আধিপত্য বিস্তারের জন্য বাহ্মণবাড়িয়ায় প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজ গ্রুপের সদস্যদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পর আবার প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করা হয়েছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে বাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের রামপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এরমধ্যে বল্টু গ্রুপ ৬৫ বছরের বৃদ্ধকে এবং মেরাজ গ্রুপ নিজ বোনকে হত্যা করেছে।
অবশেষে প্রায় চার বছর পর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন পিবিআইয়ের টিম তদন্ত করে ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে। তারা দুটি হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
তাদের স্বীকারোক্তিতে নিজ দলের সদস্য হত্যার নেপথ্য কাহিনী বেরিয়ে আসছে। গতকাল পিবিআই ধানমন্ডির সদর দপ্তর ও বাহ্মণবাড়িয়া পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, আলোচিত এ ঘটনায় গত ৫ ডিসেম্বর পিবিআইয়ের টিম অভিযুক্ত আওয়াল মিয়াকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করেছে। এ নিয়ে পিবিআইয়ের টিম মোট ৫ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে।
পিবিআই কর্মকর্তারা বলেছেন, নাসিরনগরের রামপুর গ্রামে বল্টু মেম্বার মেরাজ মিয়া গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব ও দাঙ্গা, হাঙ্গামা হচ্ছিল।
নাসিরনগর এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গোয়াল নগর নোয়াগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রে উভয় পক্ষের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ হয়।
দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় একপক্ষের নেতৃত্ব দেন বল্টু মেম্বার। অন্য পক্ষের নেতৃত্বে ছিলেন মেরাজ মিয়া ওরফে মুছা মিয়া। ২০১৮ সালে ৩১ ডিসেম্বর উভয় পক্ষের মধ্যে প্রথমে কথা কাটাকাটি ও মারপিটের ঘটনা ঘটেছে। মারপিট শেষে দুই গ্রুপের লোকজন নিজ নিজ বাড়িতে গেলে আরও বাড়তি লোক সংগ্রহ করে। এরপর দেশি অস্ত্র নিয়ে এক গ্রুপ অন্য গ্রুপের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এ নিয়ে রামপুর গ্রামে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।
দাঙ্গা চলাকালে দুই গ্রুপ প্রতিপক্ষকে কাবু করতে না পেয়ে পরে মধ্যযুগীয় বর্বরতার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনায় ছিল বল্টু মেম্বার গ্রুপ নিজ দলের লোকজনকে হত্যা করে প্রতিপক্ষ মেরাজ মিয়া গ্রুপকে ফাঁসিয়ে দেয়া।
উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য তারা জরুরি বৈঠক করে। ওই বৈঠকে টার্গেট হিসেবে বেছে নেয় নিজ গ্রুপেরই প্রবীণ সদস্য ৬৫ বছর বয়সের বরজু মিয়াকে। তাদের যুক্তি ছিল বরজু মিয়ার বয়স হয়ে গেছে। পৃথিবীতে তার বেঁচে থাকার কোন দরকার নেই। তাই তাকে হত্যা করে যদি প্রতিপক্ষকে ফাঁসানো যায় তা হলে নিজের আধিপত্য বিস্তার সহজ হবে।
পরিকল্পনা মতে বল্টু মেম্বার গ্রুপ বরজু মিয়াকে গলা কেটে হত্যা করেছে। এরপর এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে মেরাজ মিয়া ওরফে মুছা মিয়া গ্রুপের লোকজনের বিরুদ্ধে নাসিরনগর থানায় ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
অন্যদিকে মেরাজ মিয়া ওরফে মুছা মিয়া গ্রুপের সদস্যরা যখন দেখল বল্টু মিয়া গ্রুপের সদস্যরা দলবলসহ বরজু হত্যার প্রতিশোধ নিতে তাদের ঘর বাড়িতে হামলা ও তাণ্ডব চালিয়েছে, তারা বিকল্প কোন উপায় না পেয়ে আরেকটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর মুছা গ্রুপের মুছার নির্দেশে স্বামী না থাকা তারই আপন বোন রাফিজাকে মুছার দলের লোকজন দিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে।
এরপর মুছা গ্রুপের লোকজন বল্টু মেম্বার গ্রুপের বিরুদ্ধে নাসির নগর থানায় ২০১৯ সালে ৭ জানুয়ারি একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।
মামলা দুটি প্রথমে থানা পুলিশ তদন্ত করেন। পরবর্তীতে পিবিআই মামলা দুটি তদন্ত শুরু করে। এরপর পিবিআই টিম ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আসামি খোরশেদ আলম, আক্কাস মিয়া, পরশ মিয়াকে গ্রেপ্তার ক।ে তারা বরজু মিয়া ও রাফিজা বেগমকে হত্যার দায় স্বীকার করেছে। তারা আদালতে নিজেদের দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে।
তাদের দেয়া তথ্য মতে, গত ৫ ডিসেম্বর আসামি আওয়াল মিয়াকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করেছে। মামলা দুটি পিবিআই বাহ্মণবাড়িয়া কর্তৃক তদন্ত করছে। ঘটনায় মোট ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। পলাতক অন্যদের ধরতে চলছে অভিযান।
পিবিআইয়ের বাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ কামাল হোসেন জানান, সংঘর্ষ ও মারপিটের সময় এক গ্রুপে দেড়শ’ থেকে দুইশ’ সদস্য ছিল। আর হত্যাকাণ্ডে জড়িত যারা ছিল তাদের সবাইকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তার মধ্যে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার ৩ জন নিজেকে জড়িয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২২
