alt

সারাদেশ

সিলেটে কমছে পানি, বাড়ছে পানিবাহিত রোগ

প্রতিনিধি, সিলেট : সোমবার, ২৩ মে ২০২২

সিলেট : বন্যার পানি কমছে, যতটুকু সম্ভব ফসল সংগ্রহ করে শুকিয়ে নিচ্ছেন কৃষকরা -সংবাদ

সিলেটে কমতে শুরু করেছে বন্যার পানি। তবে পানি কমলেও জনসাধারণের দুর্ভোগ বেড়েই চলছে। নগরীর বেশিরভাগ বাসা বাড়ি থেকে এখনো পানি নামেনি। সুরমা, কুশিয়ারা, ধলাই, পিয়াইন নদ-নদীর পানি অনেকটা কমে গেছে। অন্যদিকে পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে দুর্ভোগ বাড়ছে বানভাসিদের। পানি কমে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। সেই সঙ্গে বানভাসি এলাকার বাসিন্দারা পানিবাহিত রোগের ঝুঁকিতে রয়েছেন।

পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে চলতি মাসের ১১ মে থেকে সিলেটের বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। ধীরে ধীরে বন্যা বৃদ্ধি পেয়ে সিলেট মহানগরেরও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। মহানগরীর প্রায় ২০টি ওয়ার্ড বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সময় অনেক মানুষই বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে অবস্থান করেন।

জানা গেছে, বন্যায় সিলেট নগরীর শাহজালাল উপশহর, ঘাসিটুলা, মাছিমপুর, ছড়ারপার, তালতলা, কুয়ারপার, মেন্দিবাগ, কামালগড়, চালিবন্দর, যতরপুর, সোবহানিঘাট, কালীঘাট, শেখঘাট, তালতলা, জামতলা, মাছুদীঘিরপার, রামের দিঘীরপার, মোগলটুলা, খুলিয়াটুলা, দক্ষিণ সুরমার বঙ্গবীর রোড, ভার্থখলা, মোমিনখলা, পিরোজপুর, আলমপুর ও ঝালোপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়িতে পানি ওঠে। এসব এলাকার অনেক বাসা-বাড়িতে কোমর সমান পানি ছিল।

সোমবার (২৩ মে) সকালে নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নগরের তালতলা, জামতলা, মণিপুরি রাজবাড়ি, যতরপুর, মিরাবাজার, শাহজালাল উপশহর, মেন্দিবাগ, ছড়ারপাড় এলাকায় বেশ কিছু বাড়িঘর এখনও পানির নিচে। বাসিন্দাদের ঘরের সামনে হাঁটুপানি রয়ে গেছে। এ পানি কালো রঙ ধারণ করে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। তাই ওইসব এলাকার বাসিন্দারা পানিবাহিত রোগের শঙ্কায় আছেন। এছাড়া বন্যার পানিতে বিভিন্ন ময়লা-আবর্জনা ভেসে এসে ঘর ও আশপাশে জড়ো হয়েছে। জমে থাকা পানিতে জন্ম নিয়েছে মশাসহ নানা কীটপতঙ্গ।

নগরের বন্যাকবলিত এলাকার বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ব্লিচিং পাউডার দিয়ে তারা এখন নিজেদের বাসা-বাড়ি পরিষ্কার করছেন। আসবাবপত্র ধোয়ামোছার কাজও চলছে। যাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়েছিল, তারাও এখন পরিষ্কারে ব্যস্ত। এদিকে বন্যাকবলিত লোকজনের মধ্যে পানিবাহিত নানা রোগের লক্ষণ দেখা দিয়েছে। শহরের বন্যাকবলিত এলাকায় মেডিকেল টিম গঠন করেছে সিলেট সিভিল সার্জন ও সিলেট সিটি করপোরেশন। এছাড়া বন্যাকবলিতদের মধ্যে পানি বিশুদ্ধিকরণ ট্যাবলেট, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও ওষুধ বিতরণ করছেন তারা।

সিলেট জেলার সিভিল সার্জন ডা. এসএম শাহরিয়ার বলেন, ‘বন্যার কারণে পানিবাহিত রোগী বেড়েছে। ৩৭৬ জন ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। পাশাপাশি ৬ জন চর্ম রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। আমাদের মেডিকেল টিম ইউনিয়ন পর্যায় থেকে মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় কাজ করছে। যাতে পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে না পড়ে। তবে বন্যাপরবর্তী পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘সিলেটে বন্যাকবলিত মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ১৪০টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। যার মধ্যে সিলেট সদরে ১০টি, দক্ষিণ সুরমায় ৮টি, বিশ্বনাথে ১১টি, ওসমানীনগরে ৯টি, বালাগঞ্জে ৭টি, ফেঞ্চুগঞ্জে ১০টি, গোলাপগঞ্জে ১৬টি, বিয়ানীবাজারে ১৬টি, জকিগঞ্জে ১০টি, কানাইঘাটে ১২টি, গোয়াইনঘাটে ১০টি, জৈন্তাপুরে ১১টি এবং কোম্পানীগঞ্জে ৭টি মেডিকেল টিম গঠিত হয়েছে। এর বাইরে জেলা সদরে ৩টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।’

‘এসব দলে চিকিৎসক ছাড়াও নার্সসহ স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট অনেকেই আছেন। প্লাবিত এলাকার সবখানেই যেন স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে প্রতিটি মেডিকেল টিমকে নির্দেশনা দেয়া আছে। এরপরও পুরো বিষয়টি যেন সুষ্ঠুভাবে করা যায়, এজন্য সিভিল সার্জন কার্যালয় তদারকি করছে। এক কথায় চিকিৎসাসেবা যেন সবাই পান, সেটাই নিশ্চিত করা হবে বলেও জানান তিনি।

সিভিল সার্জনের কার্যালয়, সিলেটের পরিসংখ্যানবিদ মো. ফরিদ উদ্দিনের দেয়া তথ্য মতে, জেলার বন্যাকবলিত এলাকায় এখন পর্যন্ত সর্বমোট ৩৮৭ রোগী পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ডায়রিয়ায় ৩৭৬ জন, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে ৫ জন এবং চর্মরোগে ৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। অন্যরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তাদের সিলেটের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এখনও সেভাবে রোগব্যাধি ছড়ায়নি। কেবল বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে পানিবাহিত রোগ বৃদ্ধির শঙ্কা রয়ে যায়। তবে সেজন্য আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে, সব রোগীর সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে আমরা তৎপর রয়েছি। কেউই চিকিৎসার বাইরে থাকবেন না।’

তিনি আরও বলেন, ‘সিলেটে ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের জন্য নগরের শাহী ঈদগাহ এলাকায় সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে, একইসঙ্গে নগরের রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে সিলেট সিটি করপোরেশনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে’ বলেও জানান এ চিকিৎসক।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে তিনটি মেডিকেল টিম মাঠে আছে, প্রয়োজনে আরও গঠন করা হবে। তবে এখন পর্যন্ত পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়া কিংবা অন্যান্য রোগের প্রকোপ দেখা যায়নি। এর কারণ বিশুদ্ধ পানি ও পানি বিশুদ্ধিকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে। তবে পানি পুরোপুরি নেমে যাওয়ার পর সে রোগগুলোর ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা আছে।

বন্যাকবলিত এলাকায় মেডিকেল টিম নিয়মিত পরিদর্শন করছে বলেও তিনি জানান। সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, পানি নেমে যাওয়ার পর সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা শাখার দল গঠন করে পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে মশা-মাছি ও কীটপতঙ্গ নিধনের জন্য ওষুধ ছিটানো এবং ময়লা দুর্গন্ধ দূর করতে ব্লিচিং পাউডার ছিটানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’ এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমদ বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়েছে। পানি দ্রুত নেমে যেতে শুরু করেছে।

শরণখোলার রেঞ্জে মাছ ধরার সময় পাঁচ জেলে আটক

নারায়ণগঞ্জ শহরে গরম কমাতে ‘তাপকর্ম পরিকল্পনা’

ছবি

কক্সবাজারে জামায়াত নেতার হামলা, বিএনপি নেতা নিহত

ছবি

শায়েস্তাগঞ্জ ও অলিপুরে উচ্ছেদ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা, উদ্বোধন হলো পুলিশ বক্স

ছবি

বিনা বিচারে ৩০ বছর, অবশেষে মুক্তি পেলেন কানু মিয়া

ছবি

ঐতিহাসিক ভবন ভাঙা ঠেকাতে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের চিঠি

ছবি

কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গাইনি বিশেষজ্ঞ নেই ১০ বছর

মহেশপুর আদালত চত্বরে জাল কোর্টফিতে সয়লাব

কমলগঞ্জে চা শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার

মোহনগঞ্জে হারিয়ে গেছে দেশি জাতের ধান

নবাবগঞ্জে নিখোঁজ শিশুর মরদেহ উদ্ধার

মোরেলগঞ্জ ভেটেরিনারি হাসপাতালে ১১ পদের মধ্যে ৮ পদেই কেউ নেই

রংপুর চেম্বারের নির্বাচন সম্পন্ন

ছবি

৭ বছর আগের সেই মর্মান্তিক ঘটনায় চোখের জলে বুক ভাসান স্বজনরা

চাঁদপুরে অপরাধে জড়িত সন্দেহে আটক ২২

তারাগঞ্জে চাষিদের বীজ, সার ও অর্থ বিতরণ

ছবি

হরিপুর-চিলমারী সেতুর উদ্বোধন ২ আগস্ট

বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস উপলক্ষে কলমাকান্দায় আলোচনা সভা

বাগাতিপাড়ায় সড়ক প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ, দুদকের অভিযান

ভিডব্লিউবি কার্ডধারীদের কাছে ট্যাক্সের নামে টাকা আদায়

ছবি

দশমিনায় বাড়ির আঙিনায় বস্তায় আদা চাষে সাফল্য

কাঁঠালিয়ায় জিপিএ৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা

চিতলমারীতে মাদক বিক্রেতা গ্রেপ্তার

ছবি

বারবার প্রতিশ্রুতির পরও পাকাকরণ হয়নি সড়ক

পাঁচবিবি উপজেলা প্রশাসন ভবন উদ্বোধন

মা হত্যার দায়ে পুত্রের আমৃত্যু কারাদণ্ড

ছবি

মাদারগঞ্জে স্বেচ্ছাশ্রমে কাঠের সেতু পুনর্নির্মাণ

শ্রীমঙ্গলে চাঞ্চল্যকর হৃদয় হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন দুই বন্ধু গ্রেপ্তার

ভুক্তভোগী দুই নারীকে হুমকির অভিযোগ ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে

ছবি

বড়াল নদীতে মাছ ধরার উৎসব

স্বজনদের আপত্তির মুখে লাশ উত্তোলন না করেই ফিরে গেল পিবিআই টিম

মোরেলগঞ্জে মাদ্রাসাছাত্রকে কুপিয়ে জখম

ছবি

চাঁদাবাজি বন্ধে বিএনপির সমাবেশ

অটোরিকশা চালককে মারধর করায় বিএনপি নেতার পদ স্থগিত

খাগড়াছড়িতে এনসিপির নেতানেত্রীর পাল্টাপাল্টি জিডি

ছবি

দোয়ারাবাজারে সেতু না থাকায় বাঁশের সাঁকোতে পারাপার

tab

সারাদেশ

সিলেটে কমছে পানি, বাড়ছে পানিবাহিত রোগ

প্রতিনিধি, সিলেট

সিলেট : বন্যার পানি কমছে, যতটুকু সম্ভব ফসল সংগ্রহ করে শুকিয়ে নিচ্ছেন কৃষকরা -সংবাদ

