অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ আরও বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০ মাস পর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ আবার ২২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। বুধবার দিন শেষে রিজার্ভ উঠেছে ২২ দশমিক শূন্য চার বিলিয়ন ডলারে। গ্রস হিসাবে উঠেছে ২৭ বিলিয়ন ডলারে। ২০২৩ সালের আগস্টে রিজার্ভ ছিল ২৩ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলারে। সেখান থেকে পরের মাসে কমে ২১ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলারে নেমেছিল। এর পর আর ২২ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করেনি রিজার্ভ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান জানান, ‘মূলত প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের ঊর্ধ্বগতির কারণেই রিজার্ভ বাড়ছে। এছাড়া রিজার্ভের আরেক উৎস রপ্তানি আয়েও উচ্চ প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। সব মিলিয়ে রিজার্ভ বাড়ছে। ‘অর্থ পাচার কমে যাওয়ায় বৈধ পথে রেমিটেন্স বাড়ছে’ জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, “বেশ কিছুদিন ধরে ডলারের দর স্থিতিশীল রয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য এটা সুখবর।’
গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ছিল ২৬ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মার্চ-এপ্রিল মেয়াদের আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ফের কমে আসবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
গত ১০ মার্চ আকুর ১ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার পরিশোধের পর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন) হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ১৯ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছিল। গ্রস হিসাবে নেমেছিল ২৫ বিলিয়ন ডলারে।
আকুর বিল শোধের আগে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার; গ্রস হিসাবে ছিল ২৬ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার। আকু হলো এশিয়ার কয়েকটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যকার একটি আন্তঃআঞ্চলিক লেনদেন নিষ্পত্তি ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে এশিয়ার ৯টি দেশের মধ্যে যেসব আমদানি-রপ্তানি হয়, তার মূল্য প্রতি দুই মাস পরপর নিষ্পত্তি করা হয়। অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত লেনদেন তাৎক্ষণিকভাবে সম্পন্ন হয়। আকুর সদস্য দেশগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, ভুটান ও মালদ্বীপ।
আকুর সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ভারত পরিশোধ করা অর্থের তুলনায় অন্য দেশগুলো থেকে বেশি পরিমাণে ডলার আয় করে। অন্যদিকে বেশিরভাগ দেশকেই আয়ের তুলনায় আমদানি ব্যয় হিসেবে অতিরিক্ত ডলার খরচ করতে হয়। ব্যাংকগুলো আমদানির খরচ নিয়মিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দেয়, যা রিজার্ভে যোগ হয়। তবে ওই দায় দুই মাস পরপর রিজার্ভ থেকে পরিশোধ করে দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক বিপিএম-৬ হিসাবের রিজার্ভকে তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ হিসেবে দাবি করে।
সবশেষ গত ফেব্রুয়ারি মাসের আমদানির তথ্য প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাতে দেখা যায়, ওই মাসে পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের ৫ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। সে হিসাবে ২২ দশমিক শূন্য চার বিলিয়ন ডলার তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ দিয়ে সাড়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে।
আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুদ থাকতে হয়। সে হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ এখনও মোটেই সন্তোষজনক অবস্থায় নেই; টানটান অবস্থায় রয়েছে। রিজার্ভের প্রধান দুটি উৎস হচ্ছে রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয়। রেমিটেন্সের মতো রপ্তানি আয়েও ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থ বছরের প্রথম নয় মাসে অর্থাৎ জুলাই-মার্চ সময়ে মোট ৩ হাজার ৭১৯ কোটি ১৩ লাখ (৩৭.১৯ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছেন বিভিন্ন খাতের রপ্তানিকারকরা, যা গত অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেশি।
দেশের অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর মধ্যে এ মুহূর্তে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয়। বলা যায়, সঙ্কটের এই সময়ে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে রেমিটেন্স। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও তা অকপটে স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘প্রবাসীদের সহযোগিতার কারণে বাংলাদেশের ভঙ্গুর অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে।’
ঈদের পরও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত রয়েছে। গত ৩১ মার্চ ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়েছে। এরপর চলতি এপ্রিল মাসের ২৯ দিনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ২৬১ কোটি (২.৬১ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। সব মিলিয়ে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের ৯ মাস ২৯ দিনে (২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ২৯ এপ্রিল) ২ হাজার ৪৩৯ কোটি ৪৪ লাখ (২৪.৩৯ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স এসেছে দেশে, যা গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের পুরো সময়ের (১২ মাস, ২০২৩ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন) চেয়ে ২ শতাংশ বেশি। গত অর্থ বছরে ২ হাজার ৩৯১ কোটি ২২ লাখ (২৩.৯১ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
