তামাক আইন সংশোধনে নীতি নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় অদূরদর্শী ও তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত গ্রহণ কোনো সুফল বয়ে আনবে না। এ সংক্রান্ত নীতিমালা যাতে সরকারের জনস্বাস্থ্য লক্ষ্য ও রাজস্ব অর্জনের প্রয়াসের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, তা নিশ্চিত করতে অংশীদারদের সঙ্গে সংলাপ প্রয়োজন। ২২ অক্টোবর রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিমত প্রকাশ করেন আলোচকরা।
বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন (বেন্ডস্টা) এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে ইলেকট্রনিক সিগারেট (ই-সিগারেট) ও অন্যান্য তামাক ক্ষতিহ্রাস পণ্যের জন্য যৌক্তিক নীতিমালা প্রণয়নের আহ্বান জানানো হয়।
বাংলাদেশের প্রধান ভেপ আমদানিকারকদের প্রতিনিধিত্বকারী বেন্ডস্টা, ২০০৫ সালের ধূমপান ও তামাকজাত পণ্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন (২০১৩ সালে সংশোধিত) এর প্রস্তাবিত সংশোধনী নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জনমত গ্রহণের জন্য প্রকাশিত খসড়া প্রস্তাবটিতে ই-সিগারেটের মতো পণ্য সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা জনস্বাস্থ্য ও সংশ্লিষ্ট শিল্পের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে বলে দাবি সংগঠনটির। প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের এ প্রস্তাবিত সংশোধনীতে স্টেকহোল্ডারদের মতামতের অভাব থাকায় ও অধিকতর যাচাই বাছাইয়ের জন্য গত বছর (২০২৩) মন্ত্রিসভায় ফেরত পাঠানো হয়।
বেন্ডস্টার সভাপতি সুমন জামান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমরা তামাক ও ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের প্রচেষ্টাকে সম্পূর্ণ সমর্থন করি। তবে, ভেপিং নিয়ে জনমনে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। ই-সিগারেট ও ভেপকে প্রচলিত সিগারেটের সাথে এক পাল্লায় ফেলা উচিত নয়। এসব পণ্যে টার নেই, যা সিগারেট পোড়ানোর মাধ্যমে তৈরি হওয়া সবচেয়ে ক্ষতিকর পদার্থ। ফলে এগুলো অনেক কম ক্ষতিকর।
তিনি বলেন, ভেপিং বিষয়ক আন্তর্জাতিক তথ্য-প্রমাণাদি ক্রমশ বাড়ছে, যা ভেপিংকে ধূমপানের তুলনায় কম ক্ষতিকর বিকল্প হিসেবে প্রমাণ করছে। ইউকে হেলথ সিকিউরিটি এজেন্সি নিশ্চিত করেছে যে ভেপিং ধূমপানের তুলনায় ৯৫ শতাংশ কম ক্ষতিকর এবং যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, নিউজিল্যান্ড এবং সুইডেনসহ দেশগুলো তাদের জনস্বাস্থ্য নীতির অংশ হিসেবে এর ব্যবহারকে উৎসাহিত করছে। সুইডেনে ধূমপানের হার এখন ৫ শতাংশের নিচে। এর প্রধান কারণ হল তাদের নীতি তামাক ক্ষতি হ্রাসকারী পণ্যগুলোর ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।
জামান বলেন, ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করা খুব সহজ, তবে তা কার্যকর করা সহজ নয়। ভারতসহ বিভিন্ন দেশ ভেপিং নিষিদ্ধ করেছে, কিন্তু অবৈধ পথে এর ব্যবহার এখনও প্রচলিত রয়েছে। এই পণ্যগুলো নিষিদ্ধ করার পরিবর্তে, আমাদের উচিত যৌক্তিক নিয়মকানুন প্রয়োগ করা, যা প্রচলিত ধূমপানের ব্যবহার কমাতে ও সরকারের জনস্বাস্থ্য লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনেে বেন্ডস্টার সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ান আহমেদ বাংলাদেশে ভেপিং এর ভবিষ্যৎ নির্ধারণে সংলাপ ও তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
বেন্ডস্টার প্রতিনিধিরা ই-সিগারেট নিষিদ্ধ না করে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক সুবিধার বিষয়েও আলোচনা করেন। উদাহরণস্বরূপ, ২০২১ সালে যুক্তরাজ্য সরকার ভেপিং খাত থেকে ৩১০ মিলিয়ন পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪,২০০ কোটি টাকা) আয় করেছে, যা জনস্বাস্থ্য লক্ষ্যের পাশাপাশি রাজস্ব উৎস হিসেবে কাজ করেছে।
সংগঠনটি ভেপিং পণ্যের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অংশীদারভিত্তিক আলোচনায় বেন্ডস্টাকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়।
২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত বেন্ডস্টা তামাক ক্ষতিহ্রাস পণ্যকে প্রচলিত সিগারেটের তুলনায় কম ক্ষতিকর বিকল্প হিসেবে প্রচলিত করার লক্ষ্যে কাজ করছে। সংগঠনটি বিশ^াস করে, নিয়ন্ত্রিত ভেপিং ধূমপানের ক্ষতি কমাতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে যা বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হতে পারে।
অপরাধ ও দুর্নীতি: দেশে ও লন্ডনে আনোয়ারুজ্জামানের বিপুল সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুদক
অপরাধ ও দুর্নীতি: ৪৩ বছর ধরে প্লট দখলে আমলা-রাজনীতিকরা, বঞ্চিত স্থানীয় চাষিরা
নগর-মহানগর: আরও কয়েকটি এলাকায় সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা