এদিকে প্রচন্ড শৈত্যপ্রবাহের কারণে রংপুর অঞ্চলে ব্যাপকভাবে নিউমোনিয়া কোল্ড ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগ-বালাই ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। আক্রান্তদের বেশিরভাগই শিশু ও বয়স্ক মানুষ। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে এক হাজারেরও বেশি শিশু ভর্তি আছে। জায়গার সংকুলান না হওয়ায় ফ্লোরিং করে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছে।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. রেজাউল ইসলাম জানিয়েছেন, শীতের তীব্রতা আর হিমেল বাতাসের কারণে শিশুদের পর্যাপ্ত কাপড় পরাতে হবে। কোন অবস্থাতেই ঘরের বাইরে বের করা যাবে না।
এদিকে রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান জানিয়েছেন, শুক্রবার কুড়িগ্রামের রাজারহাটে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৬ দশমিক ১ এবং রংপুরে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তিনি জানান, মাঘ মাসের আগামী এক সপ্তাহ তাপমাত্রা আরও কমে আসতে পারে।
দেশের ১৭ জেলার তাপমাত্রা এখন ১০ এর নিচে অবস্থান করছে। এছাড়া ১০ ডিগ্রির মধ্যে আছে আরও সাত জেলার তাপমাত্রা। এগুলোর মধ্যে রাজারহাট ছাড়াও বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) ছিল তেঁতুলিয়ায় ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। এ হিসাবে তাপমাত্রা কমেছে প্রায় ৩ ডিগ্রি। এছাড়া বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে শুক্রবার ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৭, আজ ৪ ডিগ্রি কমে দাঁড়িয়েছেন ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ময়মনসিংহে ছিল ১৬, আজ ৬ ডিগ্রি কমে দাঁড়িয়েছে ১০, চট্টগ্রামে ছিল ১৬ দশমিক ৩, আজ ১৫ দশমিক ৭ এবং সিলেটে শুক্রবারের তাপমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক ২, আজ ২ ডিগ্রি কমে হয়েছে ১৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়াও রাজশাহীতে ছিল ১২ দশমিক ৮, আজ ৪ ডিগ্রি কমে ৮ দশমিক ৫, রংপুরে ছিল ১৩ দশমিক ৪, আজ ৫ ডিগ্রি কমে হয়েছে ৮, খুলনায় ছিল ১৬ দশমিক ৩, আজ ৪ ডিগ্রি কমে ১২ এবং বরিশালে ছিল ১৭ দশমিক ২, আজ ৬ ডিগ্রি কমে ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
শুক্রবার এই মৌসুমে পঞ্চগড়ের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। তাপমাত্রা ক্রমেই কমছে। আবহাওয়া অফিসের দেয়া তথ্যমতে গত কয়েকদিন ধরে পঞ্চগড়ের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে চলেছে। শীতের তীব্রতা অনেকখানি বেড়েছে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে। কুয়াশা তেমন না থাকলেও বইছে হিমালয় থেকে আসা কনকনে ঠান্ডা বাতাস। আকাশ পরিষ্কার থাকায় বাতাসের বেগ আরও বেড়েছে। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে হাটবাজার ফাঁকা হতে শুরু করে। পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম জানান, এই শীতে এখন পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারিভাবে জেলার অসহায় দরিদ্রদের মাঝে ৪০ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। আরও শীতবস্ত্রের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। পাওয়া মাত্রই বিতরণ করা হবে। এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের উত্তরপশ্চিমাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে, এর বর্ধিতাংশ উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত।
আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, অস্থায়ীভাবে আকাশ আংশিক মেঘলাসহ সারাদেশের আবহাওয়া বন্ধ থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘনকুয়াশা এবং এছাড়া দেশের অন্য এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।
গোপালগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, যশোর ও কুষ্টিয়া জেলাসহ এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে এবং বিস্তার লাভ করতে পারে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।
২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে নোয়াখালীর মাইজদী কোর্টে ৯ মিলিমিটার। এছাড়া ভোলায় ৩, ফেনীতে ২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া সিলেট, কুমিল্লা ও বরিশালে সামান্য বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, ঘন কুয়াশা আর হিম ঠান্ডা বাতাসে জনজীবনে স্থবিরতা নেমে এসেছে। বিপাকে পরেছে খেটে খাওয়া মানুষ। শুক্রবার জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। যা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। জেলাজুড়ে শুরু হয়েছে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। এ অবস্থা আরো ২-৩ দিন থাকতে করতে পারে বলে জানিয়েছে স্থানীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর। তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পরেছে শ্রমজীবী ও কর্মজীবী মানুষ। কৃষি ক্ষেতে শ্রমিকরা এবং যানবাহন চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা মানুষগুলো পড়েছেন বিপাকে।
এছাড়াও কুয়াশা ও ঠান্ডা বাতাসের কারণে বোরো বীজতলা ও আলু ক্ষেত নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে কৃষক। ছত্রাকের আক্রমন থেকে আলু ক্ষেত রক্ষা করতে ঘন ঘন ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হচ্ছে কৃষকদের। তীব্র ঠান্ডা উপেক্ষা করে কৃষকরা করছেন বোরো রোপণের কাজ। কুড়িগ্রামের হলোখানা ইউনিয়নের টাপুরচরের কৃষক আবদার হোসেন জানান, এবারে অনেক খরচ করে আলু লাগিয়েছি। তীব্র ঠান্ডার কারণে সদ্য বেড়ে ওঠা আলু ক্ষেত নিয়ে চিন্তায় আছি।কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. শামসুদ্দিন মিঞা জানান, শৈত্যপ্রবাহ ক্ষণস্থায়ী হওয়ায় আবাদের তেমন কোন ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার জানান, এখন পর্যন্ত জেলায় শীতার্তদের জন্য এক কোটি ৮ লক্ষ টাকার কম্বল ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত আরো ৩৫ হাজার ৭শ কম্বল বিভিন্ন উপজেলায় প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত ৬ হাজার সোয়েটার ও ৫ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।