alt

সারাদেশ

জামিন নাকচ, সাংবাদিক শামস কারাগারে

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, আরও মামলা হচ্ছে

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ ২০২৩

তথ্যপ্রযুক্তি আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ৩০ ঘণ্টা পর আদালতে তোলা হয়েছে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক (সাভারে কর্মরত) শামছুজ্জামান শামসকে। বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) তাকে আদালতে রমনা থানায় দায়ের হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এর আগে তার বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। যদিও ওই মামলার আগেই তাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করা হলে এ সময় তার পক্ষে জামিন আবেদন করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষ জামিন আবেদনের বিরোধিতা করে। শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে শামছুজ্জামানকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।

এদিকে রমনা থানায় যে মামলা হয়েছে সেই মামলায় প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানকেও আসামি করা হয়েছে। গত বুধবার রাতে মামলাটি করেন আইনজীবী আবদুল মালেক। ওই মামলায় আসামি করা হয় বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া প্রথম আলোর প্রতিবেদক শামছুজ্জামানকেও।

এদিকে প্রথম আলোর সম্পাদক ও প্রতিবেদক শামছুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানোর বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাজনৈতিক দল বিএনপি। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের টিআইবি) পক্ষ থেকেও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বিবৃতি দিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা।

আদালত সূত্র জানায়, রমনা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে আদালত। আসামির জামিন আবেদনের শুনানি করে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম তোফাজ্জল হোসেন বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেন। শামসের পক্ষে জামিন আবেদনের শুনানি করেন আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী ও প্রশান্ত কর্মকার। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রসিকিউশন পুলিশের কর্মকর্তা নিজামুদ্দিন ফকির।

স্বাধীনতা দিবসে এক সংবাদ প্রতিবেদনে ‘মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর, জাতির জন্য মানহানিকর’ তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ ও প্রচারের অভিযোগে গত বুধবার রাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ওই মামলা করেন আইনজীবী মশিউর মালেক। সেখানে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানকে ‘হুকুমের আসামি’ এবং নাম উল্লেখ না করে একজন ‘সহযোগী ক্যামেরাম্যানকে’ আসামি করা হয়েছে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই প্রতিবেদন ‘লাইক, শেয়ার, কমেন্টকারী আরও অজ্ঞাতদের’ আসামি করেছেন মামলার বাদী।

ওই প্রতিবেদনে ‘মিথ্যা ও মানহানিকর’ তথ্য প্রচারের অভিযোগে এর আগে তেজগাঁও থানায় আরেকটি মামলা করেন ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের নেতা মো. গোলাম কিবরিয়া। সেই মামলায় শুধু শামছুজ্জামানকেই আসামি করা হয়। তেজগাঁও থানার সেই মামলার খবর প্রকাশ্যে আসার আগেই বুধবার ভোর রাতে শামসকে তার সাভারের বাসা থেকে ‘সিআইডি পরিচয়ে’ তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।

সিআইডি তাকে আটকের বিষয়টি স্বীকার না করলেও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় একজন সাংবাদিক, শামসের বাড়িওয়ালা এবং পাশের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেছেন, যারা শামসকে ধরে নিয়ে গেছেন, তারা সিআইডি পুলিশ হিসেবেই পরিচয় দিয়েছেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যা বললেন

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসকে ‘তুলে নেয়ার’ একদিন পর তাকে ‘জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে নেয়ার’ কথা জানালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি এও বলেছেন, জিজ্ঞাসাবাদ শেষে শামসকে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। পরে আরও মামলা হওয়ার কারণে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ভাড়া বাসা থেকে বুধবার ভোরের আগে শামসকে তুলে নেয়ার পরদিন বৃহস্পতিবার দুপুরে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন মন্ত্রী। কৃষক লীগের ওই আলোচনা সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া নিয়ে কটূক্তির কারণে প্রথম আলোর সাংবাদিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশের একটি বাহিনী ডেকে নিয়ে গিয়েছিল। এখন মামলার কারণে আটক দেখানো হয়েছে।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সেই পত্রিকা যাকে মার্ক করেছিল (কার্ডে যে ছেলেটির ছবি ব্যবহার করা হয়েছে) সেও এই উক্তিটি করেনি বলে জানিয়েছে, সেটা আপনারা একটি টিভিতে দেখেছেন। সেজন্য পুলিশের একটি বাহিনী তাকে (শামস) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে নিয়েছিল। ‘তারা জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেয়ার পর এই ঘটনায় সারাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মামলা হয়েছে এবং কয়েকটি মামলা অলরেডি হয়ে গেছে। সেই মামলাগুলোর পরিপ্রেক্ষিতেই তাকে আবারও অ্যারেস্ট দেখানো হয়েছে। এই হচ্ছে ঘটনা।’

