alt

অর্থ-বাণিজ্য

দক্ষিণ এশিয়ার খাদ্য মূল্যস্ফীতি এখন বাংলাদেশেই বেশি: বিশ্বব্যাংক

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশ : শনিবার, ০৩ মে ২০২৫

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে পারলেও বাংলাদেশ এখনো পারছে না। বিশ্বব্যাংকের খাদ্য মূল্যস্ফীতির তালিকায় বাংলাদেশ টানা দুই বছর ধরে ‘লাল’ শ্রেণিতে রয়েছে। এখন খাদ্য মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশেই বেশি। বিশ্বব্যাংকের তথ্য বলছে, ভারতে খাদ্য মূল্যস্ফীতি এখন ৬ শতাংশের কম। পাকিস্তানে মূল্যস্ফীতি এখন ‘মাইনাস’ (নেতিবাচক), অর্থাৎ খাদ্যপণ্যের দাম কমছে। শ্রীলঙ্কায়ও একই চিত্র। নেপাল ও মালদ্বীপে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের কম। ভুটানের হিসাব পাওয়া যায়নি। সার্কভুক্ত দেশ আফগানিস্তানেও খাদ্য মূল্যস্ফীতি এখন মাইনাস।

সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক বিশ্বের বিভিন্ন দেশের খাদ্যনিরাপত্তার হালনাগাদ পরিস্থিতি তুলে ধরে মূল্যস্ফীতি ধরে হালনাগাদ তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করেছে। সেখানে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর এ চিত্র পাওয়া গেছে। সর্বশেষ হিসাব মূলত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের। বিশ্বব্যাংকের খাদ্য মূল্যস্ফীতির তালিকায় বাংলাদেশ টানা দুই বছর ধরে ‘লাল’ শ্রেণিতে রয়েছে। এখন খাদ্য মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশেই বেশি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, মার্চ শেষে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯ শতাংশ। সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক সর্বশেষ ১০ থেকে ১২ মাসের খাদ্য মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে খাদ্যনিরাপত্তা-বিষয়ক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে থাকে। এর আগের টানা এক বছর বাংলাদেশ লাল শ্রেণির তালিকায় ছিল। প্রতি ছয় মাস পরপর এই চিত্র প্রকাশ করে থাকে সংস্থাটি। সেই অনুসারে, প্রায় দুই বছর ধরে বাংলাদেশ লাল তালিকায় অর্থাৎ অবস্থানের পরিবর্তন হয়নি।

বাংলাদেশের পাশাপাশি আরও ১৪টি দেশ এক বছর ধরে লাল শ্রেণিতে আছে। এই তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ার ভারতও আছে। অন্য দেশের মধ্যে রয়েছে কঙ্গো, অ্যাঙ্গোলা, ইথিওপিয়া, গাম্বিয়া, গিনি, মাদাগাস্কার, ঘানা, লাওস, লেসেথো, তিউনিসিয়া, জাম্বিয়া, বেলারুশ ও রাশিয়া।

খাদ্য মূল্যস্ফীতি কোন দেশে কত বেশি, তা বোঝাতে বিভিন্ন দেশকে চার শ্রেণিতে ভাগ করেছে বিশ্বব্যাংক। যেসব দেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৩০ শতাংশ বা তার বেশি, সেসব দেশকে ‘বেগুনি’ শ্রেণিতে; ৫ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যে যেসব দেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতি, তাদের ‘লাল’ শ্রেণিতে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ২ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে মূল্যস্ফীতির দেশগুলোকে ‘হলুদ’ ও ২ শতাংশের কম মূল্যস্ফীতির দেশগুলোকে ‘সবুজ’ শ্রেণিতে রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে ১৭২টি দেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে সংস্থাটির প্রতিবেদনে।

বাংলাদেশের পাশাপাশি আরও ১৪টি দেশ এক বছর ধরে লাল শ্রেণিতে আছে। এই তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ার ভারতও আছে। অন্য দেশের মধ্যে রয়েছে কঙ্গো, অ্যাঙ্গোলা, ইথিওপিয়া, গাম্বিয়া, গিনি, মাদাগাস্কার, ঘানা, লাওস, লেসেথো, তিউনিসিয়া, জাম্বিয়া, বেলারুশ ও রাশিয়া।

২০২২ সালের শুরুতে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকে। অনেক দেশ নিজেদের অর্থনীতি নিয়ে বিপদে পড়তে শুরু করে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও ভারতের মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকে। খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার অনেক বেশি ছিল। বেশি বিপাকে পড়েছিল শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান। তারা এখন মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে পেরেছে। ভারতও চাপ সামলে নিয়েছে।

২০২২ সালে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে দেউলিয়া হয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। এরপর ২০২৩ সালের মার্চ মাসে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ২৯০ কোটি ডলার ঋণ পাওয়ার পর ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে দেশটি। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি উঠেছিল প্রায় ৭০ শতাংশ। এর মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতির প্রভাব সবচেয়ে বেশি। সেই অবস্থা থেকে এখন উত্তরণ হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারি মাসে শ্রীলঙ্কার খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে মাইনাস দশমিক ২ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুসারে, শ্রীলঙ্কা এখন সবুজ তালিকায়। এক বছর ধরে শ্রীলঙ্কার খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশের বেশি হয়নি। মূল্যস্ফীতি কমাতে জ্বালানি তেলসহ সরকারি পরিষেবার বিলের খরচ কমিয়েছে শ্রীলঙ্কা সরকার।

একইভাবে বছর দুয়েক আগে পাকিস্তানও অর্থনীতি নিয়ে বিপদে পড়ে। পাকিস্তানেও মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকে। ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে পাকিস্তানের মূল্যস্ফীতি ৩০ শতাংশে পৌঁছায়। মূলত খাদ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় সার্বিক মূল্যস্ফীতি বাড়ে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পাকিস্তানও আইএমএফের কাছ থেকে ৭০০ কোটি ডলার ঋণ নেয়। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে পাকিস্তানের খাদ্য মূল্যস্ফীতি মাইনাস ৪ দশমিক ১ শতাংশ। সর্বশেষ ১০ মাসের মধ্যে পাঁচ মাসই খাদ্য মূল্যস্ফীতি মাইনাস ছিল। বিশ্বব্যাংকের সবুজ তালিকায় আছে পাকিস্তান।

২০২২ সালে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে দেউলিয়া হয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। এরপর ২০২৩ সালের মার্চ মাসে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ২৯০ কোটি ডলার ঋণ পাওয়ার পর ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে দেশটি।

কয়েক বছর ধরে অর্থনীতি নিয়ে ভারতও চাপে পড়ে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি না থাকলেও মূল্যস্ফীতি নিয়ে চাপে ছিল দেশটি। কিন্তু দেশটির মূল্যস্ফীতি কয়েক মাস ধরে কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে আছে। বিশ্বব্যাংক বলছে, গত জানুয়ারি মাসে ভারতের খাদ্য মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। যদিও ভারত এখনো বিশ্বব্যাংকের ‘লাল’ তালিকায় আছে। তবে বাংলাদেশের মতো খাদ্য মূল্যস্ফীতি এত বাড়েনি ভারতে।

বিশ্বব্যাংক বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ আফগানিস্তানের খাদ্য মূল্যস্ফীতি এক বছর ধরেই মাইনাস আছে।

সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারি মাসে আফগানিস্তানের মূল্যস্ফীতি ছিল মাইনাস ৩ শতাংশ। দেশটিতে ব্যাপক হারে খাদ্যের দাম কমেছে। বিশ্বব্যাংক আরও বলছে, নেপালে গত এক বছরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৪ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে ছিল। সর্বশেষ ফেব্রুয়ারি মাসে নেপালে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৭ শতাংশ হয়েছে। মালদ্বীপে এক বছর ধরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৫ থেকে ৮ শতাংশের মধ্যে ছিল। ভুটানের খাদ্য মূল্যস্ফীতির হিসাব দেয়নি বিশ্বব্যাংক।

২০২৪ সালের মার্চ থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত খাবার কিনতে লাগল ১১০ টাকা ৪৪ পয়সা। প্রতি ১০০ টাকায় খরচ বেড়েছে ১০ টাকা ৪৪ পয়সা। এর মানে, বাংলাদেশের সব শ্রেণির মানুষের খাবার খরচ গড়ে এক-দশমাংশ বেড়েছে।

প্রায় তিন বছর ধরে বাংলাদেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি চলছে। তবে এক বছর ধরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেশি ছিল। টানা ১০ মাস খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ শতাংশের বেশি। ১০ মাস পর গত ফেব্রুয়ারি মাসে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের নিচে নামে। মার্চ মাসেও তা এক অঙ্কের ঘরেই ছিল, যা একটু স্বস্তির বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত বছরের মার্চ মাসের পর খাদ্যের মূল্যস্ফীতি আর এক অঙ্কের ঘরে নামেনি। গরিব ও সীমিত আয়ের মানুষ এত দীর্ঘ সময় ধরে ভোগান্তিতে পড়েননি। এর মধ্যে গত জুলাই মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ দশমিক ১০ শতাংশে ওঠে, যা গত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

বিবিএসের হিসাবে, ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসের পর থেকে এ বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত অর্থাৎ গত এক বছরে গড় খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ দশমিক ৪৪ শতাংশ। গত এক বছরে গড় খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ দশমিক ৪৪ শতাংশ হওয়ার মানে হলো, ২০২৩ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যদি আপনার খাবার কিনতে ১০০ টাকা খরচ হয়; পরের এক বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের মার্চ থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত খাবার কিনতে লাগল ১১০ টাকা ৪৪ পয়সা। প্রতি ১০০ টাকায় খরচ বেড়েছে ১০ টাকা ৪৪ পয়সা। এর মানে, বাংলাদেশের সব শ্রেণির মানুষের খাবার খরচ গড়ে এক-দশমাংশ বেড়েছে।

বাজেটে কৃষি খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর সুপারিশ

বাজেটে করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা বাড়তে পারে

৩য় প্রান্তিক শেষে ওয়ালটনের মুনাফা হয়েছে ৬৯৬ কোটি টাকা

বাংলাদেশে ১০০টির বেশি ডিজিটাল ট্রেজারি ইন্টিগ্রেশন সম্পন্ন করল স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড

ছবি

ফ্লাইট পরিচালনা সাময়িকভাবে বন্ধ করল নভোএয়ার

ছবি

আবরার হত্যা: ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনের যাবজ্জীবন বহাল রেখে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ

বাসায় ১৪ বছরের কম বয়সী শিশু নিয়োগ বন্ধের সুপারিশ শ্রম সংস্কার কমিশনের

পুঁজিবাজারে স্থানীয় বিনিয়োগকারী বাড়লেও কমছে বিদেশি বিনিয়োগকারী

৯ মাসে বিদেশি ঋণ শোধ ৩শ’ কোটি ডলার ছাড়ালো

ছবি

২০ মাস পর ২২ বিলিয়ন ছাড়াল রিজার্ভ

ছবি

নরসিংদীর লটকন জিআই স্বীকৃতি পেল

ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কাস্টমস বিভাগের ভ্যাট দাখিলপত্র বিষয়ে কর্মশালা অনুষ্ঠিত

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়ালো

ছবি

পদ্মা সেতুতে ইলেকট্রনিক টোল কালেক্টর সিস্টেম ব্যবহারের জন্য সেতু কর্তৃপক্ষ, তিন ব্যাংক ও নগদ-এর মধ্যে চুক্তি

ছবি

বিএসইসির ২১ কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত

করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে ৪ লাখ টাকা করার পরামর্শ এফবিসিসিআইয়ের

ট্রেড লাইসেন্স বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করলে কঠোর কর্মসূচি: রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি

বাংলাদেশে মুক্তবাণিজ্য এলাকা স্থাপনে জাতীয় কমিটি গঠন

ছবি

ওয়ালটনের তৈরি ইউরোপিয়ান এসিসি ব্র্যান্ডের এসি কিনে ১০ লাখ টাকা পেলেন খুলনার মিঠুন দত্ত

ছবি

বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে এপ্রিলে সংকুচিত হয়েছে চীনের উৎপাদন খাত

১১৯তম প্রাইজবন্ডের ড্র, ছয় লাখ টাকা বিজয়ী ০২৬৪২৫৫

দুইদিন ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ রাখবে সিটি ব্যাংক

ছবি

বাস্তবসম্মত ও ব্যবসাবান্ধব বাজেটের আশ্বাস দিলেন অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

৬০ কোটি ডলার বিনিয়োগেও দুই বছর ধরে গ্যাস-বিদ্যুৎ মেলেনি: মোস্তফা কামাল

ছবি

স্টারলিংককে দুইটি লাইসেন্স দিল বিটিআরসি, বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরুর পথ সুগম

ছবি

এনবিআর সংস্কার নিয়ে আয়কর-কাস্টমস নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের ক্ষোভ

ছবি

১০০ টাকার প্রাইজবন্ডের ড্র বুধবার

পুঁজিবাজারে চীনা বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার অনুরোধ

ছবি

চলতি বছর বৈশ্বিক মন্দার ঝুঁকি বেড়েছে

ছবি

এশিয়ার নবম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশ

ছবি

শেয়ারবাজারে পতন অব্যাহত, বছরের সর্বনিম্ন লেনদেন

বাংলাদেশে আগ্রহী টেনসেন্ট, আসছে আরও আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান

বাংলাদেশ-পাকিস্তান বাণিজ্য বাড়ানোর আহ্বান বাণিজ্য উপদেষ্টার

ছবি

চলতি এপ্রিলের ২৬ দিনে রেমিটেন্স এসেছে ২২৭ কোটি ডলার

ছবি

স্টারলিংকের লাইসেন্স অনুমোদন প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের

দক্ষিণ এশিয়ার খাদ্য মূল্যস্ফীতি এখন বাংলাদেশেই বেশি: বিশ্বব্যাংক

tab

অর্থ-বাণিজ্য

দক্ষিণ এশিয়ার খাদ্য মূল্যস্ফীতি এখন বাংলাদেশেই বেশি: বিশ্বব্যাংক

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশ

শনিবার, ০৩ মে ২০২৫

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে পারলেও বাংলাদেশ এখনো পারছে না। বিশ্বব্যাংকের খাদ্য মূল্যস্ফীতির তালিকায় বাংলাদেশ টানা দুই বছর ধরে ‘লাল’ শ্রেণিতে রয়েছে। এখন খাদ্য মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশেই বেশি। বিশ্বব্যাংকের তথ্য বলছে, ভারতে খাদ্য মূল্যস্ফীতি এখন ৬ শতাংশের কম। পাকিস্তানে মূল্যস্ফীতি এখন ‘মাইনাস’ (নেতিবাচক), অর্থাৎ খাদ্যপণ্যের দাম কমছে। শ্রীলঙ্কায়ও একই চিত্র। নেপাল ও মালদ্বীপে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের কম। ভুটানের হিসাব পাওয়া যায়নি। সার্কভুক্ত দেশ আফগানিস্তানেও খাদ্য মূল্যস্ফীতি এখন মাইনাস।

সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক বিশ্বের বিভিন্ন দেশের খাদ্যনিরাপত্তার হালনাগাদ পরিস্থিতি তুলে ধরে মূল্যস্ফীতি ধরে হালনাগাদ তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করেছে। সেখানে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর এ চিত্র পাওয়া গেছে। সর্বশেষ হিসাব মূলত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের। বিশ্বব্যাংকের খাদ্য মূল্যস্ফীতির তালিকায় বাংলাদেশ টানা দুই বছর ধরে ‘লাল’ শ্রেণিতে রয়েছে। এখন খাদ্য মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশেই বেশি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, মার্চ শেষে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯ শতাংশ। সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক সর্বশেষ ১০ থেকে ১২ মাসের খাদ্য মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে খাদ্যনিরাপত্তা-বিষয়ক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে থাকে। এর আগের টানা এক বছর বাংলাদেশ লাল শ্রেণির তালিকায় ছিল। প্রতি ছয় মাস পরপর এই চিত্র প্রকাশ করে থাকে সংস্থাটি। সেই অনুসারে, প্রায় দুই বছর ধরে বাংলাদেশ লাল তালিকায় অর্থাৎ অবস্থানের পরিবর্তন হয়নি।

বাংলাদেশের পাশাপাশি আরও ১৪টি দেশ এক বছর ধরে লাল শ্রেণিতে আছে। এই তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ার ভারতও আছে। অন্য দেশের মধ্যে রয়েছে কঙ্গো, অ্যাঙ্গোলা, ইথিওপিয়া, গাম্বিয়া, গিনি, মাদাগাস্কার, ঘানা, লাওস, লেসেথো, তিউনিসিয়া, জাম্বিয়া, বেলারুশ ও রাশিয়া।

খাদ্য মূল্যস্ফীতি কোন দেশে কত বেশি, তা বোঝাতে বিভিন্ন দেশকে চার শ্রেণিতে ভাগ করেছে বিশ্বব্যাংক। যেসব দেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৩০ শতাংশ বা তার বেশি, সেসব দেশকে ‘বেগুনি’ শ্রেণিতে; ৫ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যে যেসব দেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতি, তাদের ‘লাল’ শ্রেণিতে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ২ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে মূল্যস্ফীতির দেশগুলোকে ‘হলুদ’ ও ২ শতাংশের কম মূল্যস্ফীতির দেশগুলোকে ‘সবুজ’ শ্রেণিতে রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে ১৭২টি দেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে সংস্থাটির প্রতিবেদনে।

বাংলাদেশের পাশাপাশি আরও ১৪টি দেশ এক বছর ধরে লাল শ্রেণিতে আছে। এই তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ার ভারতও আছে। অন্য দেশের মধ্যে রয়েছে কঙ্গো, অ্যাঙ্গোলা, ইথিওপিয়া, গাম্বিয়া, গিনি, মাদাগাস্কার, ঘানা, লাওস, লেসেথো, তিউনিসিয়া, জাম্বিয়া, বেলারুশ ও রাশিয়া।

২০২২ সালের শুরুতে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকে। অনেক দেশ নিজেদের অর্থনীতি নিয়ে বিপদে পড়তে শুরু করে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও ভারতের মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকে। খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার অনেক বেশি ছিল। বেশি বিপাকে পড়েছিল শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান। তারা এখন মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে পেরেছে। ভারতও চাপ সামলে নিয়েছে।

২০২২ সালে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে দেউলিয়া হয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। এরপর ২০২৩ সালের মার্চ মাসে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ২৯০ কোটি ডলার ঋণ পাওয়ার পর ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে দেশটি। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি উঠেছিল প্রায় ৭০ শতাংশ। এর মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতির প্রভাব সবচেয়ে বেশি। সেই অবস্থা থেকে এখন উত্তরণ হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারি মাসে শ্রীলঙ্কার খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে মাইনাস দশমিক ২ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুসারে, শ্রীলঙ্কা এখন সবুজ তালিকায়। এক বছর ধরে শ্রীলঙ্কার খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশের বেশি হয়নি। মূল্যস্ফীতি কমাতে জ্বালানি তেলসহ সরকারি পরিষেবার বিলের খরচ কমিয়েছে শ্রীলঙ্কা সরকার।

একইভাবে বছর দুয়েক আগে পাকিস্তানও অর্থনীতি নিয়ে বিপদে পড়ে। পাকিস্তানেও মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকে। ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে পাকিস্তানের মূল্যস্ফীতি ৩০ শতাংশে পৌঁছায়। মূলত খাদ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় সার্বিক মূল্যস্ফীতি বাড়ে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পাকিস্তানও আইএমএফের কাছ থেকে ৭০০ কোটি ডলার ঋণ নেয়। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে পাকিস্তানের খাদ্য মূল্যস্ফীতি মাইনাস ৪ দশমিক ১ শতাংশ। সর্বশেষ ১০ মাসের মধ্যে পাঁচ মাসই খাদ্য মূল্যস্ফীতি মাইনাস ছিল। বিশ্বব্যাংকের সবুজ তালিকায় আছে পাকিস্তান।

