ঝোপঝাড়ে ছড়িয়ে পড়ে লাশ
সিলেট : ওসমানী হাসপাতাল মর্গের সামনে স্বজনের আহাজারি -সংবাদ
সিলেটের দক্ষিণ সুরমার সড়কে ট্রাক-পিকআপের সংঘর্ষে ঝরেছে ১৪ নির্মাণ শ্রমিকের প্রাণ। ঘটনা এমনই ছিল যে, দুর্ঘটনার পর লাশগুলো সড়কে, সড়কের পাশে ঝোপঝাড়ের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে ছিল। এমনটাই জানিয়েছেন, উদ্ধারকাজে নেতৃত্ব দেয়া ওসমানীনগরের ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ফখরুল ইসলাম।
বুধবার (৭ জুন) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের দক্ষিণ সুরমার নাজির বাজার এলাকার কুতুবপুর নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই ১১ জনের মৃত্যু হয়। হাসপাতালে নেয়ার পর মারা যান আরও ৩ জন। ঘটনার পরপরই নিহত ও আহতদের খোঁজখবর নিতে হাসপাতালে ছুটে যান সিলেট সফররত নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, সিলেট মহানগর থেকে পিকআপে করে প্রায় ৩০ জন নারী-পুরুষ নির্মাণ শ্রমিক জেলার ওসমানীনগর উপজেলার গোয়ালাবাজার যাচ্ছিলেন। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে দক্ষিণ সুরমার নাজির বাজার এলাকার কুতুবপুর নামক স্থানে পৌঁছলে মুন্সীগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী বালুবাহী ট্রাকের সঙ্গে শ্রমিক বহনকারী পিকআপের সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই ১১ জন মারা যান।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সিলেটের উপ-পরিচালক মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমরা খবর পেয়েই ঘটনাস্থলেই ছুটে আসি এবং সকাল ৭টা পর্যন্ত ১১ জনের মৃতদেহ ও অন্তত ১০ জন গুরুতর আহতকে উদ্ধার করে ওসমানী হাসপাতালে পাঠাই। এরপর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ৩ জনের মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন-সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার মো. সিজিল মিয়া (৫৫), একলিম মিয়া (৫৫), হারিছ মিয়া (৬৫), সৌরভ মিয়া (২৭), সাজেদুর (৬০), বাদশা মিয়া (৩০), সাধু মিয়া (৫০), রশিদ মিয়া (৫০) ও মেহের মিয়া (২৫); সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার শাহীন মিয়া (৪০), দুলাল মিয়া (২৬) ও আওলাদ হোসেন (৫০); হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের আমিনা বেগম (৪৫) এবং নেত্রকোনা বারহাট্টার আওলাদ মিয়া (৪০)। এতে আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১২ জন। হতাহতদের সকলেই নির্মাণশ্রমিক ছিলেন বলে জানা গেছে।
ওসমানীনগরের ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘লাশগুলো সড়কের পাশে, ঝোপের মধ্যে পড়ে ছিল। স্থানীয়দের সহযোগিতায় প্রথমে আহতদের উদ্ধার করে অ্যাম্বুলেন্সে হাসপাতালে নিয়ে আসি। এরপর একে একে লাশগুলো উদ্ধার করি।’
ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘এ রকম দুর্ঘটনা আগে দেখিনি। দুর্ঘটনাটি দেখে মনে হচ্ছে ট্রাকের চালক ঘুমিয়ে ছিলেন। যার জন্য এই দুর্ঘটনা। কারণ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সিলেটে আসা চালকেরা না ঘুমিয়ে ট্রাক চালিয়ে নিয়ে আসেন। এতে দুর্ঘটনার শঙ্কাও বেশি থাকে। আর এই দুর্ঘটনা দেখে মনে হচ্ছে বালুবাহী ট্রাকটি ছিল খুবই দ্রুতগামী।’
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে নির্মাণ শ্রমিকদের বহনকারী পিকআপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পিকআপ ও ট্রাক মূলত মালামাল পরিবহনের কাজে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সিলেট থেকে ওসমানীনগরে ঢালাই কাজে প্রায় ৩০ জন শ্রমিককে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তারা ছিলেন গাদাগাদি করে বসা। সেইসঙ্গে পিকআপে ছিল ঢালাই কাজের মিক্সার মেশিন, কোদাল, বেলচাসহ আরও অনেক যন্ত্রপাতি। মিক্সার মেশিনের ওপরও তিন-চারজন শ্রমিক বসা ছিলেন।’
এদিকে, সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের দেখতে হাসপাতালে ছুটে যান সিলেট সফররত নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। সকালে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে নেমেই তিনি সরাসরি চলে যান এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। প্রতিমন্ত্রী আহতদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন।
হতাহতদের সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা করা হবে বলে জানিয়েছেন নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে সরকার থাকবে। এ সময় তিনি সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
এছাড়া ভয়াবহ এই সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের দেখতে হাসপাতালে ছুটে যান সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীও। তিনি নিহত পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে অনুদান দেন। অনুদান দেয়া হয় জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকেও। জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান হাসপাতালে গিয়ে আহতদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন।
ওসমানী হাসপাতালে শোকের মাতম, স্বজনদের আহাজারি
সকাল পেরিয়ে দুপুর। সময় যত গড়ায় একে একে লোকজন জড়ো হতে শুরু করেন সিলেট এমএজি হাসপাতালের মর্গের সামনে। যারাই জড়ো হয়েছেন তাদের চোখেমুখে লেগে আছে কান্নার ছাপ। কেউবা বিলাপ করছেন আবার কেউবা কাঁদছেন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে। কারণ তাদের মধ্যে কেউ হারিয়েছেন বাবা, কেউ স্বামী আবার কেউবা হারিয়েছেন ভাই। আপনজন হারানোর বুকফাটা আর্তনাদে ভারী হয়ে ওঠে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চত্বর।
নিহতদের অধিকাংশের বাড়ি সুনামঞ্জের দিরাই ও শান্তিগঞ্জ উপজেলায়। এছাড়া একজন নেত্রকোনা ও আরেকজন সিলেটের বাসিন্দা।
দুর্ঘটনায় আহত ঠিকাদার শের ইসলাম বলেন, আমার বড় ভাই সায়েদ নুর (৬০) মারা গেছেন। আমি আছি অথচ আমার ভাই নাই। আর কোনদিন ভাইয়ের সঙ্গে কাজে যাওয়া হবে না। আমার ভাই এভাবে হারিয়ে যাবেন আমি কল্পনাই করিনি।
বাবাকে হারিয়ে বিলাপ করতে করতে দুর্ঘটনায় আহত মিজান বলেন, বাবাকে নিয়ে সকালে কাজের জন্য ওসমানীনগরের তাজপুর যাচ্ছিলাম। দুর্ঘটনায় আমাদের গাড়ির লোকজন ছিটকে গিয়ে ট্রাকের নিচে এবং রাস্তার ওপর পড়ে যান। ঘটনাস্থলে আমার বাবাসহ ১১ জন এবং হাসপাতালে আসার পর ২ জন মারা যান। কীভাবে কী হয়ে গেল তা বুঝতে পারিনি।
অভিভাবকতুল্য চাচাতো ভাইকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মর্তুজ আলী বলেন, ভাই আর নাই। আজ থেকে আমার আর কেউ আপন রইল না।
কান্না করতে করতে রাজিয়া বেগম বলছিলেন, আমার সব শেষ হয়ে গেল। এভাবে চলে যাবেন জানলে ভাইকে কাজে পাঠাতাম না।
এদিকে, নিহতদের মরদেহ বুধবার দুপুরে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। নিহতদের পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহগুলো হস্তান্তর করা হয় বলে জানান সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরুল হাসান।
ঝোপঝাড়ে ছড়িয়ে পড়ে লাশ
সিলেট : ওসমানী হাসপাতাল মর্গের সামনে স্বজনের আহাজারি -সংবাদ
বুধবার, ০৭ জুন ২০২৩
সিলেটের দক্ষিণ সুরমার সড়কে ট্রাক-পিকআপের সংঘর্ষে ঝরেছে ১৪ নির্মাণ শ্রমিকের প্রাণ। ঘটনা এমনই ছিল যে, দুর্ঘটনার পর লাশগুলো সড়কে, সড়কের পাশে ঝোপঝাড়ের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে ছিল। এমনটাই জানিয়েছেন, উদ্ধারকাজে নেতৃত্ব দেয়া ওসমানীনগরের ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ফখরুল ইসলাম।
বুধবার (৭ জুন) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের দক্ষিণ সুরমার নাজির বাজার এলাকার কুতুবপুর নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই ১১ জনের মৃত্যু হয়। হাসপাতালে নেয়ার পর মারা যান আরও ৩ জন। ঘটনার পরপরই নিহত ও আহতদের খোঁজখবর নিতে হাসপাতালে ছুটে যান সিলেট সফররত নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, সিলেট মহানগর থেকে পিকআপে করে প্রায় ৩০ জন নারী-পুরুষ নির্মাণ শ্রমিক জেলার ওসমানীনগর উপজেলার গোয়ালাবাজার যাচ্ছিলেন। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে দক্ষিণ সুরমার নাজির বাজার এলাকার কুতুবপুর নামক স্থানে পৌঁছলে মুন্সীগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী বালুবাহী ট্রাকের সঙ্গে শ্রমিক বহনকারী পিকআপের সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই ১১ জন মারা যান।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সিলেটের উপ-পরিচালক মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমরা খবর পেয়েই ঘটনাস্থলেই ছুটে আসি এবং সকাল ৭টা পর্যন্ত ১১ জনের মৃতদেহ ও অন্তত ১০ জন গুরুতর আহতকে উদ্ধার করে ওসমানী হাসপাতালে পাঠাই। এরপর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ৩ জনের মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন-সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার মো. সিজিল মিয়া (৫৫), একলিম মিয়া (৫৫), হারিছ মিয়া (৬৫), সৌরভ মিয়া (২৭), সাজেদুর (৬০), বাদশা মিয়া (৩০), সাধু মিয়া (৫০), রশিদ মিয়া (৫০) ও মেহের মিয়া (২৫); সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার শাহীন মিয়া (৪০), দুলাল মিয়া (২৬) ও আওলাদ হোসেন (৫০); হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের আমিনা বেগম (৪৫) এবং নেত্রকোনা বারহাট্টার আওলাদ মিয়া (৪০)। এতে আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১২ জন। হতাহতদের সকলেই নির্মাণশ্রমিক ছিলেন বলে জানা গেছে।
ওসমানীনগরের ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘লাশগুলো সড়কের পাশে, ঝোপের মধ্যে পড়ে ছিল। স্থানীয়দের সহযোগিতায় প্রথমে আহতদের উদ্ধার করে অ্যাম্বুলেন্সে হাসপাতালে নিয়ে আসি। এরপর একে একে লাশগুলো উদ্ধার করি।’
ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘এ রকম দুর্ঘটনা আগে দেখিনি। দুর্ঘটনাটি দেখে মনে হচ্ছে ট্রাকের চালক ঘুমিয়ে ছিলেন। যার জন্য এই দুর্ঘটনা। কারণ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সিলেটে আসা চালকেরা না ঘুমিয়ে ট্রাক চালিয়ে নিয়ে আসেন। এতে দুর্ঘটনার শঙ্কাও বেশি থাকে। আর এই দুর্ঘটনা দেখে মনে হচ্ছে বালুবাহী ট্রাকটি ছিল খুবই দ্রুতগামী।’
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে নির্মাণ শ্রমিকদের বহনকারী পিকআপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পিকআপ ও ট্রাক মূলত মালামাল পরিবহনের কাজে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সিলেট থেকে ওসমানীনগরে ঢালাই কাজে প্রায় ৩০ জন শ্রমিককে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তারা ছিলেন গাদাগাদি করে বসা। সেইসঙ্গে পিকআপে ছিল ঢালাই কাজের মিক্সার মেশিন, কোদাল, বেলচাসহ আরও অনেক যন্ত্রপাতি। মিক্সার মেশিনের ওপরও তিন-চারজন শ্রমিক বসা ছিলেন।’
এদিকে, সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের দেখতে হাসপাতালে ছুটে যান সিলেট সফররত নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। সকালে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে নেমেই তিনি সরাসরি চলে যান এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। প্রতিমন্ত্রী আহতদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন।
হতাহতদের সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা করা হবে বলে জানিয়েছেন নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে সরকার থাকবে। এ সময় তিনি সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
এছাড়া ভয়াবহ এই সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের দেখতে হাসপাতালে ছুটে যান সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীও। তিনি নিহত পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে অনুদান দেন। অনুদান দেয়া হয় জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকেও। জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান হাসপাতালে গিয়ে আহতদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন।
ওসমানী হাসপাতালে শোকের মাতম, স্বজনদের আহাজারি
সকাল পেরিয়ে দুপুর। সময় যত গড়ায় একে একে লোকজন জড়ো হতে শুরু করেন সিলেট এমএজি হাসপাতালের মর্গের সামনে। যারাই জড়ো হয়েছেন তাদের চোখেমুখে লেগে আছে কান্নার ছাপ। কেউবা বিলাপ করছেন আবার কেউবা কাঁদছেন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে। কারণ তাদের মধ্যে কেউ হারিয়েছেন বাবা, কেউ স্বামী আবার কেউবা হারিয়েছেন ভাই। আপনজন হারানোর বুকফাটা আর্তনাদে ভারী হয়ে ওঠে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চত্বর।
নিহতদের অধিকাংশের বাড়ি সুনামঞ্জের দিরাই ও শান্তিগঞ্জ উপজেলায়। এছাড়া একজন নেত্রকোনা ও আরেকজন সিলেটের বাসিন্দা।
দুর্ঘটনায় আহত ঠিকাদার শের ইসলাম বলেন, আমার বড় ভাই সায়েদ নুর (৬০) মারা গেছেন। আমি আছি অথচ আমার ভাই নাই। আর কোনদিন ভাইয়ের সঙ্গে কাজে যাওয়া হবে না। আমার ভাই এভাবে হারিয়ে যাবেন আমি কল্পনাই করিনি।
বাবাকে হারিয়ে বিলাপ করতে করতে দুর্ঘটনায় আহত মিজান বলেন, বাবাকে নিয়ে সকালে কাজের জন্য ওসমানীনগরের তাজপুর যাচ্ছিলাম। দুর্ঘটনায় আমাদের গাড়ির লোকজন ছিটকে গিয়ে ট্রাকের নিচে এবং রাস্তার ওপর পড়ে যান। ঘটনাস্থলে আমার বাবাসহ ১১ জন এবং হাসপাতালে আসার পর ২ জন মারা যান। কীভাবে কী হয়ে গেল তা বুঝতে পারিনি।
অভিভাবকতুল্য চাচাতো ভাইকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মর্তুজ আলী বলেন, ভাই আর নাই। আজ থেকে আমার আর কেউ আপন রইল না।
কান্না করতে করতে রাজিয়া বেগম বলছিলেন, আমার সব শেষ হয়ে গেল। এভাবে চলে যাবেন জানলে ভাইকে কাজে পাঠাতাম না।
এদিকে, নিহতদের মরদেহ বুধবার দুপুরে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। নিহতদের পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহগুলো হস্তান্তর করা হয় বলে জানান সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরুল হাসান।