alt

অর্থ-বাণিজ্য

বেক্সিমকোর বন্ধ কারখানা চালুর দাবিতে সরকারের হস্তক্ষেপ চান শ্রমিকরা

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫

বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের বন্ধ থাকা ১৬টি কোম্পানির মধ্যে রপ্তানি খাতের ১১টি কারখানা চালুর জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন শ্রমিক-কর্মচারীরা। তাদের দাবি, ‘মানবিক কারণে’ সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে তাদের কর্মসংস্থান টিকে থাকে এবং বকেয়া পাওনাগুলো পরিশোধ সম্ভব হয়।

বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) ঢাকার পল্টনে ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরামের (সিএমজেএফ) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বেক্সিমকো গ্রুপের শ্রমিক ও কর্মকর্তারা তাদের দাবি তুলে ধরেন। তারা জানান, মালিকপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েই তারা সরকারের কাছে এই আবেদন জানিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে বেক্সিমকো গ্রুপের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক সৈয়দ মো. এনাম উল্লাহ বলেন, “আমরা শ্রমিক-অফিসাররা পেটের দায়ে আপনাদের কাছে এসেছি। সরকারের কাছে অনুনয়, বিনয় করে বলতে চাই, সরকার বেক্সিমকোতে হস্তক্ষেপ করুক। কারখানা খুলে দিয়ে আমাদের চাকরি বাঁচান।’’

তিনি আরও বলেন, “সরকার যেভাবে চাইবে, প্রতিষ্ঠান সেভাবে চালাক। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে দিক। কারখানা চালু থাকলে ধীরে ধীরে সবার পাওনা পরিশোধ করা যাবে।”

শ্রমিকরা বলেন, কারখানা সচল থাকলে বেতন পাওয়া সম্ভব, আর কোম্পানির দেনাও ধীরে ধীরে পরিশোধ করা যাবে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শ্রমিকরা তিনটি প্রধান দাবি উত্থাপন করেন— অবিলম্বে লে-অফ প্রত্যাহার করে বেক্সিমকোর পোশাক খাতের সব কারখানা খুলে দেওয়া। রপ্তানি বাণিজ্য সচল রাখতে ব্যাংকের ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি খোলার অনুমতি দেওয়া। ব্যবসা চালু রেখে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ও কোম্পানির দেনা পরিশোধের ব্যবস্থা করা।

শ্রমিকদের অভিযোগ, সরকার এখনও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি, ফলে তাদের জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই বেক্সিমকো গ্রুপের বেশিরভাগ কোম্পানিতে অস্থিরতা চলছে। শ্রমিক অসন্তোষের মধ্যে মালিকপক্ষ বেশিরভাগ কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেক্সিমকো গ্রুপের তিনটি কোম্পানি— বেক্সিমকো লিমিটেড, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস ও শাইনপুকুর সিরামিকস— কেবল সরকারের হস্তক্ষেপের কারণে সচল রয়েছে।

গ্রুপটির ভাইস-চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ছিলেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা। তিনি গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর থেকে বেক্সিমকোর অন্যান্য উদ্যোক্তারা আত্মগোপনে রয়েছেন। ফলে কোম্পানির কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের অভাবে বিপাকে পড়েছে শ্রমিকরা।

বেক্সিমকোর একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ থাকায় প্রতিষ্ঠানটি এলসি খুলতে পারছে না। ব্যাংক থেকে অর্থায়ন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নগদ অর্থ সংকটে ভুগছে কোম্পানির ব্যবসা।

সংবাদ সম্মেলনে কর্মীরা জানান, বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে মোট ১৬টি কারখানা রয়েছে, যার মধ্যে ১১টি বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতের। এই ১১টি কারখানা সচল করা গেলে হাজার হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

বেক্সিমকোর প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুল কাউয়ুম বলেন, “লে-অফ সুবিধা ১৬ কোম্পানির ২৭ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী পাচ্ছেন। তারা অর্ধেক বেতন পাচ্ছেন এখন। এক বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করা শ্রমিক-কর্মচারীদের সংখ্যা ২৭ হাজার। এক বছরের নিচে থাকা কর্মচারী-কর্মকর্তা মিলিয়ে তা ৪২ হাজারের মতো।”

