ফরেনসিক অডিটের মাধ্যমে ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনার উদ্যোগ
ঋণ জালিয়াতি এবং তারল্য সংকটের কারণে দুর্দশায় পড়া পাঁচ বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীদের (এমডি) বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তের জন্য ব্যাংকগুলোতে ফরেনসিক অডিট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এই পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, এসআইবিএল, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক এবং আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক।
ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ এই ছুটির সিদ্ধান্ত নেয়, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর অনুমোদন করেছেন। ছুটিতে পাঠানো এমডিদের মধ্যে রয়েছেন-
সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী (ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক)
মোহাম্মদ ফিরোজ হোসেন (এক্সিম ব্যাংক)
মোহাম্মদ ফোরকানউল্লাহ (এসআইবিএল)
শফিউদ্দিন আহমেদ (ইউনিয়ন ব্যাংক)
সৈয়দ হাবিব হাসনাত (গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক)।
আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ শফিক বিন আবদুল্লাহকে গত অক্টোবরে পুনর্নিয়োগের অনুমোদন আটকে দেওয়া হয়। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক এই ব্যাংকের দায়িত্বে নির্বাহী পরিচালক মজিবুর রহমানকে নিয়োগ দেয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ছয় ব্যাংকের সম্পদ ব্যবস্থাপনা (অ্যাসেট কোয়ালিটি রিভিউ) এবং লেনদেনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ফরেনসিক অডিট পরিচালনা করা হবে। এসব ব্যাংকে দীর্ঘদিন ধরে তারল্য সংকট এবং ঋণ ব্যবস্থাপনায় অসঙ্গতি দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা জানান, এমডিদের ছুটিতে পাঠানোর মূল উদ্দেশ্য হলো নিরীক্ষা প্রক্রিয়া স্বচ্ছ রাখা। তিনি বলেন, "তদন্তের সময় এমডিদের দায়িত্বে রাখা হলে তারা প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে পারেন। নিরপেক্ষভাবে নিরীক্ষা করার জন্য তাদের সাময়িকভাবে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।"
ফরেনসিক অডিটে যদি কোনো এমডির বিরুদ্ধে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া না যায়, তবে তারা পুনরায় দায়িত্বে ফিরতে পারবেন। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই ছয় ব্যাংকের মধ্যে পাঁচটির পরিচালনা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়ী এস আলম ও তার পরিবারের নিয়ন্ত্রণে ছিল। অভিযোগ রয়েছে, এস আলম ঋণের নামে ব্যাংকগুলো থেকে অর্থ তুলে নিয়ে তা অপরিশোধিত রেখেছেন। এর ফলে বিপুল পরিমাণ ঋণ খেলাপি হয়ে ব্যাংকগুলো সংকটে পড়ে।
ক্ষমতার পালাবদলের পর এসব ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ এস আলমের হাত থেকে বেরিয়ে যায়। বর্তমান গভর্নর আহসান এইচ মনসুর দায়িত্ব গ্রহণের পর ব্যাংকগুলোতে নতুন পরিচালনা বোর্ড গঠন করা হয়।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান বলেন, “আমরা ফরেনসিক অডিটকে স্বাগত জানাই। এটি ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনতে সহায়ক হবে। আমাদের লক্ষ্য ব্যাংকটিকে জনগণের স্বার্থে কাজে লাগানো।”
তিনি আরও জানান, "এমডি যেহেতু আগের ব্যবস্থাপনায় ছিলেন, তাই তাকে দায়িত্বে রেখে নিরীক্ষা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। এজন্য তাদের সাময়িকভাবে তিন মাসের ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।"
ফরেনসিক অডিটের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট সময়ে হওয়া সব লেনদেন যাচাই করা হবে। কোনো তথ্য গোপন বা মুছে ফেলার ঘটনা ঘটেছে কি না, তাও পর্যালোচনা করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, "এস আলমের সময়ের কর্মকর্তারা দায়িত্বে থাকলে অডিটে প্রভাব পড়তে পারে। তাই তাদের প্রভাবমুক্ত রেখে নিরীক্ষার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হবে।"
জালিয়াতি ও ঋণ কেলেঙ্কারির প্রভাব কাটিয়ে এসব ব্যাংককে স্থিতিশীল করতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও টাক্সফোর্স সমন্বিতভাবে কাজ করছে। নতুন ব্যবস্থাপনার অধীনে ব্যাংকগুলোকে পুনর্গঠনের মাধ্যমে গ্রাহকদের আস্থা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।
ফরেনসিক অডিটের মাধ্যমে ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনার উদ্যোগ
রোববার, ০৫ জানুয়ারী ২০২৫
ঋণ জালিয়াতি এবং তারল্য সংকটের কারণে দুর্দশায় পড়া পাঁচ বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীদের (এমডি) বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তের জন্য ব্যাংকগুলোতে ফরেনসিক অডিট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এই পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, এসআইবিএল, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক এবং আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক।
ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ এই ছুটির সিদ্ধান্ত নেয়, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর অনুমোদন করেছেন। ছুটিতে পাঠানো এমডিদের মধ্যে রয়েছেন-
সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী (ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক)
মোহাম্মদ ফিরোজ হোসেন (এক্সিম ব্যাংক)
মোহাম্মদ ফোরকানউল্লাহ (এসআইবিএল)
শফিউদ্দিন আহমেদ (ইউনিয়ন ব্যাংক)
সৈয়দ হাবিব হাসনাত (গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক)।
আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ শফিক বিন আবদুল্লাহকে গত অক্টোবরে পুনর্নিয়োগের অনুমোদন আটকে দেওয়া হয়। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক এই ব্যাংকের দায়িত্বে নির্বাহী পরিচালক মজিবুর রহমানকে নিয়োগ দেয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ছয় ব্যাংকের সম্পদ ব্যবস্থাপনা (অ্যাসেট কোয়ালিটি রিভিউ) এবং লেনদেনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ফরেনসিক অডিট পরিচালনা করা হবে। এসব ব্যাংকে দীর্ঘদিন ধরে তারল্য সংকট এবং ঋণ ব্যবস্থাপনায় অসঙ্গতি দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা জানান, এমডিদের ছুটিতে পাঠানোর মূল উদ্দেশ্য হলো নিরীক্ষা প্রক্রিয়া স্বচ্ছ রাখা। তিনি বলেন, "তদন্তের সময় এমডিদের দায়িত্বে রাখা হলে তারা প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে পারেন। নিরপেক্ষভাবে নিরীক্ষা করার জন্য তাদের সাময়িকভাবে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।"
ফরেনসিক অডিটে যদি কোনো এমডির বিরুদ্ধে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া না যায়, তবে তারা পুনরায় দায়িত্বে ফিরতে পারবেন। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই ছয় ব্যাংকের মধ্যে পাঁচটির পরিচালনা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়ী এস আলম ও তার পরিবারের নিয়ন্ত্রণে ছিল। অভিযোগ রয়েছে, এস আলম ঋণের নামে ব্যাংকগুলো থেকে অর্থ তুলে নিয়ে তা অপরিশোধিত রেখেছেন। এর ফলে বিপুল পরিমাণ ঋণ খেলাপি হয়ে ব্যাংকগুলো সংকটে পড়ে।
ক্ষমতার পালাবদলের পর এসব ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ এস আলমের হাত থেকে বেরিয়ে যায়। বর্তমান গভর্নর আহসান এইচ মনসুর দায়িত্ব গ্রহণের পর ব্যাংকগুলোতে নতুন পরিচালনা বোর্ড গঠন করা হয়।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান বলেন, “আমরা ফরেনসিক অডিটকে স্বাগত জানাই। এটি ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনতে সহায়ক হবে। আমাদের লক্ষ্য ব্যাংকটিকে জনগণের স্বার্থে কাজে লাগানো।”
তিনি আরও জানান, "এমডি যেহেতু আগের ব্যবস্থাপনায় ছিলেন, তাই তাকে দায়িত্বে রেখে নিরীক্ষা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। এজন্য তাদের সাময়িকভাবে তিন মাসের ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।"
ফরেনসিক অডিটের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট সময়ে হওয়া সব লেনদেন যাচাই করা হবে। কোনো তথ্য গোপন বা মুছে ফেলার ঘটনা ঘটেছে কি না, তাও পর্যালোচনা করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, "এস আলমের সময়ের কর্মকর্তারা দায়িত্বে থাকলে অডিটে প্রভাব পড়তে পারে। তাই তাদের প্রভাবমুক্ত রেখে নিরীক্ষার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হবে।"
জালিয়াতি ও ঋণ কেলেঙ্কারির প্রভাব কাটিয়ে এসব ব্যাংককে স্থিতিশীল করতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও টাক্সফোর্স সমন্বিতভাবে কাজ করছে। নতুন ব্যবস্থাপনার অধীনে ব্যাংকগুলোকে পুনর্গঠনের মাধ্যমে গ্রাহকদের আস্থা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।