শত কোটি টাকার ব্যবসার সম্ভাবনা
রাজশাহী জেলার পরে আমের জেলা খ্যাত মেহেরপুরে এবার আমের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। চলমান আমের বছরে ৯০ শতাংশ গাছ ভরে এসেছিল মুকুল। চলতি বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় প্রতিটি গাছেই এসেছে ফল। মুজিবনগরের বিশাল আম বাগানসহ জেলার আম বাগানগুলোতে আমের গুটিতে ভরে গেছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে আম চাষিদের ব্যস্ততা।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটলে এ বছর আমের বাম্পার ফলন হবে মেহেরপুরে। মাটির গুণে স্বাদের দিক থেকে মেহেরপুরের আম অপ্রতিদ্বন্দ্বী। মেহেরপুরের আম সুস্বাদু হওয়ায় এ জেলার আমের চাহিদা দেশের বাইরে ইউরোপেও ছড়িয়েছে তার সুখ্যাতি। জেলায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সব জাতের আমেরই চাষ হচ্ছে। লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছর কৃষি জমিতে তৈরি করা হচ্ছে আমের বাগান। কৃষি বিভাগ আশা করছে ২ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমিতে থাকা আম বাগানে ৪০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের। যা থেকে শতকোটি টাকারও বেশি আম বেচা-কেনা হতে পারে তাদের বলে ধারণা। অনুকূল পরিবেশের কারণে আমের বাম্পার ফলন আশা করছে আম বাগান মালিকরাও।
আম ব্যবসায়ী নুর হোসেন জানান, এ বছর তিনি চারটি আমবাগান কিনেছেন প্রায় ৮ লাখ টাকায়। প্রতিটি বাগানের গাছে গাছে আমের গুটিতে ভরে গেছে। তিনি আশা করছেন বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ১৬ থেকে ১৭ লাখ টাকার আম বিক্রয় করবেন ।
আমচাষী বজলুর রহমান জানান, কীটনাশকসহ আম সংগ্রহ করা শ্রমিকদের পারশ্রমিক বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। সেই তুলনায় আমের দাম বাড়েনি এখানে। তাছাড়া আম বাগান ব্যবসা চরম ঝুঁকিপূর্ণ হওয়াতে তিনি বাগান কেনা ছেড়ে দিয়েছেন। তবে ভরা মৌসুমে বাগান থেকে সরাসরি আম সংগ্রহ করে বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করেন। তাতে ঝুঁকি কম বলে মতামত ব্যক্ত করেন তিনি।
আমের গুটি টিকিয়ে রাখাও এখন চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন। তিনি জানান সাধারণত আমগাছে প্রতি ছড়া মুকুলে এক হাজার থেকে ছয় হাজার পর্যন্ত পুরুষ ও স্ত্রী ফুল থাকে। তার মধ্যে প্রাথমিকভাবে প্রতি থোকায় জাতভেদে এক থেকে ৩০টি আমের গুটি ধরতে দেখা যায়। গুটি আসার ২৫ থেকে ৫০ দিনের মধ্যে প্রতি থোকায় মাত্র এক থেকে দুটি গুটি থাকে। বাকি গুটি প্রাকৃতিক বা অভ্যন্তরীণ কারণে ঝরে যায়। তবে কোনো কোনো মুকুলে কদাচিৎ চার থেকে পাঁচটি আম ধরতে দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে আমের আকার ছোট হয়। অতিরিক্ত গুটি ঝরে না পড়লে আমের আকার ছোট হয় এবং আমের গুণগত মান ও ফলন কমে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিটি মুকুল ছড়ায় একটি করে গুটি থাকলে সে বছর আমের বাম্পার ফলন হয়। তবে প্রতি মুকুলে আমের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য ফুল ফোটার ১০ ও ২০ দিন পর দুইবার ১০ লিটার পানিতে ৬ গ্রাম হারে বোরিক অ্যাসিড স্প্রে করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সব ফুল ফোটা অবস্থায় জিবেরেলিক অ্যাসিড প্রতি লিটার পানিতে ৫০ মিলিগ্রাম হারে স্প্রে করলে আমের গুটি ঝরা কমে যায়।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ- পরিচালক শঙ্কর কুমার মজুমদার জানান, জেলায় ২ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে। এখানকার মাটির গুণেই হিমসাগর, লেংড়া, বোম্বাই, তিলি বোম্বাই ইত্যাদি জাতের আম খুবই সুস্বাদু। বিশেষ করে নিয়মিত জাত ল্যাংড়া, গোপালভোগ, ক্ষীরসাপাতি, আশ্বিনা জাতের বাগান বেশি থাকলেও গবেষণাকৃত বারি-৩, বারি-৪ জাতের বাগান তৈরির ক্ষেত্রেও আগ্রহী হয়ে উঠছে অনেকে। সেই সঙ্গে নতুন নতুন বাগানগুলো তৈরি হচ্ছে বনেদি ও হাইব্রিড জাতের।
তিনি আরো বলেন, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মেহেরপুরের হিমসাগরের বেশ চাহিদা রয়েছে। সেটি মাথায় রেখে প্রথম থেকেই পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও স্থানীয়ভাবে আম সংরক্ষণের জন্য সংরক্ষণাগার তৈরির গুরুত্ব তুলে ধরে মন্ত্রণালয়কে জাননোর চেষ্টা চলছে।
শত কোটি টাকার ব্যবসার সম্ভাবনা
বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ ২০২৩
রাজশাহী জেলার পরে আমের জেলা খ্যাত মেহেরপুরে এবার আমের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। চলমান আমের বছরে ৯০ শতাংশ গাছ ভরে এসেছিল মুকুল। চলতি বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় প্রতিটি গাছেই এসেছে ফল। মুজিবনগরের বিশাল আম বাগানসহ জেলার আম বাগানগুলোতে আমের গুটিতে ভরে গেছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে আম চাষিদের ব্যস্ততা।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটলে এ বছর আমের বাম্পার ফলন হবে মেহেরপুরে। মাটির গুণে স্বাদের দিক থেকে মেহেরপুরের আম অপ্রতিদ্বন্দ্বী। মেহেরপুরের আম সুস্বাদু হওয়ায় এ জেলার আমের চাহিদা দেশের বাইরে ইউরোপেও ছড়িয়েছে তার সুখ্যাতি। জেলায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সব জাতের আমেরই চাষ হচ্ছে। লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছর কৃষি জমিতে তৈরি করা হচ্ছে আমের বাগান। কৃষি বিভাগ আশা করছে ২ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমিতে থাকা আম বাগানে ৪০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের। যা থেকে শতকোটি টাকারও বেশি আম বেচা-কেনা হতে পারে তাদের বলে ধারণা। অনুকূল পরিবেশের কারণে আমের বাম্পার ফলন আশা করছে আম বাগান মালিকরাও।
আম ব্যবসায়ী নুর হোসেন জানান, এ বছর তিনি চারটি আমবাগান কিনেছেন প্রায় ৮ লাখ টাকায়। প্রতিটি বাগানের গাছে গাছে আমের গুটিতে ভরে গেছে। তিনি আশা করছেন বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ১৬ থেকে ১৭ লাখ টাকার আম বিক্রয় করবেন ।
আমচাষী বজলুর রহমান জানান, কীটনাশকসহ আম সংগ্রহ করা শ্রমিকদের পারশ্রমিক বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। সেই তুলনায় আমের দাম বাড়েনি এখানে। তাছাড়া আম বাগান ব্যবসা চরম ঝুঁকিপূর্ণ হওয়াতে তিনি বাগান কেনা ছেড়ে দিয়েছেন। তবে ভরা মৌসুমে বাগান থেকে সরাসরি আম সংগ্রহ করে বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করেন। তাতে ঝুঁকি কম বলে মতামত ব্যক্ত করেন তিনি।
আমের গুটি টিকিয়ে রাখাও এখন চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন। তিনি জানান সাধারণত আমগাছে প্রতি ছড়া মুকুলে এক হাজার থেকে ছয় হাজার পর্যন্ত পুরুষ ও স্ত্রী ফুল থাকে। তার মধ্যে প্রাথমিকভাবে প্রতি থোকায় জাতভেদে এক থেকে ৩০টি আমের গুটি ধরতে দেখা যায়। গুটি আসার ২৫ থেকে ৫০ দিনের মধ্যে প্রতি থোকায় মাত্র এক থেকে দুটি গুটি থাকে। বাকি গুটি প্রাকৃতিক বা অভ্যন্তরীণ কারণে ঝরে যায়। তবে কোনো কোনো মুকুলে কদাচিৎ চার থেকে পাঁচটি আম ধরতে দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে আমের আকার ছোট হয়। অতিরিক্ত গুটি ঝরে না পড়লে আমের আকার ছোট হয় এবং আমের গুণগত মান ও ফলন কমে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিটি মুকুল ছড়ায় একটি করে গুটি থাকলে সে বছর আমের বাম্পার ফলন হয়। তবে প্রতি মুকুলে আমের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য ফুল ফোটার ১০ ও ২০ দিন পর দুইবার ১০ লিটার পানিতে ৬ গ্রাম হারে বোরিক অ্যাসিড স্প্রে করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সব ফুল ফোটা অবস্থায় জিবেরেলিক অ্যাসিড প্রতি লিটার পানিতে ৫০ মিলিগ্রাম হারে স্প্রে করলে আমের গুটি ঝরা কমে যায়।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ- পরিচালক শঙ্কর কুমার মজুমদার জানান, জেলায় ২ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে। এখানকার মাটির গুণেই হিমসাগর, লেংড়া, বোম্বাই, তিলি বোম্বাই ইত্যাদি জাতের আম খুবই সুস্বাদু। বিশেষ করে নিয়মিত জাত ল্যাংড়া, গোপালভোগ, ক্ষীরসাপাতি, আশ্বিনা জাতের বাগান বেশি থাকলেও গবেষণাকৃত বারি-৩, বারি-৪ জাতের বাগান তৈরির ক্ষেত্রেও আগ্রহী হয়ে উঠছে অনেকে। সেই সঙ্গে নতুন নতুন বাগানগুলো তৈরি হচ্ছে বনেদি ও হাইব্রিড জাতের।
তিনি আরো বলেন, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মেহেরপুরের হিমসাগরের বেশ চাহিদা রয়েছে। সেটি মাথায় রেখে প্রথম থেকেই পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও স্থানীয়ভাবে আম সংরক্ষণের জন্য সংরক্ষণাগার তৈরির গুরুত্ব তুলে ধরে মন্ত্রণালয়কে জাননোর চেষ্টা চলছে।