সোমবার, ২৩ মে ২০২২

সিলেটে কমতে শুরু করেছে বন্যার পানি। তবে পানি কমলেও জনসাধারণের দুর্ভোগ বেড়েই চলছে। নগরীর বেশিরভাগ বাসা বাড়ি থেকে এখনো পানি নামেনি। সুরমা, কুশিয়ারা, ধলাই, পিয়াইন নদ-নদীর পানি অনেকটা কমে গেছে। অন্যদিকে পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে দুর্ভোগ বাড়ছে বানভাসিদের। পানি কমে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। সেই সঙ্গে বানভাসি এলাকার বাসিন্দারা পানিবাহিত রোগের ঝুঁকিতে রয়েছেন।

পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে চলতি মাসের ১১ মে থেকে সিলেটের বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। ধীরে ধীরে বন্যা বৃদ্ধি পেয়ে সিলেট মহানগরেরও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। মহানগরীর প্রায় ২০টি ওয়ার্ড বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সময় অনেক মানুষই বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে অবস্থান করেন।

জানা গেছে, বন্যায় সিলেট নগরীর শাহজালাল উপশহর, ঘাসিটুলা, মাছিমপুর, ছড়ারপার, তালতলা, কুয়ারপার, মেন্দিবাগ, কামালগড়, চালিবন্দর, যতরপুর, সোবহানিঘাট, কালীঘাট, শেখঘাট, তালতলা, জামতলা, মাছুদীঘিরপার, রামের দিঘীরপার, মোগলটুলা, খুলিয়াটুলা, দক্ষিণ সুরমার বঙ্গবীর রোড, ভার্থখলা, মোমিনখলা, পিরোজপুর, আলমপুর ও ঝালোপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়িতে পানি ওঠে। এসব এলাকার অনেক বাসা-বাড়িতে কোমর সমান পানি ছিল।

সোমবার (২৩ মে) সকালে নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নগরের তালতলা, জামতলা, মণিপুরি রাজবাড়ি, যতরপুর, মিরাবাজার, শাহজালাল উপশহর, মেন্দিবাগ, ছড়ারপাড় এলাকায় বেশ কিছু বাড়িঘর এখনও পানির নিচে। বাসিন্দাদের ঘরের সামনে হাঁটুপানি রয়ে গেছে। এ পানি কালো রঙ ধারণ করে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। তাই ওইসব এলাকার বাসিন্দারা পানিবাহিত রোগের শঙ্কায় আছেন। এছাড়া বন্যার পানিতে বিভিন্ন ময়লা-আবর্জনা ভেসে এসে ঘর ও আশপাশে জড়ো হয়েছে। জমে থাকা পানিতে জন্ম নিয়েছে মশাসহ নানা কীটপতঙ্গ।

নগরের বন্যাকবলিত এলাকার বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ব্লিচিং পাউডার দিয়ে তারা এখন নিজেদের বাসা-বাড়ি পরিষ্কার করছেন। আসবাবপত্র ধোয়ামোছার কাজও চলছে। যাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়েছিল, তারাও এখন পরিষ্কারে ব্যস্ত। এদিকে বন্যাকবলিত লোকজনের মধ্যে পানিবাহিত নানা রোগের লক্ষণ দেখা দিয়েছে। শহরের বন্যাকবলিত এলাকায় মেডিকেল টিম গঠন করেছে সিলেট সিভিল সার্জন ও সিলেট সিটি করপোরেশন। এছাড়া বন্যাকবলিতদের মধ্যে পানি বিশুদ্ধিকরণ ট্যাবলেট, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও ওষুধ বিতরণ করছেন তারা।

