alt

অর্থ-বাণিজ্য

ফের অস্থির পেঁয়াজের বাজার, দাম এক লাফে দ্বিগুণ

আমিরুল মোমিনিন সাগর : শনিবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩

https://sangbad.net.bd/images/2023/December/09Dec23/news/pic-1.jpg

এক লাফে দ্বিগুণ হয়েছে পেঁয়াজের দাম। তবে হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বাড়ায় বিপাকে ক্রেতারা। বাজারে আসা ক্রেতাদের অভিযোগ, ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই দেশের বাজারে সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠেছে। দেশের তদারকি সংস্থার উদাসীনতার কারণে সুযোগ সন্ধানী ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ইচ্ছে মতো দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা বলছেন, বর্তমানে বাজারে যে পেঁয়াজ আছে তা আগের মজুত।

https://sangbad.net.bd/images/2023/December/09Dec23/news/pic-2.jpg

রাজধানীর শ্যামবাজার আড়তে ভরা পেঁয়াজ। তবু দাম বাড়ানোর কারসাজি, মূল্য তালিকা টাঙানো আছে। শুধু ভোক্তা অধিকার অভিযানকালে দৃশ্যমান, পরে বেড়ে যায় দ্বিগুণ -সংবাদ

দাম বাড়ার খবরে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযানে নামলে বিক্রেতাদের কেউ কেউ দোকান ফেলে চলে যান। ভারত সরকার নিজের দেশে পেঁয়াজের সরবরাহ ও দাম স্বাভাবিক রাখতে পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা মার্চ পর্যন্ত বাড়িয়েছে। গত শুক্রবার এমন খবর আসার পরদিনই শনিবার (৯ ডিসেম্বর) থেকে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক পরিমাণ বাড়াতে শুরু করেন পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা।

শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ বেশকিছু মুদি দোকান ঘুরে এবং ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব জানা গেছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রথমবারের মতো তিনটি কৃষিপণ্যের দাম বেঁধে দেয় সরকার। তার মধ্যে একটি পণ্য হচ্ছে দেশি পেঁয়াজ। বেঁধে দেয়া দাম অনুযায়ী, খুচরা পর্যায়ে দেশি পেঁয়াজের দাম ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রাজধানীর খোলা বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজি ২২০ টাকা থেকে ২৪০ টাকা। আর আমদানি করা পেঁয়াজ ২০০ টাকা। পাশাপাশি রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পাইকারিতে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে কেজি ২০০ টাকা আর আমদানি করা পেঁয়াজ ১৫০ টাকায়।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে কথা হয় জাহিদ হোসেনের সঙ্গে। বাজারে দামের পরিস্থিতি নিয়ে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘এক কেজি ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ কিনলাম দুইশো টাকায়। দুইদিন আগেও ইন্ডিয়ান পেয়াজ ছিল কেজি ১শ’ টাকা ছিল।

তিনি বলেন, ‘বলে লাভ কি দাম বাড়ছে, খাওয়ন লাগবো, কিছু করার নাই তো। কারো তো এ ব্যাপারে মাথাব্যাথা নাই, মাথাব্যাথা আছে আগে কিনতাম দুই কেজি, এখন কিনলাম এক কেজি।’

‘কালকে দেখি এক দাম, আজকে দেখি আরেক দাম। বাজারে কেনো হঠাৎ করে দাম বেশি হইলো, জানতে হইবো না। যারা মনিটরিং করে তাদের তো জানতে হইবো, এটা তো সরকার জানবো।’

রাজধানীর কুনিপাড়া থেকে কারওয়ান বাজারে পাইকারিতে পেঁয়াজ কিনে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন খুচরা দোকানি শাজাহান মিয়া। দামের বিষয়ে কথা হলে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘পাইকারি দরে দুই পাল্লা (দশ কেজি) দেশি পেঁয়াজ কিনলাম ১ হাজার টাকা দিয়ে।’ কুনি পাড়ায় গিয়ে কতো করে বিক্রি করবেন জবাবে তিনি বলেন, ‘২শ’ ২০, ২শ’ ৩০ এই রকম বেঁচা লাগবো।’

এ বাজারেই পাইকারিতে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করেন মছির উদ্দিন। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘আজ পাইকারি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছি কেজি ২শ’ টাকা।’

দর ও দরবৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের আমদানি পেঁয়াজের পাইকারি বিক্রেতা আজিজুল সংবাদকে বলেন, ‘আজ ১ পাল্লা বিক্রি করছি ৭শ’ ৫০ টাকা। আমদানি বন্ধ হইছে তাই দাম বাড়ছে। আরও বাড়বো!!’

