alt

অর্থ-বাণিজ্য

টেসলাকে ছাড়িয়ে চীনের বিওয়াইডি কেন বিশ্ববাজার মাত করছে

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩

বিদ্যুৎ–চালিত গাড়ির ক্ষেত্রে বিশ্বে সবচেয়ে পরিচিত নাম টেসলা, তবে তাদের চীনা এক প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছে। এটি বিওয়াইডি বা ‘বিল্ড ইওর ড্রিম’। উৎপাদনের প্রান্তিক ভিত্তিতে হিসাব করলে, এটি ইতিমধ্যেই টেসলাকে ছাড়িয়ে গেছে। আর বিশ্বজুড়ে এ ধরনের গাড়ি বিক্রির ক্ষেত্রে তাদের অবস্থান দ্বিতীয়। তবে বিওয়াইডির মূল সাফল্য অন্য জায়গায়—এটি দেখাচ্ছে চীনা গাড়িশিল্প কতটা এগিয়েছে।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাড়ি রপ্তানিতে চীন এরই মধ্যে জাপানকে ছাড়িয়ে গেছে। অর্থাৎ এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় গাড়ি রপ্তানিকারক দেশ চীন। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির এই দেশ এখন নানা সমস্যায় জর্জরিত। তবে গাড়িশিল্পই এখন তাদের সবচেয়ে উজ্জ্বল দিক।

তবে অনুজ্জ্বল একটি দিকও আছে, আর তাহলো যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সঙ্গে বেইজিংয়ের চলমান উত্তেজনা। চীনের বিদ্যুৎ–চালিত গাড়ি বা ইলেকট্রিক ভেহিকেলের সবচেয়ে বড় বাজার এসব দেশই। তবে বিশ্ব যেহেতু আধুনিক ও পরিবেশসম্মত প্রযুক্তির দিকে যাচ্ছে, তাই এটাও ঠিক যে চীনা পণ্য থেকে সরে যাওয়াও পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য খুব সহজ হবে না।

বিওয়াইডির স্বপ্নের বাস্তবায়ন

বিদ্যুৎ–চালিত গাড়ির বেশির ভাগ এসেছে প্রচলিত কোম্পানির হাত ধরে। তারা আগেই গাড়ি বানাত, পরে ইলেকট্রিক গাড়ি বানাতে শুরু করে। বিওয়াইডির বিষয়টি ভিন্ন। তারা আগে ব্যাটারি বানাত, পরে গাড়ি বানাতে শুরু করে। সুতরাং শুরু থেকেই তাদের একটি সুবিধাজনক অবস্থান ছিল।

কোম্পানির প্রধান নির্বাহী ওয়াং চুয়ানফু ১৯৬৬ সালে চীনের সবচেয়ে গরিব প্রদেশের একটিতে কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। কিশোর বয়সে তিনি এতিম হন। তাঁকে বড় করেন এক ভাই ও বোন। আজ তিনি ১ হাজার ৮৭০ কোটি ডলার মূল্যের সম্পদের মালিক। ১৯৯৫ সালে তিনি এক ভাইকে নিয়ে শেনজেনে বিওয়াইডি প্রতিষ্ঠা করেন।

বিওয়াইডি তখন এমন ব্যাটারি বানাত, যা রিচার্জ করা যায়। জাপানো বানানো ব্যাটারির চেয়ে সস্তায় তারা পণ্য দিতেন। ২০০২ সালে এটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এরপর তারা কিনে নেয় ধুকতে থাকা রাষ্ট্রমালিকানার কিনচুয়ান অটোমোবাইল কোম্পানিকে। আর এর মাধ্যমে তারা তাদের ব্যবসা অন্য খাতে সম্প্রসারণ করে।

ইলেকট্রিক ভেহিকেল বা ইভি তখনো একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে, তবে বেইজিংয়ের কর্মকর্তারা সুযোগ খুঁজছিলেন কীভাবে শূন্যস্থান পূরণ করা যায়। ২০০০-এর দশকের গোড়ার দিকে সরকার এ খাতে ভর্তুকি ও কর সুবিধা দেয়। ওই সময়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে সরকার অগ্রাধিকার দেওয়া শুরু করে।

বিওয়াইডির জন্য এটা ছিল একবারে মোক্ষম সময়। যে ব্যাটারি তারা তৈরি করছিল, সেই ব্যাটারিই এবার ব্যবহার হবে ইভির জন্য। ২০০৮ সালে মার্কিন বিলিয়নিয়ার বিনিয়োগকারী ওয়ারেন বাফেট বিওয়াইডির ১০ শতাংশ শেয়ার কেনেন। তখন তিনি বলেছিলেন, অবশ্যম্ভাবীভাবে বৈশ্বিক বাজারে ইলেকট্রিক গাড়ি প্রাধান্য বিস্তার করবে এবং একদিন বিওয়াইডি হবে সেই বাজারের ‘সবচেয়ে বড় খেলোয়াড়’।

তাঁর আন্দাজ একেবারে ঠিকঠাক ছিল। আজ চীন যে বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে, তার অন্যতম কারণ বিওয়াইডি। বেইজিং এই অবস্থান ধরে রাখতে চায়। গত জুনে তারা ইভি খাতে আগামী ৪ বছরের জন্য ৭ হাজার ২৩০ কোটি ডলারের কর অব্যাহতির প্রস্তাব করেছে। গাড়ির বিক্রি যখন ধীর হয়ে পড়েছিল, তখন এই বিশাল সুবিধা দেওয়া হয়।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিওয়াইডির এই বেড়ে ওঠার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান তাদের পুরোনো ব্যবসা—ব্যাটারি তৈরি। বৈদ্যুতিক গাড়ি বানাতে বেশি খরচ হয় ব্যাটারির পেছনেই। তাই কোনো কোম্পানি যদি নিজেরাই তা বানাতে পারে, তাহলে খরচ অনেক বাঁচে। টেসলার মতো প্রতিযোগীরা তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ব্যাটারি তৈরি করে।

বিওয়াইডির কম দামের গাড়ি বিক্রি হয় ১১ হাজার ডলারে। অন্যদিকে, চীনে টেসলার মডেল ৩ সেডান গাড়ির দামই শুরু হয় ৩৬ হাজার ডলার থেকে। ইভি বাজারের বাইরেও বিওয়াইডি সফল। জার্মানির ফক্সওয়াগন এত দিন ছিল চীনে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া গাড়ি। বিওয়াইডি এ বছরের শুরুতে তাদেরকেও স্থানচ্যুত করেছে।

বিওয়াইডি বনাম টেসলা

ইলন মাস্ককে ২০১১ সালে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বিওয়াইডি ও চীনা প্রতিযোগীদের সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল। চীনাদের বিষয়টি তিনি হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। সেই সময় টেসলা ছিল ছোট একটি কোম্পানি, যারা তাদের ভবিষ্যৎ গাড়ি মডেল এস-এর একটি প্রোটোটাইপ বা প্রতিরূপ মাত্র জনসমক্ষে নিয়ে এসেছে।

আজ ইলন মাস্ক সম্ভবত তাঁর সেই জবাবের জন্য অনুতাপ করছেন। টেসলা সেপ্টেম্বরে চীনে তৈরি ৭৪ হাজার ৭৩টি ইভি বিক্রি করেছে। আগের বছরের তুলনায় তা প্রায় ১১ শতাংশ কম। অন্যদিকে, একই সময়ে বিওয়াইডির বিক্রি সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৮৬ হাজার ৯০৩। ইভি ও হাইব্রিড মডেলের ক্ষেত্রে এই প্রবৃদ্ধি ৪৩ শতাংশ।

সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, চীনে ইলেকট্রিক গাড়ির জনপ্রিয়তা যদি কেউ বাড়িয়ে থাকে, সেটি টেসলা। পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য দেওয়া সুবিধা দেওয়া হলেও টেসলা না আসা পর্যন্ত চীনে ইভি বিক্রি বাড়েনি। এমনকি এখনো টেসলা একটি জনপ্রিয় ব্র্যান্ড, বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে, এ কথা জানিয়েছেন কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের গাড়িবিষয়ক বিশ্লেষক ইভান ল্যাম।

পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি গাড়ি বিক্রি হয় চীনে। কিন্তু আরও বেশি পরিমাণ ইলেকট্রিক গাড়ি দেশে আনার জন্য তারা নিয়মেও পরিবর্তন আনে। সম্পূর্ণ বিদেশি মালিকানায় গাড়ির কারখানা বা বিক্রয়কেন্দ্র খোলার অনুমতি দেয় বেইজিং। এর আগে কারখানা খুলতে জেনারেল মোটরস কিংবা টয়োটার মতো কোম্পানিকে স্থানীয় অংশীদার খুঁজতে হয়েছে।

নিয়মে পরিবর্তন আসার পরই সুযোগ কাজে লাগায় টেসলা। এমনকি এখনো তারাই চীনে তৈরি বিদ্যুৎ–চালিত গাড়ির সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক ও চীনে এ ধরনের গাড়ির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিক্রেতা। ইলন মাস্ক চীনে আরও অনেক কিছু করতে চান। তবে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে বৈরিতা শুরু হওয়ার পর তিনি এখন ভারতের দিকেও দৃষ্টি ফিরিয়েছেন।

ইলন মাস্ক বলেছেন, ‘মানুষের পক্ষে যত দ্রুত সম্ভব, তত দ্রুত’। তিনি টেসলাকে ভারতে নিয়ে যেতে চান।

দৌড়ে চীনা ইভি কতটা এগিয়ে

গতানুগতিক গাড়ি নির্মাতাদের জন্য রাস্তা দ্রুত সরু হয়ে যাচ্ছে। জীবাশ্মজ্বালানি–নির্ভর এই প্রযুক্তি ২০৩০ সালে বড় পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে যাবে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় যেসব সুবিধা দেওয়া হচ্ছে, সেসব কারণেই বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার বাড়ছে, তবে ইউরোপ ও ব্রিটেনের গাড়ি নির্মাতারা প্রতিযোগিতা করে পারছে না। চীনের ব্যাপারে যেভাবে ইউরোপীয় দেশগুলো সতর্ক হয়ে উঠছে, তাতে এসব দেশে চীনা গাড়ি আমদানি করা কঠিন করতে আরও বেশি নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।

ইউরোপীয় কমিশন চীন থেকে আমদানি করা সস্তার গাড়ি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। এই তদন্তের উদ্দেশ্য হলো, এটা দেখা যে স্থানীয় বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদকদের সুরক্ষা দিতে চীনা গাড়িতে শুল্ক বাড়ানো দরকার কি না। ইউরোপীয় কমিশন মনে করে, বেইজিংয়ের দেওয়া ভর্তুকির কারণে চীনা গাড়ি বিশেষ সুবিধা পাচ্ছে।

কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেয়েন বলেছেন, চীনের ‘অন্যায্য বাণিজ্য রীতি’ থেকে ইউরোপের সৌরবিদ্যুৎশিল্প কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভুলে যায়নি, তবে বাস্তবতা ভিন্ন। জার্মানির মতো দেশ উঁচু মূল্যস্ফীতি ও জ্বালানি খরচের কারণে সমস্যায় রয়েছে। সে কারণে বিওয়াইডির সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব গাড়ি সেখানে ব্যাপক সংখ্যায় বিক্রি হচ্ছে। মার্সিডিস-বেঞ্জ, বিএমডব্লিউ আর ফক্সওয়াগনের দেশটি বিদ্যুৎ–চালিত গাড়ির বৈশ্বিক চাহিদা পূরণ করতে হিমশিম খাচ্ছে। সে কারণে সেপ্টেম্বরের মিউনিখ গাড়ির প্রদর্শনীতে চীনা ইভি ছিল আলোচনার কেন্দ্রে।

অটোমবিলিটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী বিল রুসো বলেন, চাহিদার বিষয়টি বিশ্বের সব জায়গায় নির্ভর করে সামর্থ্যের ওপর। এটা সর্বজনীন ব্যাপার। তাঁর মতে, পৃথিবীর একটি দেশই দুনিয়াকে এই সুবিধা দিতে পারে, সেই দেশটি হলো চীন।

ছবি

বাংলাদেশে ওয়ানপ্লাস-এর প্রথম ফ্ল্যাগশিপ স্টোর উদ্বোধন

ছবি

পুষ্টিগ্রাম: বাড়ির আঙিনায় নিরাপদ সবজি চাষে ভাগ্যবদল

ছবি

বাজারে চাঁদাবাজি করলে ডিসিদের ব্যবস্থা নিতে বলেছি : অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

চলতি বছরে সোনার দাম বেড়েছে ২১ শতাংশ, কেনা বন্ধ রেখেছে চীন

ফের ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামছে রিজার্ভ

‘আশা সবাই দেখায়, আসলে আমরা বলির পাঁঠা’,‘চারিদিকের অবস্থা খারাপ’

ছবি

বেক্সিমকো গ্রুপের সম্পদ দেখভালে রিসিভার নিয়োগে উচ্চ আদালতের রুল

ছবি

বন্যা ও অচলাবস্থার কারণে পণ্যবাজারে স্বস্তি দিতে শুল্ক ছাড়

ছবি

ইসলামী ব্যাংকের ঋণের অর্ধেকের বেশি নিয়েছে এস আলম

ছবি

শেয়ারবাজারে ইতিহাস, ৪১০০ শতাংশ লভ্যাংশ দেবে লিন্ডে বিডি

ব্যাংক খাতের পরিস্থিতি: আমানতকারীদের স্বার্থে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক

ছবি

ঋণ খেলাপি নিয়ন্ত্রণে তিনটি টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত

ছবি

বড় ঋণ খেলাপিদের সম্পদ বিক্রির মাধ্যমে ঋণ আদায়ে উদ্যোগ: বাংলাদেশ ব্যাংক

ছবি

পোশাক কারখানা খুলে দিতে বিজিএমইএ’র সিদ্ধান্ত, যৌথ অভিযান শুরু

ছবি

স্পট মার্কেট থেকে ২০ কার্গো এলএনজি আমদানির অনুমোদন

ছবি

রেজার ক্যাপিটালের ‘সিরিজ এ’ বিনিয়োগ পেল আইফার্মার

ছবি

বিকাশে আইডিএলসি লোনের কিস্তি পরিশোধের সুযোগ

ছবি

সরানো হল সালমান এফ রহমানকে, আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মেহমুদ হোসেন

ছবি

সূচকের ওঠানামায় পুঁজিবাজারে লেনদেন চলছে

ছয় মাসে খেলাপি ঋণ বাড়লো ৬৬ হাজার কোটি টাকা

ছবি

এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা আল আরাফাহ ও কমার্স ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন

ছবি

ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ রেকর্ড পরিমাণে, জুন শেষে ছাড়িয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার কোটি

ছবি

পর্ষদ পুনর্গঠন করা ব্যাংকের সংকট নিয়ে বসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

ছবি

বিএসইসির কমিশনার হলেন ফারজানা লালারুখ

ছবি

ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে গুঁড়া দুধ ছাড়া সব পণ্য আমদানির অনুমতি

ছবি

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন, নিয়োগ পেলেন সাত স্বতন্ত্র পরিচালক

ছবি

সূচকের উত্থানে পুঁজিবাজারে চলছে লেনদেন

ছবি

এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে সিআইডির অনুসন্ধান

ছবি

সেপ্টেম্বরে জ্বালানি তেলের দাম কমালো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার

ছবি

এক্সিম ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম স্বপন

ছবি

ডিমের দাম বেড়েছে, কমেছে সবজির

ছবি

বাজারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন স্যামসাংয়ের নতুন রেফ্রিজারেটর

ছবি

দেশের বেকারত্বের হার বৃদ্ধি: বিবিএসের জরিপ

ছবি

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিট মুনাফা ১৫,১০০ কোটি টাকা

ছবি

এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত সচিব আকিজ উদ্দিনের ব্যাংক হিসাব জব্দ

ছবি

সালমান এফ রহমান ও পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ

tab

অর্থ-বাণিজ্য

টেসলাকে ছাড়িয়ে চীনের বিওয়াইডি কেন বিশ্ববাজার মাত করছে

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩

বিদ্যুৎ–চালিত গাড়ির ক্ষেত্রে বিশ্বে সবচেয়ে পরিচিত নাম টেসলা, তবে তাদের চীনা এক প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছে। এটি বিওয়াইডি বা ‘বিল্ড ইওর ড্রিম’। উৎপাদনের প্রান্তিক ভিত্তিতে হিসাব করলে, এটি ইতিমধ্যেই টেসলাকে ছাড়িয়ে গেছে। আর বিশ্বজুড়ে এ ধরনের গাড়ি বিক্রির ক্ষেত্রে তাদের অবস্থান দ্বিতীয়। তবে বিওয়াইডির মূল সাফল্য অন্য জায়গায়—এটি দেখাচ্ছে চীনা গাড়িশিল্প কতটা এগিয়েছে।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাড়ি রপ্তানিতে চীন এরই মধ্যে জাপানকে ছাড়িয়ে গেছে। অর্থাৎ এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় গাড়ি রপ্তানিকারক দেশ চীন। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির এই দেশ এখন নানা সমস্যায় জর্জরিত। তবে গাড়িশিল্পই এখন তাদের সবচেয়ে উজ্জ্বল দিক।

তবে অনুজ্জ্বল একটি দিকও আছে, আর তাহলো যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সঙ্গে বেইজিংয়ের চলমান উত্তেজনা। চীনের বিদ্যুৎ–চালিত গাড়ি বা ইলেকট্রিক ভেহিকেলের সবচেয়ে বড় বাজার এসব দেশই। তবে বিশ্ব যেহেতু আধুনিক ও পরিবেশসম্মত প্রযুক্তির দিকে যাচ্ছে, তাই এটাও ঠিক যে চীনা পণ্য থেকে সরে যাওয়াও পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য খুব সহজ হবে না।

বিওয়াইডির স্বপ্নের বাস্তবায়ন

বিদ্যুৎ–চালিত গাড়ির বেশির ভাগ এসেছে প্রচলিত কোম্পানির হাত ধরে। তারা আগেই গাড়ি বানাত, পরে ইলেকট্রিক গাড়ি বানাতে শুরু করে। বিওয়াইডির বিষয়টি ভিন্ন। তারা আগে ব্যাটারি বানাত, পরে গাড়ি বানাতে শুরু করে। সুতরাং শুরু থেকেই তাদের একটি সুবিধাজনক অবস্থান ছিল।

কোম্পানির প্রধান নির্বাহী ওয়াং চুয়ানফু ১৯৬৬ সালে চীনের সবচেয়ে গরিব প্রদেশের একটিতে কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। কিশোর বয়সে তিনি এতিম হন। তাঁকে বড় করেন এক ভাই ও বোন। আজ তিনি ১ হাজার ৮৭০ কোটি ডলার মূল্যের সম্পদের মালিক। ১৯৯৫ সালে তিনি এক ভাইকে নিয়ে শেনজেনে বিওয়াইডি প্রতিষ্ঠা করেন।

বিওয়াইডি তখন এমন ব্যাটারি বানাত, যা রিচার্জ করা যায়। জাপানো বানানো ব্যাটারির চেয়ে সস্তায় তারা পণ্য দিতেন। ২০০২ সালে এটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এরপর তারা কিনে নেয় ধুকতে থাকা রাষ্ট্রমালিকানার কিনচুয়ান অটোমোবাইল কোম্পানিকে। আর এর মাধ্যমে তারা তাদের ব্যবসা অন্য খাতে সম্প্রসারণ করে।

ইলেকট্রিক ভেহিকেল বা ইভি তখনো একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে, তবে বেইজিংয়ের কর্মকর্তারা সুযোগ খুঁজছিলেন কীভাবে শূন্যস্থান পূরণ করা যায়। ২০০০-এর দশকের গোড়ার দিকে সরকার এ খাতে ভর্তুকি ও কর সুবিধা দেয়। ওই সময়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে সরকার অগ্রাধিকার দেওয়া শুরু করে।