আধিপত্য বিস্তারের জন্য বাহ্মণবাড়িয়ায় প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজ গ্রুপের সদস্যদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পর আবার প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করা হয়েছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে বাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের রামপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এরমধ্যে বল্টু গ্রুপ ৬৫ বছরের বৃদ্ধকে এবং মেরাজ গ্রুপ নিজ বোনকে হত্যা করেছে।
অবশেষে প্রায় চার বছর পর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন পিবিআইয়ের টিম তদন্ত করে ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে। তারা দুটি হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
তাদের স্বীকারোক্তিতে নিজ দলের সদস্য হত্যার নেপথ্য কাহিনী বেরিয়ে আসছে। গতকাল পিবিআই ধানমন্ডির সদর দপ্তর ও বাহ্মণবাড়িয়া পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, আলোচিত এ ঘটনায় গত ৫ ডিসেম্বর পিবিআইয়ের টিম অভিযুক্ত আওয়াল মিয়াকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করেছে। এ নিয়ে পিবিআইয়ের টিম মোট ৫ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে।
পিবিআই কর্মকর্তারা বলেছেন, নাসিরনগরের রামপুর গ্রামে বল্টু মেম্বার মেরাজ মিয়া গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব ও দাঙ্গা, হাঙ্গামা হচ্ছিল।
নাসিরনগর এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গোয়াল নগর নোয়াগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রে উভয় পক্ষের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ হয়।
দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় একপক্ষের নেতৃত্ব দেন বল্টু মেম্বার। অন্য পক্ষের নেতৃত্বে ছিলেন মেরাজ মিয়া ওরফে মুছা মিয়া। ২০১৮ সালে ৩১ ডিসেম্বর উভয় পক্ষের মধ্যে প্রথমে কথা কাটাকাটি ও মারপিটের ঘটনা ঘটেছে। মারপিট শেষে দুই গ্রুপের লোকজন নিজ নিজ বাড়িতে গেলে আরও বাড়তি লোক সংগ্রহ করে। এরপর দেশি অস্ত্র নিয়ে এক গ্রুপ অন্য গ্রুপের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এ নিয়ে রামপুর গ্রামে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।
দাঙ্গা চলাকালে দুই গ্রুপ প্রতিপক্ষকে কাবু করতে না পেয়ে পরে মধ্যযুগীয় বর্বরতার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনায় ছিল বল্টু মেম্বার গ্রুপ নিজ দলের লোকজনকে হত্যা করে প্রতিপক্ষ মেরাজ মিয়া গ্রুপকে ফাঁসিয়ে দেয়া।
উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য তারা জরুরি বৈঠক করে। ওই বৈঠকে টার্গেট হিসেবে বেছে নেয় নিজ গ্রুপেরই প্রবীণ সদস্য ৬৫ বছর বয়সের বরজু মিয়াকে। তাদের যুক্তি ছিল বরজু মিয়ার বয়স হয়ে গেছে। পৃথিবীতে তার বেঁচে থাকার কোন দরকার নেই। তাই তাকে হত্যা করে যদি প্রতিপক্ষকে ফাঁসানো যায় তা হলে নিজের আধিপত্য বিস্তার সহজ হবে।
পরিকল্পনা মতে বল্টু মেম্বার গ্রুপ বরজু মিয়াকে গলা কেটে হত্যা করেছে। এরপর এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে মেরাজ মিয়া ওরফে মুছা মিয়া গ্রুপের লোকজনের বিরুদ্ধে নাসিরনগর থানায় ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
অন্যদিকে মেরাজ মিয়া ওরফে মুছা মিয়া গ্রুপের সদস্যরা যখন দেখল বল্টু মিয়া গ্রুপের সদস্যরা দলবলসহ বরজু হত্যার প্রতিশোধ নিতে তাদের ঘর বাড়িতে হামলা ও তাণ্ডব চালিয়েছে, তারা বিকল্প কোন উপায় না পেয়ে আরেকটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর মুছা গ্রুপের মুছার নির্দেশে স্বামী না থাকা তারই আপন বোন রাফিজাকে মুছার দলের লোকজন দিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে।
এরপর মুছা গ্রুপের লোকজন বল্টু মেম্বার গ্রুপের বিরুদ্ধে নাসির নগর থানায় ২০১৯ সালে ৭ জানুয়ারি একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।
মামলা দুটি প্রথমে থানা পুলিশ তদন্ত করেন। পরবর্তীতে পিবিআই মামলা দুটি তদন্ত শুরু করে। এরপর পিবিআই টিম ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আসামি খোরশেদ আলম, আক্কাস মিয়া, পরশ মিয়াকে গ্রেপ্তার ক।ে তারা বরজু মিয়া ও রাফিজা বেগমকে হত্যার দায় স্বীকার করেছে। তারা আদালতে নিজেদের দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে।
তাদের দেয়া তথ্য মতে, গত ৫ ডিসেম্বর আসামি আওয়াল মিয়াকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করেছে। মামলা দুটি পিবিআই বাহ্মণবাড়িয়া কর্তৃক তদন্ত করছে। ঘটনায় মোট ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। পলাতক অন্যদের ধরতে চলছে অভিযান।
পিবিআইয়ের বাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ কামাল হোসেন জানান, সংঘর্ষ ও মারপিটের সময় এক গ্রুপে দেড়শ’ থেকে দুইশ’ সদস্য ছিল। আর হত্যাকাণ্ডে জড়িত যারা ছিল তাদের সবাইকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তার মধ্যে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার ৩ জন নিজেকে জড়িয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছে।