মূল্য নির্ধারণ কাঠামোর সংস্কার হলে জ্বালানি তেলের দাম কমপক্ষে ১০ কমানো সম্ভব বলে জানিয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাজারভিত্তিক জ্বালানির মূল্য: সরকারের নেতৃত্বাধীন উদ্যোগ এবং সম্ভাব্য সংশোধন’ শীর্ষক ডায়ালগে এ তথ্য জানায় সিপিডি।
ডায়ালগে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা সহযোগী হেলেন মাশিয়াত প্রিয়তী ও প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট ফয়সাল।
অনুষ্ঠানে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সব খাতে সংস্কার চলছে। জ্বালানি খাতেও এর হাওয়া লাগছে। ভোক্তার স্বার্থ বিবেচনা করে জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ করার সুযোগ রয়েছে। বিপিসি’র (বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন) ভর্তুকির প্রয়োজন পড়ে না, কারণ তারা বড় মুনাফা করে। এই মুনাফা সমন্বয় করলে ভোক্তাস্বার্থ প্রাধান্য পাবে, এছাড়া ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বিদ্যুতে।
মূল প্রবন্ধে মাশিয়াত প্রিয়তী বলেন, বিপিসি কোন মডেল বা কোন আইনে জ্বালানির দাম নির্ধারণ করে তা পরিষ্কার নয়। দাম নিয়ে ভোক্তাও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। ২০১৫ সাল থেকে তারা ভর্তুকি পায় না, কেননা তারা মুনাফা করে। জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়িয়ে ক্ষতি সমন্বয় করে।
মূল প্রবন্ধে সিপিডি জানায়, বাজারভিত্তিক ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে মূল্য নির্ধারণ হলে ডিজেলের দাম ১০.৫০ টাকা, কেরোসিনের দাম ৮.১০ টাকা, পেট্রোলের দাম ১১.৩২ টাকা ও ফার্নেস অয়েলের দাম ০.৭১ টাকা কমানো সম্ভব।
সিপিডি মনে করে, জ্বালানি তেলের দাম গ্রাহকের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা প্রয়োজন। পাশাপাশি মুদ্রার অবমূল্যায়নের কারণে মূল্য বৃদ্ধি পেলে পরে তা সমন্বয় করা যেতে পারে। জ্বালানি ব্যবস্থাপনায় মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি, মূল্য নির্ধারণ, বাস্তবায়ন ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বিইআরসি’র হাতে ন্যস্ত করার প্রস্তাব করে প্রতিষ্ঠানটি। পাশাপাশি গণশুনানির মাধ্যমে জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার পরামর্শ দেয়। এর মাধ্যমে ভোক্তার চাহিদার দিকটি নিশ্চিত করা সম্ভব। এ বিষয়ে বিইআরসি একটি রেগুলেটরি ড্রাফট জমা দিয়েছিল, সেটি অনুমোদন করা হলে আইনি পথে মূল্য নির্ধারণের বিষয়টি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে মনে করছে সিপিডি।
অনুষ্ঠানে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, বিগত সরকারের সঙ্গে তেলের দাম নিয়ে আলোচনা আবর্জনায় পরিণত হয়েছে। তারা জ্বালানির দাম নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করে করতো। এখনকার সরকারের অন্য কোনো স্বার্থ নেই। এ কারণে তেলের দাম নির্ধারণে জনগণের স্বার্থটাই বিবেচনা করা উচিত। খাদ্যের মতো জ্বালানি নিশ্চিত করাও সরকারের মৌলিক দায়িত্ব উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিপিসি জ্বালানি থেকে ১৩/১৪ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করে। সরকার একইসঙ্গে মুনাফা ও ট্যাক্স নিয়ে থাকে। এটা সরকারের কাজ নয়। শামসুল আলম বলেন, জ্বালানির মূল্য নির্ধারণে মিটিং করা হয় সিঙ্গাপুর, দুবাইয়ে। এই মিটিংয়ের নামে বাড়তি খরচ করে জ্বালানির দাম নির্ধারণের ওপর চাপানো হয়।