তিনি বলেন, ‘আমি এখন বলতে চাই, প্রাথমিকভাবে যে তথ্য ৭১ টিভি ও প্রথম আলোসহ বিভিন্ন পত্রিকা বা মিডিয়ায় আসছে। সেগুলো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিআইডি তাকে নিয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে ছেড়েও দিয়েছে। এরপর বেশ কয়েকটি মামলা বিভিন্ন স্থানে হয়েছে, সে মামলার ভিত্তিতে তাকে পুনরায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা এখন পর্যন্ত দুই-তিনটির খবর জানি। আরও মামলা হচ্ছে বলে আমরা শুনেছি।’

শুনানিতে যা হলো

জামিন আবেদনের শুনানির শুরুতে আইনজীবী প্রশান্ত কুমার কর্মকার বলেন, আসামির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা ‘ভিত্তিহীন’। ‘এ মামলার এজাহারে বর্ণিত ঘটনা, অর্থাৎ প্রতিবেদনটি করা হয়েছে দিনমজুর জাকির হোসেন এবং সবুজ নামের প্রথম শ্রেণীর একজন ছাত্রের বক্তব্য দিয়ে। এটিতে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। এখানে দেশের স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়নি।’ ওই প্রতিবেদনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে ছবির সঙ্গে দিনমজুর জাকির হোসেনের বক্তব্য ছিল, তা প্রথম আলোর কাছে অসঙ্গতিপূর্ণ মনে হওয়ায় প্রথম আলো স্ব উদ্যোগে তা প্রত্যাহার করে নেয়। দুঃখ প্রকাশ করে, ক্ষমা চায়। পরে সংশোধনী আকারে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। কোন স্বাধীনতাবিরোধীর মিথ্যা তথ্য দিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে রিপোর্ট করা হয়নি।’

আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী বলেন, শুনানির সময় ইউটিউব, ফেইসবুক ও একাত্তর টেলিভিশনের তিনটি লিংক প্রমাণ হিসেবে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, তবে সেগুলো আদালতের সামনে উপস্থাপন করা হয়নি। তাই আসামি কী অপরাধ করেছেন তা ‘নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে না’।

এরপর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এজাহারের ধারাগুলো বিশ্লেষণ করে এ আইনজীবী বলেন, ‘রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণের কথা বলা হয়েছে । বাদী কি কোন রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অথবা রাষ্ট্রের কোন কর্মচারী? প্রাইমারি রেসপনসিবিলিটি কার? এ ধরনের অভিযোগ তো স্টেটের শোলডারে পড়ে। এ খবরে একজন ব্যক্তি ক্ষুব্ধ হয় কি করে? তিনি কীভাবে ব্যক্তিগতভাবে ক্ষুব্ধ হলেন? আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর বিষয়ে প্রতিকার চাওয়া বা অভিযোগ দেয়ার অধিকার কীভাবে বাদীর হলো?

‘যদি কোন ব্যক্তি ওয়েবসাইটে বা অন্য কোন ডিজিটাল প্লাটফরমে ইচ্ছাকৃত বা জ্ঞাতসারে এমন কোন তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ করেন, যা আক্রমণাত্মক, ভীতি প্রদর্শন অথবা মিথ্যা বলে কোন ব্যক্তিকে বিরক্ত অপমান, অপদস্ত বা হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য প্রেরণ, প্রকাশ প্রচার করেন, তাহলে এ অপরাধ হয়। মামলার বাদীকে কীভাবে হেয় করা হলো?’

এরপর আইনজীবী সমাজী এজাহারের পুরো অংশ আদালতে পড়ে শোনান। তিনি বলেন, ‘প্রসিকিউশন কেইস ওয়েল ফাউন্ডেড নয়। সেহেতু ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৮ ধারায় আসামি জামিন পাওয়ার অধিকারী।’

মাত্র এক মিনিটে এর বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষে বক্তব্য দেন আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কমকর্তা এসআই নিজাম উদ্দিন ফকির।

শুনানির সময় কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে সাংবাদিক শামসকে যুক্তি শুনতে দেখা যায়। তার মধ্যে তেমন কোন ভাবান্তর দেখা যায়নি। প্রায় ২৫ মিনিট শুনানি নিয়ে তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম তোফাজ্জল হোসেন।

গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদন নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। সেখানে একজন শ্রমজীবী মানুষকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংশ আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব।’ ওই মন্তব্য ধরে শিরোনাম করা হলেও ছবি দেয়া হয় আরেক শিশুর, যার কথা প্রতিবেদনের ভেতরে ছিল। ওই ছবি ও শিরোনাম দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি কার্ড পোস্ট করা হয়, যা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলে একাত্তর টেলিভিশনে একটি প্রতিবেদনও প্রচার করা হয়। পরে প্রথম আলো প্রতিবেদনটি থেকে ছবি সরিয়ে শিরোনাম বদলে দেয়। পাশাপাশি তাদের সোশ্যাল মিডিয়ায় দেয়া পোস্টও প্রত্যাহার করা হয়।

এরমধ্যে মঙ্গলবার রাতে তেজগাঁও থানায় শামসের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন এক যুবলীগ নেতা। বুধবার সকালে খবর আসে শামসকে তার সাভারের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ‘সিআইডি’ পরিচয় দিয়ে। সেই বাড়ির বাড়িওয়ালা, প্রত্যক্ষদর্শী একজন স্থানীয় সাংবাদিক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তা বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বললেও পুলিশ কর্মকর্তারা মুখে কুলুপ এঁটে থাকেন। তেজগাঁও থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে শামসকে আদালতে নেয়া হতে পারে, সেই ধারণা থেকে বুধবার পুরান ঢাকার আদালতপাড়াতেও ভিড় জমান সাংবাদিকরা। কিন্তু সেখানেও তাকে নেয়া হয়নি। কাউকে গ্রেপ্তারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু শামসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কি না, তাই খোলাসা করেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সর্বোচ্চ আদালতের এমন নির্দেশনাও রয়েছে- কাউকে গ্রেপ্তার করার সময় পুলিশ তার পরিচয়পত্র দেখাতে বাধ্য থাকবে, গ্রেপ্তারের তিন ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে কারণ জানাতে হবে, গ্রেপ্তার ব্যক্তির নিকটাত্মীয়কে এক ঘণ্টার মধ্যে টেলিফোন বা বিশেষ বার্তাবাহকের মাধ্যমে বিষয়টি জানাতে হবে, গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে তার পছন্দ অনুযায়ী আইনজীবী ও আত্মীয়দের সঙ্গে পরামর্শ করতে দিতে হবে।

সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে মামলা

প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে গত বুধবার মধ্যরাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। রাজধানীর রমনা থানায় করা এই মামলায় প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক (সাভারে কর্মরত) শামসুজ্জামানকেও আসামি করা হয়েছে। এছাড়া আসামিদের মধ্যে ‘সহযোগী ক্যামেরাম্যান’সহ অজ্ঞাত ব্যক্তিরাও রয়েছেন।

এদিকে প্রথম আলো সম্পাদক তথ্যপ্রযুক্তি মামলায় আসামি হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ের সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। যদিও প্রথম আলো কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার স্বার্থে তারা পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছে। এরপর সেখানে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

পুলিশের পক্ষ থেকে জানা গেছে, রমনা থানায় যে মামলায় প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান আসামি হয়েছেন ওই মামলার বাদী আইনজীবী আবদুল মালেক (মশিউর মালেক)। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে রমনা থানায় মামলা হওয়ার বিষয়টি বুধবার রাত দেড়টার দিকে জানতে পারে পত্রিকা কর্তৃপক্ষ ।

মামলার বাদী নিজেকে হাইকোর্টের আইনজীবী পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘মামলাটার আমি এজাহার দায়ের করেছি, হয়েছে (মামলা) কি না, জানি না। ওরা (পুলিশ) যোগাযোগ করেছে কোথায় কোথায়, পুলিশের ব্যাপার তো, বোঝেন না।’ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে রমনা থানার পরিদর্শক আবু আনছারকে।

এই মামলার বিষয়ে রমনা থানার পুলিশ রাতে কোন তথ্য দিতে রাজি হয়নি। মামলায় আনা অভিযোগ সম্পর্কে জানতে রাতে সাংবাদিকরা থানায় গেলেও প্রথমে কাউকে ঢুকতে অনুমতি দেয়া হয়নি। পরে রাতে সাংবাদিকদের মামলা হওয়ার বিষয়টি জানানো হয় পুলিশের পক্ষ থেকে।

প্রথম আলোর একজন সাংবাদিক জানান, পর পর কয়েকটি মামলা হওয়ার কারণে প্রথম আলো কর্তৃপক্ষ মনে করেছে তাদের পত্রিকা অফিস নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। তাই প্রথম আলো কর্তৃপক্ষ পুলিশের সঙ্গে কথা বলে নিরাপত্তা চেয়েছে। প্রথম আলোর আবেদনের কারণে প্রথম আলো অফিসের সামনে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। অন্য কোন কারণে পুলিশ মোতায়েন করা হয়নি।

ছবি

ভাঙছে সীমান্ত নদী ইছামতীর বেড়িবাঁধ : এলাকায় আতঙ্ক

শিথিল কারফিউতে খুলেছে দোকানপাট, চলছে গাড়ি, আতঙ্ক কাটছে না জনমনে

ঢাকাসহ ৪ জেলায় ৯ ঘণ্টা কারফিউ শিথিল

ছবি

ক্রেতা উপস্থিতি কম, বেচা-বিক্রি ‘ঠাণ্ডা’

বেরোবির উপাচার্যের বাসভবনে আক্রমণ-আগুন, যেভাবে উদ্ধার হলেন অবরুদ্ধ ২০ জন

ছবি

গুলিবিদ্ধ অনেকেই হারিয়েছেন পা

ঘটনার দশদিনেও গ্রেপ্তার হয়নি কেউ, উদ্ধার হয়নি লুট হওয়া ৭০ ভরি স্বর্ণের এক আনাও

সিলেটে সীমান্তকেন্দ্রিক চোরাচালান, ঘুরেফিরে তিনিই বিভিন্ন থানার ওসি

ছবি

অনেক পত্রিকায় খবর এলো, কিন্তু রুদ্র তো আর আসবে না

সহিংসতা-নাশকতার অভিযোগে ২০১ মামলা, গ্রেপ্তার ২২০৯

ছবি

কারফিউ শিথিলের সময় আরও ভিড়, যানজট

ছবি

রায়গঞ্জে অব্যবস্থাপনায় বন্ধের মুখে প্রাণিসম্পদ উপকেন্দ্রগুলো

এবার সারাদেশে পরীক্ষামূলক ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু

ছবি

নরসিংদী কারাগার থেকে পালানো ৩৩১ বন্দীর আত্মসমর্পণ

ছবি

ফুটেজ দেখে সেতু ভবনে আগুন-লুটপাটে জড়িতদের ধরা হচ্ছে : ডিবি

সোনারগাঁয়ে জ্বালাও পোড়াও ভাংচুর না হলেও নাশকতার মামলায় আসামি ৮ শতাধিক, গ্রেফতার অর্ধশত

সেন্টমার্টিনে ট্রলার ডুবিতে ছাত্রলীগ নেতা নিখোঁজ, কোস্টগার্ডের চৌকিতে হামলা

কক্সবাজারে ছাত্রলীগ নেতা মারধরের ঘটনায় আরও ১১ জন গ্রেফতার

ঢাকাসহ চার জেলায় আজ ও কাল ৭ ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল

ছবি

টাঙ্গাইলে কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, আহত অর্ধশতাধিক

ছবি

কোটা সংস্কার আন্দোলনে কুমিল্লায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, আহত ২০

ছবি

আবারও বেপরোয়া সার্ভেয়ার বাকের ও হাসান সিন্ডিকেট ঘুষ ছাড়া ফাইল নড়ে না কক্সবাজার এলএ শাখায়

ছবি

রামু থেকে অস্ত্র ও গুলি নিয়ে সন্ত্রাসী আটক

ছবি

কক্সবাজারে ক্ষমতাসীনদের হামলায় ৫ সংবাদকর্মী আহত

ছবি

নিখোঁজের দুই দিন পর পর্যটকের মরদেহ উদ্ধার

ছবি

টেকনাফ সমুদ্র উপকূলে পালিয়ে এলো ৫ রোহিঙ্গা

ছবি

টেকনাফগামী ট্রলারে মায়ানমারের গুলি

ছবি

কোটা আন্দোলন: রংপুরে সংঘর্ষ ও মৃত্যুর তদন্তে ৪ সদস্যের কমিটি গঠন

ছবি

শেখ হাসিনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্বে কুরুচিপূর্ন বক্তব্য দেওয়ায় গজারিয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিবাদ সভা

ছবি

নারীর প্রতি সকল প্রকার সহিংসতার প্রতিবাদে ও বিচারের দাবিতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের না’গঞ্জে মানববন্ধন

ছবি

কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত ওয়াসিমের দাফন সম্পন্ন

ছবি

রামুতে মাদকসেবী ভাইয়ের হাতে ভাই খুন

সারাদেশে স্কুল, কলেজ অনিদিষ্টকাল বন্ধ ঘোষণা

ছবি

কোটা সংস্কার আন্দোলন : কক্সবাজারে সংঘর্ষ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

ছবি

চীন বা ভারত নয়, নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবী

ছবি

মায়ানমারে চলছে বোমা হামলা সীমান্তে এতো কড়াকড়িতেও রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ

tab

সারাদেশ

জামিন নাকচ, সাংবাদিক শামস কারাগারে

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, আরও মামলা হচ্ছে

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ ২০২৩

তথ্যপ্রযুক্তি আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ৩০ ঘণ্টা পর আদালতে তোলা হয়েছে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক (সাভারে কর্মরত) শামছুজ্জামান শামসকে। বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) তাকে আদালতে রমনা থানায় দায়ের হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এর আগে তার বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। যদিও ওই মামলার আগেই তাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করা হলে এ সময় তার পক্ষে জামিন আবেদন করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষ জামিন আবেদনের বিরোধিতা করে। শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে শামছুজ্জামানকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।

এদিকে রমনা থানায় যে মামলা হয়েছে সেই মামলায় প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানকেও আসামি করা হয়েছে। গত বুধবার রাতে মামলাটি করেন আইনজীবী আবদুল মালেক। ওই মামলায় আসামি করা হয় বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া প্রথম আলোর প্রতিবেদক শামছুজ্জামানকেও।

এদিকে প্রথম আলোর সম্পাদক ও প্রতিবেদক শামছুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানোর বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাজনৈতিক দল বিএনপি। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের টিআইবি) পক্ষ থেকেও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বিবৃতি দিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা।

আদালত সূত্র জানায়, রমনা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে আদালত। আসামির জামিন আবেদনের শুনানি করে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম তোফাজ্জল হোসেন বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেন। শামসের পক্ষে জামিন আবেদনের শুনানি করেন আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী ও প্রশান্ত কর্মকার। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রসিকিউশন পুলিশের কর্মকর্তা নিজামুদ্দিন ফকির।

স্বাধীনতা দিবসে এক সংবাদ প্রতিবেদনে ‘মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর, জাতির জন্য মানহানিকর’ তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ ও প্রচারের অভিযোগে গত বুধবার রাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ওই মামলা করেন আইনজীবী মশিউর মালেক। সেখানে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানকে ‘হুকুমের আসামি’ এবং নাম উল্লেখ না করে একজন ‘সহযোগী ক্যামেরাম্যানকে’ আসামি করা হয়েছে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই প্রতিবেদন ‘লাইক, শেয়ার, কমেন্টকারী আরও অজ্ঞাতদের’ আসামি করেছেন মামলার বাদী।

ওই প্রতিবেদনে ‘মিথ্যা ও মানহানিকর’ তথ্য প্রচারের অভিযোগে এর আগে তেজগাঁও থানায় আরেকটি মামলা করেন ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের নেতা মো. গোলাম কিবরিয়া। সেই মামলায় শুধু শামছুজ্জামানকেই আসামি করা হয়। তেজগাঁও থানার সেই মামলার খবর প্রকাশ্যে আসার আগেই বুধবার ভোর রাতে শামসকে তার সাভারের বাসা থেকে ‘সিআইডি পরিচয়ে’ তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।

সিআইডি তাকে আটকের বিষয়টি স্বীকার না করলেও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় একজন সাংবাদিক, শামসের বাড়িওয়ালা এবং পাশের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেছেন, যারা শামসকে ধরে নিয়ে গেছেন, তারা সিআইডি পুলিশ হিসেবেই পরিচয় দিয়েছেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যা বললেন

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসকে ‘তুলে নেয়ার’ একদিন পর তাকে ‘জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে নেয়ার’ কথা জানালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি এও বলেছেন, জিজ্ঞাসাবাদ শেষে শামসকে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। পরে আরও মামলা হওয়ার কারণে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ভাড়া বাসা থেকে বুধবার ভোরের আগে শামসকে তুলে নেয়ার পরদিন বৃহস্পতিবার দুপুরে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন মন্ত্রী। কৃষক লীগের ওই আলোচনা সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া নিয়ে কটূক্তির কারণে প্রথম আলোর সাংবাদিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশের একটি বাহিনী ডেকে নিয়ে গিয়েছিল। এখন মামলার কারণে আটক দেখানো হয়েছে।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সেই পত্রিকা যাকে মার্ক করেছিল (কার্ডে যে ছেলেটির ছবি ব্যবহার করা হয়েছে) সেও এই উক্তিটি করেনি বলে জানিয়েছে, সেটা আপনারা একটি টিভিতে দেখেছেন। সেজন্য পুলিশের একটি বাহিনী তাকে (শামস) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে নিয়েছিল। ‘তারা জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেয়ার পর এই ঘটনায় সারাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মামলা হয়েছে এবং কয়েকটি মামলা অলরেডি হয়ে গেছে। সেই মামলাগুলোর পরিপ্রেক্ষিতেই তাকে আবারও অ্যারেস্ট দেখানো হয়েছে। এই হচ্ছে ঘটনা।’

তিনি বলেন, ‘আমি এখন বলতে চাই, প্রাথমিকভাবে যে তথ্য ৭১ টিভি ও প্রথম আলোসহ বিভিন্ন পত্রিকা বা মিডিয়ায় আসছে। সেগুলো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিআইডি তাকে নিয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে ছেড়েও দিয়েছে। এরপর বেশ কয়েকটি মামলা বিভিন্ন স্থানে হয়েছে, সে মামলার ভিত্তিতে তাকে পুনরায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা এখন পর্যন্ত দুই-তিনটির খবর জানি। আরও মামলা হচ্ছে বলে আমরা শুনেছি।’

শুনানিতে যা হলো

জামিন আবেদনের শুনানির শুরুতে আইনজীবী প্রশান্ত কুমার কর্মকার বলেন, আসামির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা ‘ভিত্তিহীন’। ‘এ মামলার এজাহারে বর্ণিত ঘটনা, অর্থাৎ প্রতিবেদনটি করা হয়েছে দিনমজুর জাকির হোসেন এবং সবুজ নামের প্রথম শ্রেণীর একজন ছাত্রের বক্তব্য দিয়ে। এটিতে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। এখানে দেশের স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়নি।’ ওই প্রতিবেদনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে ছবির সঙ্গে দিনমজুর জাকির হোসেনের বক্তব্য ছিল, তা প্রথম আলোর কাছে অসঙ্গতিপূর্ণ মনে হওয়ায় প্রথম আলো স্ব উদ্যোগে তা প্রত্যাহার করে নেয়। দুঃখ প্রকাশ করে, ক্ষমা চায়। পরে সংশোধনী আকারে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। কোন স্বাধীনতাবিরোধীর মিথ্যা তথ্য দিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে রিপোর্ট করা হয়নি।’

আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী বলেন, শুনানির সময় ইউটিউব, ফেইসবুক ও একাত্তর টেলিভিশনের তিনটি লিংক প্রমাণ হিসেবে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, তবে সেগুলো আদালতের সামনে উপস্থাপন করা হয়নি। তাই আসামি কী অপরাধ করেছেন তা ‘নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে না’।

এরপর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এজাহারের ধারাগুলো বিশ্লেষণ করে এ আইনজীবী বলেন, ‘রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণের কথা বলা হয়েছে । বাদী কি কোন রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অথবা রাষ্ট্রের কোন কর্মচারী? প্রাইমারি রেসপনসিবিলিটি কার? এ ধরনের অভিযোগ তো স্টেটের শোলডারে পড়ে। এ খবরে একজন ব্যক্তি ক্ষুব্ধ হয় কি করে? তিনি কীভাবে ব্যক্তিগতভাবে ক্ষুব্ধ হলেন? আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর বিষয়ে প্রতিকার চাওয়া বা অভিযোগ দেয়ার অধিকার কীভাবে বাদীর হলো?

‘যদি কোন ব্যক্তি ওয়েবসাইটে বা অন্য কোন ডিজিটাল প্লাটফরমে ইচ্ছাকৃত বা জ্ঞাতসারে এমন কোন তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ করেন, যা আক্রমণাত্মক, ভীতি প্রদর্শন অথবা মিথ্যা বলে কোন ব্যক্তিকে বিরক্ত অপমান, অপদস্ত বা হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য প্রেরণ, প্রকাশ প্রচার করেন, তাহলে এ অপরাধ হয়। মামলার বাদীকে কীভাবে হেয় করা হলো?’

এরপর আইনজীবী সমাজী এজাহারের পুরো অংশ আদালতে পড়ে শোনান। তিনি বলেন, ‘প্রসিকিউশন কেইস ওয়েল ফাউন্ডেড নয়। সেহেতু ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৮ ধারায় আসামি জামিন পাওয়ার অধিকারী।’

মাত্র এক মিনিটে এর বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষে বক্তব্য দেন আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কমকর্তা এসআই নিজাম উদ্দিন ফকির।

শুনানির সময় কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে সাংবাদিক শামসকে যুক্তি শুনতে দেখা যায়। তার মধ্যে তেমন কোন ভাবান্তর দেখা যায়নি। প্রায় ২৫ মিনিট শুনানি নিয়ে তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম তোফাজ্জল হোসেন।

গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদন নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। সেখানে একজন শ্রমজীবী মানুষকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংশ আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব।’ ওই মন্তব্য ধরে শিরোনাম করা হলেও ছবি দেয়া হয় আরেক শিশুর, যার কথা প্রতিবেদনের ভেতরে ছিল। ওই ছবি ও শিরোনাম দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি কার্ড পোস্ট করা হয়, যা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলে একাত্তর টেলিভিশনে একটি প্রতিবেদনও প্রচার করা হয়। পরে প্রথম আলো প্রতিবেদনটি থেকে ছবি সরিয়ে শিরোনাম বদলে দেয়। পাশাপাশি তাদের সোশ্যাল মিডিয়ায় দেয়া পোস্টও প্রত্যাহার করা হয়।

এরমধ্যে মঙ্গলবার রাতে তেজগাঁও থানায় শামসের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন এক যুবলীগ নেতা। বুধবার সকালে খবর আসে শামসকে তার সাভারের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ‘সিআইডি’ পরিচয় দিয়ে। সেই বাড়ির বাড়িওয়ালা, প্রত্যক্ষদর্শী একজন স্থানীয় সাংবাদিক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তা বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বললেও পুলিশ কর্মকর্তারা মুখে কুলুপ এঁটে থাকেন। তেজগাঁও থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে শামসকে আদালতে নেয়া হতে পারে, সেই ধারণা থেকে বুধবার পুরান ঢাকার আদালতপাড়াতেও ভিড় জমান সাংবাদিকরা। কিন্তু সেখানেও তাকে নেয়া হয়নি। কাউকে গ্রেপ্তারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু শামসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কি না, তাই খোলাসা করেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সর্বোচ্চ আদালতের এমন নির্দেশনাও রয়েছে- কাউকে গ্রেপ্তার করার সময় পুলিশ তার পরিচয়পত্র দেখাতে বাধ্য থাকবে, গ্রেপ্তারের তিন ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে কারণ জানাতে হবে, গ্রেপ্তার ব্যক্তির নিকটাত্মীয়কে এক ঘণ্টার মধ্যে টেলিফোন বা বিশেষ বার্তাবাহকের মাধ্যমে বিষয়টি জানাতে হবে, গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে তার পছন্দ অনুযায়ী আইনজীবী ও আত্মীয়দের সঙ্গে পরামর্শ করতে দিতে হবে।

সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে মামলা

প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে গত বুধবার মধ্যরাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। রাজধানীর রমনা থানায় করা এই মামলায় প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক (সাভারে কর্মরত) শামসুজ্জামানকেও আসামি করা হয়েছে। এছাড়া আসামিদের মধ্যে ‘সহযোগী ক্যামেরাম্যান’সহ অজ্ঞাত ব্যক্তিরাও রয়েছেন।

এদিকে প্রথম আলো সম্পাদক তথ্যপ্রযুক্তি মামলায় আসামি হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ের সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। যদিও প্রথম আলো কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার স্বার্থে তারা পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছে। এরপর সেখানে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

পুলিশের পক্ষ থেকে জানা গেছে, রমনা থানায় যে মামলায় প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান আসামি হয়েছেন ওই মামলার বাদী আইনজীবী আবদুল মালেক (মশিউর মালেক)। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে রমনা থানায় মামলা হওয়ার বিষয়টি বুধবার রাত দেড়টার দিকে জানতে পারে পত্রিকা কর্তৃপক্ষ ।

মামলার বাদী নিজেকে হাইকোর্টের আইনজীবী পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘মামলাটার আমি এজাহার দায়ের করেছি, হয়েছে (মামলা) কি না, জানি না। ওরা (পুলিশ) যোগাযোগ করেছে কোথায় কোথায়, পুলিশের ব্যাপার তো, বোঝেন না।’ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে রমনা থানার পরিদর্শক আবু আনছারকে।

এই মামলার বিষয়ে রমনা থানার পুলিশ রাতে কোন তথ্য দিতে রাজি হয়নি। মামলায় আনা অভিযোগ সম্পর্কে জানতে রাতে সাংবাদিকরা থানায় গেলেও প্রথমে কাউকে ঢুকতে অনুমতি দেয়া হয়নি। পরে রাতে সাংবাদিকদের মামলা হওয়ার বিষয়টি জানানো হয় পুলিশের পক্ষ থেকে।

প্রথম আলোর একজন সাংবাদিক জানান, পর পর কয়েকটি মামলা হওয়ার কারণে প্রথম আলো কর্তৃপক্ষ মনে করেছে তাদের পত্রিকা অফিস নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। তাই প্রথম আলো কর্তৃপক্ষ পুলিশের সঙ্গে কথা বলে নিরাপত্তা চেয়েছে। প্রথম আলোর আবেদনের কারণে প্রথম আলো অফিসের সামনে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। অন্য কোন কারণে পুলিশ মোতায়েন করা হয়নি।

back to top