সরকার রিসিভার (প্রশাসক) নিয়োগ দেওয়ার পর থেকে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের কর্মচারী-শ্রমিকদের বেতন বকেয়া নেই বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

কোম্পানি সচল করতে উদ্যোক্তাদের বদলে শ্রমিক প্রতিনিধিরা কেন আন্দোলনে নেমেছেন, এমন প্রশ্নে বেক্সিমকো গ্রুপের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুল কাউয়ুম বলেন, “আমরা তো মালিকপক্ষের একজনকে চিনি, তিনি বেক্সিমকোর এমডি ওসমান কায়সার। তার সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে সব মালিকদের। মালিকপক্ষ সারেন্ডার করে বসে আছে। তাদের কাছ থেকে কোনো উত্তর পাচ্ছি না। এজন্য আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি।”

তিনি আরও বলেন, “সরকার দায়িত্ব নিক, কারখানা খুলে দিক, ব্যাংক ঋণ দিয়ে এলসি করার সুযোগ দিক।”

বেক্সিমকোতে রিসিভার বসানোর পর সম্পদের একটি হিসাব করা হয়েছে জানিয়ে আব্দুল কাউয়ুম বলেন, “কারখানা, মেশিন, জমিসহ বর্তমানে সব সম্পদ বিক্রি করলে সাড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকা পাওয়া যাবে। অথচ শ্রমিক-কর্মচারীদের বিদায় দিতেই লাগবে ২২ হাজার কোটি টাকা। সেজন্য কোম্পানি বন্ধ করা বা বিক্রি করে ব্যাংকের ঋণ শোধ করা সম্ভব না।”

তিনি বলেন, “সরকার যদি সুযোগ দেয়, তাহলে পরিচালন খরচ বাদ দিয়ে সব টাকা ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব।”

সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, ব্যাংকগুলো এলসি সুবিধা ও চার মাসের জন্য আর্থিক সুবিধা দিলে বেক্সিমকোর সব কোম্পানি সচল করা সম্ভব।

আব্দুল কাউয়ুম বলেন, “কারখানা খুলে দেওয়ার পর পরিচালন খরচ বাদ দিলে প্রতি বছর সাড়ে ৪০০ কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব।”

সৈয়দ এনাম উল্লাহ বলেন, “এখন তো টাকা নেওয়ার কেউ নেই। পাচার করার সুযোগও থাকবে না। রিসিভার আছে, তার অনুমতি ছাড়া কোনো টাকা এদিক-সেদিক হবে না। সরকারতো সব হিসাব দেখতে পারবে।”

তিনি আরও বলেন, “আগে তো এখানে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। তখন আয়ের অংশ কোথায় যাচ্ছে, সেটা সরকার জানত না, আমরাও জানতাম না। এখন কিন্তু একটা রিসিভার আছে। এখন এক টাকা অর্ডারেরও হিসাব সরকার পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে রাখতে পারবে।”

সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল কাউয়ুম আরও বলেন, “মালিকপক্ষ এখন পর্যন্ত ১৫-২০টি প্রস্তাব সরকারের কাছে দিয়েছে। তারা দুই পা এগোলেও সরকার এগোচ্ছে না।”

সরকার ও বেক্সিমকোর উদ্যোক্তাদের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় শ্রমিকরা আন্দোলনে নেমেছেন বলে দাবি করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

শ্রমিকরা বলেন, “আমরা সরকারের কাছে আবেদন করছি, দ্রুত সিদ্ধান্ত নিন। কারখানা চালু হলে আমরা বেতন পাব, ব্যবসাও চলবে, ঋণও পরিশোধ করা যাবে। দয়া করে আমাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করবেন না।”

ছবি

ফের টানা পতনে শেয়ারবাজার, কমেছে লেনদেনের গতি

ছবি

পল্লী বিদ্যুতের বিল পরিশোধ সহজ করেছে বিকাশ

ছবি

ওয়াদা’র সাথে অনার এর অংশীদারিত্ব

ছবি

ফের পতনে শেয়ারবাজার, কমেছে লেনদেন

ছবি

একমাসে স্কুল ব্যাংকিংয়ে সঞ্চয় কমেছে প্রায় ৪৬ কোটি টাকা

ছবি

বেক্সিমকোর লে-অফ পরিস্থিতি: কাঁচামালের সংকট ও এলসি সমস্যার জটিলতা

ছবি

বাংলাদেশের বাজারে লেনোভো ইয়োগা ২ ইন ১ ল্যাপটপ

ছবি

এলডিসি উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কাঠামোগত সংষ্কার জরুরী: ঢাকা চেম্বারের সভাপতি

ছবি

রেমিটেন্স প্রবাহে ধীরগতি, জানুয়ারির ১৮ দিনে এসেছে ১২০ কোটি ডলার

ছবি

বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নির্দেশনায় ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিদেশ যাত্রায় বাধা উঠলো

অর্থনীতি ‘খুবই নাজুক’, ৩৪ বছরে এমন ‘টানাপোড়েন দেখেননি’ ব্যবসায়ীরা

ছবি

শেয়ারবাজারে আস্থা ফেরাতে ডিএসইর একগুচ্ছ পদক্ষেপ

ছবি

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি মূল্যস্ফীতি

সবজিতে স্বস্তি মিললেও পেঁয়াজ, মুরগি ও চাল বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে

ছবি

জেসিআই মুন্সিগঞ্জ চ্যাপ্টারের লোকাল প্রেসিডেন্ট সাকিফ আহমেদ

ছবি

বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্ণরের সাথে ঢাকা চেম্বারের পরিচালনা পর্ষদের সাক্ষাৎ

ছবি

উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সিদ্ধান্তে পরিবর্তন এনেছে এনবিআর

ছবি

সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার বৃদ্ধি: সর্বোচ্চ ১২.৫৫ শতাংশ

ছবি

নীতি সংশোধনের আগে অংশীজনদের সাথে পরামর্শ না করা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ফিকি

ছবি

ডিসিসিআইতে ‘বাংলাদেশ-পাকিস্তান বিজনেস ফোরাম’ বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

অর্থনৈতিক সংস্কার ও বাজেট বিষয়ে শ্বেতপত্র কমিটির দিনব্যাপী সিম্পোজিয়াম

ছবি

নতুন বছর উপলেক্ষে ক্যামন সিরিজে বিশেষ অফার দিচ্ছে টেকনো

ছবি

দিনে দুই হাজার কোটি টাকা লেনদেনের মাইলফলকে নগদ

ছবি

মনির হোসেনের সম্পদ জব্দ, ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ

ছবি

মোবাইল ইন্টারনেট সেবায় ফিরল ছোট মেয়াদের ডেটা প্যাকেজ

ছবি

রিয়াদে ইউএনসিসিডি ‘সিওপি-১৬’ সম্মেলনে প্রিয়শপ

ছবি

ন্যাশনাল পেমেন্ট এগ্রিগেটর হিসেবে আসছে ‘একপে’

ছবি

উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময় শতাধিক পণ্যে বাড়ল ভ্যাট-শুল্ক, আতঙ্কে ভোক্তারা

ছবি

সবজিতে ভরপুর বাজার, কমেছে দামও

ছবি

মেরামতের জন্য মহেশখালী এলএনজি টার্মিনাল থেকে ৭২ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ

ছবি

গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনায় ব্যবসায়ীদের অন্তর্ভুক্তি: বাণিজ্য উপদেষ্টা

ছবি

একনেকে ৪,২৪৬ কোটি টাকার ১০ প্রকল্প অনুমোদন

ছবি

চালের দাম অযৌক্তিকভাবে বেড়েছে: মজুতদারির অভিযোগ তুলে সরকারের উদ্যোগ

ছবি

মোটরসাইকেল ও এসি শিল্পে কর দ্বিগুণ, রাজস্ব বাড়াতে সরকারের নতুন পদক্ষেপ

ছবি

মোটরসাইকেল, ফ্রিজ, এসি শিল্পে আয়কর দ্বিগুণ হল

প্রকৃত খেলাপি ঋণ ৬ লাখ কোটি টাকারও বেশি : বাংলাদেশ ব্যাংক

tab

অর্থ-বাণিজ্য

বেক্সিমকোর বন্ধ কারখানা চালুর দাবিতে সরকারের হস্তক্ষেপ চান শ্রমিকরা

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫

বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের বন্ধ থাকা ১৬টি কোম্পানির মধ্যে রপ্তানি খাতের ১১টি কারখানা চালুর জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন শ্রমিক-কর্মচারীরা। তাদের দাবি, ‘মানবিক কারণে’ সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে তাদের কর্মসংস্থান টিকে থাকে এবং বকেয়া পাওনাগুলো পরিশোধ সম্ভব হয়।

বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) ঢাকার পল্টনে ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরামের (সিএমজেএফ) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বেক্সিমকো গ্রুপের শ্রমিক ও কর্মকর্তারা তাদের দাবি তুলে ধরেন। তারা জানান, মালিকপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েই তারা সরকারের কাছে এই আবেদন জানিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে বেক্সিমকো গ্রুপের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক সৈয়দ মো. এনাম উল্লাহ বলেন, “আমরা শ্রমিক-অফিসাররা পেটের দায়ে আপনাদের কাছে এসেছি। সরকারের কাছে অনুনয়, বিনয় করে বলতে চাই, সরকার বেক্সিমকোতে হস্তক্ষেপ করুক। কারখানা খুলে দিয়ে আমাদের চাকরি বাঁচান।’’

তিনি আরও বলেন, “সরকার যেভাবে চাইবে, প্রতিষ্ঠান সেভাবে চালাক। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে দিক। কারখানা চালু থাকলে ধীরে ধীরে সবার পাওনা পরিশোধ করা যাবে।”

শ্রমিকরা বলেন, কারখানা সচল থাকলে বেতন পাওয়া সম্ভব, আর কোম্পানির দেনাও ধীরে ধীরে পরিশোধ করা যাবে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শ্রমিকরা তিনটি প্রধান দাবি উত্থাপন করেন— অবিলম্বে লে-অফ প্রত্যাহার করে বেক্সিমকোর পোশাক খাতের সব কারখানা খুলে দেওয়া। রপ্তানি বাণিজ্য সচল রাখতে ব্যাংকের ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি খোলার অনুমতি দেওয়া। ব্যবসা চালু রেখে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ও কোম্পানির দেনা পরিশোধের ব্যবস্থা করা।

শ্রমিকদের অভিযোগ, সরকার এখনও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি, ফলে তাদের জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই বেক্সিমকো গ্রুপের বেশিরভাগ কোম্পানিতে অস্থিরতা চলছে। শ্রমিক অসন্তোষের মধ্যে মালিকপক্ষ বেশিরভাগ কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেক্সিমকো গ্রুপের তিনটি কোম্পানি— বেক্সিমকো লিমিটেড, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস ও শাইনপুকুর সিরামিকস— কেবল সরকারের হস্তক্ষেপের কারণে সচল রয়েছে।

গ্রুপটির ভাইস-চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ছিলেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা। তিনি গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর থেকে বেক্সিমকোর অন্যান্য উদ্যোক্তারা আত্মগোপনে রয়েছেন। ফলে কোম্পানির কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের অভাবে বিপাকে পড়েছে শ্রমিকরা।

বেক্সিমকোর একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ থাকায় প্রতিষ্ঠানটি এলসি খুলতে পারছে না। ব্যাংক থেকে অর্থায়ন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নগদ অর্থ সংকটে ভুগছে কোম্পানির ব্যবসা।

সংবাদ সম্মেলনে কর্মীরা জানান, বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে মোট ১৬টি কারখানা রয়েছে, যার মধ্যে ১১টি বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতের। এই ১১টি কারখানা সচল করা গেলে হাজার হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

বেক্সিমকোর প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুল কাউয়ুম বলেন, “লে-অফ সুবিধা ১৬ কোম্পানির ২৭ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী পাচ্ছেন। তারা অর্ধেক বেতন পাচ্ছেন এখন। এক বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করা শ্রমিক-কর্মচারীদের সংখ্যা ২৭ হাজার। এক বছরের নিচে থাকা কর্মচারী-কর্মকর্তা মিলিয়ে তা ৪২ হাজারের মতো।”

সরকার রিসিভার (প্রশাসক) নিয়োগ দেওয়ার পর থেকে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের কর্মচারী-শ্রমিকদের বেতন বকেয়া নেই বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

কোম্পানি সচল করতে উদ্যোক্তাদের বদলে শ্রমিক প্রতিনিধিরা কেন আন্দোলনে নেমেছেন, এমন প্রশ্নে বেক্সিমকো গ্রুপের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুল কাউয়ুম বলেন, “আমরা তো মালিকপক্ষের একজনকে চিনি, তিনি বেক্সিমকোর এমডি ওসমান কায়সার। তার সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে সব মালিকদের। মালিকপক্ষ সারেন্ডার করে বসে আছে। তাদের কাছ থেকে কোনো উত্তর পাচ্ছি না। এজন্য আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি।”

তিনি আরও বলেন, “সরকার দায়িত্ব নিক, কারখানা খুলে দিক, ব্যাংক ঋণ দিয়ে এলসি করার সুযোগ দিক।”

বেক্সিমকোতে রিসিভার বসানোর পর সম্পদের একটি হিসাব করা হয়েছে জানিয়ে আব্দুল কাউয়ুম বলেন, “কারখানা, মেশিন, জমিসহ বর্তমানে সব সম্পদ বিক্রি করলে সাড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকা পাওয়া যাবে। অথচ শ্রমিক-কর্মচারীদের বিদায় দিতেই লাগবে ২২ হাজার কোটি টাকা। সেজন্য কোম্পানি বন্ধ করা বা বিক্রি করে ব্যাংকের ঋণ শোধ করা সম্ভব না।”

তিনি বলেন, “সরকার যদি সুযোগ দেয়, তাহলে পরিচালন খরচ বাদ দিয়ে সব টাকা ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব।”

সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, ব্যাংকগুলো এলসি সুবিধা ও চার মাসের জন্য আর্থিক সুবিধা দিলে বেক্সিমকোর সব কোম্পানি সচল করা সম্ভব।

আব্দুল কাউয়ুম বলেন, “কারখানা খুলে দেওয়ার পর পরিচালন খরচ বাদ দিলে প্রতি বছর সাড়ে ৪০০ কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব।”

সৈয়দ এনাম উল্লাহ বলেন, “এখন তো টাকা নেওয়ার কেউ নেই। পাচার করার সুযোগও থাকবে না। রিসিভার আছে, তার অনুমতি ছাড়া কোনো টাকা এদিক-সেদিক হবে না। সরকারতো সব হিসাব দেখতে পারবে।”

তিনি আরও বলেন, “আগে তো এখানে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। তখন আয়ের অংশ কোথায় যাচ্ছে, সেটা সরকার জানত না, আমরাও জানতাম না। এখন কিন্তু একটা রিসিভার আছে। এখন এক টাকা অর্ডারেরও হিসাব সরকার পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে রাখতে পারবে।”

সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল কাউয়ুম আরও বলেন, “মালিকপক্ষ এখন পর্যন্ত ১৫-২০টি প্রস্তাব সরকারের কাছে দিয়েছে। তারা দুই পা এগোলেও সরকার এগোচ্ছে না।”

সরকার ও বেক্সিমকোর উদ্যোক্তাদের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় শ্রমিকরা আন্দোলনে নেমেছেন বলে দাবি করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

শ্রমিকরা বলেন, “আমরা সরকারের কাছে আবেদন করছি, দ্রুত সিদ্ধান্ত নিন। কারখানা চালু হলে আমরা বেতন পাব, ব্যবসাও চলবে, ঋণও পরিশোধ করা যাবে। দয়া করে আমাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করবেন না।”

back to top