আম চাষী ও আম ব্যাবসায়ীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন
আম রাজশাহী অঞ্চলে মানুষের আয়ের বিরাট উৎস। শেষ সময়ে আম চাষী ও আম ব্যাবসায়ীরা প্রচন্ড ব্যস্ত সময় পার করছে। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আমের কেনাবেচা থেকে শুরু করে প্যাকেটজাত করার কাজ চলে রাজশাহী আমের সর্ববৃহৎ বাজার বানেস্বর হাাট এছাড়া সাহেবাজার , মাষ্টার পাড়ায় আছে আম বাজার ।
এক সময়ে রাজশাহী অঞ্চলে আম ছিলো একটি পারিবারিক ফল, ঘরে খাওয়ার জন্য বা আত্মীয়স্বজনকে দেওয়ার জন্য আম চাষ করা হতো। কালক্রমে এই আম এখন মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে রাজশাহী অঞ্চলের অর্থনীতির চাকা। প্রতি বছর প্রায় কয়েক হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হয় এই আমকে ঘিরে। একটি ফল কীভাবে একটি অঞ্চলের অর্থনীতির মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে রাজশাহী সহ আসেপাস্বে জেলা গুলোতে দেখলে বোঝা যায় আমের বাগান গুলো দেখলে । দির্ঘদিন ধরে রাজশাহী অঞ্চলে আম চাষ কে কেন্দ্র করে পাল্টে যায় এ অঞ্চলের অর্থনীতির চাকা , কেবল শহরের বাজারে নয়, আমকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য পাল্টে দিয়েছে এ অঞ্চলের গ্রামীণ জনপদের অর্থনীতিও। বরেন্দ্র অঞ্চলে আম চাষী, বাগান মালিক , আম ব্যবসায়ী , কুরিয়ার ব্যবসায়ী , আম বহনকরী পরিবহন, , ভানচালক , আম নিয়ে যাওয়ার হন্য বাশের টুকরী তৈরীর জন্য শতাধিক পরিবার , আম গাছ পাহারারত শ্রমিক , আম পাড়ার জন্য শ্রমিক ,আম বহন করার জন্য শ্রমিক । আমের মুকুল আসার পর থেকেই দিনের পর দিন আমকে ঘিরে আম অর্থনীতির সাথে জড়িত লোকজনের সংখ্যা বাড়তে থাকে । আমের ভরা মৌসুমে হাজার মানুষের অর্থনীতের চাকাও পাল্টাতে থাকে । ছাত্র ,শিক্ষক বেকার যুবক, অন লাইনে ব্যবসাযী সহ কয়েক হাজার মানুষ মে থেকে আগষ্ট পযর্šÍ এই আম ব্যবসার সাথে জড়িত হয় ।
রাজশাহী অঞ্চলের আমের হাট, বাজার গুলোতে এখানকার আমের কদর বেশি থাকায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছেন ক্রেতা ও বিক্রেতারা।
এদিকে বানেস্বর হাটে ঢাকা থেকে আসা আম ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম বলেন, রাজশাহীর বানেশ্বর হাটের আমের অনেক স্বাদ। তাই আমরা এখান থেকে আম কিনে ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করি। এখানকার আমের অনেক চাহিদা রয়েছে। তবে আমের দাম এবার অনেক বেশি। গত বছর যে লোকনা আম ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা কিনেছি। এবার তা ১৬০০ থেকে ১৭০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
ময়মনসিংহ থেকে আসা আরেক ব্যবসায়ী রুবেল হোসেন বলেন, রাজশাহীতে আম কম থাকায় এবার আমের দাম অনেক বেশি। এই বাজারে সম্পূর্ণ ফরমালিন মুক্ত আম পাওয়া যায় সেজন্য আমরা এই বাজার থেকে আম কিনে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করি। দাম বেশি হলেও এখানকার আমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে ক্রেতাদের কাছে। এজন্য দাম বেশি হলেও সমস্যা হচ্ছে না বিক্রি করতে।
রাজশাহী অঞ্চলে এ বছর গাছে দেরিতে মুকুল এসেছে। মুকুলও কম এসেছিলো। মুকুল আসার কিছুদিন পর শিলা বৃষ্টিতে কিছু ঝরেও পড়ে। এরপর এপ্রিল মাসেই তীব্র তাপদাহ বয়ে যায়। তাতেও আমের গুটি ঝরে পড়ে। শেষে ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণেও রাজশাহীর আম ঝড়ে পড়ে।
চারঘাট উপজেলার আমচাষী ডাবলুর ২০ বিঘা আমের বাগান। বিভিন্ন জাতের আমের চাষ করেছেন তিনি। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করেই আমকে টিকে থাকতে হয়। তবে আমের যারা পরিচর্যা নেন তাদের গাছে আম ভালো থাকে। গতবারের চেয়ে কিছুটা কম এলেও আমার সব গাছেই মোটামুটি আম আছে। পরিচর্যার কারণেই এমনটা হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
রাজশাহীর বাঘার আমচাষী শফিকুল ইসলাম সানা গতবছর প্রায় এক কোটি টাকার আম বিক্রি করেছিলেন। তার মধ্যে ২৬ মেট্রিক টন আম বিদেশেই রফতানি করেন। শফিকুল ইসলাম এবছরও ৩০০ বিঘা জমিতে আমের চাষ করছেন। এ বছর গাছে অর্ধেকেরও কম আম এসেছে বলে জানান। তবে বাঘার অন্য চাষিদের তুলনায় তার অবস্থা কিছুটা ভালো। পরিচর্যা বেশি নেওয়ায় আমের আকারও ভালো হয়েছে।
শফিকুল ইসলাম সানা বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালে ৫০ শতাংশের মতো আম পড়ে গেছে। তারপরও আমার বাগানে ৪০ শতাংশের মতো আম আছে। তবে অন্য চাষিদের অবস্থা আরও খারাপ। ২০ শতাংশের কম আম এসেছে তাদের বাগানে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার আমের উৎপাদন কম হওয়ায় দাম বেশি। তা ছাড়া ব্যাপারীদের জন্য আরেকটা চ্যালেঞ্জ হলো, অনলাইন ব্যবসায়ী। তাঁরা মণে ৫০০ টাকা বেশি দিয়ে ভালো আমগুলো কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এই সুযোগে চাষিরাও বেশি দাম হাঁকছেন, ব্যবসায়ীদেরও সেই দামে কিনতে হচ্ছে। এই দুই কারণে আমের দাম বেড়ে গেছে।
অনলাইনে আম ব্যবসায়ী অনলাইন মার্কেটের স্বত্বাধিকারী খায়রুল কবীর বলেন, দেশের অভিজাত ক্রেতা, যাঁরা নির্ভেজাল আম খেতে চান, তাঁরা অনলাইনে ফরমাশ (অর্ডার) করেন। তাঁরা বাজারের সেরা আমগুলো বেশি দামে কিনে তাঁদের সরবরাহ করেন। তিনি বলেন, করোনার সময় থেকে অনলাইন বাজার বেড়েছে। এখন আরও চাঙা। এখন আরো অনেকে এই অন লাইন আম ব্যবসার সাথে যুক্ত হয়েছে ।
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর কাচারি মাঠে আমের বাজার বসে। বাজারের একটি ছাউনির নিচে বসে বানেশ্বরের খুঁটিপাড়া গ্রামের ব্যবসায়ী মানিক ও আহসান হাবিব হিসাব মেলাচ্ছেন, কোন আম কী পরিমাণে বাজারে নামল। তাঁরা দুজনেই ছোটবেলা থেকেই আমের ব্যবসা করেন। তাঁদের কথোপকথন থেকে জানা গেল,
বর্তমান বাজারে প্রতিমন আম রুপালি বিক্রি হচ্ছে ২২০০ থেকে ৩২০০ টাকা, লোকনা ১৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা, বারি ফোর ২৮০০ থেকে ৩ হাজার, ফজলি ১৬০০ থেকে ১৭০০ টাকা মন।
বিশাল এ আমের হাটে প্রতিদিন সকাল থেকে শুরু হয় কেনাবেচা, চলে রাত পর্যন্ত। বানেশ্বর হাটের খাটি আমের সুনাম রাজধানীসহ সারা দেশে। তাই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আম কিনতে আসেন ব্যবসায়ীরা।