বিপিসির চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্য কমাতে হলে তেলের চুরি কমাতে হবে। সিস্টেম লসের পরিমাণ কমাতে হবে। তাই তেল বিক্রির কার্যক্রম অটোমেশনের বিকল্প নেই। আমাদের স্টোরেজ ক্ষমতা কম, ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে বিপুল পরিমাণ টাকা বেশি খরচ হয়েছে। বর্তমানে স্টোরেজ বাড়ানোর কাজ চলছে। এতে খরচও কমার পাশাপাশি দামও কমবে।
বিইআরসির চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেন, জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণের এখতিয়ার বিইআরসির হাতে ছেড়ে দেওয়ার ইস্যুতে সরকার দ্বিধায় রয়েছে, যে কোনো সময় যে কোনো কিছু (হঠাৎ দাম বৃদ্ধি) হতে পারে, তখন ভোক্তারা বহন করতে পারবে কিনা। আমি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার পর উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেছি, আমি জানিয়েছি, তেমন কোনো পরিস্থিতির উদ্ভব হলে সরকার বিইআরসির মাধ্যমেও ভর্তুকি দিতে পারবে। বিইআরসি সহসা এই তেলের দাম নিয়ে কাজ করবে। এটা নিয়ে আমরা কাজ করতেছি। বিপিসি যে তালিকা (ফরমুলা) করেছে, সেই তালিকা চূড়ান্ত নয়, অবশ্যই অনেক বিষয় উঠে আসবে। ভোক্তাদের মতামতও নেওয়া হবে।
বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র এনার্জি বিশেষজ্ঞ তৌহিদ মওলা বলেন, বাজারভিত্তিক মূল্য পদ্ধতিতে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম যতই বাড়ুক দেশের বাজারের যেন সর্বোচ্চ ১০ শতাংশে উপরে না হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে দেশের বাজারে সর্বনিম্ন ৫ শতাংশ কমানোর পরামর্শ দেন বিশ্ব ব্যাংকের এই এনার্জি বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, দেশের প্রান্তিক মানুষের কাজে ডিজেল ব্যবহার হয়ে থাকে। এ কারণে ডিজেলের দাম পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে।
শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪
মূল্য নির্ধারণ কাঠামোর সংস্কার হলে জ্বালানি তেলের দাম কমপক্ষে ১০ কমানো সম্ভব বলে জানিয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাজারভিত্তিক জ্বালানির মূল্য: সরকারের নেতৃত্বাধীন উদ্যোগ এবং সম্ভাব্য সংশোধন’ শীর্ষক ডায়ালগে এ তথ্য জানায় সিপিডি।
ডায়ালগে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা সহযোগী হেলেন মাশিয়াত প্রিয়তী ও প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট ফয়সাল।
অনুষ্ঠানে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সব খাতে সংস্কার চলছে। জ্বালানি খাতেও এর হাওয়া লাগছে। ভোক্তার স্বার্থ বিবেচনা করে জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ করার সুযোগ রয়েছে। বিপিসি’র (বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন) ভর্তুকির প্রয়োজন পড়ে না, কারণ তারা বড় মুনাফা করে। এই মুনাফা সমন্বয় করলে ভোক্তাস্বার্থ প্রাধান্য পাবে, এছাড়া ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বিদ্যুতে।
মূল প্রবন্ধে মাশিয়াত প্রিয়তী বলেন, বিপিসি কোন মডেল বা কোন আইনে জ্বালানির দাম নির্ধারণ করে তা পরিষ্কার নয়। দাম নিয়ে ভোক্তাও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। ২০১৫ সাল থেকে তারা ভর্তুকি পায় না, কেননা তারা মুনাফা করে। জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়িয়ে ক্ষতি সমন্বয় করে।
মূল প্রবন্ধে সিপিডি জানায়, বাজারভিত্তিক ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে মূল্য নির্ধারণ হলে ডিজেলের দাম ১০.৫০ টাকা, কেরোসিনের দাম ৮.১০ টাকা, পেট্রোলের দাম ১১.৩২ টাকা ও ফার্নেস অয়েলের দাম ০.৭১ টাকা কমানো সম্ভব।
সিপিডি মনে করে, জ্বালানি তেলের দাম গ্রাহকের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা প্রয়োজন। পাশাপাশি মুদ্রার অবমূল্যায়নের কারণে মূল্য বৃদ্ধি পেলে পরে তা সমন্বয় করা যেতে পারে। জ্বালানি ব্যবস্থাপনায় মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি, মূল্য নির্ধারণ, বাস্তবায়ন ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বিইআরসি’র হাতে ন্যস্ত করার প্রস্তাব করে প্রতিষ্ঠানটি। পাশাপাশি গণশুনানির মাধ্যমে জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার পরামর্শ দেয়। এর মাধ্যমে ভোক্তার চাহিদার দিকটি নিশ্চিত করা সম্ভব। এ বিষয়ে বিইআরসি একটি রেগুলেটরি ড্রাফট জমা দিয়েছিল, সেটি অনুমোদন করা হলে আইনি পথে মূল্য নির্ধারণের বিষয়টি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে মনে করছে সিপিডি।
অনুষ্ঠানে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, বিগত সরকারের সঙ্গে তেলের দাম নিয়ে আলোচনা আবর্জনায় পরিণত হয়েছে। তারা জ্বালানির দাম নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করে করতো। এখনকার সরকারের অন্য কোনো স্বার্থ নেই। এ কারণে তেলের দাম নির্ধারণে জনগণের স্বার্থটাই বিবেচনা করা উচিত। খাদ্যের মতো জ্বালানি নিশ্চিত করাও সরকারের মৌলিক দায়িত্ব উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিপিসি জ্বালানি থেকে ১৩/১৪ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করে। সরকার একইসঙ্গে মুনাফা ও ট্যাক্স নিয়ে থাকে। এটা সরকারের কাজ নয়। শামসুল আলম বলেন, জ্বালানির মূল্য নির্ধারণে মিটিং করা হয় সিঙ্গাপুর, দুবাইয়ে। এই মিটিংয়ের নামে বাড়তি খরচ করে জ্বালানির দাম নির্ধারণের ওপর চাপানো হয়।
বিপিসির চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্য কমাতে হলে তেলের চুরি কমাতে হবে। সিস্টেম লসের পরিমাণ কমাতে হবে। তাই তেল বিক্রির কার্যক্রম অটোমেশনের বিকল্প নেই। আমাদের স্টোরেজ ক্ষমতা কম, ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে বিপুল পরিমাণ টাকা বেশি খরচ হয়েছে। বর্তমানে স্টোরেজ বাড়ানোর কাজ চলছে। এতে খরচও কমার পাশাপাশি দামও কমবে।
বিইআরসির চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেন, জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণের এখতিয়ার বিইআরসির হাতে ছেড়ে দেওয়ার ইস্যুতে সরকার দ্বিধায় রয়েছে, যে কোনো সময় যে কোনো কিছু (হঠাৎ দাম বৃদ্ধি) হতে পারে, তখন ভোক্তারা বহন করতে পারবে কিনা। আমি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার পর উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেছি, আমি জানিয়েছি, তেমন কোনো পরিস্থিতির উদ্ভব হলে সরকার বিইআরসির মাধ্যমেও ভর্তুকি দিতে পারবে। বিইআরসি সহসা এই তেলের দাম নিয়ে কাজ করবে। এটা নিয়ে আমরা কাজ করতেছি। বিপিসি যে তালিকা (ফরমুলা) করেছে, সেই তালিকা চূড়ান্ত নয়, অবশ্যই অনেক বিষয় উঠে আসবে। ভোক্তাদের মতামতও নেওয়া হবে।
বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র এনার্জি বিশেষজ্ঞ তৌহিদ মওলা বলেন, বাজারভিত্তিক মূল্য পদ্ধতিতে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম যতই বাড়ুক দেশের বাজারের যেন সর্বোচ্চ ১০ শতাংশে উপরে না হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে দেশের বাজারে সর্বনিম্ন ৫ শতাংশ কমানোর পরামর্শ দেন বিশ্ব ব্যাংকের এই এনার্জি বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, দেশের প্রান্তিক মানুষের কাজে ডিজেল ব্যবহার হয়ে থাকে। এ কারণে ডিজেলের দাম পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে।