সাম্প্রতিক বন্যার প্রভাবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে দেশের ১১টি জেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় কৃষি ও পোল্ট্রি শিল্পের ওপর এই প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে। এর ফলে ডিমসহ অন্যান্য পণ্যের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। ডিমের দাম বেড়ে প্রতি ডজন ১৮০-১৮৫ টাকায় পৌঁছেছে, যা সাধারণ ক্রেতাদের জন্য উদ্বেগজনক। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন পুনরায় শুল্ক-কর প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে।

মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর, বাণিজ্যনীতি বিভাগের পক্ষ থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) একটি চিঠির মাধ্যমে এই সুপারিশ পাঠানো হয়। এনবিআরের একটি সূত্র জানিয়েছে, চিঠিতে বলা হয়েছে যে, ডিমের মূল্য বৃদ্ধি রোধে শুল্ক-কর প্রত্যাহার জরুরি।

পূর্বের সুপারিশ ও বর্তমান পরিস্থিতি

এর আগে, ২৯ আগস্ট ২০২৪ তারিখে ট্যারিফ কমিশন একটি বিশ্লেষণাত্মক প্রতিবেদন এনবিআরে পাঠায়, যেখানে পেঁয়াজ, আলু এবং ডিম আমদানিতে শুল্ক-কর হ্রাস করার সুপারিশ করা হয়েছিল। সুপারিশ অনুযায়ী ৪ সেপ্টেম্বর এনবিআর পেঁয়াজ ও আলুর ওপর বিদ্যমান শুল্ক-কর হ্রাস করে। এর ফলে বাজারে এই দুই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল হতে শুরু করে এবং সরবরাহও বৃদ্ধি পায়।

তবে, কমিশনের সুপারিশ সত্ত্বেও ডিমের ওপর শুল্ক-কর ছাড়ের বিষয়ে এখনো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে, ডিমের সরবরাহ সংকটে দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। ট্যারিফ কমিশন জানিয়েছে, ডিমের মূল্য গত এক মাসে ১৫ শতাংশ এবং গত এক বছরে ২০.৪১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজারে ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে শুল্ক-কর ছাড় দিয়ে ডিম আমদানি করলে এই অস্থিরতা কাটবে বলে কমিশন মনে করে।

পোল্ট্রি শিল্পের ক্ষতি ও বাজার অস্থিরতা

সম্প্রতি বন্যার কারণে দেশের পোল্ট্রি শিল্প মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশের বেশ কিছু অঞ্চলে পোল্ট্রি খামারগুলোতে বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে, যা ডিমের উৎপাদন ও সরবরাহে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এছাড়া, ডিম উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য উপকরণের মূল্যবৃদ্ধিও ডিমের মূল্যবৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। ফলে ডিমের বাজারে অস্বাভাবিক দাম দেখা যাচ্ছে এবং সরবরাহের ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে।

এই অবস্থায় ট্যারিফ কমিশন মনে করছে, পোল্ট্রি শিল্পের সুরক্ষার পাশাপাশি ডিমের আমদানি সাময়িকভাবে শুল্কমুক্ত করার মাধ্যমে বাজার স্থিতিশীল করা সম্ভব হবে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলে স্বল্প মেয়াদে ডিমের মূল্য সাধারণ জনগণের ক্রয়সীমার মধ্যে থাকবে এবং পোল্ট্রি শিল্পের ওপরও বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।

শুল্ক-কর কমানোর প্রস্তাবের যৌক্তিকতা

বর্তমানে ডিম আমদানিতে ৩৩ শতাংশ শুল্ক-কর বিদ্যমান। গত এক বছরে ডিম আমদানি না হওয়ার কারণে শুল্ক-কর হ্রাস করলে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই বলে ট্যারিফ কমিশন জানিয়েছে। বরং শুল্ক-কর ছাড়ের মাধ্যমে ডিম আমদানি করলে বাজারে সরবরাহ বাড়বে এবং মূল্য নিয়ন্ত্রণে আসবে।

ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ডিমকে অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই পণ্যটির মূল্যবৃদ্ধি রোধে এবং সাধারণ জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে শুল্ক-কর সাময়িকভাবে হ্রাস করা জরুরি। এছাড়া, শর্তসাপেক্ষে ডিম আমদানির অনুমতি দিলে পোল্ট্রি শিল্পও সুরক্ষিত থাকবে এবং দেশের বাজারে প্রয়োজনীয় ডিমের সরবরাহ বজায় রাখা সম্ভব হবে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও সুপারিশ

ট্যারিফ কমিশন মনে করে, দ্রুত ডিমের বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে এবং বৃহৎ জনস্বার্থে শুল্ক-কর হ্রাসের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। এর ফলে ডিমের ওপর মূল্যবৃদ্ধির চাপ কমবে এবং সাধারণ ক্রেতারা স্বস্তি পাবেন। পোল্ট্রি শিল্পের নেতিবাচক প্রভাবও হ্রাস পাবে এবং সরকার স্বল্পমেয়াদে রাজস্ব ক্ষতির আশঙ্কা না করেই এই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবে।

বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় কমিশন এনবিআরকে অনুরোধ করেছে, ডিমের ওপর সুনির্দিষ্ট মেয়াদে শুল্ক-কর প্রত্যাহার করে বাজারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হোক।