রেমিটেন্সে প্রতি ডলারে ১২৩ টাকা টাকা দিচ্ছে এখন ব্যাংকগুলো। সে হিসাবে টাকার অঙ্কে এই ২৯ দিনে ৩২ হাজার ১০৩ কোটি টাকা দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ৯ কোটি ডলার; টাকার অঙ্কে যা ১ হাজার ১০৭ কোটি টাকা। মাসের বাকি ১ দিনে (৩০ এপ্রিল) এই হারে এলে মাস শেষে রেমিটেন্সের অঙ্ক ২৭০ কোটি (২.৬২ বিলিয়ন) ডলারে গিয়ে পৌঁছবে বলে হিসাব বলছে, যা হবে একক মাসের হিসাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স।
রোজা ও ঈদকে সামনে রেখে গত মাস মার্চে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ব্যাংকিং চ্যানেলে ৩২৯ কোটি ৫৬ লাখ (৩.২৯ বিলিয়ন) ডলার দেশে এসেছে, যা ছিল গত বছরের মার্চ মাসের চেয়ে ৬৫ শতাংশ বেশি। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ১০ কোটি ৬১ লাখ ডলার। গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ২৬৪ কোটি (২.৬৪ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। প্রতিবারই দুই ঈদ সামনে রেখে প্রবাসীরা বেশি রেমিটেন্স পাঠান। তারপর কমে যায়। কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। ঈদের পরও সেই আগের গতিতেই বাড়ছে অর্থনীতির এই সূচক।
গত ২৪ এপ্রিল কাতারের রাজধানী দোহায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘প্রবাসীদের সহযোগিতার কারণে বাংলাদেশের ভঙ্গুর অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। আমরা আজ যে শক্ত হয়ে দাঁড়াতে পেরেছি, তার মূলে আপনারা (প্রবাসীরা)। আপনারা সহযোগিতা না করলে আমরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারতাম না। আপনারা কখনও আমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন ভাববেন না।’
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের নয় মাস ২৯ দিনে ২৪ দশমিক ৩৯ ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। প্রতি মাসের গড় হিসাবে এসেছে ২ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার। অর্থ বছরের বাকি সময়ে (২ মাস ১ দিন) এই হারে এলে এবার মোট রেমিটেন্সের অঙ্ক ২৯ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। আর সেটা যদি হয় তাহলে সেটি হবে আরেকটি রেকর্ড। আগামী জুন মাসে কোরবানির ঈদ উদযাপিত হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা আশা করছেন, ওই ঈদ ঘিরেও বেশি রেমিটেন্স পাঠাবেন প্রবাসীরা। সব মিলিয়ে চলতি অর্থ বছরে মোট রেমিটেন্সের অঙ্ক ৩০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি গিয়েও ঠেকতে পারে।
এর আগে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স এসেছিল ২০২০-২১ অর্থ বছরে, ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার। গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে রেমিটেন্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে এসেছিল ২২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থ বছরে এসেছিল ২১ দশমিক শূন্য তিন বিলিয়ন ডলার। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে এসেছিল ১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার।
শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫
অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ আরও বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০ মাস পর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ আবার ২২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। বুধবার দিন শেষে রিজার্ভ উঠেছে ২২ দশমিক শূন্য চার বিলিয়ন ডলারে। গ্রস হিসাবে উঠেছে ২৭ বিলিয়ন ডলারে। ২০২৩ সালের আগস্টে রিজার্ভ ছিল ২৩ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলারে। সেখান থেকে পরের মাসে কমে ২১ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলারে নেমেছিল। এর পর আর ২২ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করেনি রিজার্ভ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান জানান, ‘মূলত প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের ঊর্ধ্বগতির কারণেই রিজার্ভ বাড়ছে। এছাড়া রিজার্ভের আরেক উৎস রপ্তানি আয়েও উচ্চ প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। সব মিলিয়ে রিজার্ভ বাড়ছে। ‘অর্থ পাচার কমে যাওয়ায় বৈধ পথে রেমিটেন্স বাড়ছে’ জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, “বেশ কিছুদিন ধরে ডলারের দর স্থিতিশীল রয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য এটা সুখবর।’
গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ছিল ২৬ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মার্চ-এপ্রিল মেয়াদের আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ফের কমে আসবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
গত ১০ মার্চ আকুর ১ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার পরিশোধের পর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন) হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ১৯ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছিল। গ্রস হিসাবে নেমেছিল ২৫ বিলিয়ন ডলারে।
আকুর বিল শোধের আগে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার; গ্রস হিসাবে ছিল ২৬ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার। আকু হলো এশিয়ার কয়েকটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যকার একটি আন্তঃআঞ্চলিক লেনদেন নিষ্পত্তি ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে এশিয়ার ৯টি দেশের মধ্যে যেসব আমদানি-রপ্তানি হয়, তার মূল্য প্রতি দুই মাস পরপর নিষ্পত্তি করা হয়। অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত লেনদেন তাৎক্ষণিকভাবে সম্পন্ন হয়। আকুর সদস্য দেশগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, ভুটান ও মালদ্বীপ।
আকুর সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ভারত পরিশোধ করা অর্থের তুলনায় অন্য দেশগুলো থেকে বেশি পরিমাণে ডলার আয় করে। অন্যদিকে বেশিরভাগ দেশকেই আয়ের তুলনায় আমদানি ব্যয় হিসেবে অতিরিক্ত ডলার খরচ করতে হয়। ব্যাংকগুলো আমদানির খরচ নিয়মিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দেয়, যা রিজার্ভে যোগ হয়। তবে ওই দায় দুই মাস পরপর রিজার্ভ থেকে পরিশোধ করে দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক বিপিএম-৬ হিসাবের রিজার্ভকে তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ হিসেবে দাবি করে।