এ বাজারের পাইকারি আড়ত থেকে একশ’ হাত দূরেই আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ ৫০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করছিলেন খুচরো বিক্রেতা রনি। তার কাছে দাম জানতে চাইলে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ বিক্রি করছি কেজি ২শ’ টাকা।’

রনির দোকান থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ কিনে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ক্রেতা তারিকুল বলেন, ‘কেজি নিল ২শ’ টাকা। কিছু করার নেই, খাইতে তো হবে, কম আর বেশি। আগে নিতাম ৫ কেজি, আজ নিলাম ২ কেজি।’

‘সিন্ডিকেটের কারণে পেঁয়াজের দামটা বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াবে কিন্তু সরকারকেই মনিটরিং করতে হবে এবং কন্ট্রোল করতে হবে,’ যোগ করেন তারিকুল।

আমাদের দিনাজপুর প্রতিনিধি চিত্ত ঘোষ জানিয়েছেন, পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের ঘোষণায় দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারকদের গুদামে পেঁয়াজের মজুত নেই। খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ- পেঁয়াজ গুদামে মজুত করে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে ভারত সরকারের এমন হটকারি সিদ্ধান্তে দেশের পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবেন বলে জানিয়েছেন হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি। এদিন সকালে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় দুইটি ট্রাকে টেন্ডারকৃত ৬০ টন পেঁয়াজ বাংলাদেশে আসার খবর পাওয়া গেছে।

শনিবার সকালে দিনাজপুর শহরের সবচেয়ে বড় বাজার বাহাদুর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, একদিনের ব্যবধানে কেজি প্রতি ৭০ থেকে ৮০ টাকা ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। শনিবার বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ ১৯০ থেকে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। একই সঙ্গে দেশি জাতের পেঁয়াজ ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। কিন্তু পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ ঘোষণার আগে গত শুক্রবার সকালে এই বাজারে ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১২৫ টাকা কেজি এবং দেশি জাতের পেঁয়াজ ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

শনিবার রাজধানীসহ জেলা পর্যায়ে অভিযান চালিয়েছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের ৫৭টি টিম সারাদেশের বাজারে অভিযানের মাধ্যমে ১৩৩টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ৬ লাখ ৬৬ হাজার টাকা জরিমানা করেছে।

ভোক্তা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শনিবার ঢাকা মহানগরীতে অধিদপ্তরের চারটি টিম বাজার অভিযান পরিচালনা করে।

এছাড়াও অন্য বিভাগীয় শহরসহ দেশের সর্বমোট ৫৪টি জেলায় একযোগে এ অভিযান পরিচালিত হয়। সবমিলিয়ে সারাদেশে ৫৭টি টিম কর্তৃক বাজার অভিযানের মাধ্যমে ১৩৩টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ৬ লাখ ৬৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ভোক্তা অধিকার রক্ষায় এ কার্যক্রম আজও অব্যাহত থাকবে বলে জানায় অধিদপ্তর।

এর মধ্যে চট্টগ্রামে ৫টি প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ টাকা জরিমানা করে সংস্থাটি। নগরীর চৌমুহনী এবং খাতুনগঞ্জে পৃথক অভিযান চালিয়ে এ জরিমানা করা হয়। অভিযানে নগরীর চৌমুহনী কর্ণফুলী মার্কেটে অভিযান চালিয়ে ফারুক স্টোরকে ৩০ হাজার টাকা এবং আলিফ ট্রেডার্সকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অন্যদিকে নগরীর খাতুনগঞ্জে বরকত ভান্ডারকে ২০ হাজার টাকা, এ এইছ ট্রের্ডাসকে ১০ হাজার টাকা এবং এ কে ট্রেডার্সকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

পিরোজপুর প্রতিনিধি এ কে আজাদ জানান, শনিবার দুপুরে পিরোজপুর শহরের পৌর কাঁচাবাজারে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করা এবং মূল্য তালিকা না রাখায় দুই ব্যবসায়ীকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করে ভ্রাম্যমান আদালত। এদের মধ্যে বিনয় পাল নামে এক পাইকারি ব্যবসায়ীকে ১০ হাজার টাকা এবং অন্য একজন খুচরা বিক্রেতাকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

