alt

সারাদেশ

শ্রমিক-কর্মচারীদের অর্থ আত্মসাৎ

ড. ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০২৩

নোবেল জয়ী ডক্টর মুহম্মদ ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মঙ্গলবার (৩০ মে) দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এ উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

গ্রাামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাড়াও যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম ও এস. এম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী। মামলায় আরও যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন, অ্যাডভোকেট মো. ইউসুফ আলী, অ্যাডভোকেট জাফরুল হাসান শরীফ, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান ও প্রতিনিধি মো. মাইনুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার পর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে দুদক মহাপরিচালক (প্রশাসন) রেজওয়ানুর রহমান বলেন, গ্রামীণ টেলিকমের ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ডের (ডব্লিউপিপিএফ) অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে দুদকের কাছে একটি অভিযোগ আসে। দুদক আইন ও বিধি অনুযায়ী অভিযোগটি অনুসন্ধান করে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যানসহ বোর্ড সদস্যদের বিরুদ্ধে অসৎ উদ্দেশ্যে অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ করে পরস্পর যোগসাজশে ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাৎ ও মানিলন্ডারিংয়ের সত্যতা পায়। এ কারণে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ আসামির বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ৪০৯, ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১ ও ১০৯ ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২-এর ৪(২)(৩) ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়।

অনুসন্ধানকালে ড. ইউনূসকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল কি না এমন প্রশ্নের জবাবে রেজওয়ানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা নিয়ম অনুযায়ী সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। এরপর কমিশনে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করেন। দুদক মামলার প্রধান আসামি প্রফেসর ইউনূসকে গ্রেপ্তার করবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলার তদন্তকালে প্রয়োজন মনে করলে তদন্ত কর্মকর্তা গ্রেপ্তার করতে পারেন। তাকে গ্রেপ্তার করা হবে কি না এটি তদন্ত কর্মকর্তা ঠিক করবেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে জমা হওয়া অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। অনুসন্ধানকালে দেখা গেছে ১৯৯৫ সালের ৪ অক্টোবর গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানি যৌথ মূলধন কোম্পানির নিবন্ধন লাভ করে। গ্রামীণ ফোনে গ্রামীণ টেলিকমের ৩৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। ২০০৯ সালের ১১ নভেম্বর গ্রামীণ ফোন আইপিওতে আসে এবং গ্রামীণ ফোনের পাবলিক শেয়ার ১০ শতাংশ। বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী লভ্যাংশের ৫ শতাংশ শ্রমিক-কর্মচারীদের দেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও গ্রামীণ টেলিকম নিজেদের অলাভজনক দাবি করে শ্রমিক-কর্মচারীদের লভ্যাংশ দেয়নি। রেকর্ডপত্র যাচাই করে দেখা গেছে, শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে লভ্যাংশ বিতরণের কোন নিয়ম-নীতি নেই এবং এ রকম নিয়ম-নীতি প্রণয়নের কোন প্রয়োজনীয়তা পরিচালনা বোর্ড অনুভব করেনি।

মামলার এজাহারে বলা হয়, গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারীদের পাওনা লভ্যাংশ বিতরণের জন্য ২০২২ সালের ২৭ এপ্রিল গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন এবং গ্রামীণ টেলিকমের সঙ্গে সেটেলমেন্ট এগ্রিমেন্ট চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এরপর ২০২২ সালের ৯ মে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলামসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত ১০৮তম বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন ও গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির সঙ্গে সেটেলমেন্ট এগ্রিমেন্ট অনুযায়ী ডব্লিউপিপিএফের পাওনা পরিশোধে একটি ব্যাংক হিসাব খোলা হবে এবং ডব্লিউপিপিএফের পাওনা সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করা হবে। অথচ বোর্ডসভার একদিন আগেই ৮ মে ব্যাংক হিসাব খোলা হয়। ব্যাংক হিসাব খোলার আগেই সেটেলমেন্ট এগ্রিমেন্ট হয়েছে। এ কারণে ব্যাংক হিসাব নম্বরটি সেটেলমেন্ট এগ্রিমেন্টে থাকার কথা নয়। কিন্তু সেটেলমেন্ট এগ্রিমেন্টে ব্যাংক হিসাবটি উল্লেখ রয়েছে। অর্থাৎ উক্ত সেটেলমেন্ট এগ্রিমেন্টটি জাল/ভুয়া। গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ও বোর্ড সদস্যরা জেনেশুনে পরস্পর যোগসাজশ করে লাভবান হওয়ার অসৎ উদ্দেশ্যে জাল/ভুয়া সেটেলমেন্ট সঠিক হিসেবে ব্যবহার করে অর্থ আত্মসাৎ/আত্মসাতে সহযোগিতা করে দন্ডবিধি ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০২২ সালের ১০ মে গ্রামীণ টেলিকমের ইউসিবি ব্যাংকের মিরপুর শাখার হিসাব (নম্বর-০৫৬১৩০১০০০০০০০১০) থেকে গ্রামীণ টেলিকমের ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখার হিসাব (২১৫১৫০০০০২৫৬৮) নম্বরে ৪৩৭ কোটি ১ লাখ ১২ হাজার ৬২১ টাকা স্থানান্তর করা হয়। এরপর ২০২২ সালের ২৫ মে থেকে ১২ জুন পর্যন্ত ১৫৬ জন শ্রমিক-কর্মচারীকে বিভিন্ন চেকের মাধ্যমে ৩৬৪ কোটি ৬২ লাখ ৬১ হাজার ২৮২ টাকা বিতরণ করা হয়। এসব টাকা বিতরণের এক মাস আগে গ্রামীণ টেলিকমের ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখার হিসাব (২১৫১৫০০০০২৫৬৮) থেকে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীর নামে ডাচ বাংলা ব্যাংকের লোকাল অফিসের হিসাবে (১০১১১০০০৪৭১৭২) ২০২২ সালের ১৭ মে ১০ কোটি, ২৫ মে ১৪ কোটি ৫৮ লাখ ১৫ হাজার ৩৯১ টাকা এবং ৩০ মে ১ কোটি ৬৩ লাখ ৯১ হাজার ৩৮৯ টাকাসহ মোট ২৬ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৫৭ টাকা স্থানান্তর করা হয়। কোনরকম লিখিত ও মৌখিক সম্মতি ছাড়াই এসব অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে ডাচ বাংলা ব্যাংকের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করা হয়েছে। যা দন্ডবিধি ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০২২ সালের ২২ জুন প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গ্রামীণ টেলিকমের ১০৯তম বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের হিসাবে সুদ গণনায় ভুল হওয়ায় তাদের পাওনার পরিমাণ ৪৩৭ কোটি ১ লাখ ১২ হাজার ৬২১ টাকার স্থলে ৪০৯ কোটি ৬৯ লাখ ২২ হাজার ৭৮৯ টাকা হবে। এটি ২০১০ সাল থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত ১৬৪ জন শ্রমিক-কর্মচারীর পাওনা। সেটেলমেন্ট এগ্রিমেন্ট অনুযায়ী এ পরিমাণ টাকার ৬ শতাংশ অ্যাডভোকেট ফি হিসাবে ২৪ কোটি ৫৮ লাখ ১৫ হাজার ৩৬৭ টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও ২৬ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৫৭ টাকা পরিশোধ করা হয়। অর্থাৎ ১ কোটি ৬৩ লাখ ৯১ হাজার অতিরিক্ত পরিশোধ করা হয়। গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান প্রফেসর ইউনূসের নির্দেশে বেআইনিভাবে কর্মচারী না হওয়া সত্ত্বেও জাল/ভুয়া সেটেলমেন্ট এগ্রিমেন্টের ভিত্তিতে প্রতারণামূলকভাবে পরস্পর যোগসাজশ করে মামলা থেকে অব্যাহতি পাইয়ে দেয়ার নামে অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট ফি ১ কোটি ৬৩ লাখ ৯১ হাজার ৩৮৯ টাকা প্রদান করে, যা দন্ডবিধি ও মানিলন্ডারিং ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

ছবি

ভাঙছে সীমান্ত নদী ইছামতীর বেড়িবাঁধ : এলাকায় আতঙ্ক

শিথিল কারফিউতে খুলেছে দোকানপাট, চলছে গাড়ি, আতঙ্ক কাটছে না জনমনে

ঢাকাসহ ৪ জেলায় ৯ ঘণ্টা কারফিউ শিথিল

ছবি

ক্রেতা উপস্থিতি কম, বেচা-বিক্রি ‘ঠাণ্ডা’

বেরোবির উপাচার্যের বাসভবনে আক্রমণ-আগুন, যেভাবে উদ্ধার হলেন অবরুদ্ধ ২০ জন

ছবি

গুলিবিদ্ধ অনেকেই হারিয়েছেন পা

ঘটনার দশদিনেও গ্রেপ্তার হয়নি কেউ, উদ্ধার হয়নি লুট হওয়া ৭০ ভরি স্বর্ণের এক আনাও

সিলেটে সীমান্তকেন্দ্রিক চোরাচালান, ঘুরেফিরে তিনিই বিভিন্ন থানার ওসি

ছবি

অনেক পত্রিকায় খবর এলো, কিন্তু রুদ্র তো আর আসবে না

সহিংসতা-নাশকতার অভিযোগে ২০১ মামলা, গ্রেপ্তার ২২০৯

ছবি

কারফিউ শিথিলের সময় আরও ভিড়, যানজট

ছবি

রায়গঞ্জে অব্যবস্থাপনায় বন্ধের মুখে প্রাণিসম্পদ উপকেন্দ্রগুলো

এবার সারাদেশে পরীক্ষামূলক ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু

ছবি

নরসিংদী কারাগার থেকে পালানো ৩৩১ বন্দীর আত্মসমর্পণ

ছবি

ফুটেজ দেখে সেতু ভবনে আগুন-লুটপাটে জড়িতদের ধরা হচ্ছে : ডিবি

সোনারগাঁয়ে জ্বালাও পোড়াও ভাংচুর না হলেও নাশকতার মামলায় আসামি ৮ শতাধিক, গ্রেফতার অর্ধশত

সেন্টমার্টিনে ট্রলার ডুবিতে ছাত্রলীগ নেতা নিখোঁজ, কোস্টগার্ডের চৌকিতে হামলা

কক্সবাজারে ছাত্রলীগ নেতা মারধরের ঘটনায় আরও ১১ জন গ্রেফতার

ঢাকাসহ চার জেলায় আজ ও কাল ৭ ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল

ছবি

টাঙ্গাইলে কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, আহত অর্ধশতাধিক

ছবি

কোটা সংস্কার আন্দোলনে কুমিল্লায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, আহত ২০

ছবি

আবারও বেপরোয়া সার্ভেয়ার বাকের ও হাসান সিন্ডিকেট ঘুষ ছাড়া ফাইল নড়ে না কক্সবাজার এলএ শাখায়

ছবি

রামু থেকে অস্ত্র ও গুলি নিয়ে সন্ত্রাসী আটক

ছবি

কক্সবাজারে ক্ষমতাসীনদের হামলায় ৫ সংবাদকর্মী আহত

ছবি

নিখোঁজের দুই দিন পর পর্যটকের মরদেহ উদ্ধার

ছবি

টেকনাফ সমুদ্র উপকূলে পালিয়ে এলো ৫ রোহিঙ্গা

ছবি

টেকনাফগামী ট্রলারে মায়ানমারের গুলি

ছবি

কোটা আন্দোলন: রংপুরে সংঘর্ষ ও মৃত্যুর তদন্তে ৪ সদস্যের কমিটি গঠন

ছবি

শেখ হাসিনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্বে কুরুচিপূর্ন বক্তব্য দেওয়ায় গজারিয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিবাদ সভা

ছবি

নারীর প্রতি সকল প্রকার সহিংসতার প্রতিবাদে ও বিচারের দাবিতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের না’গঞ্জে মানববন্ধন

ছবি

কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত ওয়াসিমের দাফন সম্পন্ন

ছবি

রামুতে মাদকসেবী ভাইয়ের হাতে ভাই খুন

সারাদেশে স্কুল, কলেজ অনিদিষ্টকাল বন্ধ ঘোষণা

ছবি

কোটা সংস্কার আন্দোলন : কক্সবাজারে সংঘর্ষ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

ছবি

চীন বা ভারত নয়, নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবী

ছবি

মায়ানমারে চলছে বোমা হামলা সীমান্তে এতো কড়াকড়িতেও রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ

tab

সারাদেশ

শ্রমিক-কর্মচারীদের অর্থ আত্মসাৎ

ড. ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০২৩

নোবেল জয়ী ডক্টর মুহম্মদ ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মঙ্গলবার (৩০ মে) দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এ উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

গ্রাামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাড়াও যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম ও এস. এম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী। মামলায় আরও যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন, অ্যাডভোকেট মো. ইউসুফ আলী, অ্যাডভোকেট জাফরুল হাসান শরীফ, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান ও প্রতিনিধি মো. মাইনুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার পর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে দুদক মহাপরিচালক (প্রশাসন) রেজওয়ানুর রহমান বলেন, গ্রামীণ টেলিকমের ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ডের (ডব্লিউপিপিএফ) অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে দুদকের কাছে একটি অভিযোগ আসে। দুদক আইন ও বিধি অনুযায়ী অভিযোগটি অনুসন্ধান করে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যানসহ বোর্ড সদস্যদের বিরুদ্ধে অসৎ উদ্দেশ্যে অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ করে পরস্পর যোগসাজশে ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাৎ ও মানিলন্ডারিংয়ের সত্যতা পায়। এ কারণে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ আসামির বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ৪০৯, ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১ ও ১০৯ ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২-এর ৪(২)(৩) ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়।

অনুসন্ধানকালে ড. ইউনূসকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল কি না এমন প্রশ্নের জবাবে রেজওয়ানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা নিয়ম অনুযায়ী সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। এরপর কমিশনে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করেন। দুদক মামলার প্রধান আসামি প্রফেসর ইউনূসকে গ্রেপ্তার করবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলার তদন্তকালে প্রয়োজন মনে করলে তদন্ত কর্মকর্তা গ্রেপ্তার করতে পারেন। তাকে গ্রেপ্তার করা হবে কি না এটি তদন্ত কর্মকর্তা ঠিক করবেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে জমা হওয়া অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। অনুসন্ধানকালে দেখা গেছে ১৯৯৫ সালের ৪ অক্টোবর গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানি যৌথ মূলধন কোম্পানির নিবন্ধন লাভ করে। গ্রামীণ ফোনে গ্রামীণ টেলিকমের ৩৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। ২০০৯ সালের ১১ নভেম্বর গ্রামীণ ফোন আইপিওতে আসে এবং গ্রামীণ ফোনের পাবলিক শেয়ার ১০ শতাংশ। বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী লভ্যাংশের ৫ শতাংশ শ্রমিক-কর্মচারীদের দেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও গ্রামীণ টেলিকম নিজেদের অলাভজনক দাবি করে শ্রমিক-কর্মচারীদের লভ্যাংশ দেয়নি। রেকর্ডপত্র যাচাই করে দেখা গেছে, শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে লভ্যাংশ বিতরণের কোন নিয়ম-নীতি নেই এবং এ রকম নিয়ম-নীতি প্রণয়নের কোন প্রয়োজনীয়তা পরিচালনা বোর্ড অনুভব করেনি।

মামলার এজাহারে বলা হয়, গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারীদের পাওনা লভ্যাংশ বিতরণের জন্য ২০২২ সালের ২৭ এপ্রিল গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন এবং গ্রামীণ টেলিকমের সঙ্গে সেটেলমেন্ট এগ্রিমেন্ট চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এরপর ২০২২ সালের ৯ মে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলামসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত ১০৮তম বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন ও গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির সঙ্গে সেটেলমেন্ট এগ্রিমেন্ট অনুযায়ী ডব্লিউপিপিএফের পাওনা পরিশোধে একটি ব্যাংক হিসাব খোলা হবে এবং ডব্লিউপিপিএফের পাওনা সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করা হবে। অথচ বোর্ডসভার একদিন আগেই ৮ মে ব্যাংক হিসাব খোলা হয়। ব্যাংক হিসাব খোলার আগেই সেটেলমেন্ট এগ্রিমেন্ট হয়েছে। এ কারণে ব্যাংক হিসাব নম্বরটি সেটেলমেন্ট এগ্রিমেন্টে থাকার কথা নয়। কিন্তু সেটেলমেন্ট এগ্রিমেন্টে ব্যাংক হিসাবটি উল্লেখ রয়েছে। অর্থাৎ উক্ত সেটেলমেন্ট এগ্রিমেন্টটি জাল/ভুয়া। গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ও বোর্ড সদস্যরা জেনেশুনে পরস্পর যোগসাজশ করে লাভবান হওয়ার অসৎ উদ্দেশ্যে জাল/ভুয়া সেটেলমেন্ট সঠিক হিসেবে ব্যবহার করে অর্থ আত্মসাৎ/আত্মসাতে সহযোগিতা করে দন্ডবিধি ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০২২ সালের ১০ মে গ্রামীণ টেলিকমের ইউসিবি ব্যাংকের মিরপুর শাখার হিসাব (নম্বর-০৫৬১৩০১০০০০০০০১০) থেকে গ্রামীণ টেলিকমের ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখার হিসাব (২১৫১৫০০০০২৫৬৮) নম্বরে ৪৩৭ কোটি ১ লাখ ১২ হাজার ৬২১ টাকা স্থানান্তর করা হয়। এরপর ২০২২ সালের ২৫ মে থেকে ১২ জুন পর্যন্ত ১৫৬ জন শ্রমিক-কর্মচারীকে বিভিন্ন চেকের মাধ্যমে ৩৬৪ কোটি ৬২ লাখ ৬১ হাজার ২৮২ টাকা বিতরণ করা হয়। এসব টাকা বিতরণের এক মাস আগে গ্রামীণ টেলিকমের ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখার হিসাব (২১৫১৫০০০০২৫৬৮) থেকে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীর নামে ডাচ বাংলা ব্যাংকের লোকাল অফিসের হিসাবে (১০১১১০০০৪৭১৭২) ২০২২ সালের ১৭ মে ১০ কোটি, ২৫ মে ১৪ কোটি ৫৮ লাখ ১৫ হাজার ৩৯১ টাকা এবং ৩০ মে ১ কোটি ৬৩ লাখ ৯১ হাজার ৩৮৯ টাকাসহ মোট ২৬ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৫৭ টাকা স্থানান্তর করা হয়। কোনরকম লিখিত ও মৌখিক সম্মতি ছাড়াই এসব অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে ডাচ বাংলা ব্যাংকের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করা হয়েছে। যা দন্ডবিধি ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০২২ সালের ২২ জুন প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গ্রামীণ টেলিকমের ১০৯তম বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের হিসাবে সুদ গণনায় ভুল হওয়ায় তাদের পাওনার পরিমাণ ৪৩৭ কোটি ১ লাখ ১২ হাজার ৬২১ টাকার স্থলে ৪০৯ কোটি ৬৯ লাখ ২২ হাজার ৭৮৯ টাকা হবে। এটি ২০১০ সাল থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত ১৬৪ জন শ্রমিক-কর্মচারীর পাওনা। সেটেলমেন্ট এগ্রিমেন্ট অনুযায়ী এ পরিমাণ টাকার ৬ শতাংশ অ্যাডভোকেট ফি হিসাবে ২৪ কোটি ৫৮ লাখ ১৫ হাজার ৩৬৭ টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও ২৬ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৫৭ টাকা পরিশোধ করা হয়। অর্থাৎ ১ কোটি ৬৩ লাখ ৯১ হাজার অতিরিক্ত পরিশোধ করা হয়। গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান প্রফেসর ইউনূসের নির্দেশে বেআইনিভাবে কর্মচারী না হওয়া সত্ত্বেও জাল/ভুয়া সেটেলমেন্ট এগ্রিমেন্টের ভিত্তিতে প্রতারণামূলকভাবে পরস্পর যোগসাজশ করে মামলা থেকে অব্যাহতি পাইয়ে দেয়ার নামে অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট ফি ১ কোটি ৬৩ লাখ ৯১ হাজার ৩৮৯ টাকা প্রদান করে, যা দন্ডবিধি ও মানিলন্ডারিং ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

back to top