সবশেষ গত ফেব্রুয়ারি মাসের আমদানির তথ্য প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাতে দেখা যায়, ওই মাসে পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের ৫ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। সে হিসাবে ২২ দশমিক শূন্য চার বিলিয়ন ডলার তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ দিয়ে সাড়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে।
আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুদ থাকতে হয়। সে হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ এখনও মোটেই সন্তোষজনক অবস্থায় নেই; টানটান অবস্থায় রয়েছে। রিজার্ভের প্রধান দুটি উৎস হচ্ছে রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয়। রেমিটেন্সের মতো রপ্তানি আয়েও ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থ বছরের প্রথম নয় মাসে অর্থাৎ জুলাই-মার্চ সময়ে মোট ৩ হাজার ৭১৯ কোটি ১৩ লাখ (৩৭.১৯ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছেন বিভিন্ন খাতের রপ্তানিকারকরা, যা গত অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেশি।
দেশের অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর মধ্যে এ মুহূর্তে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয়। বলা যায়, সঙ্কটের এই সময়ে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে রেমিটেন্স। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও তা অকপটে স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘প্রবাসীদের সহযোগিতার কারণে বাংলাদেশের ভঙ্গুর অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে।’
ঈদের পরও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত রয়েছে। গত ৩১ মার্চ ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়েছে। এরপর চলতি এপ্রিল মাসের ২৯ দিনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ২৬১ কোটি (২.৬১ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। সব মিলিয়ে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের ৯ মাস ২৯ দিনে (২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ২৯ এপ্রিল) ২ হাজার ৪৩৯ কোটি ৪৪ লাখ (২৪.৩৯ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স এসেছে দেশে, যা গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের পুরো সময়ের (১২ মাস, ২০২৩ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন) চেয়ে ২ শতাংশ বেশি। গত অর্থ বছরে ২ হাজার ৩৯১ কোটি ২২ লাখ (২৩.৯১ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
রেমিটেন্সে প্রতি ডলারে ১২৩ টাকা টাকা দিচ্ছে এখন ব্যাংকগুলো। সে হিসাবে টাকার অঙ্কে এই ২৯ দিনে ৩২ হাজার ১০৩ কোটি টাকা দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ৯ কোটি ডলার; টাকার অঙ্কে যা ১ হাজার ১০৭ কোটি টাকা। মাসের বাকি ১ দিনে (৩০ এপ্রিল) এই হারে এলে মাস শেষে রেমিটেন্সের অঙ্ক ২৭০ কোটি (২.৬২ বিলিয়ন) ডলারে গিয়ে পৌঁছবে বলে হিসাব বলছে, যা হবে একক মাসের হিসাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স।
রোজা ও ঈদকে সামনে রেখে গত মাস মার্চে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ব্যাংকিং চ্যানেলে ৩২৯ কোটি ৫৬ লাখ (৩.২৯ বিলিয়ন) ডলার দেশে এসেছে, যা ছিল গত বছরের মার্চ মাসের চেয়ে ৬৫ শতাংশ বেশি। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ১০ কোটি ৬১ লাখ ডলার। গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ২৬৪ কোটি (২.৬৪ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। প্রতিবারই দুই ঈদ সামনে রেখে প্রবাসীরা বেশি রেমিটেন্স পাঠান। তারপর কমে যায়। কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। ঈদের পরও সেই আগের গতিতেই বাড়ছে অর্থনীতির এই সূচক।
গত ২৪ এপ্রিল কাতারের রাজধানী দোহায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘প্রবাসীদের সহযোগিতার কারণে বাংলাদেশের ভঙ্গুর অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। আমরা আজ যে শক্ত হয়ে দাঁড়াতে পেরেছি, তার মূলে আপনারা (প্রবাসীরা)। আপনারা সহযোগিতা না করলে আমরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারতাম না। আপনারা কখনও আমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন ভাববেন না।’
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের নয় মাস ২৯ দিনে ২৪ দশমিক ৩৯ ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। প্রতি মাসের গড় হিসাবে এসেছে ২ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার। অর্থ বছরের বাকি সময়ে (২ মাস ১ দিন) এই হারে এলে এবার মোট রেমিটেন্সের অঙ্ক ২৯ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। আর সেটা যদি হয় তাহলে সেটি হবে আরেকটি রেকর্ড। আগামী জুন মাসে কোরবানির ঈদ উদযাপিত হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা আশা করছেন, ওই ঈদ ঘিরেও বেশি রেমিটেন্স পাঠাবেন প্রবাসীরা। সব মিলিয়ে চলতি অর্থ বছরে মোট রেমিটেন্সের অঙ্ক ৩০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি গিয়েও ঠেকতে পারে।
এর আগে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স এসেছিল ২০২০-২১ অর্থ বছরে, ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার। গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে রেমিটেন্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে এসেছিল ২২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থ বছরে এসেছিল ২১ দশমিক শূন্য তিন বিলিয়ন ডলার। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে এসেছিল ১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার।