রাজশাহী শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে হুজুরীপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ। ওই ইউনিয়নের বাসিন্দা জিয়াউল হক। অভাবের সংসারে বেশি পড়াশোনা করতে পারেননি। মাধ্যমিক পাসের পর চাকরি নেন একটি প্রতিষ্ঠানে। কয়েক বছর ভালোই চলে। কিন্ত হঠাৎ সড়ক দুর্ঘটনায় তার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। দুই বছর পর কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠেন। তবে লোকজন তাকে শারীরিক প্রতিবন্ধী ভাবতে থাকেন। মানুষের এই ধারণাকে মিথ্যা প্রমাণিত করে নতুন উদ্যোমে কাজ শুরু করেন জিয়াউল হক। ‘আমি শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে ঘরে বসে থাকিনি। কাজ করার জন্য উদগ্রীব ছিলাম। সব সময় কাজের সন্ধান করতাম,’ বলছিলেন জিয়াউল। ইতোমধ্যে দেশে চালু হয় ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের কার্যক্রম। জিয়াউল হুজুরীপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে ডিজিটাল সেন্টারে উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ শুরু করেন। এরপর জিয়াউলের মতে ঘটনা এগিয়েছে গল্প-সিনেমার মতো। জিয়াউল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশব্যাপী ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্রের উদ্বোধন করার পর আমাদের ইউনিয়নেও এ কার্যক্রম চালু হয়। উদ্যোক্তা হিসেবে আমারও স্বপ্নের পথচলা শুরু হয়।’
প্রথম মাসে তার আয় ছিল দেড় হাজার টাকা। কিন্তু এখন তার প্রতিদিন গড়ে আয় ৩ হাজার টাকার বেশি। তিনি ৫ জনকে চাকরিও দিয়েছেন।
ইউনিয়নের মানুষদের এক সময় এসব সেবা পেতে হলে জেলা সদরে ধর্না দিতে হতো। এটা যেমন ছিল সময় সাপেক্ষ, যাতায়াত ভাড়াও গুনতে হতো বেশি। সেই সেবাগুলোই এখন মানুষ দোর গোড়ায় পেয়ে যাচ্ছেন। তৃণমূলে সাধারণ মানুষের জীবনকে সহজ করেছে ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থা। ওই হুজুরিপাড়া ইউনিয়নেরই কুসুম খাতুন। জন্ম থেকেই পায়ে সমস্যা হওয়ায় চলতে-ফিরতে খুবই কষ্ট হয়। সরকারের কাছ থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা পান। কিন্তু সমস্যা ছিল, সেই ভাতা তুলতে যেতে হতো উপজেলা সদরে। সেই কষ্ট আর বিড়ম্বনা এখন আর নেই। এখন ডাক বিভাগের মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস নগদ-এ অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। ফলে মোবাইলেই চলে আসে ভাতার টাকা। সঙ্গে থাকে ওই টাকা ক্যাশআউট করার খরচও। এখন কুসুমের স্বস্তি, বললেন, ‘একটা বড় দুর্ভোগ তো দূর হয়েছে।’ ওই ইউনিয়ন পরিষদের সচিব গোলাম সাকলায়েন বলেন, ‘আমি এখন যে কাজগুলো করছি, যদি আগের মতো এনালগ সিস্টেম থাকতো তাহলে এই সেবা দিতে যেমন অধিক জনবলের প্রয়োজন পড়ত তেমনি সেবাগ্রহীতাদের অনেক সময় নষ্ট হতো। তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে একজন কর্মী এখন ৮ জন কর্মীর সমান সেবা দিতে পারছেন।’
ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে জনগণের দোরগোড়ায় ‘সহজ, দ্রুত ও স্বল্পব্যায়ে’ সরকারি সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্র চালু করে সরকার। ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের ৪ হাজার ৫০১টি ইউনিয়নে একযোগে সেবাকেন্দ্রের উদ্বোধন করেন, যা বর্তমানে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার (ইউডিসি) নামে পরিচিত। বর্তমানে সারা দেশে ৮ হাজার ২৮০টি ইউডিসি চালু আছে। এছাড়া কৃষি পরামর্শ ও তথ্যসেবা দেয়ার পাশাপাশি ৮১ লাখ কৃষকের তথ্যও সংগৃহীত হয়েছে এই উদ্যোগের ফলে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এসব সেন্টার থেকে মোট সেবা পেয়েছে ৬০ কোটি ৫০ লাখ মানুষ। এসব ইউডিসির মাধ্যমে এজেন্ট ব্যাংকিং পরিচালিত হয় ৪ হাজার ৫০০টি। বর্তমানে ডিজিটাল সেন্টারে ৩০০টির বেশি সেবা দেয়া হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জমির পর্চা, নামজারি, ই-নামজারি, পাসপোর্টের