সিলেট জেলার সিভিল সার্জন ডা. এসএম শাহরিয়ার বলেন, ‘বন্যার কারণে পানিবাহিত রোগী বেড়েছে। ৩৭৬ জন ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। পাশাপাশি ৬ জন চর্ম রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। আমাদের মেডিকেল টিম ইউনিয়ন পর্যায় থেকে মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় কাজ করছে। যাতে পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে না পড়ে। তবে বন্যাপরবর্তী পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘সিলেটে বন্যাকবলিত মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ১৪০টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। যার মধ্যে সিলেট সদরে ১০টি, দক্ষিণ সুরমায় ৮টি, বিশ্বনাথে ১১টি, ওসমানীনগরে ৯টি, বালাগঞ্জে ৭টি, ফেঞ্চুগঞ্জে ১০টি, গোলাপগঞ্জে ১৬টি, বিয়ানীবাজারে ১৬টি, জকিগঞ্জে ১০টি, কানাইঘাটে ১২টি, গোয়াইনঘাটে ১০টি, জৈন্তাপুরে ১১টি এবং কোম্পানীগঞ্জে ৭টি মেডিকেল টিম গঠিত হয়েছে। এর বাইরে জেলা সদরে ৩টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।’

‘এসব দলে চিকিৎসক ছাড়াও নার্সসহ স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট অনেকেই আছেন। প্লাবিত এলাকার সবখানেই যেন স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে প্রতিটি মেডিকেল টিমকে নির্দেশনা দেয়া আছে। এরপরও পুরো বিষয়টি যেন সুষ্ঠুভাবে করা যায়, এজন্য সিভিল সার্জন কার্যালয় তদারকি করছে। এক কথায় চিকিৎসাসেবা যেন সবাই পান, সেটাই নিশ্চিত করা হবে বলেও জানান তিনি।

সিভিল সার্জনের কার্যালয়, সিলেটের পরিসংখ্যানবিদ মো. ফরিদ উদ্দিনের দেয়া তথ্য মতে, জেলার বন্যাকবলিত এলাকায় এখন পর্যন্ত সর্বমোট ৩৮৭ রোগী পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ডায়রিয়ায় ৩৭৬ জন, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে ৫ জন এবং চর্মরোগে ৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। অন্যরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তাদের সিলেটের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এখনও সেভাবে রোগব্যাধি ছড়ায়নি। কেবল বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে পানিবাহিত রোগ বৃদ্ধির শঙ্কা রয়ে যায়। তবে সেজন্য আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে, সব রোগীর সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে আমরা তৎপর রয়েছি। কেউই চিকিৎসার বাইরে থাকবেন না।’

তিনি আরও বলেন, ‘সিলেটে ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের জন্য নগরের শাহী ঈদগাহ এলাকায় সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে, একইসঙ্গে নগরের রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে সিলেট সিটি করপোরেশনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে’ বলেও জানান এ চিকিৎসক।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে তিনটি মেডিকেল টিম মাঠে আছে, প্রয়োজনে আরও গঠন করা হবে। তবে এখন পর্যন্ত পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়া কিংবা অন্যান্য রোগের প্রকোপ দেখা যায়নি। এর কারণ বিশুদ্ধ পানি ও পানি বিশুদ্ধিকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে। তবে পানি পুরোপুরি নেমে যাওয়ার পর সে রোগগুলোর ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা আছে।

বন্যাকবলিত এলাকায় মেডিকেল টিম নিয়মিত পরিদর্শন করছে বলেও তিনি জানান। সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, পানি নেমে যাওয়ার পর সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা শাখার দল গঠন করে পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে মশা-মাছি ও কীটপতঙ্গ নিধনের জন্য ওষুধ ছিটানো এবং ময়লা দুর্গন্ধ দূর করতে ব্লিচিং পাউডার ছিটানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’ এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমদ বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়েছে। পানি দ্রুত নেমে যেতে শুরু করেছে।

back to top