গত সপ্তাহে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পিযুষ গোয়েল যুক্তরাষ্ট্রে একটি অপ্রত্যাশিত সফর করেন এবং আমেরিকার কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনায় বসেন। তার এই সফরের উদ্দেশ্য ছিল একটি বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন করা, যা ভারতের ওপর ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের হুমকি থেকে দেশটিকে রক্ষা করতে পারে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের ভারতের ওপর শুল্ক আরোপের হুমকিতে লাখো আমেরিকান নাগরিককে চিকিৎসা ব্যয় বাড়ানোর জন্য প্রস্তুত হওয়া লাগতে পারে। গত সপ্তাহে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পিযুষ গোয়েল যুক্তরাষ্ট্রে একটি অপ্রত্যাশিত সফর করেন এবং আমেরিকার কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনায় বসেন। তার এই সফরের উদ্দেশ্য ছিল একটি বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন করা, যা ভারতের ওপর ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের হুমকি থেকে দেশটিকে রক্ষা করতে পারে।
ট্রাম্প গত মাসে ঘোষণা করেছিলেন যে, আমেরিকান পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ানোর প্রতিক্রিয়ায় তিনি ২ এপ্রিল থেকে ভারতের ওপর শুল্ক আরোপ করবেন। এই শুল্ক ভারতের ওষুধ শিল্পের মতো গুরুত্বপূর্ণ রফতানি খাতকে প্রভাবিত করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহৃত প্রায় অর্ধেক জেনেরিক ওষুধ ভারত থেকে আসে। জেনেরিক ওষুধ, যা ব্র্যান্ডেড ওষুধের সস্তা সংস্করণ, যুক্তরাষ্ট্রের ৯০ শতাংশ প্রেসক্রিপশনে ব্যবহৃত হয়।
কনসাল্টিং ফার্ম আইকিউভিয়ার একটি গবেষণা অনুসারে, ২০২২ সালে ভারত থেকে আমদানিকৃত জেনেরিক ওষুধের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যসেবা খাতে সাশ্রয় হয়েছে ২১৯ বিলিয়ন ডলার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি বাণিজ্য চুক্তি না হয়, তাহলে ট্রাম্পের শুল্ক ভারতীয় জেনেরিক ওষুধের বাজারকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। এর ফলে কিছু কোম্পানি বাজার ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হতে পারে এবং ওষুধের ঘাটতি আরও বাড়তে পারে।
ইয়েল ইউনিভার্সিটির ওষুধ ব্যয় বিশেষজ্ঞ ড. মেলিসা বারবার বলেছেন, শুল্ক চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা বাড়িয়ে দিতে পারে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের দরিদ্র ও বীমাবিহীন জনগণ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ভারতীয় ফার্মাসিউটিক্যাল অ্যালায়েন্স (আইপিএ) কর্তৃক অর্থায়িত আইকিউভিয়ার গবেষণা অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ রক্তচাপ এবং মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রেসক্রিপশনের ৬০ শতাংশের বেশি ভারতীয় ওষুধ দিয়ে পূরণ করা হয়। সেরট্রালাইন, যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট, এর একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। ভারতীয় কোম্পানিগুলো থেকে এই ওষুধের দাম অন্যান্য কোম্পানির তুলনায় প্রায় অর্ধেক।
পাবলিক সিটিজেনসের আইনজীবী পিটার মেবারডুক বলেছেন, আমরা এ নিয়ে উদ্বিগ্ন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি চারজন রোগীর মধ্যে একজন ইতোমধ্যে ওষুধের উচ্চ মূল্যের কারণে চিকিৎসা গ্রহণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে।
ট্রাম্প ইতোমধ্যে চীনের ওপর শুল্ক বাড়ানোর কারণে যুক্তরাষ্ট্রের হাসপাতাল এবং জেনেরিক ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে চাপের মুখে রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হওয়া ৮৭ শতাংশ ওষুধের কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়, যার বেশিরভাগই চীনে উৎপাদিত হয়। ট্রাম্পের শুল্কের কারণে ইতোমধ্যে ওষুধের কাঁচামালের দাম বেড়েছে।
ট্রাম্প চান কোম্পানিগুলো যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন স্থানান্তর করুক। ফাইজার এবং ইলি লিলির মতো বড় ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো কিছু উৎপাদন যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু কম মূল্যের ওষুধের জন্য এই অর্থনীতি কাজ করে না। ভারতের বৃহত্তম ওষুধ প্রস্তুতকারক সান ফার্মার চেয়ারম্যান দিলীপ শঙ্খবি বলেছেন, তার কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বোতল ১ থেকে ৫ ডলারে ওষুধ বিক্রি করে এবং শুল্ক যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন স্থানান্তরকে ন্যায্য করে না।
বাণিজ্য গবেষণা সংস্থা জিটিআরআই অনুসারে, ফার্মাসিউটিক্যাল খাত ভারতের বৃহত্তম শিল্প রফতানি খাত। ভারত প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে ১২.৭ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ওষুধ রফতানি করে, যার ওপর প্রায় কোনও শুল্ক দেয় না। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতে আমদানিকৃত ওষুধের ওপর ১০.৯১ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। জিটিআরআই সতর্ক করেছে যে, ফার্মাসিউটিক্যাল খাত যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে দাম বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ খাতগুলোর মধ্যে একটি।
ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম ওষুধ কোম্পানি সিপলার সিইও উমাং ভোহরা বলেছেন, শুল্ক ব্যবসার সিদ্ধান্ত নির্ধারণ করা উচিত নয়, কারণ চার বছর পরে সেই শুল্ক উঠে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। কিন্তু চার বছর একটি দীর্ঘ সময় এবং এটি বেশ কয়েকটি কোম্পানির ভাগ্য নির্ধারণ করতে পারে।
বাজার বিশেষজ্ঞ অজয় বাগ্গা বলেছেন, ভারতের উচিত ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যের ওপর শুল্ক প্রত্যাহার করা। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতে ওষুধ রফতানির পরিমাণ মাত্র অর্ধ বিলিয়ন ডলার, তাই এর প্রভাব নগণ্য হবে। সূত্র: বিবিসি
গত সপ্তাহে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পিযুষ গোয়েল যুক্তরাষ্ট্রে একটি অপ্রত্যাশিত সফর করেন এবং আমেরিকার কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনায় বসেন। তার এই সফরের উদ্দেশ্য ছিল একটি বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন করা, যা ভারতের ওপর ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের হুমকি থেকে দেশটিকে রক্ষা করতে পারে
বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের ভারতের ওপর শুল্ক আরোপের হুমকিতে লাখো আমেরিকান নাগরিককে চিকিৎসা ব্যয় বাড়ানোর জন্য প্রস্তুত হওয়া লাগতে পারে। গত সপ্তাহে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পিযুষ গোয়েল যুক্তরাষ্ট্রে একটি অপ্রত্যাশিত সফর করেন এবং আমেরিকার কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনায় বসেন। তার এই সফরের উদ্দেশ্য ছিল একটি বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন করা, যা ভারতের ওপর ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের হুমকি থেকে দেশটিকে রক্ষা করতে পারে।
ট্রাম্প গত মাসে ঘোষণা করেছিলেন যে, আমেরিকান পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ানোর প্রতিক্রিয়ায় তিনি ২ এপ্রিল থেকে ভারতের ওপর শুল্ক আরোপ করবেন। এই শুল্ক ভারতের ওষুধ শিল্পের মতো গুরুত্বপূর্ণ রফতানি খাতকে প্রভাবিত করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহৃত প্রায় অর্ধেক জেনেরিক ওষুধ ভারত থেকে আসে। জেনেরিক ওষুধ, যা ব্র্যান্ডেড ওষুধের সস্তা সংস্করণ, যুক্তরাষ্ট্রের ৯০ শতাংশ প্রেসক্রিপশনে ব্যবহৃত হয়।
কনসাল্টিং ফার্ম আইকিউভিয়ার একটি গবেষণা অনুসারে, ২০২২ সালে ভারত থেকে আমদানিকৃত জেনেরিক ওষুধের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যসেবা খাতে সাশ্রয় হয়েছে ২১৯ বিলিয়ন ডলার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি বাণিজ্য চুক্তি না হয়, তাহলে ট্রাম্পের শুল্ক ভারতীয় জেনেরিক ওষুধের বাজারকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। এর ফলে কিছু কোম্পানি বাজার ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হতে পারে এবং ওষুধের ঘাটতি আরও বাড়তে পারে।
ইয়েল ইউনিভার্সিটির ওষুধ ব্যয় বিশেষজ্ঞ ড. মেলিসা বারবার বলেছেন, শুল্ক চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা বাড়িয়ে দিতে পারে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের দরিদ্র ও বীমাবিহীন জনগণ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ভারতীয় ফার্মাসিউটিক্যাল অ্যালায়েন্স (আইপিএ) কর্তৃক অর্থায়িত আইকিউভিয়ার গবেষণা অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ রক্তচাপ এবং মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রেসক্রিপশনের ৬০ শতাংশের বেশি ভারতীয় ওষুধ দিয়ে পূরণ করা হয়। সেরট্রালাইন, যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট, এর একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। ভারতীয় কোম্পানিগুলো থেকে এই ওষুধের দাম অন্যান্য কোম্পানির তুলনায় প্রায় অর্ধেক।
পাবলিক সিটিজেনসের আইনজীবী পিটার মেবারডুক বলেছেন, আমরা এ নিয়ে উদ্বিগ্ন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি চারজন রোগীর মধ্যে একজন ইতোমধ্যে ওষুধের উচ্চ মূল্যের কারণে চিকিৎসা গ্রহণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে।
ট্রাম্প ইতোমধ্যে চীনের ওপর শুল্ক বাড়ানোর কারণে যুক্তরাষ্ট্রের হাসপাতাল এবং জেনেরিক ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে চাপের মুখে রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হওয়া ৮৭ শতাংশ ওষুধের কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়, যার বেশিরভাগই চীনে উৎপাদিত হয়। ট্রাম্পের শুল্কের কারণে ইতোমধ্যে ওষুধের কাঁচামালের দাম বেড়েছে।
ট্রাম্প চান কোম্পানিগুলো যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন স্থানান্তর করুক। ফাইজার এবং ইলি লিলির মতো বড় ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো কিছু উৎপাদন যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু কম মূল্যের ওষুধের জন্য এই অর্থনীতি কাজ করে না। ভারতের বৃহত্তম ওষুধ প্রস্তুতকারক সান ফার্মার চেয়ারম্যান দিলীপ শঙ্খবি বলেছেন, তার কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বোতল ১ থেকে ৫ ডলারে ওষুধ বিক্রি করে এবং শুল্ক যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন স্থানান্তরকে ন্যায্য করে না।
বাণিজ্য গবেষণা সংস্থা জিটিআরআই অনুসারে, ফার্মাসিউটিক্যাল খাত ভারতের বৃহত্তম শিল্প রফতানি খাত। ভারত প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে ১২.৭ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ওষুধ রফতানি করে, যার ওপর প্রায় কোনও শুল্ক দেয় না। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতে আমদানিকৃত ওষুধের ওপর ১০.৯১ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। জিটিআরআই সতর্ক করেছে যে, ফার্মাসিউটিক্যাল খাত যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে দাম বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ খাতগুলোর মধ্যে একটি।
ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম ওষুধ কোম্পানি সিপলার সিইও উমাং ভোহরা বলেছেন, শুল্ক ব্যবসার সিদ্ধান্ত নির্ধারণ করা উচিত নয়, কারণ চার বছর পরে সেই শুল্ক উঠে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। কিন্তু চার বছর একটি দীর্ঘ সময় এবং এটি বেশ কয়েকটি কোম্পানির ভাগ্য নির্ধারণ করতে পারে।
বাজার বিশেষজ্ঞ অজয় বাগ্গা বলেছেন, ভারতের উচিত ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যের ওপর শুল্ক প্রত্যাহার করা। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতে ওষুধ রফতানির পরিমাণ মাত্র অর্ধ বিলিয়ন ডলার, তাই এর প্রভাব নগণ্য হবে। সূত্র: বিবিসি