alt

অর্থ-বাণিজ্য

রেমিট্যান্সে সুবাতাস, ১০ মাস না পেরুতেই ছাড়ালো ২৪ বিলিয়ন

অর্থনৈতিকক বার্তা পরিবেশক : সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫

দেশের অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর মধ্যে এ মুহূর্তে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয়। বলা যায়, সঙ্কটের এই সময়ে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে রেমিটেন্স। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও তা অকপটে স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, প্রবাসীদের সহযোগিতার কারণে বাংলাদেশের ভঙ্গুর অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে।

ঈদের পরও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত রয়েছে। গত ৩১ মার্চ ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়েছে। এরপর চলতি এপ্রিল মাসের ২৬ দিনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ২২৭ কোটি ১০ লাখ (২.২৭ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন।

সব মিলিয়ে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের ৯ মাস ২৬ দিনে (২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ২৬ এপ্রিল) ২ হাজার ৪০৫ কোটি ৫৪ লাখ (২৪.০৫ বিলিয়ন) রেমিটেন্স এসেছে দেশে, যা গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের পুরো সময়ের (১২ মাস, ২০২৩ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন) চেয়েও দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি। গত অর্থ বছরে ২ হাজার ৩৯১ কোটি ২২ লাখ (২৩.৯১ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

রেমিটেন্সে প্রতি ডলারে ১২৩ টাকা টাকা দিচ্ছে এখন ব্যাংকগুলো। সে হিসাবে টাকার অঙ্কে এই ২৬ দিনে ২৭ হাজার ৯৩৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকা দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ৮ কোটি ৭৩ লাখ ডলার; টাকার অঙ্কে যা ১ হাজার ৪৩ কোটি টাকা।

মাসের বাকি ৪ দিনে (২৭ থেকে ৩০ এপ্রিল) এই হারে এলে মাস শেষে রেমিটেন্সের অঙ্ক ২৬২ কোটি (২.৬২ বিলিয়ন) ডলারে গিয়ে পৌঁছবে বলে হিসাব বলছে, যা হবে একক মাসের হিসাবে তৃতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স। রোজা ও ঈদকে সামনে রেখে গত মাস মার্চে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ব্যাংকিং চ্যানেলে ৩২৯ কোটি ৫৬ লাখ (৩.২৯ বিলিয়ন) ডলার দেশে এসেছে, যা ছিল গত বছরের মার্চ মাসের চেয়ে ৬৫ শতাংশ বেশি। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ১০ কোটি ৬১ লাখ ডলার। গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ২৬৪ কোটি (২.৬৪ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

এই রেমিটেন্সের ওপর ভর করে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ বেড়েছে। গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলার। গড় হিসাবে ছিল ২৬ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার। তবে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মার্চ-এপ্রিল মেয়াদের আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ফের কমে আসবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

প্রতিবারই দুই ঈদ সামনে রেখে প্রবাসীরা বেশি রেমিটেন্স পাঠান। তারপর কমে যায়। কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। ঈদের পরও সেই আগের গতিতেই বাড়ছে অর্থনীতির এই সূচক। গত বৃহস্পতিবার কাতারের রাজধানী দোহায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘প্রবাসীদের সহযোগিতার কারণে বাংলাদেশের ভঙ্গুর অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। আমরা আজ যে শক্ত হয়ে দাঁড়াতে পেরেছি, তার মূলে আপনারা (প্রবাসীরা)। আপনারা সহযোগিতা না করলে আমরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারতাম না। আপনারা কখনও আমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন ভাববেন না।’

বাংলাদেশ ব্যাংক রোববার রেমিটেন্সের সাপ্তাহিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি এপ্রিল মাসের ২৬ দিনে ২২৭ কোটি ১০ লাখ ৪০ হাজার (২.২৭ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। সব মিলিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের নয় মাস ২৬ দিনে ২ হাজার ৪০৫ কোটি ৫৪ লাখ (২৪.০৫ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। প্রতি মাসের গড় হিসাবে এসেছে ২ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার। অর্থ বছরের বাকি সময়ে (২ মাস ৪ দিন) এই হারে এলে এবার মোট রেমিটেন্সের অঙ্ক ২৯ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে পৌঁছবে বলে হিসাব বলছে। আর সেটা যদি হয় তাহলে সেটি হবে আরেকটি রেকর্ড।

আগামী জুন মাসে কোরবানির ঈদ উদযাপিত হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা আশা করছেন, ওই ঈদ ঘিরেও বেশি রেমিটেন্স পাঠাবেন প্রবাসীরা। সব মিলিয়ে চলতি অর্থ বছরে মোট রেমিটেন্সের অঙ্ক ২৯ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। এর আগে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স এসেছিল ২০২০-২১ অর্থবছরে, ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার। গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে রেমিটেন্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে এসেছিল ২২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থ বছরে এসেছিল ২১ দশমিক শূন্য তিন বিলিয়ন ডলার। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে এসেছিল ১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছর শুরু হয়েছিল গত বছরের জুলাই থেকে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে ওই মাস ছিল উত্তাল; দেশজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছিল। কয়েক দিন ব্যাংক ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ ছিল। সে কারণে জুলাই মাসে রেমিটেন্স প্রবাহ কিছুটা কমেছিল। এসেছিল ১৯১ কোটি ৩৭ কোটি (১.৯১ বিলিয়ন) ডলার। তার আগের তিন মাস অবশ্য ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি এসেছিল। তবে তারপর থেকে প্রতি মাসেই ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স দেশে এসেছে; মার্চে এসেসে তিন বিলিয়ন ডলারের বেশি। এপ্রিল মাস শেষ না হতেই ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি এসে গেছে। অর্থাৎ চলতি অর্থ বছরের দশ মাসের (জুলাই-এপ্রিল) নয় মাসেই (আগস্ট-এপ্রিল) ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স এসেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এমনটি দেখা যায়নি।

২০২৫ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ২১৮ কোটি ৫২ লাখ (২.১৮ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছিল ৭ কোটি ৪ লাখ ডলার; টাকার অঙ্কে ছিল ৮৬০ কোটি টাকা। গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ব্যাংকিং চ্যানেলে ২৬৪ কোটি (২.৬৪ বিলিয়ন) ডলার দেশে এসেছিল। টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ৩২ হাজার ২০৮ কোটি টাকা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছিল ৮ কোটি ৫১ লাখ ডলার; টাকায় ছিল এক হাজার ৩৯ কোটি টাকা। চলতি অর্থ বছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ (১.৯১ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। দ্বিতীয় মাস আগস্টে তারা পাঠান ২২২ কোটি ৪১ লাখ (২.২২ বিলিয়ন) ডলার। তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে এসেছিল ২৪০ কোটি ৪৮ লাখ (২.৪০ বিলিয়ন) ডলার। চতুর্থ মাস অক্টোবরে আসে ২৩৯ কোটি ৫১ লাখ (২.৩৯ বিলিয়ন) ডলার। পঞ্চম মাস নভেম্বরে এসেছিল ২১৯ কোটি ৯৫ লাখ (২ বিলিয়ন) ডলার।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে দেশজুড়ে সহিংসতা, মৃত্যু, ইন্টারনেট বন্ধ, কারফিউ, মামলা, গ্রেপ্তার ও প্রবাসীদের উৎকণ্ঠার প্রেক্ষাপটে জুলাই মাসে রেমিটেন্স কমেছিল। জুলাইয়ের আন্দোলনকে ঘিরে সংঘাত-সহিংসতার জন্য সরকারকে দায়ী করে দেশে রেমিটেন্স না পাঠাতে সোশাল মিডিয়ায় কেউ কেউ প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। ১৯ থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত ব্যাংকিং কার্যক্রম চলে মাত্র এক দিন।

শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলনের মধ্যে দেশজুড়ে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, তা নিয়ন্ত্রণে ১৯ জুলাই রাত থেকে কারফিউ জারি করে আওয়ামী লীগ সরকার। এরপর ২৩ জুলাই পর্যন্ত ব্যাংক বন্ধ ছিল।

ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় ব্যাংকের অনলাইন লেনদেনও বন্ধ ছিল। কয়েক দিন লেনদেন বন্ধের পর ২৪ জুলাই ব্যাংক চালু হয়। ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ১৯ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই বৈধ পথে তথা ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে কোনো প্রবাসী আয় আসেনি। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পদত্যাগের পর রেমিটেন্স প্রবাহে আরও ধীরগতি লক্ষ্য করা যায়। ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যাত্রা শুরু হয় অন্তর্বর্তী সরকারের; রেমিটেন্স প্রবাহেও গতি ফেরে।