বিওয়াইডির জন্য এটা ছিল একবারে মোক্ষম সময়। যে ব্যাটারি তারা তৈরি করছিল, সেই ব্যাটারিই এবার ব্যবহার হবে ইভির জন্য। ২০০৮ সালে মার্কিন বিলিয়নিয়ার বিনিয়োগকারী ওয়ারেন বাফেট বিওয়াইডির ১০ শতাংশ শেয়ার কেনেন। তখন তিনি বলেছিলেন, অবশ্যম্ভাবীভাবে বৈশ্বিক বাজারে ইলেকট্রিক গাড়ি প্রাধান্য বিস্তার করবে এবং একদিন বিওয়াইডি হবে সেই বাজারের ‘সবচেয়ে বড় খেলোয়াড়’।

তাঁর আন্দাজ একেবারে ঠিকঠাক ছিল। আজ চীন যে বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে, তার অন্যতম কারণ বিওয়াইডি। বেইজিং এই অবস্থান ধরে রাখতে চায়। গত জুনে তারা ইভি খাতে আগামী ৪ বছরের জন্য ৭ হাজার ২৩০ কোটি ডলারের কর অব্যাহতির প্রস্তাব করেছে। গাড়ির বিক্রি যখন ধীর হয়ে পড়েছিল, তখন এই বিশাল সুবিধা দেওয়া হয়।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিওয়াইডির এই বেড়ে ওঠার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান তাদের পুরোনো ব্যবসা—ব্যাটারি তৈরি। বৈদ্যুতিক গাড়ি বানাতে বেশি খরচ হয় ব্যাটারির পেছনেই। তাই কোনো কোম্পানি যদি নিজেরাই তা বানাতে পারে, তাহলে খরচ অনেক বাঁচে। টেসলার মতো প্রতিযোগীরা তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ব্যাটারি তৈরি করে।

বিওয়াইডির কম দামের গাড়ি বিক্রি হয় ১১ হাজার ডলারে। অন্যদিকে, চীনে টেসলার মডেল ৩ সেডান গাড়ির দামই শুরু হয় ৩৬ হাজার ডলার থেকে। ইভি বাজারের বাইরেও বিওয়াইডি সফল। জার্মানির ফক্সওয়াগন এত দিন ছিল চীনে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া গাড়ি। বিওয়াইডি এ বছরের শুরুতে তাদেরকেও স্থানচ্যুত করেছে।

বিওয়াইডি বনাম টেসলা

ইলন মাস্ককে ২০১১ সালে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বিওয়াইডি ও চীনা প্রতিযোগীদের সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল। চীনাদের বিষয়টি তিনি হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। সেই সময় টেসলা ছিল ছোট একটি কোম্পানি, যারা তাদের ভবিষ্যৎ গাড়ি মডেল এস-এর একটি প্রোটোটাইপ বা প্রতিরূপ মাত্র জনসমক্ষে নিয়ে এসেছে।

আজ ইলন মাস্ক সম্ভবত তাঁর সেই জবাবের জন্য অনুতাপ করছেন। টেসলা সেপ্টেম্বরে চীনে তৈরি ৭৪ হাজার ৭৩টি ইভি বিক্রি করেছে। আগের বছরের তুলনায় তা প্রায় ১১ শতাংশ কম। অন্যদিকে, একই সময়ে বিওয়াইডির বিক্রি সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৮৬ হাজার ৯০৩। ইভি ও হাইব্রিড মডেলের ক্ষেত্রে এই প্রবৃদ্ধি ৪৩ শতাংশ।

সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, চীনে ইলেকট্রিক গাড়ির জনপ্রিয়তা যদি কেউ বাড়িয়ে থাকে, সেটি টেসলা। পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য দেওয়া সুবিধা দেওয়া হলেও টেসলা না আসা পর্যন্ত চীনে ইভি বিক্রি বাড়েনি। এমনকি এখনো টেসলা একটি জনপ্রিয় ব্র্যান্ড, বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে, এ কথা জানিয়েছেন কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের গাড়িবিষয়ক বিশ্লেষক ইভান ল্যাম।

পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি গাড়ি বিক্রি হয় চীনে। কিন্তু আরও বেশি পরিমাণ ইলেকট্রিক গাড়ি দেশে আনার জন্য তারা নিয়মেও পরিবর্তন আনে। সম্পূর্ণ বিদেশি মালিকানায় গাড়ির কারখানা বা বিক্রয়কেন্দ্র খোলার অনুমতি দেয় বেইজিং। এর আগে কারখানা খুলতে জেনারেল মোটরস কিংবা টয়োটার মতো কোম্পানিকে স্থানীয় অংশীদার খুঁজতে হয়েছে।

নিয়মে পরিবর্তন আসার পরই সুযোগ কাজে লাগায় টেসলা। এমনকি এখনো তারাই চীনে তৈরি বিদ্যুৎ–চালিত গাড়ির সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক ও চীনে এ ধরনের গাড়ির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিক্রেতা। ইলন মাস্ক চীনে আরও অনেক কিছু করতে চান। তবে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে বৈরিতা শুরু হওয়ার পর তিনি এখন ভারতের দিকেও দৃষ্টি ফিরিয়েছেন।

ইলন মাস্ক বলেছেন, ‘মানুষের পক্ষে যত দ্রুত সম্ভব, তত দ্রুত’। তিনি টেসলাকে ভারতে নিয়ে যেতে চান।

দৌড়ে চীনা ইভি কতটা এগিয়ে

গতানুগতিক গাড়ি নির্মাতাদের জন্য রাস্তা দ্রুত সরু হয়ে যাচ্ছে। জীবাশ্মজ্বালানি–নির্ভর এই প্রযুক্তি ২০৩০ সালে বড় পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে যাবে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় যেসব সুবিধা দেওয়া হচ্ছে, সেসব কারণেই বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার বাড়ছে, তবে ইউরোপ ও ব্রিটেনের গাড়ি নির্মাতারা প্রতিযোগিতা করে পারছে না। চীনের ব্যাপারে যেভাবে ইউরোপীয় দেশগুলো সতর্ক হয়ে উঠছে, তাতে এসব দেশে চীনা গাড়ি আমদানি করা কঠিন করতে আরও বেশি নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।

ইউরোপীয় কমিশন চীন থেকে আমদানি করা সস্তার গাড়ি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। এই তদন্তের উদ্দেশ্য হলো, এটা দেখা যে স্থানীয় বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদকদের সুরক্ষা দিতে চীনা গাড়িতে শুল্ক বাড়ানো দরকার কি না। ইউরোপীয় কমিশন মনে করে, বেইজিংয়ের দেওয়া ভর্তুকির কারণে চীনা গাড়ি বিশেষ সুবিধা পাচ্ছে।

কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেয়েন বলেছেন, চীনের ‘অন্যায্য বাণিজ্য রীতি’ থেকে ইউরোপের সৌরবিদ্যুৎশিল্প কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভুলে যায়নি, তবে বাস্তবতা ভিন্ন। জার্মানির মতো দেশ উঁচু মূল্যস্ফীতি ও জ্বালানি খরচের কারণে সমস্যায় রয়েছে। সে কারণে বিওয়াইডির সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব গাড়ি সেখানে ব্যাপক সংখ্যায় বিক্রি হচ্ছে। মার্সিডিস-বেঞ্জ, বিএমডব্লিউ আর ফক্সওয়াগনের দেশটি বিদ্যুৎ–চালিত গাড়ির বৈশ্বিক চাহিদা পূরণ করতে হিমশিম খাচ্ছে। সে কারণে সেপ্টেম্বরের মিউনিখ গাড়ির প্রদর্শনীতে চীনা ইভি ছিল আলোচনার কেন্দ্রে।

অটোমবিলিটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী বিল রুসো বলেন, চাহিদার বিষয়টি বিশ্বের সব জায়গায় নির্ভর করে সামর্থ্যের ওপর। এটা সর্বজনীন ব্যাপার। তাঁর মতে, পৃথিবীর একটি দেশই দুনিয়াকে এই সুবিধা দিতে পারে, সেই দেশটি হলো চীন।

back to top