দূর্গাপুর থেকে আম বিক্রি করতে আসা মাসুদ আলি বলেন, এবার গাছে আম বিগত সময়ের চেয়ে অনেক কম ছিল, তবে আমের যে দাম সে দামে ক্ষতিটা পুষিয়ে নিতে পারছি। অন্যান্য বাজারের চেয়ে এই বাজারে আমের দাম ভালো পাওয়া যায়- তাই এই হাটে আম বিক্রি করতে আসি।
পুঠিয়া উপজেলার আরেক আম বিক্রেতা মাইনুল আলী বলেন, আমার বাগানে যে আম ধরেছিলো তা নিয়ে আমি খুব চিন্তায় ছিলাম। এমন কম আম আর বিগত সময়ে দেখিনি। তবে আমের বর্তমান বাজার ভালো থাকায় লোকসান গুনতে হচ্ছে না ভালো দাম পাচ্ছি।
এদিকে আমের হাট থেকে ,বাগান থেকে প্যাকেট জাত করে সরাসরি আম পরিবহন , ও কুুরিয়ার ব্যবসায়ীরাও বাস্ত সময় পার করছে । আমের সিজন আসলেই কুরিয়ার ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠে। আম বাগান , হাট ও বাজার খাবে সরানরি প্যাকেটজাত করে আম পাঠানোর ব্যাবস্খা বরে থাকে বিভিন্য কুরিয়ার বাজারে প্রায় ১৫ টি মত কুরিয়ার সার্ভিস আম পাঠানোর কাজে ব্যস্ত। ঢাকায় আম পাঠাতে কেজি প্রতি ১২ টাকা ও ঢাকার বাইরে কেজি প্রতি ১৫ টাকা করে নিচ্ছে কুরিয়ার সার্ভিস গুলো। এদিকে আমকে ঘিরেই পরিবহনের জন্য গত ১০ জুন থেকে চালু হয়েছে রহনপুর থেকে চাপাইনবাবগ›জ, রাজশাহী হয়ে ঢাকা গামী ম্যাংগো ট্রেন।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৯৩ হাজার ২২৪ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২ লাখ ১৯ হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আম চাষ হয়েছে বারি আম-৩ বা আম্রপালি, ২৪০১১ হেক্টর জমিতে। এরপর রয়েছে যথাক্রমে আশ্বিনা ১৩৭৩০ হেক্টর, ফজলি ১১৯৭৭ হেক্টর, লক্ষণভোগ ৯৬৬৯ হেক্টর, খিরসাপাত ৯০২১, ল্যাংড়া ৬৭১৫ এবং বারি আম-৪ চাষাবাদ হয়েছে ৩৬৬২ হেক্টর জমিতে।
এর আগে গত ১২ মে রোববার রাজশাহী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বাগান মালিকদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে আম নামানোর সময়সীমা নির্ধারণ করেন জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ। এ সময় কৃষি কর্মকর্তা, আমচাষি, ব্যবসায়ী ও আম পরিবহনে নিয়োজিত সবার সঙ্গে আলোচনা করে নিরাপদ, বিষমুক্ত ও পরিপক্ব আম নিশ্চিত করতে ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ প্রকাশ করা হয়। সেখানেও এবারের আমের দাম নিয়ে কথা উঠে।
১৫ মে থেকে গুটি আম পাড়া যাবে, ২৫ মে থেকে গোপালভোগ ও রানিপছন্দ, ৩০ মে থেকে খিরসাপাত, ২৫ মে থেকে লক্ষণভোগ, ১০ জুন থেকে ল্যাংড়া ও ব্যানানা আম, ১৫ জুন থেকে আম্র্রালি ও ফজলি, ০৫ জুলাই থেকে বারি আম ৪, ১০ জুলাই থেকে আশ্বিনা, ১৫ জুলাই থেকে গৌড়মতি আর ২০ আগস্ট থেকে পরিপক্ক ইলামতি আম নামানো যাবে। এছাড়া কাটিমন ও বারিআম-১১ সারা বছর সংগ্রহ করা যাবে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক উম্মে ছালমা বলেন, চলতি মৌসুমে জেলায় এবার ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে। সেই হিসেবে আমের উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে দুই লাখ ৬০ হাজার ৩১৫ মেট্রিকটন। এবার আমের দাম ভালো, চাষি ও ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন বলে আশা করছি।
আম চাষী ও আম ব্যাবসায়ীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন
শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪
আম রাজশাহী অঞ্চলে মানুষের আয়ের বিরাট উৎস। শেষ সময়ে আম চাষী ও আম ব্যাবসায়ীরা প্রচন্ড ব্যস্ত সময় পার করছে। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আমের কেনাবেচা থেকে শুরু করে প্যাকেটজাত করার কাজ চলে রাজশাহী আমের সর্ববৃহৎ বাজার বানেস্বর হাাট এছাড়া সাহেবাজার , মাষ্টার পাড়ায় আছে আম বাজার ।
এক সময়ে রাজশাহী অঞ্চলে আম ছিলো একটি পারিবারিক ফল, ঘরে খাওয়ার জন্য বা আত্মীয়স্বজনকে দেওয়ার জন্য আম চাষ করা হতো। কালক্রমে এই আম এখন মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে রাজশাহী অঞ্চলের অর্থনীতির চাকা। প্রতি বছর প্রায় কয়েক হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হয় এই আমকে ঘিরে। একটি ফল কীভাবে একটি অঞ্চলের অর্থনীতির মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে রাজশাহী সহ আসেপাস্বে জেলা গুলোতে দেখলে বোঝা যায় আমের বাগান গুলো দেখলে । দির্ঘদিন ধরে রাজশাহী অঞ্চলে আম চাষ কে কেন্দ্র করে পাল্টে যায় এ অঞ্চলের অর্থনীতির চাকা , কেবল শহরের বাজারে নয়, আমকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য পাল্টে দিয়েছে এ অঞ্চলের গ্রামীণ জনপদের অর্থনীতিও। বরেন্দ্র অঞ্চলে আম চাষী, বাগান মালিক , আম ব্যবসায়ী , কুরিয়ার ব্যবসায়ী , আম বহনকরী পরিবহন, , ভানচালক , আম নিয়ে যাওয়ার হন্য বাশের টুকরী তৈরীর জন্য শতাধিক পরিবার , আম গাছ পাহারারত শ্রমিক , আম পাড়ার জন্য শ্রমিক ,আম বহন করার জন্য শ্রমিক । আমের মুকুল আসার পর থেকেই দিনের পর দিন আমকে ঘিরে আম অর্থনীতির সাথে জড়িত লোকজনের সংখ্যা বাড়তে থাকে । আমের ভরা মৌসুমে হাজার মানুষের অর্থনীতের চাকাও পাল্টাতে থাকে । ছাত্র ,শিক্ষক বেকার যুবক, অন লাইনে ব্যবসাযী সহ কয়েক হাজার মানুষ মে থেকে আগষ্ট পযর্šÍ এই আম ব্যবসার সাথে জড়িত হয় ।
রাজশাহী অঞ্চলের আমের হাট, বাজার গুলোতে এখানকার আমের কদর বেশি থাকায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছেন ক্রেতা ও বিক্রেতারা।
এদিকে বানেস্বর হাটে ঢাকা থেকে আসা আম ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম বলেন, রাজশাহীর বানেশ্বর হাটের আমের অনেক স্বাদ। তাই আমরা এখান থেকে আম কিনে ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করি। এখানকার আমের অনেক চাহিদা রয়েছে। তবে আমের দাম এবার অনেক বেশি। গত বছর যে লোকনা আম ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা কিনেছি। এবার তা ১৬০০ থেকে ১৭০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
ময়মনসিংহ থেকে আসা আরেক ব্যবসায়ী রুবেল হোসেন বলেন, রাজশাহীতে আম কম থাকায় এবার আমের দাম অনেক বেশি। এই বাজারে সম্পূর্ণ ফরমালিন মুক্ত আম পাওয়া যায় সেজন্য আমরা এই বাজার থেকে আম কিনে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করি। দাম বেশি হলেও এখানকার আমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে ক্রেতাদের কাছে। এজন্য দাম বেশি হলেও সমস্যা হচ্ছে না বিক্রি করতে।
রাজশাহী অঞ্চলে এ বছর গাছে দেরিতে মুকুল এসেছে। মুকুলও কম এসেছিলো। মুকুল আসার কিছুদিন পর শিলা বৃষ্টিতে কিছু ঝরেও পড়ে। এরপর এপ্রিল মাসেই তীব্র তাপদাহ বয়ে যায়। তাতেও আমের গুটি ঝরে পড়ে। শেষে ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণেও রাজশাহীর আম ঝড়ে পড়ে।
চারঘাট উপজেলার আমচাষী ডাবলুর ২০ বিঘা আমের বাগান। বিভিন্ন জাতের আমের চাষ করেছেন তিনি। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করেই আমকে টিকে থাকতে হয়। তবে আমের যারা পরিচর্যা নেন তাদের গাছে আম ভালো থাকে। গতবারের চেয়ে কিছুটা কম এলেও আমার সব গাছেই মোটামুটি আম আছে। পরিচর্যার কারণেই এমনটা হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
রাজশাহীর বাঘার আমচাষী শফিকুল ইসলাম সানা গতবছর প্রায় এক কোটি টাকার আম বিক্রি করেছিলেন। তার মধ্যে ২৬ মেট্রিক টন আম বিদেশেই রফতানি করেন। শফিকুল ইসলাম এবছরও ৩০০ বিঘা জমিতে আমের চাষ করছেন। এ বছর গাছে অর্ধেকেরও কম আম এসেছে বলে জানান। তবে বাঘার অন্য চাষিদের তুলনায় তার অবস্থা কিছুটা ভালো। পরিচর্যা বেশি নেওয়ায় আমের আকারও ভালো হয়েছে।
শফিকুল ইসলাম সানা বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালে ৫০ শতাংশের মতো আম পড়ে গেছে। তারপরও আমার বাগানে ৪০ শতাংশের মতো আম আছে। তবে অন্য চাষিদের অবস্থা আরও খারাপ। ২০ শতাংশের কম আম এসেছে তাদের বাগানে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার আমের উৎপাদন কম হওয়ায় দাম বেশি। তা ছাড়া ব্যাপারীদের জন্য আরেকটা চ্যালেঞ্জ হলো, অনলাইন ব্যবসায়ী। তাঁরা মণে ৫০০ টাকা বেশি দিয়ে ভালো আমগুলো কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এই সুযোগে চাষিরাও বেশি দাম হাঁকছেন, ব্যবসায়ীদেরও সেই দামে কিনতে হচ্ছে। এই দুই কারণে আমের দাম বেড়ে গেছে।
অনলাইনে আম ব্যবসায়ী অনলাইন মার্কেটের স্বত্বাধিকারী খায়রুল কবীর বলেন, দেশের অভিজাত ক্রেতা, যাঁরা নির্ভেজাল আম খেতে চান, তাঁরা অনলাইনে ফরমাশ (অর্ডার) করেন। তাঁরা বাজারের সেরা আমগুলো বেশি দামে কিনে তাঁদের সরবরাহ করেন। তিনি বলেন, করোনার সময় থেকে অনলাইন বাজার বেড়েছে। এখন আরও চাঙা। এখন আরো অনেকে এই অন লাইন আম ব্যবসার সাথে যুক্ত হয়েছে ।
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর কাচারি মাঠে আমের বাজার বসে। বাজারের একটি ছাউনির নিচে বসে বানেশ্বরের খুঁটিপাড়া গ্রামের ব্যবসায়ী মানিক ও আহসান হাবিব হিসাব মেলাচ্ছেন, কোন আম কী পরিমাণে বাজারে নামল। তাঁরা দুজনেই ছোটবেলা থেকেই আমের ব্যবসা করেন। তাঁদের কথোপকথন থেকে জানা গেল,
বর্তমান বাজারে প্রতিমন আম রুপালি বিক্রি হচ্ছে ২২০০ থেকে ৩২০০ টাকা, লোকনা ১৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা, বারি ফোর ২৮০০ থেকে ৩ হাজার, ফজলি ১৬০০ থেকে ১৭০০ টাকা মন।
বিশাল এ আমের হাটে প্রতিদিন সকাল থেকে শুরু হয় কেনাবেচা, চলে রাত পর্যন্ত। বানেশ্বর হাটের খাটি আমের সুনাম রাজধানীসহ সারা দেশে। তাই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আম কিনতে আসেন ব্যবসায়ীরা।
দূর্গাপুর থেকে আম বিক্রি করতে আসা মাসুদ আলি বলেন, এবার গাছে আম বিগত সময়ের চেয়ে অনেক কম ছিল, তবে আমের যে দাম সে দামে ক্ষতিটা পুষিয়ে নিতে পারছি। অন্যান্য বাজারের চেয়ে এই বাজারে আমের দাম ভালো পাওয়া যায়- তাই এই হাটে আম বিক্রি করতে আসি।
পুঠিয়া উপজেলার আরেক আম বিক্রেতা মাইনুল আলী বলেন, আমার বাগানে যে আম ধরেছিলো তা নিয়ে আমি খুব চিন্তায় ছিলাম। এমন কম আম আর বিগত সময়ে দেখিনি। তবে আমের বর্তমান বাজার ভালো থাকায় লোকসান গুনতে হচ্ছে না ভালো দাম পাচ্ছি।
এদিকে আমের হাট থেকে ,বাগান থেকে প্যাকেট জাত করে সরাসরি আম পরিবহন , ও কুুরিয়ার ব্যবসায়ীরাও বাস্ত সময় পার করছে । আমের সিজন আসলেই কুরিয়ার ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠে। আম বাগান , হাট ও বাজার খাবে সরানরি প্যাকেটজাত করে আম পাঠানোর ব্যাবস্খা বরে থাকে বিভিন্য কুরিয়ার বাজারে প্রায় ১৫ টি মত কুরিয়ার সার্ভিস আম পাঠানোর কাজে ব্যস্ত। ঢাকায় আম পাঠাতে কেজি প্রতি ১২ টাকা ও ঢাকার বাইরে কেজি প্রতি ১৫ টাকা করে নিচ্ছে কুরিয়ার সার্ভিস গুলো। এদিকে আমকে ঘিরেই পরিবহনের জন্য গত ১০ জুন থেকে চালু হয়েছে রহনপুর থেকে চাপাইনবাবগ›জ, রাজশাহী হয়ে ঢাকা গামী ম্যাংগো ট্রেন।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৯৩ হাজার ২২৪ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২ লাখ ১৯ হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আম চাষ হয়েছে বারি আম-৩ বা আম্রপালি, ২৪০১১ হেক্টর জমিতে। এরপর রয়েছে যথাক্রমে আশ্বিনা ১৩৭৩০ হেক্টর, ফজলি ১১৯৭৭ হেক্টর, লক্ষণভোগ ৯৬৬৯ হেক্টর, খিরসাপাত ৯০২১, ল্যাংড়া ৬৭১৫ এবং বারি আম-৪ চাষাবাদ হয়েছে ৩৬৬২ হেক্টর জমিতে।
এর আগে গত ১২ মে রোববার রাজশাহী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বাগান মালিকদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে আম নামানোর সময়সীমা নির্ধারণ করেন জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ। এ সময় কৃষি কর্মকর্তা, আমচাষি, ব্যবসায়ী ও আম পরিবহনে নিয়োজিত সবার সঙ্গে আলোচনা করে নিরাপদ, বিষমুক্ত ও পরিপক্ব আম নিশ্চিত করতে ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ প্রকাশ করা হয়। সেখানেও এবারের আমের দাম নিয়ে কথা উঠে।
১৫ মে থেকে গুটি আম পাড়া যাবে, ২৫ মে থেকে গোপালভোগ ও রানিপছন্দ, ৩০ মে থেকে খিরসাপাত, ২৫ মে থেকে লক্ষণভোগ, ১০ জুন থেকে ল্যাংড়া ও ব্যানানা আম, ১৫ জুন থেকে আম্র্রালি ও ফজলি, ০৫ জুলাই থেকে বারি আম ৪, ১০ জুলাই থেকে আশ্বিনা, ১৫ জুলাই থেকে গৌড়মতি আর ২০ আগস্ট থেকে পরিপক্ক ইলামতি আম নামানো যাবে। এছাড়া কাটিমন ও বারিআম-১১ সারা বছর সংগ্রহ করা যাবে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক উম্মে ছালমা বলেন, চলতি মৌসুমে জেলায় এবার ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে। সেই হিসেবে আমের উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে দুই লাখ ৬০ হাজার ৩১৫ মেট্রিকটন। এবার আমের দাম ভালো, চাষি ও ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন বলে আশা করছি।