বাংলাদেশ-পাকিস্তান বাণিজ্য বাড়ানোর আহ্বান বাণিজ্য উপদেষ্টার

ছবি

চলতি এপ্রিলের ২৬ দিনে রেমিটেন্স এসেছে ২২৭ কোটি ডলার

ছবি

স্টারলিংকের লাইসেন্স অনুমোদন প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের

দক্ষিণ এশিয়ার খাদ্য মূল্যস্ফীতি এখন বাংলাদেশেই বেশি: বিশ্বব্যাংক

টাস্কফোর্সের চূড়ান্ত সুপারিশ, নিয়মিত আয় না থাকলে মিলবে না মার্জিন ঋণ

ভিয়েতনাম থেকে এলো আরও ২০ হাজার টন চাল

দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়নে দক্ষতা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি চায় এডিবি

ছবি

চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার জট, প্রতিদিন থাকছে প্রায় ৪০ হাজার

ছবি

চামড়া খাতে আয় কমেছে ১৬ কোটি মার্কিন ডলার

কাগজ আমদানিতে ৫ শতাংশ কর কমানোর দাবি

শেয়ারবাজারে সামান্য উত্থান হলেও সূচক পাঁচ হাজারের নিচে

ছবি

ইউরোপে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে সুবাতাস

ছবি

খাদ্য মূল্যস্ফীতি চরমে, বিশ্বব্যাংকের ‘লাল’ তালিকায় বাংলাদেশ

ছবি

এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের ১,০১৪ বিঘা জমি জব্দের আদেশ

ছবি

ইউগ্রিন, কিউডি ও মাইক্রোল্যাব ব্র্যান্ডের পণ্যে ডিসকাউন্ট

ছবি

ঈদুল আজহা উপলক্ষে স্যামসাং পণ্যে বিশেষ অফার

ওয়ালটনের নতুন স্মার্টওয়াচ ‘টিক এএমএক্স১৩’

সঞ্চয়পত্র কেনার চেয়ে বিক্রি বেশি

ছবি

পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপে এলপিজি আমদানির সিদ্ধান্ত

ছবি

হাইব্রিড গাড়ির সম্পুরক শুল্ক কমানোর দাবি বারভিডার

সহজ ভ্যাট ব্যবস্থাপনা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থতির উন্নতি চায় ব্যবসায়ীরা

ছবি

সপ্তাহজুড়ে ঢালাও দরপতনে বাজার মূলধন হারালো ৭ হাজার কোটি টাকা

ছবি

প্রথম প্রান্তিকে প্রাইম ব্যাংকের নিট মুনাফা বেড়েছে ৫৯ শতাংশ

নতুন নিরীক্ষা অধ্যাদেশ নিয়ে উদ্বেগ টিআইবির

ছবি

ঋণাত্মক ঋণ হিসাবের নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণের সময় বাড়ল

ছবি

প্রয়োজনীয় সংস্কারেই দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে: বিশ্বব্যাংক

ছবি

আইএমএফ এর ঋণ নিয়ে বাংলাদেশ আশাবাদী হলেও শর্তের বেড়াজাল রয়েছে

ট্রাম্পের কারণে বৈশ্বিক আর্থিক খাতের ঝুঁকি বেড়ে গেছে: আইএমএফ

ছবি

সিটি ব্যাংকে পদোন্নতি পেয়ে ডিএমডি হলেন দুই কর্মকর্তা

বিজিএমইএ নির্বাচনে ফোরাম চট্টগ্রাম-এর প্যানেল ঘোষণা

ছবি

ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইনডো চালুসহ বেশ কিছু উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার: বাণিজ্য উপদেষ্টা

ছবি

পরপর ৯দিন শেয়ারবাজারে পতন, সূচক নামলো ৫ হাজারের নিচে

ছবি

২০২৫ সালে বিশ্বব্যাপী স্মার্টফোনের সরবরাহ ১.৫% বৃদ্ধি : শীর্ষে স্যামসাং

ছবি

চরম দারিদ্র্য বাড়ার শঙ্কা, প্রবৃদ্ধিতেও ধস: বিশ্বব্যাংকের সতর্ক বার্তা

ছবি

দুবাইয়ে সম্পত্তি কেনায় নাফিজ সরাফতসহ ৭৮ জনের তথ্য চেয়েছে দুদক

ছবি

একদিনের ব্যবধানে কমলো স্বর্ণের দাম

tab

অর্থ-বাণিজ্য

রেমিট্যান্সে সুবাতাস, ১০ মাস না পেরুতেই ছাড়ালো ২৪ বিলিয়ন

অর্থনৈতিকক বার্তা পরিবেশক

সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫

দেশের অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর মধ্যে এ মুহূর্তে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয়। বলা যায়, সঙ্কটের এই সময়ে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে রেমিটেন্স। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও তা অকপটে স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, প্রবাসীদের সহযোগিতার কারণে বাংলাদেশের ভঙ্গুর অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে।

ঈদের পরও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত রয়েছে। গত ৩১ মার্চ ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়েছে। এরপর চলতি এপ্রিল মাসের ২৬ দিনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ২২৭ কোটি ১০ লাখ (২.২৭ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন।

সব মিলিয়ে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের ৯ মাস ২৬ দিনে (২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ২৬ এপ্রিল) ২ হাজার ৪০৫ কোটি ৫৪ লাখ (২৪.০৫ বিলিয়ন) রেমিটেন্স এসেছে দেশে, যা গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের পুরো সময়ের (১২ মাস, ২০২৩ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন) চেয়েও দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি। গত অর্থ বছরে ২ হাজার ৩৯১ কোটি ২২ লাখ (২৩.৯১ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

রেমিটেন্সে প্রতি ডলারে ১২৩ টাকা টাকা দিচ্ছে এখন ব্যাংকগুলো। সে হিসাবে টাকার অঙ্কে এই ২৬ দিনে ২৭ হাজার ৯৩৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকা দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ৮ কোটি ৭৩ লাখ ডলার; টাকার অঙ্কে যা ১ হাজার ৪৩ কোটি টাকা।

মাসের বাকি ৪ দিনে (২৭ থেকে ৩০ এপ্রিল) এই হারে এলে মাস শেষে রেমিটেন্সের অঙ্ক ২৬২ কোটি (২.৬২ বিলিয়ন) ডলারে গিয়ে পৌঁছবে বলে হিসাব বলছে, যা হবে একক মাসের হিসাবে তৃতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স। রোজা ও ঈদকে সামনে রেখে গত মাস মার্চে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ব্যাংকিং চ্যানেলে ৩২৯ কোটি ৫৬ লাখ (৩.২৯ বিলিয়ন) ডলার দেশে এসেছে, যা ছিল গত বছরের মার্চ মাসের চেয়ে ৬৫ শতাংশ বেশি। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ১০ কোটি ৬১ লাখ ডলার। গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ২৬৪ কোটি (২.৬৪ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

এই রেমিটেন্সের ওপর ভর করে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ বেড়েছে। গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলার। গড় হিসাবে ছিল ২৬ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার। তবে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মার্চ-এপ্রিল মেয়াদের আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ফের কমে আসবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

প্রতিবারই দুই ঈদ সামনে রেখে প্রবাসীরা বেশি রেমিটেন্স পাঠান। তারপর কমে যায়। কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। ঈদের পরও সেই আগের গতিতেই বাড়ছে অর্থনীতির এই সূচক। গত বৃহস্পতিবার কাতারের রাজধানী দোহায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘প্রবাসীদের সহযোগিতার কারণে বাংলাদেশের ভঙ্গুর অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। আমরা আজ যে শক্ত হয়ে দাঁড়াতে পেরেছি, তার মূলে আপনারা (প্রবাসীরা)। আপনারা সহযোগিতা না করলে আমরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারতাম না। আপনারা কখনও আমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন ভাববেন না।’

বাংলাদেশ ব্যাংক রোববার রেমিটেন্সের সাপ্তাহিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি এপ্রিল মাসের ২৬ দিনে ২২৭ কোটি ১০ লাখ ৪০ হাজার (২.২৭ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। সব মিলিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের নয় মাস ২৬ দিনে ২ হাজার ৪০৫ কোটি ৫৪ লাখ (২৪.০৫ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। প্রতি মাসের গড় হিসাবে এসেছে ২ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার। অর্থ বছরের বাকি সময়ে (২ মাস ৪ দিন) এই হারে এলে এবার মোট রেমিটেন্সের অঙ্ক ২৯ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে পৌঁছবে বলে হিসাব বলছে। আর সেটা যদি হয় তাহলে সেটি হবে আরেকটি রেকর্ড।

আগামী জুন মাসে কোরবানির ঈদ উদযাপিত হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা আশা করছেন, ওই ঈদ ঘিরেও বেশি রেমিটেন্স পাঠাবেন প্রবাসীরা। সব মিলিয়ে চলতি অর্থ বছরে মোট রেমিটেন্সের অঙ্ক ২৯ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। এর আগে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স এসেছিল ২০২০-২১ অর্থবছরে, ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার। গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে রেমিটেন্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে এসেছিল ২২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থ বছরে এসেছিল ২১ দশমিক শূন্য তিন বিলিয়ন ডলার। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে এসেছিল ১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছর শুরু হয়েছিল গত বছরের জুলাই থেকে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে ওই মাস ছিল উত্তাল; দেশজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছিল। কয়েক দিন ব্যাংক ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ ছিল। সে কারণে জুলাই মাসে রেমিটেন্স প্রবাহ কিছুটা কমেছিল। এসেছিল ১৯১ কোটি ৩৭ কোটি (১.৯১ বিলিয়ন) ডলার। তার আগের তিন মাস অবশ্য ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি এসেছিল। তবে তারপর থেকে প্রতি মাসেই ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স দেশে এসেছে; মার্চে এসেসে তিন বিলিয়ন ডলারের বেশি। এপ্রিল মাস শেষ না হতেই ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি এসে গেছে। অর্থাৎ চলতি অর্থ বছরের দশ মাসের (জুলাই-এপ্রিল) নয় মাসেই (আগস্ট-এপ্রিল) ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স এসেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এমনটি দেখা যায়নি।

২০২৫ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ২১৮ কোটি ৫২ লাখ (২.১৮ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছিল ৭ কোটি ৪ লাখ ডলার; টাকার অঙ্কে ছিল ৮৬০ কোটি টাকা। গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ব্যাংকিং চ্যানেলে ২৬৪ কোটি (২.৬৪ বিলিয়ন) ডলার দেশে এসেছিল। টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ৩২ হাজার ২০৮ কোটি টাকা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছিল ৮ কোটি ৫১ লাখ ডলার; টাকায় ছিল এক হাজার ৩৯ কোটি টাকা। চলতি অর্থ বছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ (১.৯১ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। দ্বিতীয় মাস আগস্টে তারা পাঠান ২২২ কোটি ৪১ লাখ (২.২২ বিলিয়ন) ডলার। তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে এসেছিল ২৪০ কোটি ৪৮ লাখ (২.৪০ বিলিয়ন) ডলার। চতুর্থ মাস অক্টোবরে আসে ২৩৯ কোটি ৫১ লাখ (২.৩৯ বিলিয়ন) ডলার। পঞ্চম মাস নভেম্বরে এসেছিল ২১৯ কোটি ৯৫ লাখ (২ বিলিয়ন) ডলার।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে দেশজুড়ে সহিংসতা, মৃত্যু, ইন্টারনেট বন্ধ, কারফিউ, মামলা, গ্রেপ্তার ও প্রবাসীদের উৎকণ্ঠার প্রেক্ষাপটে জুলাই মাসে রেমিটেন্স কমেছিল। জুলাইয়ের আন্দোলনকে ঘিরে সংঘাত-সহিংসতার জন্য সরকারকে দায়ী করে দেশে রেমিটেন্স না পাঠাতে সোশাল মিডিয়ায় কেউ কেউ প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। ১৯ থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত ব্যাংকিং কার্যক্রম চলে মাত্র এক দিন।

শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলনের মধ্যে দেশজুড়ে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, তা নিয়ন্ত্রণে ১৯ জুলাই রাত থেকে কারফিউ জারি করে আওয়ামী লীগ সরকার। এরপর ২৩ জুলাই পর্যন্ত ব্যাংক বন্ধ ছিল।

ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় ব্যাংকের অনলাইন লেনদেনও বন্ধ ছিল। কয়েক দিন লেনদেন বন্ধের পর ২৪ জুলাই ব্যাংক চালু হয়। ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ১৯ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই বৈধ পথে তথা ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে কোনো প্রবাসী আয় আসেনি। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পদত্যাগের পর রেমিটেন্স প্রবাহে আরও ধীরগতি লক্ষ্য করা যায়। ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যাত্রা শুরু হয় অন্তর্বর্তী সরকারের; রেমিটেন্স প্রবাহেও গতি ফেরে।

back to top