ছবি

ঈদুল আজহা সামনে রেখে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি ২১ মে থেকে

ছবি

এপ্রিল মাসে অর্থনীতির গতি কমেছে, পিএমআই সূচক নামলো ৮ দশমিক ৮ পয়েন্টে

অনিবন্ধিত ও মেয়াদোত্তীর্ণ ট্রাভেল এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সরকার

বাংলাদেশ জুড়ে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের টেকসই নানা উদ্যোগ

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রশংসা করলেন এডিবি প্রেসিডেন্ট

মূল্যস্ফীতি ৪ থেকে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব: বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর

ছবি

কর প্রশাসন আধুনিকায়নে এডিবির সম্পৃক্ততা বাড়ানোর প্রস্তাব অর্থ উপদেষ্টার

বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে ২ দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ

ছবি

২০৩০ সালে চালু হবে বে টার্মিনাল, কর্মসংস্থান লাখ মানুষের

ছবি

চলতি অর্থবছরের সর্বনিম্ন রপ্তানি আয় এপ্রিলে

ছবি

গ্লাস শিল্পে কাঁচামাল আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ২০৩০ সাল পর্যন্ত মওকুফ

বিজিএমইএ নির্বাচন: সম্মিলিত পরিষদের ৩৫ সদস্যের প্যানেল ঘোষণা

ছবি

মার্কেন্টাইল ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের মুনাফা ৩৩০০ কোটি টাকা, যা ব্র্যাক, সিটি ও পূবালী ব্যাংকের চেয়েও বেশি

দ্বিতীয় দিনেও আইএমএফের সঙ্গে সমঝোতা হয়নি

ছবি

ডেনিম এক্সপো শুরু হচ্ছে ১২ মে

যুদ্ধের প্রভাবে সূচক পড়েছে ভারতের শেয়ারবাজারে, রুপিরও দরপতন

একনেকে ৩৭৫৬ কোটি টাকার ৯ প্রকল্প অনুমোদন

ছবি

রাজশাহীতে দেড় হাজার কোটি টাকার আম বিক্রির লক্ষ্য

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনায় ঢাকার শেয়ারবাজারে বড় ধস

ছবি

পুঁজিবাজার নিয়ে বৈঠকে বসছেন প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

আগামী অর্থবছরের এডিপির আকার হবে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা

ছবি

ফের পতন শেয়ারবাজারে, সূচকের অবস্থান ৪ হাজার ৯৫১ পয়েন্টে

চার খাতে এডিবির কাছে সহযোগিতা চাইলেন অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

বাংলাদেশকে প্রায় ৪০ কোটি ইউরো ঋণ ও অনুদান দিচ্ছে ইআইবি এবং ইইউ

ছবি

এপ্রিলে তৈরি পোশাকে রপ্তানি আয় ২ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার

ছবি

চট করে আইএমএফের শর্ত মেনে নিয়ে কিছুই করব না: অর্থ উপদেষ্টা

বছরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন শেয়ারবাজারে

ছবি

বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হলো সাউথইস্ট ব্যাংকের এমডিকে

বিনিয়োগ নিয়ে কাজ করা ছয় সংস্থা একীভূত করার উদ্যোগে কমিটি গঠন

ছবি

মূলধন ঘাটতি বেড়েছে ২০ ব্যাংকের

রাষ্ট্রমালিকানাধীন ছয় ব্যাংকে অভিন্ন পদোন্নতি নীতিমালা

ছবি

আড়াই মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন ডিএসইতে, সূচক বেড়েছে ৮ পয়েন্ট

ছবি

ঋণের দুই কিস্তি ছাড়ে ফের আলোচনায় বসছে আইএমএফ

ছবি

আইএমএফ ঋণ নিয়ে এডিবির জিজ্ঞাসা, আশ্বস্ত করেছে বাংলাদেশ

ছবি

উদ্যোক্তাদের সুবিধায় বিনিয়োগ সুবিধা নিয়ে এলো জাতিক ক্যাপিটাল

tab

অর্থ-বাণিজ্য

ফের অস্থির পেঁয়াজের বাজার, দাম এক লাফে দ্বিগুণ

আমিরুল মোমিনিন সাগর

শনিবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩

https://sangbad.net.bd/images/2023/December/09Dec23/news/pic-1.jpg

এক লাফে দ্বিগুণ হয়েছে পেঁয়াজের দাম। তবে হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বাড়ায় বিপাকে ক্রেতারা। বাজারে আসা ক্রেতাদের অভিযোগ, ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই দেশের বাজারে সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠেছে। দেশের তদারকি সংস্থার উদাসীনতার কারণে সুযোগ সন্ধানী ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ইচ্ছে মতো দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা বলছেন, বর্তমানে বাজারে যে পেঁয়াজ আছে তা আগের মজুত।

https://sangbad.net.bd/images/2023/December/09Dec23/news/pic-2.jpg

রাজধানীর শ্যামবাজার আড়তে ভরা পেঁয়াজ। তবু দাম বাড়ানোর কারসাজি, মূল্য তালিকা টাঙানো আছে। শুধু ভোক্তা অধিকার অভিযানকালে দৃশ্যমান, পরে বেড়ে যায় দ্বিগুণ -সংবাদ

দাম বাড়ার খবরে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযানে নামলে বিক্রেতাদের কেউ কেউ দোকান ফেলে চলে যান। ভারত সরকার নিজের দেশে পেঁয়াজের সরবরাহ ও দাম স্বাভাবিক রাখতে পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা মার্চ পর্যন্ত বাড়িয়েছে। গত শুক্রবার এমন খবর আসার পরদিনই শনিবার (৯ ডিসেম্বর) থেকে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক পরিমাণ বাড়াতে শুরু করেন পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা।

শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ বেশকিছু মুদি দোকান ঘুরে এবং ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব জানা গেছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রথমবারের মতো তিনটি কৃষিপণ্যের দাম বেঁধে দেয় সরকার। তার মধ্যে একটি পণ্য হচ্ছে দেশি পেঁয়াজ। বেঁধে দেয়া দাম অনুযায়ী, খুচরা পর্যায়ে দেশি পেঁয়াজের দাম ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রাজধানীর খোলা বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজি ২২০ টাকা থেকে ২৪০ টাকা। আর আমদানি করা পেঁয়াজ ২০০ টাকা। পাশাপাশি রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পাইকারিতে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে কেজি ২০০ টাকা আর আমদানি করা পেঁয়াজ ১৫০ টাকায়।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে কথা হয় জাহিদ হোসেনের সঙ্গে। বাজারে দামের পরিস্থিতি নিয়ে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘এক কেজি ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ কিনলাম দুইশো টাকায়। দুইদিন আগেও ইন্ডিয়ান পেয়াজ ছিল কেজি ১শ’ টাকা ছিল।

তিনি বলেন, ‘বলে লাভ কি দাম বাড়ছে, খাওয়ন লাগবো, কিছু করার নাই তো। কারো তো এ ব্যাপারে মাথাব্যাথা নাই, মাথাব্যাথা আছে আগে কিনতাম দুই কেজি, এখন কিনলাম এক কেজি।’

‘কালকে দেখি এক দাম, আজকে দেখি আরেক দাম। বাজারে কেনো হঠাৎ করে দাম বেশি হইলো, জানতে হইবো না। যারা মনিটরিং করে তাদের তো জানতে হইবো, এটা তো সরকার জানবো।’

রাজধানীর কুনিপাড়া থেকে কারওয়ান বাজারে পাইকারিতে পেঁয়াজ কিনে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন খুচরা দোকানি শাজাহান মিয়া। দামের বিষয়ে কথা হলে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘পাইকারি দরে দুই পাল্লা (দশ কেজি) দেশি পেঁয়াজ কিনলাম ১ হাজার টাকা দিয়ে।’ কুনি পাড়ায় গিয়ে কতো করে বিক্রি করবেন জবাবে তিনি বলেন, ‘২শ’ ২০, ২শ’ ৩০ এই রকম বেঁচা লাগবো।’

এ বাজারেই পাইকারিতে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করেন মছির উদ্দিন। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘আজ পাইকারি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছি কেজি ২শ’ টাকা।’

দর ও দরবৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের আমদানি পেঁয়াজের পাইকারি বিক্রেতা আজিজুল সংবাদকে বলেন, ‘আজ ১ পাল্লা বিক্রি করছি ৭শ’ ৫০ টাকা। আমদানি বন্ধ হইছে তাই দাম বাড়ছে। আরও বাড়বো!!’

এ বাজারের পাইকারি আড়ত থেকে একশ’ হাত দূরেই আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ ৫০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করছিলেন খুচরো বিক্রেতা রনি। তার কাছে দাম জানতে চাইলে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ বিক্রি করছি কেজি ২শ’ টাকা।’

রনির দোকান থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ কিনে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ক্রেতা তারিকুল বলেন, ‘কেজি নিল ২শ’ টাকা। কিছু করার নেই, খাইতে তো হবে, কম আর বেশি। আগে নিতাম ৫ কেজি, আজ নিলাম ২ কেজি।’

‘সিন্ডিকেটের কারণে পেঁয়াজের দামটা বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াবে কিন্তু সরকারকেই মনিটরিং করতে হবে এবং কন্ট্রোল করতে হবে,’ যোগ করেন তারিকুল।

আমাদের দিনাজপুর প্রতিনিধি চিত্ত ঘোষ জানিয়েছেন, পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের ঘোষণায় দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারকদের গুদামে পেঁয়াজের মজুত নেই। খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ- পেঁয়াজ গুদামে মজুত করে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে ভারত সরকারের এমন হটকারি সিদ্ধান্তে দেশের পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবেন বলে জানিয়েছেন হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি। এদিন সকালে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় দুইটি ট্রাকে টেন্ডারকৃত ৬০ টন পেঁয়াজ বাংলাদেশে আসার খবর পাওয়া গেছে।

শনিবার সকালে দিনাজপুর শহরের সবচেয়ে বড় বাজার বাহাদুর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, একদিনের ব্যবধানে কেজি প্রতি ৭০ থেকে ৮০ টাকা ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। শনিবার বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ ১৯০ থেকে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। একই সঙ্গে দেশি জাতের পেঁয়াজ ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। কিন্তু পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ ঘোষণার আগে গত শুক্রবার সকালে এই বাজারে ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১২৫ টাকা কেজি এবং দেশি জাতের পেঁয়াজ ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

শনিবার রাজধানীসহ জেলা পর্যায়ে অভিযান চালিয়েছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের ৫৭টি টিম সারাদেশের বাজারে অভিযানের মাধ্যমে ১৩৩টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ৬ লাখ ৬৬ হাজার টাকা জরিমানা করেছে।

ভোক্তা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শনিবার ঢাকা মহানগরীতে অধিদপ্তরের চারটি টিম বাজার অভিযান পরিচালনা করে।

এছাড়াও অন্য বিভাগীয় শহরসহ দেশের সর্বমোট ৫৪টি জেলায় একযোগে এ অভিযান পরিচালিত হয়। সবমিলিয়ে সারাদেশে ৫৭টি টিম কর্তৃক বাজার অভিযানের মাধ্যমে ১৩৩টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ৬ লাখ ৬৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ভোক্তা অধিকার রক্ষায় এ কার্যক্রম আজও অব্যাহত থাকবে বলে জানায় অধিদপ্তর।

এর মধ্যে চট্টগ্রামে ৫টি প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ টাকা জরিমানা করে সংস্থাটি। নগরীর চৌমুহনী এবং খাতুনগঞ্জে পৃথক অভিযান চালিয়ে এ জরিমানা করা হয়। অভিযানে নগরীর চৌমুহনী কর্ণফুলী মার্কেটে অভিযান চালিয়ে ফারুক স্টোরকে ৩০ হাজার টাকা এবং আলিফ ট্রেডার্সকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অন্যদিকে নগরীর খাতুনগঞ্জে বরকত ভান্ডারকে ২০ হাজার টাকা, এ এইছ ট্রের্ডাসকে ১০ হাজার টাকা এবং এ কে ট্রেডার্সকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

পিরোজপুর প্রতিনিধি এ কে আজাদ জানান, শনিবার দুপুরে পিরোজপুর শহরের পৌর কাঁচাবাজারে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করা এবং মূল্য তালিকা না রাখায় দুই ব্যবসায়ীকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করে ভ্রাম্যমান আদালত। এদের মধ্যে বিনয় পাল নামে এক পাইকারি ব্যবসায়ীকে ১০ হাজার টাকা এবং অন্য একজন খুচরা বিক্রেতাকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

back to top