alt

অর্থ-বাণিজ্য

২০ বিলিয়নের নিচে নামল রিজার্ভ

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫

বিপিএম-৬ হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ এখন ১৯ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ২৫ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার

দেশের অর্থনীতির আলোচিত সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাটছে না। ফের ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক। সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক যে ‘উইকলি সিলেক্টেড ইকোনমিক ইন্ডিকেটরস’ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন) হিসাবে বুধবার (২২ জানুয়ারি) বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ছিল ২৫ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার।

এক সপ্তাহ আগে ১৫ জানুয়ারি বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ছিল ২৫ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার। দুই সপ্তাহ আগে ৮ জানুয়ারি বিপিএম-৬ হিসাবে ছিল ২১ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার; গ্রস হিসাবে নেমেছিল ২৪ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারে। বুধবার বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ কমে ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে। এক মাস পর রিজার্ভ ২০ বিলিয়নের নিচে নামল। গত ১৮ ডিসেম্বর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার। পরের সপ্তাহে ২৪ ডিসেম্বর তা বেড়ে ২০ দশমিক ১৮ বিলিয়নে ওঠে।

রোজার মাসকে সামনে রেখে পণ্য আমদানিতে খরচ বেড়ে যাওয়ায় রিজার্ভ কমেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। এর আগে গত নভেম্বর আকুর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মেয়াদের ১ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ কমে ১৮ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছিল। গ্রস হিসাবে নেমেছিল ২৪ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলারে।

এর পর রিজার্ভের প্রধান দুই উৎস রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স বাড়ায় এই সূচক বাড়তে থাকে। এছাড়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চলমান ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশকে চতুর্থ কিস্তিতে ৬৪ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার ছাড় করার শর্ত হিসেবে গত ডিসেম্বর শেষে নিট বা প্রকৃত রিজার্ভ ১৫ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে উদ্বৃত্ত ডলার কেনার কারণেও রিজার্ভ বাড়তে থাকে।

২৪ ডিসেম্বর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ বেড়ে ২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে ২০ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলারে ওঠে। ওই দিন গ্রস হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার। এর পর ২৯ ডিসেম্বর এশীয় উন্নয়ন তহবিলের (এডিবি) ৬০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তার ঋণ যোগ হওয়ায় রিজার্ভ ২১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। গত বছরের শেষ দিন ৩১ ডিসেম্বর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার; গ্রস হিসাবে ছিল ২৬ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার। আমদানি ব্যয় কমায় এবং রেমিটেন্স বাড়ায় ২০২১ সালের আগস্টে বাড়তে বাড়তে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গ্রস হিসাবে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্যসহ বিশ্ববাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে যায়। আমদানি খরচ দুই থেকে আড়াই গুণ বেড়ে যায়। এর পর থেকে কমতে থাকে রিজার্ভ। গত দুই বছরে বেশ কয়েকবার বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছে। প্রকৃত বা নিট রিজার্ভ নেমেছে ১৫ বিলিয়ন ডলারের নিচে। এক বছর আগে গত বছরের ২২ জানুয়ারি বিপিএম-৬ হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক শূন্য নয় বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ছিল ২৫ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার।

২০২৩ সালের ১২ জুলাই থেকে আইএমএফের কথা মতো রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গ্রস হিসাবের পাশাপাশি বিপিএম-৬ পদ্ধতি অনুসরণ করেও তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে। এর আগে কেবল গ্রস হিসাবের তথ্যই প্রকাশ করা হতো। এখন বিপিএম-৬ ও গ্রস হিসাবের পাশাপাশি রিজার্ভের নিট বা প্রকৃত হিসাবও করে থাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে সেটি প্রকাশ করা হয় না। কেবল আইএমএফসহ বিভিন্ন সংস্থাকে জানিয়ে দেওয়া হয়।

নিট রিজার্ভ হচ্ছে, বৈদেশিক মুদ্রার মোট সঞ্চিতি থেকে সব ধরনের দায়দেনা বাদ দেওয়ার পর যা থাকে সেটা। বাংলাদেশের পেক্ষাপটে গ্রস হিসাবের রিজার্ভের চেয়ে নিট রিজার্ভ ১০ বিলিয়ন ডলারের মতো কম থাকে। আর বিপিএম-৬ হিসাবের চেয়ে কম থাকে ৫ বিলিয়ন ডলারের মতো। সে হিসাবে বাংলাদেশের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভ এখন ১৫ বিলিয়ন ডলারের কম। বাংলাদেশ ব্যাংক বিপিএম-৬ হিসাবের রিজার্ভকে তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ হিসেবে দাবি করে।

সবশেষ গত নভেম্বর মাসের আমদানির তথ্য প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাতে দেখা যায়, ওই মাসে পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের ৫ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। সে হিসাবে ১৯ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ দিয়ে সাড়ে তিন মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে। আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুদ থাকতে হয়।

আকু হলো-কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যকার একটি আন্ত–আঞ্চলিক লেনদেন নিষ্পত্তিব্যবস্থা। এশিয়ার ৯টি দেশের মধ্যে যেসব আমদানি-রপ্তানি হয়, এই ব্যবস্থার মাধ্যমে তা প্রতি দুই মাস পরপর নিষ্পত্তি হয়। অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের লেনদেন তাৎক্ষণিকভাবে সম্পন্ন হয়। আকুর সদস্য দেশগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, ভুটান ও মালদ্বীপ। তবে দেনা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় সম্প্রতি এ ব্যবস্থা থেকে বাদ পড়ে শ্রীলঙ্কা।

রিজার্ভের প্রধান দুই উৎস হচ্ছে- প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ১৩ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ১০ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স দেশে এসেছিল।

অন্যদিকে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলেছে, এই ছয় মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে মোট আয় হয়েছে ২৪ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১৩ শতাংশ বেশি। রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্স কমার পরও আমদানি ব্যয় কমার কারণে রিজার্ভ কমছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

ছবি

নতুন মুদ্রানীতিতে আশঙ্কা: খেলাপি ঋণ ৩০ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে

ছবি

ঢাকায় ২০২৬ সালে বৈদ্যুতিক বাস চালু করবে সরকার

ছবি

আদানির বিদ্যুতের পুরো সরবরাহ চাইছে বাংলাদেশ

ছবি

নতুন মুদ্রানীতিঃ অপরিবর্তিত নীতি সুদহার, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্য

ছবি

দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা বিকেলে

ছবি

কর অব্যাহতি কমানোর বিষয়ে আবারও বললেন অর্থ উপদেষ্টা

২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমেছে, অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর আশা

ছবি

রাইস ব্র্যান অয়েল রপ্তানিতে ২৫% শুল্ক বসাল সরকার

ছবি

মুদ্রানীতিতে অপরিবর্তিত থাকছে নীতি সুদহার

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিত্যপণ্যে প্যাকেজ ভ্যাট ব্যবস্থার আহ্বান ডিসিসিআই’র

ছবি

চাকরি ফিরে পেতে ব্র্যাক ব্যাংককর্মীদের মানববন্ধন

ছবি

দুদকের লকার অভিযান নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের আপত্তি

ছবি

৬ মাসে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমলেও স্বস্থি ফিরেনি নিত্যপণ্যের দামে

ছবি

সাবেক গভর্নরসহ ২৫ কর্মকর্তার নামে লকারের অস্তিত্ব মেলেনি

১৮ বছর পর বেসরকারি উদ্যোগে চালু হচ্ছে কুড়িগ্রাম টেক্সটাইল মিলস

ডিএসইর বাজার মূলধন বাড়লো ৯ হাজার কোটি টাকা

আগামী বাজেটে প্রত্যক্ষ কর বিষয়ক প্রস্তাব চেয়েছে এনবিআর

বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি এক দশকে সর্বনিম্ন

ছবি

সরকারের নীতিসহায়তা চান হিমাগার মালিকরা

ছবি

ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১৮ শতাংশ

ছবি

ডিএসইর বাজার মূলধন বাড়লো ৯ হাজার কোটি টাকা

শেয়ারবাজার উন্নয়নে ১০ সদস্যের কমিটি গঠন

করব্যবস্থার জটিলতা ব্যবসায়ীদের জন্য বড় প্রতিবন্ধকতা: ঢাকা চেম্বার সভাপতি

ছবি

রিজার্ভ বেড়ে ফের ২০ বিলিয়ন ডলারের ঘরে

ছবি

অন্য ব্যাংকের এটিএম থেকে অর্থ উত্তোলনের খরচ বাড়ছে

ছবি

অবৈধ তামাক পণ্য জব্দে অভিযানে নামছে এনবিআর

নিবন্ধন না থাকা প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাট জালে আনতে নতুন উদ্যোগ

ছবি

সয়াবিন তেলের সংকট আরও বাড়ছে, চালের দাম সামান্য কমছে পাইকারিতে

ছবি

রাজধানীর গুলশান অঞ্চলের তৃণমূল পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের সাথে ডিসিসিআই’র মতবিনিময়

ছবি

পরপর পাঁচ কার্যদিবস ঊর্ধ্বমুখী শেয়ারবাজার

বাজেট নিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে সুপারিশ চাইল এনবিআর

ছবি

বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন মুখপাত্র আরিফ হোসেন

শেয়ারবাজারের টেকসই উন্নয়নে কমিটি গঠন অর্থ মন্ত্রণালয়ের

ছবি

১১তম এশিয়া এ্যাপারেল এক্সোপোতে বাংলাদেশের ২০টি পোশাক শিল্পপ্রতিষ্ঠান

ছবি

স্বর্ণের দামে নতুন রেকর্ড, ভরি দেড় লাখ টাকা ছুঁইছুঁই

ছবি

বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত গ্রেপ্তার

tab

অর্থ-বাণিজ্য

২০ বিলিয়নের নিচে নামল রিজার্ভ

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

বিপিএম-৬ হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ এখন ১৯ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ২৫ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার

শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫

দেশের অর্থনীতির আলোচিত সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাটছে না। ফের ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক। সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক যে ‘উইকলি সিলেক্টেড ইকোনমিক ইন্ডিকেটরস’ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন) হিসাবে বুধবার (২২ জানুয়ারি) বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ছিল ২৫ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার।

এক সপ্তাহ আগে ১৫ জানুয়ারি বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ছিল ২৫ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার। দুই সপ্তাহ আগে ৮ জানুয়ারি বিপিএম-৬ হিসাবে ছিল ২১ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার; গ্রস হিসাবে নেমেছিল ২৪ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারে। বুধবার বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ কমে ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে। এক মাস পর রিজার্ভ ২০ বিলিয়নের নিচে নামল। গত ১৮ ডিসেম্বর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার। পরের সপ্তাহে ২৪ ডিসেম্বর তা বেড়ে ২০ দশমিক ১৮ বিলিয়নে ওঠে।

রোজার মাসকে সামনে রেখে পণ্য আমদানিতে খরচ বেড়ে যাওয়ায় রিজার্ভ কমেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। এর আগে গত নভেম্বর আকুর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মেয়াদের ১ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ কমে ১৮ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছিল। গ্রস হিসাবে নেমেছিল ২৪ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলারে।

এর পর রিজার্ভের প্রধান দুই উৎস রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স বাড়ায় এই সূচক বাড়তে থাকে। এছাড়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চলমান ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশকে চতুর্থ কিস্তিতে ৬৪ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার ছাড় করার শর্ত হিসেবে গত ডিসেম্বর শেষে নিট বা প্রকৃত রিজার্ভ ১৫ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে উদ্বৃত্ত ডলার কেনার কারণেও রিজার্ভ বাড়তে থাকে।

২৪ ডিসেম্বর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ বেড়ে ২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে ২০ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলারে ওঠে। ওই দিন গ্রস হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার। এর পর ২৯ ডিসেম্বর এশীয় উন্নয়ন তহবিলের (এডিবি) ৬০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তার ঋণ যোগ হওয়ায় রিজার্ভ ২১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। গত বছরের শেষ দিন ৩১ ডিসেম্বর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার; গ্রস হিসাবে ছিল ২৬ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার। আমদানি ব্যয় কমায় এবং রেমিটেন্স বাড়ায় ২০২১ সালের আগস্টে বাড়তে বাড়তে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গ্রস হিসাবে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্যসহ বিশ্ববাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে যায়। আমদানি খরচ দুই থেকে আড়াই গুণ বেড়ে যায়। এর পর থেকে কমতে থাকে রিজার্ভ। গত দুই বছরে বেশ কয়েকবার বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছে। প্রকৃত বা নিট রিজার্ভ নেমেছে ১৫ বিলিয়ন ডলারের নিচে। এক বছর আগে গত বছরের ২২ জানুয়ারি বিপিএম-৬ হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক শূন্য নয় বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ছিল ২৫ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার।

২০২৩ সালের ১২ জুলাই থেকে আইএমএফের কথা মতো রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গ্রস হিসাবের পাশাপাশি বিপিএম-৬ পদ্ধতি অনুসরণ করেও তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে। এর আগে কেবল গ্রস হিসাবের তথ্যই প্রকাশ করা হতো। এখন বিপিএম-৬ ও গ্রস হিসাবের পাশাপাশি রিজার্ভের নিট বা প্রকৃত হিসাবও করে থাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে সেটি প্রকাশ করা হয় না। কেবল আইএমএফসহ বিভিন্ন সংস্থাকে জানিয়ে দেওয়া হয়।

নিট রিজার্ভ হচ্ছে, বৈদেশিক মুদ্রার মোট সঞ্চিতি থেকে সব ধরনের দায়দেনা বাদ দেওয়ার পর যা থাকে সেটা। বাংলাদেশের পেক্ষাপটে গ্রস হিসাবের রিজার্ভের চেয়ে নিট রিজার্ভ ১০ বিলিয়ন ডলারের মতো কম থাকে। আর বিপিএম-৬ হিসাবের চেয়ে কম থাকে ৫ বিলিয়ন ডলারের মতো। সে হিসাবে বাংলাদেশের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভ এখন ১৫ বিলিয়ন ডলারের কম। বাংলাদেশ ব্যাংক বিপিএম-৬ হিসাবের রিজার্ভকে তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ হিসেবে দাবি করে।

সবশেষ গত নভেম্বর মাসের আমদানির তথ্য প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাতে দেখা যায়, ওই মাসে পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের ৫ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। সে হিসাবে ১৯ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ দিয়ে সাড়ে তিন মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে। আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুদ থাকতে হয়।

আকু হলো-কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যকার একটি আন্ত–আঞ্চলিক লেনদেন নিষ্পত্তিব্যবস্থা। এশিয়ার ৯টি দেশের মধ্যে যেসব আমদানি-রপ্তানি হয়, এই ব্যবস্থার মাধ্যমে তা প্রতি দুই মাস পরপর নিষ্পত্তি হয়। অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের লেনদেন তাৎক্ষণিকভাবে সম্পন্ন হয়। আকুর সদস্য দেশগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, ভুটান ও মালদ্বীপ। তবে দেনা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় সম্প্রতি এ ব্যবস্থা থেকে বাদ পড়ে শ্রীলঙ্কা।

রিজার্ভের প্রধান দুই উৎস হচ্ছে- প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ১৩ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ১০ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স দেশে এসেছিল।

অন্যদিকে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলেছে, এই ছয় মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে মোট আয় হয়েছে ২৪ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১৩ শতাংশ বেশি। রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্স কমার পরও আমদানি ব্যয় কমার কারণে রিজার্ভ কমছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

back to top