অকার্যকর বর্জ্যব্যবস্থাপনার কারণে এলডব্লিউজি থেকে স্বীকৃতি পাচ্ছে না এই দেশের ট্যানারিশিল্প। বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের লেদার সেক্টর বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল (এলএসবিপিসি) যৌথভাবে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ। অনুষ্ঠানে দেশে এলডব্লিউজি সনদ পাওয়া তিনটি ট্যানারিকে সম্মাননা দেয়া হয়।
শিল্পনগরীর কোনো প্রতিষ্ঠান ট্যানারিশিল্পের মানসনদ প্রদানকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ (এলডব্লিউজি) থেকে স্বীকৃতি পাচ্ছে না। দেশের বেশিরভাগ ট্যানারি প্রতিষ্ঠানই সাভারের চামড়াশিল্প নগরীতে অবস্থিত। তবে শিল্পনগরীর কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার (সিইটিপি) কার্যকর নেই। কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও ঠিকভাবে হচ্ছে না। গত সোমবার রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে বাংলাদেশের ট্যানারিশিল্পে এলডব্লিউজি অর্জনে করণীয় শীর্ষক এক কর্মশালায় এসব কথা বলেন বক্তারা। তবে একই সঙ্গে ট্যানারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এলডব্লিউজি অর্জনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন অতিথিরা।
বিটিএ চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী, বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিলের সমন্বয়কারী মো. আবদুর রহিম খান, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাজমুল হাসান, বিটিএর সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ প্রমুখ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক নূর মুহাম্মদ।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘চামড়া খাতে বড় সম্ভাবনার জায়গা হচ্ছে, এর কাঁচামাল দেশেই পাওয়া যায়। দেশের এই সম্পদ নষ্ট হলে তা আমাদের জন্য বড় ব্যর্থতা হবে। তৈরি পোশাক খাতে কোনো দেশীয় কাঁচামাল না থাকলেও অনেক বড় বিনিয়োগ এসেছে। চামড়া খাতেও এ ধরনের বড় বিনিয়োগ খুঁজতে হবে।’
এফবিসিসিআই সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী বলেন, ‘গত ১৫ বছরে দেশের অনেক খাতের উন্নয়ন হয়েছে। তবে ট্যানারিশিল্প খাতে সেই তুলনায় তেমন উন্নয়ন হয়নি। এ নিয়ে আর কালক্ষেপণের সময় নেই।’
বিটিএর চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ বলেন, ‘এলডব্লিউজি পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় অকার্যকর সিইটিপি ও কঠিন বর্জ্যব্যবস্থাপনার দুর্বলতা। সিইটিপি ঠিক হলে আগামী ছয় মাসের মধ্যে সাভারের ৫-১০টি ট্যানারি এলডব্লিউজি সনদ পেতে পারে।’
এলএফএমইএবির জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাজমুল হাসান বলেন, ‘আগে দেশীয় ট্যানারিতে উৎপাদিত চামড়া দিয়ে বানানো পণ্য ইউরোপের বাজারে উচ্চ দামে বিক্রি হতো। কিন্তু এখন হেমায়েতপুরের ট্যানারির চামড়া হলে ক্রেতারা পণ্য নিতে চান না।’
মূল প্রবন্ধে নূর মুহাম্মদ বলেন, ‘গত ২৫ বছরের ব্যবধানে দেশে গরুর মূল্য ৭০০ শতাংশ বেড়েছে। যেখানে কাঁচা চামড়ার দাম কমেছে ৭৫ শতাংশ। আমরা বিশ্ববাজারে উপযুক্ত দামে চামড়া বিক্রি করতে পারছি না। এর কারণ, সাভারের চামড়াশিল্প নগরীতে বর্জ্যব্যবস্থাপনার দুর্বলতা।’
মুক্ত আলোচনায় লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের নিরীক্ষক আফজাল হোসেন বলেন, ‘এলডব্লিউজি সনদ পেতে হলে সিইটিপি ঠিক করার পাশাপাশি ট্যানারিগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে ট্যানারি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রি-ট্রিটমেন্ট ব্যবস্থা চালু ও পানির পরিমিত ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন।’
ঢাকা ট্যানারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট বর্জ্য শোধনাগার কোম্পানির (ডিটিআইইডব্লিউটিপিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম শাহনেওয়াজ বলেন, ‘সিইটিপি তো চালু রয়েছে। কিন্তু এর কার্যক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কার্যক্ষমতা চাইলেই বাড়ানো যাবে না।’ এজন্য ট্যানারিগুলো থেকে সহযোগিতা চান তিনি।
পোস্তার কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আফতাব খান বলেন, ‘দেশে উৎপাদিত কাঁচা চামড়ার বেশিরভাগই কেনে সাভারের ট্যানারিগুলো। ফলে এসব ট্যানারি এলডব্লিউজি পেলে কাঁচা চামড়ার মূল্যও বৃদ্ধি পাবে।’
দেশে এখন পর্যন্ত পাঁচটি প্রতিষ্ঠান এলডব্লিউজি সনদ পেয়েছে। এর মধ্যে সনদ পাওয়া সর্বশেষ তিনটি প্রতিষ্ঠানকে অনুষ্ঠানে সম্মাননা দেয়া হয়। প্রতিষ্ঠান তিনটি হচ্ছে যশোরের এসএএফ ইন্ডাস্ট্রিজ, খুলনার সুপারেক্স লেদার ও সাভারের জিরাব এলাকায় অবস্থিত এবিসি লেদার। সম্মাননা পেয়ে সুপারেক্স লেদারের নির্বাহী পরিচালক মো. মাসুম মিয়া বলেন, ‘এলডব্লিউজি পাওয়ার পর সত্যিকার অর্থেই আমাদের ব্যবসায়িক লাভ হচ্ছে।’
মঙ্গলবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩
অকার্যকর বর্জ্যব্যবস্থাপনার কারণে এলডব্লিউজি থেকে স্বীকৃতি পাচ্ছে না এই দেশের ট্যানারিশিল্প। বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের লেদার সেক্টর বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল (এলএসবিপিসি) যৌথভাবে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ। অনুষ্ঠানে দেশে এলডব্লিউজি সনদ পাওয়া তিনটি ট্যানারিকে সম্মাননা দেয়া হয়।
শিল্পনগরীর কোনো প্রতিষ্ঠান ট্যানারিশিল্পের মানসনদ প্রদানকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ (এলডব্লিউজি) থেকে স্বীকৃতি পাচ্ছে না। দেশের বেশিরভাগ ট্যানারি প্রতিষ্ঠানই সাভারের চামড়াশিল্প নগরীতে অবস্থিত। তবে শিল্পনগরীর কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার (সিইটিপি) কার্যকর নেই। কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও ঠিকভাবে হচ্ছে না। গত সোমবার রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে বাংলাদেশের ট্যানারিশিল্পে এলডব্লিউজি অর্জনে করণীয় শীর্ষক এক কর্মশালায় এসব কথা বলেন বক্তারা। তবে একই সঙ্গে ট্যানারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এলডব্লিউজি অর্জনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন অতিথিরা।
বিটিএ চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী, বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিলের সমন্বয়কারী মো. আবদুর রহিম খান, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাজমুল হাসান, বিটিএর সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ প্রমুখ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক নূর মুহাম্মদ।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘চামড়া খাতে বড় সম্ভাবনার জায়গা হচ্ছে, এর কাঁচামাল দেশেই পাওয়া যায়। দেশের এই সম্পদ নষ্ট হলে তা আমাদের জন্য বড় ব্যর্থতা হবে। তৈরি পোশাক খাতে কোনো দেশীয় কাঁচামাল না থাকলেও অনেক বড় বিনিয়োগ এসেছে। চামড়া খাতেও এ ধরনের বড় বিনিয়োগ খুঁজতে হবে।’
এফবিসিসিআই সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী বলেন, ‘গত ১৫ বছরে দেশের অনেক খাতের উন্নয়ন হয়েছে। তবে ট্যানারিশিল্প খাতে সেই তুলনায় তেমন উন্নয়ন হয়নি। এ নিয়ে আর কালক্ষেপণের সময় নেই।’
বিটিএর চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ বলেন, ‘এলডব্লিউজি পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় অকার্যকর সিইটিপি ও কঠিন বর্জ্যব্যবস্থাপনার দুর্বলতা। সিইটিপি ঠিক হলে আগামী ছয় মাসের মধ্যে সাভারের ৫-১০টি ট্যানারি এলডব্লিউজি সনদ পেতে পারে।’
এলএফএমইএবির জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাজমুল হাসান বলেন, ‘আগে দেশীয় ট্যানারিতে উৎপাদিত চামড়া দিয়ে বানানো পণ্য ইউরোপের বাজারে উচ্চ দামে বিক্রি হতো। কিন্তু এখন হেমায়েতপুরের ট্যানারির চামড়া হলে ক্রেতারা পণ্য নিতে চান না।’
মূল প্রবন্ধে নূর মুহাম্মদ বলেন, ‘গত ২৫ বছরের ব্যবধানে দেশে গরুর মূল্য ৭০০ শতাংশ বেড়েছে। যেখানে কাঁচা চামড়ার দাম কমেছে ৭৫ শতাংশ। আমরা বিশ্ববাজারে উপযুক্ত দামে চামড়া বিক্রি করতে পারছি না। এর কারণ, সাভারের চামড়াশিল্প নগরীতে বর্জ্যব্যবস্থাপনার দুর্বলতা।’
মুক্ত আলোচনায় লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের নিরীক্ষক আফজাল হোসেন বলেন, ‘এলডব্লিউজি সনদ পেতে হলে সিইটিপি ঠিক করার পাশাপাশি ট্যানারিগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে ট্যানারি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রি-ট্রিটমেন্ট ব্যবস্থা চালু ও পানির পরিমিত ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন।’
ঢাকা ট্যানারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট বর্জ্য শোধনাগার কোম্পানির (ডিটিআইইডব্লিউটিপিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম শাহনেওয়াজ বলেন, ‘সিইটিপি তো চালু রয়েছে। কিন্তু এর কার্যক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কার্যক্ষমতা চাইলেই বাড়ানো যাবে না।’ এজন্য ট্যানারিগুলো থেকে সহযোগিতা চান তিনি।
পোস্তার কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আফতাব খান বলেন, ‘দেশে উৎপাদিত কাঁচা চামড়ার বেশিরভাগই কেনে সাভারের ট্যানারিগুলো। ফলে এসব ট্যানারি এলডব্লিউজি পেলে কাঁচা চামড়ার মূল্যও বৃদ্ধি পাবে।’
দেশে এখন পর্যন্ত পাঁচটি প্রতিষ্ঠান এলডব্লিউজি সনদ পেয়েছে। এর মধ্যে সনদ পাওয়া সর্বশেষ তিনটি প্রতিষ্ঠানকে অনুষ্ঠানে সম্মাননা দেয়া হয়। প্রতিষ্ঠান তিনটি হচ্ছে যশোরের এসএএফ ইন্ডাস্ট্রিজ, খুলনার সুপারেক্স লেদার ও সাভারের জিরাব এলাকায় অবস্থিত এবিসি লেদার। সম্মাননা পেয়ে সুপারেক্স লেদারের নির্বাহী পরিচালক মো. মাসুম মিয়া বলেন, ‘এলডব্লিউজি পাওয়ার পর সত্যিকার অর্থেই আমাদের ব্যবসায়িক লাভ হচ্ছে।’