আবেদন ও ফি জমাদান, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন, নাগরিক সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, হজ রেজিস্ট্রেশন, সরকারি সেবার ফরম, টেলিমিডিসিন, জীবনবীমা, বিদেশে চাকরির আবেদন, এজেন্ট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, বাস-বিমান-লঞ্চ টিকেটিং, মেডিকেল ভিসা, ডক্টরের অ্যাপয়েনমেন্ট, মোবাইল রিচার্জ, সিমবিক্রয়, বিভিন্ন ধরনের কম্পিউটার এবং কারিগরি প্রশিক্ষণ, ই-মেইল, কম্পোজ-প্রিন্ট-প্রশিক্ষণ, ফটো তোলা, ফটোকপি, সরকারি ফরম ডাউনলোড, পরীক্ষার ফলাফল, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবদেন, অনলাইন ভিসার আবেদন, কৃষি পরামর্শ ও তথ্য সেবা, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন, চাকরির আবেদন, অনলাইনে বাস, ট্রেন ও বিমানের টিকেট ক্রয় সেবা, এজেন্ট ব্যাংকিং-গ্রাহকের একাউন্ট খোলা, টাকা জমাদান ও উত্তোলন, বিদেশ হতে প্রেরিত রেমিট্যান্স উত্তোলন, অনলাইনে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স আবেদন ও ফি জমাদান বিদ্যুৎ বিল জমাদান, অনলাইনে বিদ্যুৎ সংযোগ/মিটারের জন্য অনলাইন আবেদন, অনলাইনে পণ্য ক্রয় সেবা, বিভিন্ন পরীক্ষার ফলাফল প্রদান, ভিসা আবেদন, ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট ও চিকিৎসা পরামর্শ প্রদান, জন্ম ও মৃত্যু সনদ, অনলাইনে ড্রাইভিং লাইসেন্স লার্নার আবেদন ও অনলাইনে টেলিমেডিসিন সেবাসহ বেশ কিছু সেবা প্রদান করা হচ্ছে এসব সেন্টার থেকে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘এক কোটিরও বেশি মানুষ প্রতিমাসে সেবা গ্রহণ করছে। আমাদের লক্ষ্য ২০৩১ সালের মধ্যে ২০ হাজার ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে যাব। আপনার বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটারের মধ্যে যাতে সরকারের একটি ডিজিটাল সেন্টার পান সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’
রোববার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২২
রাজশাহী শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে হুজুরীপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ। ওই ইউনিয়নের বাসিন্দা জিয়াউল হক। অভাবের সংসারে বেশি পড়াশোনা করতে পারেননি। মাধ্যমিক পাসের পর চাকরি নেন একটি প্রতিষ্ঠানে। কয়েক বছর ভালোই চলে। কিন্ত হঠাৎ সড়ক দুর্ঘটনায় তার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। দুই বছর পর কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠেন। তবে লোকজন তাকে শারীরিক প্রতিবন্ধী ভাবতে থাকেন। মানুষের এই ধারণাকে মিথ্যা প্রমাণিত করে নতুন উদ্যোমে কাজ শুরু করেন জিয়াউল হক। ‘আমি শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে ঘরে বসে থাকিনি। কাজ করার জন্য উদগ্রীব ছিলাম। সব সময় কাজের সন্ধান করতাম,’ বলছিলেন জিয়াউল। ইতোমধ্যে দেশে চালু হয় ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের কার্যক্রম। জিয়াউল হুজুরীপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে ডিজিটাল সেন্টারে উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ শুরু করেন। এরপর জিয়াউলের মতে ঘটনা এগিয়েছে গল্প-সিনেমার মতো। জিয়াউল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশব্যাপী ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্রের উদ্বোধন করার পর আমাদের ইউনিয়নেও এ কার্যক্রম চালু হয়। উদ্যোক্তা হিসেবে আমারও স্বপ্নের পথচলা শুরু হয়।’
প্রথম মাসে তার আয় ছিল দেড় হাজার টাকা। কিন্তু এখন তার প্রতিদিন গড়ে আয় ৩ হাজার টাকার বেশি। তিনি ৫ জনকে চাকরিও দিয়েছেন।
ইউনিয়নের মানুষদের এক সময় এসব সেবা পেতে হলে জেলা সদরে ধর্না দিতে হতো। এটা যেমন ছিল সময় সাপেক্ষ, যাতায়াত ভাড়াও গুনতে হতো বেশি। সেই সেবাগুলোই এখন মানুষ দোর গোড়ায় পেয়ে যাচ্ছেন। তৃণমূলে সাধারণ মানুষের জীবনকে সহজ করেছে ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থা। ওই হুজুরিপাড়া ইউনিয়নেরই কুসুম খাতুন। জন্ম থেকেই পায়ে সমস্যা হওয়ায় চলতে-ফিরতে খুবই কষ্ট হয়। সরকারের কাছ থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা পান। কিন্তু সমস্যা ছিল, সেই ভাতা তুলতে যেতে হতো উপজেলা সদরে। সেই কষ্ট আর বিড়ম্বনা এখন আর নেই। এখন ডাক বিভাগের মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস নগদ-এ অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। ফলে মোবাইলেই চলে আসে ভাতার টাকা। সঙ্গে থাকে ওই টাকা ক্যাশআউট করার খরচও। এখন কুসুমের স্বস্তি, বললেন, ‘একটা বড় দুর্ভোগ তো দূর হয়েছে।’ ওই ইউনিয়ন পরিষদের সচিব গোলাম সাকলায়েন বলেন, ‘আমি এখন যে কাজগুলো করছি, যদি আগের মতো এনালগ সিস্টেম থাকতো তাহলে এই সেবা দিতে যেমন অধিক জনবলের প্রয়োজন পড়ত তেমনি সেবাগ্রহীতাদের অনেক সময় নষ্ট হতো। তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে একজন কর্মী এখন ৮ জন কর্মীর সমান সেবা দিতে পারছেন।’
ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে জনগণের দোরগোড়ায় ‘সহজ, দ্রুত ও স্বল্পব্যায়ে’ সরকারি সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্র চালু করে সরকার। ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের ৪ হাজার ৫০১টি ইউনিয়নে একযোগে সেবাকেন্দ্রের উদ্বোধন করেন, যা বর্তমানে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার (ইউডিসি) নামে পরিচিত। বর্তমানে সারা দেশে ৮ হাজার ২৮০টি ইউডিসি চালু আছে। এছাড়া কৃষি পরামর্শ ও তথ্যসেবা দেয়ার পাশাপাশি ৮১ লাখ কৃষকের তথ্যও সংগৃহীত হয়েছে এই উদ্যোগের ফলে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এসব সেন্টার থেকে মোট সেবা পেয়েছে ৬০ কোটি ৫০ লাখ মানুষ। এসব ইউডিসির মাধ্যমে এজেন্ট ব্যাংকিং পরিচালিত হয় ৪ হাজার ৫০০টি। বর্তমানে ডিজিটাল সেন্টারে ৩০০টির বেশি সেবা দেয়া হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জমির পর্চা, নামজারি, ই-নামজারি, পাসপোর্টের আবেদন ও ফি জমাদান, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন, নাগরিক সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, হজ রেজিস্ট্রেশন, সরকারি সেবার ফরম, টেলিমিডিসিন, জীবনবীমা, বিদেশে চাকরির আবেদন, এজেন্ট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, বাস-বিমান-লঞ্চ টিকেটিং, মেডিকেল ভিসা, ডক্টরের অ্যাপয়েনমেন্ট, মোবাইল রিচার্জ, সিমবিক্রয়, বিভিন্ন ধরনের কম্পিউটার এবং কারিগরি প্রশিক্ষণ, ই-মেইল, কম্পোজ-প্রিন্ট-প্রশিক্ষণ, ফটো তোলা, ফটোকপি, সরকারি ফরম ডাউনলোড, পরীক্ষার ফলাফল, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবদেন, অনলাইন ভিসার আবেদন, কৃষি পরামর্শ ও তথ্য সেবা, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন, চাকরির আবেদন, অনলাইনে বাস, ট্রেন ও বিমানের টিকেট ক্রয় সেবা, এজেন্ট ব্যাংকিং-গ্রাহকের একাউন্ট খোলা, টাকা জমাদান ও উত্তোলন, বিদেশ হতে প্রেরিত রেমিট্যান্স উত্তোলন, অনলাইনে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স আবেদন ও ফি জমাদান বিদ্যুৎ বিল জমাদান, অনলাইনে বিদ্যুৎ সংযোগ/মিটারের জন্য অনলাইন আবেদন, অনলাইনে পণ্য ক্রয় সেবা, বিভিন্ন পরীক্ষার ফলাফল প্রদান, ভিসা আবেদন, ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট ও চিকিৎসা পরামর্শ প্রদান, জন্ম ও মৃত্যু সনদ, অনলাইনে ড্রাইভিং লাইসেন্স লার্নার আবেদন ও অনলাইনে টেলিমেডিসিন সেবাসহ বেশ কিছু সেবা প্রদান করা হচ্ছে এসব সেন্টার থেকে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘এক কোটিরও বেশি মানুষ প্রতিমাসে সেবা গ্রহণ করছে। আমাদের লক্ষ্য ২০৩১ সালের মধ্যে ২০ হাজার ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে যাব। আপনার বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটারের মধ্যে যাতে সরকারের একটি ডিজিটাল সেন্টার পান সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’