২০২২ সালে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে দেউলিয়া হয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। এরপর ২০২৩ সালের মার্চ মাসে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ২৯০ কোটি ডলার ঋণ পাওয়ার পর ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে দেশটি।

কয়েক বছর ধরে অর্থনীতি নিয়ে ভারতও চাপে পড়ে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি না থাকলেও মূল্যস্ফীতি নিয়ে চাপে ছিল দেশটি। কিন্তু দেশটির মূল্যস্ফীতি কয়েক মাস ধরে কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে আছে। বিশ্বব্যাংক বলছে, গত জানুয়ারি মাসে ভারতের খাদ্য মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। যদিও ভারত এখনো বিশ্বব্যাংকের ‘লাল’ তালিকায় আছে। তবে বাংলাদেশের মতো খাদ্য মূল্যস্ফীতি এত বাড়েনি ভারতে।

বিশ্বব্যাংক বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ আফগানিস্তানের খাদ্য মূল্যস্ফীতি এক বছর ধরেই মাইনাস আছে।

সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারি মাসে আফগানিস্তানের মূল্যস্ফীতি ছিল মাইনাস ৩ শতাংশ। দেশটিতে ব্যাপক হারে খাদ্যের দাম কমেছে। বিশ্বব্যাংক আরও বলছে, নেপালে গত এক বছরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৪ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে ছিল। সর্বশেষ ফেব্রুয়ারি মাসে নেপালে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৭ শতাংশ হয়েছে। মালদ্বীপে এক বছর ধরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৫ থেকে ৮ শতাংশের মধ্যে ছিল। ভুটানের খাদ্য মূল্যস্ফীতির হিসাব দেয়নি বিশ্বব্যাংক।

২০২৪ সালের মার্চ থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত খাবার কিনতে লাগল ১১০ টাকা ৪৪ পয়সা। প্রতি ১০০ টাকায় খরচ বেড়েছে ১০ টাকা ৪৪ পয়সা। এর মানে, বাংলাদেশের সব শ্রেণির মানুষের খাবার খরচ গড়ে এক-দশমাংশ বেড়েছে।

প্রায় তিন বছর ধরে বাংলাদেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি চলছে। তবে এক বছর ধরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেশি ছিল। টানা ১০ মাস খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ শতাংশের বেশি। ১০ মাস পর গত ফেব্রুয়ারি মাসে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের নিচে নামে। মার্চ মাসেও তা এক অঙ্কের ঘরেই ছিল, যা একটু স্বস্তির বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত বছরের মার্চ মাসের পর খাদ্যের মূল্যস্ফীতি আর এক অঙ্কের ঘরে নামেনি। গরিব ও সীমিত আয়ের মানুষ এত দীর্ঘ সময় ধরে ভোগান্তিতে পড়েননি। এর মধ্যে গত জুলাই মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ দশমিক ১০ শতাংশে ওঠে, যা গত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

বিবিএসের হিসাবে, ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসের পর থেকে এ বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত অর্থাৎ গত এক বছরে গড় খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ দশমিক ৪৪ শতাংশ। গত এক বছরে গড় খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ দশমিক ৪৪ শতাংশ হওয়ার মানে হলো, ২০২৩ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যদি আপনার খাবার কিনতে ১০০ টাকা খরচ হয়; পরের এক বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের মার্চ থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত খাবার কিনতে লাগল ১১০ টাকা ৪৪ পয়সা। প্রতি ১০০ টাকায় খরচ বেড়েছে ১০ টাকা ৪৪ পয়সা। এর মানে, বাংলাদেশের সব শ্রেণির মানুষের খাবার খরচ গড়ে এক-দশমাংশ বেড়েছে।

back to top