গত এক দশকে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক বাজারে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অফিস অব টেক্সটাইলস অ্যান্ড গার্মেন্টস (ওটেক্সা) প্রকাশিত সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৪ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ৫০ দশমিক ৭৯ শতাংশ। এতে বাংলাদেশ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিকারী দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।
ওটেক্সার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ছিল ৪ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার। সেই পরিমাণ ২০২২ সালে এসে বেড়ে দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলারে। তবে ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সামগ্রিকভাবে পোশাক পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানিতেও পতন ঘটে। ওই বছরে রপ্তানি কমে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলারে, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় এক চতুর্থাংশ হ্রাস।
যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক আমদানির চাহিদা ২০২৩ সালে ২২ দশমিক ০৪ শতাংশ কমে যাওয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানি হ্রাস পায়। এটি ছিল এক দশকে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশি পোশাক রপ্তানিতে উল্লেখযোগ্য পতন।
যুক্তরাষ্ট্রে চীনের পোশাক রপ্তানি এক দশকে উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। ২০১৪ সালে চীনের রপ্তানি ছিল ২৯ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু ২০২৩ সালে তা কমে দাঁড়ায় ১৬ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলারে। এই কমতির পরিমাণ প্রায় ৪৫ দশমিক ২৪ শতাংশ। চীনের বাজারে এই পতনের ফলে ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশ নিজেদের স্থান করে নিতে পেরেছে।
ভিয়েতনামের রপ্তানি গত এক দশকে ৫২ দশমিক ৯৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের রপ্তানি ছিল ৯ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৩ সালে বেড়ে ১৪ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়। এর ফলে ভিয়েতনাম বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে।
বাংলাদেশের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোরও রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতের রপ্তানি ২০১৪ সালের ৩ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২৩ সালে ৪ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। পাকিস্তানের রপ্তানি এক দশকে ১ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ২ দশমিক ০২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
কম্বোডিয়ার রপ্তানিও ৩৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৩ সালে ৩ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা ২০১৪ সালে ছিল ২ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার।
যেখানে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার বেশিরভাগ দেশ যুক্তরাষ্ট্রে তাদের রপ্তানি বাড়াতে সক্ষম হয়েছে, সেখানে চীনের পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়া, মেক্সিকো, হন্ডুরাস এবং ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার রপ্তানি ১৩ দশমিক ৩১ শতাংশ কমে গেছে, মেক্সিকোর রপ্তানি কমেছে ২৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ, হন্ডুরাসের ৬ দশমিক ০৮ শতাংশ এবং ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে ১৭ দশমিক ৯৯ শতাংশ।
বাংলাদেশ গত এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তার সাশ্রয়ী উৎপাদন ক্ষমতা, উচ্চমানের পোশাক এবং দক্ষ শ্রমশক্তির জন্য স্বীকৃতি পেয়েছে। ভারতকে পিছনে ফেলে আন্তর্জাতিক পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশকে এই সাফল্য ধরে রাখতে হলে পরিবেশবান্ধব উৎপাদন, শ্রমিক কল্যাণ এবং নতুন বাজারের প্রসারে মনোযোগ দিতে হবে।
বাংলাদেশের পোশাক শিল্প বর্তমানে মূলত সাশ্রয়ী মূল্যের কারণে জনপ্রিয় হলেও, উন্নত দেশের ক্রেতাদের চাহিদা পূরণের জন্য গুণগত মান ও পরিবেশবান্ধব উৎপাদনে আরও মনোযোগ দিতে হবে। এছাড়া, বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা বাড়াতে হলে নিত্যনতুন ডিজাইন এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নে বিনিয়োগের প্রয়োজন।
গত এক দশকে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রসহ বৈশ্বিক বাজারে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চাহিদা হ্রাসের প্রভাব এবং চীনের পতন নতুন প্রতিযোগিতার সূচনা করেছে। এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে বাংলাদেশকে পরিবেশবান্ধব এবং শ্রমবান্ধব উৎপাদন ব্যবস্থা আরও সুদৃঢ় করতে হবে। এর পাশাপাশি, নতুন বাজারে প্রবেশ এবং বৈচিত্র্যময় পণ্যের উন্নয়নকেও প্রাধান্য দিতে হবে।
রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪
গত এক দশকে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক বাজারে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অফিস অব টেক্সটাইলস অ্যান্ড গার্মেন্টস (ওটেক্সা) প্রকাশিত সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৪ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ৫০ দশমিক ৭৯ শতাংশ। এতে বাংলাদেশ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিকারী দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।
ওটেক্সার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ছিল ৪ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার। সেই পরিমাণ ২০২২ সালে এসে বেড়ে দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলারে। তবে ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সামগ্রিকভাবে পোশাক পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানিতেও পতন ঘটে। ওই বছরে রপ্তানি কমে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলারে, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় এক চতুর্থাংশ হ্রাস।
যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক আমদানির চাহিদা ২০২৩ সালে ২২ দশমিক ০৪ শতাংশ কমে যাওয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানি হ্রাস পায়। এটি ছিল এক দশকে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশি পোশাক রপ্তানিতে উল্লেখযোগ্য পতন।
যুক্তরাষ্ট্রে চীনের পোশাক রপ্তানি এক দশকে উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। ২০১৪ সালে চীনের রপ্তানি ছিল ২৯ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু ২০২৩ সালে তা কমে দাঁড়ায় ১৬ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলারে। এই কমতির পরিমাণ প্রায় ৪৫ দশমিক ২৪ শতাংশ। চীনের বাজারে এই পতনের ফলে ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশ নিজেদের স্থান করে নিতে পেরেছে।
ভিয়েতনামের রপ্তানি গত এক দশকে ৫২ দশমিক ৯৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের রপ্তানি ছিল ৯ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৩ সালে বেড়ে ১৪ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়। এর ফলে ভিয়েতনাম বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে।
বাংলাদেশের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোরও রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতের রপ্তানি ২০১৪ সালের ৩ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২৩ সালে ৪ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। পাকিস্তানের রপ্তানি এক দশকে ১ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ২ দশমিক ০২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
কম্বোডিয়ার রপ্তানিও ৩৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৩ সালে ৩ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা ২০১৪ সালে ছিল ২ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার।
যেখানে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার বেশিরভাগ দেশ যুক্তরাষ্ট্রে তাদের রপ্তানি বাড়াতে সক্ষম হয়েছে, সেখানে চীনের পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়া, মেক্সিকো, হন্ডুরাস এবং ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার রপ্তানি ১৩ দশমিক ৩১ শতাংশ কমে গেছে, মেক্সিকোর রপ্তানি কমেছে ২৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ, হন্ডুরাসের ৬ দশমিক ০৮ শতাংশ এবং ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে ১৭ দশমিক ৯৯ শতাংশ।
বাংলাদেশ গত এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তার সাশ্রয়ী উৎপাদন ক্ষমতা, উচ্চমানের পোশাক এবং দক্ষ শ্রমশক্তির জন্য স্বীকৃতি পেয়েছে। ভারতকে পিছনে ফেলে আন্তর্জাতিক পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশকে এই সাফল্য ধরে রাখতে হলে পরিবেশবান্ধব উৎপাদন, শ্রমিক কল্যাণ এবং নতুন বাজারের প্রসারে মনোযোগ দিতে হবে।
বাংলাদেশের পোশাক শিল্প বর্তমানে মূলত সাশ্রয়ী মূল্যের কারণে জনপ্রিয় হলেও, উন্নত দেশের ক্রেতাদের চাহিদা পূরণের জন্য গুণগত মান ও পরিবেশবান্ধব উৎপাদনে আরও মনোযোগ দিতে হবে। এছাড়া, বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা বাড়াতে হলে নিত্যনতুন ডিজাইন এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নে বিনিয়োগের প্রয়োজন।
গত এক দশকে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রসহ বৈশ্বিক বাজারে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চাহিদা হ্রাসের প্রভাব এবং চীনের পতন নতুন প্রতিযোগিতার সূচনা করেছে। এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে বাংলাদেশকে পরিবেশবান্ধব এবং শ্রমবান্ধব উৎপাদন ব্যবস্থা আরও সুদৃঢ় করতে হবে। এর পাশাপাশি, নতুন বাজারে প্রবেশ এবং বৈচিত্র্যময় পণ্যের উন্নয়নকেও প্রাধান্য দিতে হবে।