সাম্প্রতিক সময়ে চালের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহে চালের দাম কেজি প্রতি ২ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। চালের এই মূল্যবৃদ্ধির জন্য ব্যবসায়ীরা বন্যার প্রভাব এবং কিছু ব্যবসায়ীর ‘মজুদদারি কারসাজি’কে দায়ী করছেন। যদিও সরকারি পর্যায় থেকে চালের গুদামগুলোতে নজরদারি ও শুল্ক কমানোর মাধ্যমে এই সংকট মোকাবিলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
রাজধানীর অন্যতম বৃহৎ চালের আড়ত বাবুবাজারের বিক্রেতা আব্দুল জলিল জানান, গত সপ্তাহে প্রায় সব ধরনের চালের দামই বেড়েছে। ব্রি ২৮ জাতের চালের দাম চার টাকা পর্যন্ত বেড়ে বর্তমানে ৬০ টাকায় পৌঁছেছে, যেখানে আগে এটি ৫৬-৫৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। পাইজাম চালের দামও একইভাবে বেড়েছে। তিনি বলেন, এখন কোনো চালই পাইকারিতে ৬০ টাকার নিচে নেই, শুধুমাত্র মোটা চালের দাম কিছুটা কম, ৪৯ টাকা কেজি, যা আগে ৪৭ টাকা ছিল।
মিনিকেট ও নাজিরশাইল চালের দাম তুলনামূলক স্থিতিশীল থাকলেও মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে যাওয়ায় এসব চালের চাহিদা কিছুটা কমে গেছে। মিনিকেট চাল বর্তমানে ৭৩-৭৫ টাকা এবং নাজিরশাইল ৭৫-৮৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী মো. সায়েমও জানান, ব্রি ২৮ চালের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে ৫৬ টাকা থেকে বেড়ে ৬০ টাকায় পৌঁছেছে। অন্যদিকে পাইজাম এবং স্বর্ণা চালের দামও কেজি প্রতি ২ থেকে ৪ টাকা বেড়েছে। তার মতে, আগামী মাসে ব্রি-২৮ জাতের নতুন ধান বাজারে এলে চালের দাম কমে আসবে বলে তিনি আশা করছেন।
মজুদদারির অভিযোগ
চালের বাজারে এই মূল্যবৃদ্ধির জন্য ব্যবসায়ীরা দুটি প্রধান কারণ উল্লেখ করেছেন: বন্যা এবং মজুদদারি। বাবুবাজারের বিক্রেতা আব্দুল জলিলের মতে, কিছু বড় বড় কোম্পানি বাজারে সংকট দেখানোর জন্য চাল মজুদ করে রেখেছে। তিনি সরকারকে এই মজুদদারির বিরুদ্ধে ডিমের মতো চালের গুদামেও অভিযান চালানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
কৃষি মার্কেটের ব্যবসায়ী জালাল উদ্দিনও মনে করেন, বন্যার পাশাপাশি চালের দাম বৃদ্ধির পেছনে বড় কোম্পানিগুলোর মজুদদারি ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে, তারা বাজারে চাল সরবরাহ কমিয়ে সংকট সৃষ্টি করছে, যা দাম বাড়াচ্ছে।
মেসার্স জনপ্রিয় রাইস এজেন্সির বিক্রেতা শফিকুল আলমও মনে করেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি চালের দাম বৃদ্ধি আরও বাড়বে। বিশেষ করে, কুমিল্লা ও উত্তরাঞ্চলের বন্যার কারণে চালের দাম আরও বাড়বে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন।
খুচরা বাজারে প্রভাব
পাইকারিতে চালের দাম বাড়ায় এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও। বিজয় সরণি এলাকার ইমরান রাইসের বিক্রেতা সালমান খুচরায় ব্রি-২৮ চাল কেজি প্রতি ৬৫ টাকা, মিনিকেট ৭২ টাকা এবং নাজিরশাইল ৭৫-৮০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। তার মতে, চালের মৌসুম শেষ হওয়ায় দাম বাড়াটা ‘স্বাভাবিক’। তবে, আগামীতে নতুন ধান আসলে দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
মিন্টো রোডের একটি খাবারের হোটেলের মালিক ইমন নস্কর জানান, তিনি নিয়মিত চাল কিনতে জনপ্রিয় রাইস এজেন্সিতে যান। সেখানে সম্প্রতি ৩৫০০ টাকা দরে সাত বস্তা মিনিকেট চাল কিনেছেন। তবে, চালের নতুন চালান এলে বস্তা প্রতি দাম ১০০ টাকা বাড়বে বলে তাকে জানানো হয়েছে।
মিল মালিকদের বক্তব্য
চালের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে মজুদদারির অভিযোগের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ রাইস মিল মালিক সমিতির প্রচার সম্পাদক জয়নাল আবেদিন বলেন, কুষ্টিয়ায় ব্রি-২৮ চালের দাম প্রতি বস্তায় ৫০ টাকা করে বেড়েছে। তবে, ঢাকায় চালের দাম যেভাবে বেড়েছে, তার কোনো বাস্তব কারণ তিনি কুষ্টিয়ার মোকামে দেখতে পাননি। তিনি জানান, বন্যার কারণে কিছু সময়ের জন্য ধানের বেচাকেনা বন্ধ ছিল, তবে এখন বেচাকেনা স্বাভাবিক হয়েছে। বাজারে নতুন চাল আসার পর দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
সরকারের পদক্ষেপ
চালের বাজারের এই অস্থিরতা সামাল দিতে সরকার বেসরকারি খাতে চাল আমদানির শুল্ক কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে। আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ এবং নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। এছাড়া আগাম কর পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর ফলে চালের আমদানি ব্যয় কেজি প্রতি প্রায় ১৪ টাকা ৪০ পয়সা কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলিম আখতার খান বলেছেন, সরকার চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে তৎপর রয়েছে এবং কেউ যদি অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়ায়, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সরকারের পক্ষ থেকে চালের আমদানি বাড়ানোর পদক্ষেপ, শুল্ক কমানো এবং নতুন ধান বাজারে আসার কারণে আগামী এক মাসের মধ্যে চালের বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসার আশা করা হচ্ছে।
সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪
সাম্প্রতিক সময়ে চালের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহে চালের দাম কেজি প্রতি ২ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। চালের এই মূল্যবৃদ্ধির জন্য ব্যবসায়ীরা বন্যার প্রভাব এবং কিছু ব্যবসায়ীর ‘মজুদদারি কারসাজি’কে দায়ী করছেন। যদিও সরকারি পর্যায় থেকে চালের গুদামগুলোতে নজরদারি ও শুল্ক কমানোর মাধ্যমে এই সংকট মোকাবিলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
রাজধানীর অন্যতম বৃহৎ চালের আড়ত বাবুবাজারের বিক্রেতা আব্দুল জলিল জানান, গত সপ্তাহে প্রায় সব ধরনের চালের দামই বেড়েছে। ব্রি ২৮ জাতের চালের দাম চার টাকা পর্যন্ত বেড়ে বর্তমানে ৬০ টাকায় পৌঁছেছে, যেখানে আগে এটি ৫৬-৫৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। পাইজাম চালের দামও একইভাবে বেড়েছে। তিনি বলেন, এখন কোনো চালই পাইকারিতে ৬০ টাকার নিচে নেই, শুধুমাত্র মোটা চালের দাম কিছুটা কম, ৪৯ টাকা কেজি, যা আগে ৪৭ টাকা ছিল।
মিনিকেট ও নাজিরশাইল চালের দাম তুলনামূলক স্থিতিশীল থাকলেও মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে যাওয়ায় এসব চালের চাহিদা কিছুটা কমে গেছে। মিনিকেট চাল বর্তমানে ৭৩-৭৫ টাকা এবং নাজিরশাইল ৭৫-৮৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী মো. সায়েমও জানান, ব্রি ২৮ চালের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে ৫৬ টাকা থেকে বেড়ে ৬০ টাকায় পৌঁছেছে। অন্যদিকে পাইজাম এবং স্বর্ণা চালের দামও কেজি প্রতি ২ থেকে ৪ টাকা বেড়েছে। তার মতে, আগামী মাসে ব্রি-২৮ জাতের নতুন ধান বাজারে এলে চালের দাম কমে আসবে বলে তিনি আশা করছেন।
মজুদদারির অভিযোগ
চালের বাজারে এই মূল্যবৃদ্ধির জন্য ব্যবসায়ীরা দুটি প্রধান কারণ উল্লেখ করেছেন: বন্যা এবং মজুদদারি। বাবুবাজারের বিক্রেতা আব্দুল জলিলের মতে, কিছু বড় বড় কোম্পানি বাজারে সংকট দেখানোর জন্য চাল মজুদ করে রেখেছে। তিনি সরকারকে এই মজুদদারির বিরুদ্ধে ডিমের মতো চালের গুদামেও অভিযান চালানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
কৃষি মার্কেটের ব্যবসায়ী জালাল উদ্দিনও মনে করেন, বন্যার পাশাপাশি চালের দাম বৃদ্ধির পেছনে বড় কোম্পানিগুলোর মজুদদারি ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে, তারা বাজারে চাল সরবরাহ কমিয়ে সংকট সৃষ্টি করছে, যা দাম বাড়াচ্ছে।
মেসার্স জনপ্রিয় রাইস এজেন্সির বিক্রেতা শফিকুল আলমও মনে করেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি চালের দাম বৃদ্ধি আরও বাড়বে। বিশেষ করে, কুমিল্লা ও উত্তরাঞ্চলের বন্যার কারণে চালের দাম আরও বাড়বে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন।
খুচরা বাজারে প্রভাব
পাইকারিতে চালের দাম বাড়ায় এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও। বিজয় সরণি এলাকার ইমরান রাইসের বিক্রেতা সালমান খুচরায় ব্রি-২৮ চাল কেজি প্রতি ৬৫ টাকা, মিনিকেট ৭২ টাকা এবং নাজিরশাইল ৭৫-৮০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। তার মতে, চালের মৌসুম শেষ হওয়ায় দাম বাড়াটা ‘স্বাভাবিক’। তবে, আগামীতে নতুন ধান আসলে দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
মিন্টো রোডের একটি খাবারের হোটেলের মালিক ইমন নস্কর জানান, তিনি নিয়মিত চাল কিনতে জনপ্রিয় রাইস এজেন্সিতে যান। সেখানে সম্প্রতি ৩৫০০ টাকা দরে সাত বস্তা মিনিকেট চাল কিনেছেন। তবে, চালের নতুন চালান এলে বস্তা প্রতি দাম ১০০ টাকা বাড়বে বলে তাকে জানানো হয়েছে।
মিল মালিকদের বক্তব্য
চালের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে মজুদদারির অভিযোগের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ রাইস মিল মালিক সমিতির প্রচার সম্পাদক জয়নাল আবেদিন বলেন, কুষ্টিয়ায় ব্রি-২৮ চালের দাম প্রতি বস্তায় ৫০ টাকা করে বেড়েছে। তবে, ঢাকায় চালের দাম যেভাবে বেড়েছে, তার কোনো বাস্তব কারণ তিনি কুষ্টিয়ার মোকামে দেখতে পাননি। তিনি জানান, বন্যার কারণে কিছু সময়ের জন্য ধানের বেচাকেনা বন্ধ ছিল, তবে এখন বেচাকেনা স্বাভাবিক হয়েছে। বাজারে নতুন চাল আসার পর দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
সরকারের পদক্ষেপ
চালের বাজারের এই অস্থিরতা সামাল দিতে সরকার বেসরকারি খাতে চাল আমদানির শুল্ক কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে। আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ এবং নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। এছাড়া আগাম কর পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর ফলে চালের আমদানি ব্যয় কেজি প্রতি প্রায় ১৪ টাকা ৪০ পয়সা কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলিম আখতার খান বলেছেন, সরকার চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে তৎপর রয়েছে এবং কেউ যদি অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়ায়, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সরকারের পক্ষ থেকে চালের আমদানি বাড়ানোর পদক্ষেপ, শুল্ক কমানো এবং নতুন ধান বাজারে আসার কারণে আগামী এক মাসের মধ্যে চালের বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসার আশা করা হচ্ছে।