alt

অর্থ-বাণিজ্য

ইউরোপে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে বড় উত্থান

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫

নানা বাধা-বিপত্তির মধ্যেও যুক্তরাষ্ট্রের মতো ইউরোপের বাজারে পোশাক রপ্তানিতে চমক দেখিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) ইউরোপের বাজার থেকে প্রায় ৬ বিলিয়ন (৬০০ কোটি) ডলার আয় করেছেন পোশাক রপ্তানিকারকরা। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৯ শতাংশ বেশি।

চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) ইউরোপের বাজার থেকে প্রায় ৬ বিলিয়ন (৬০০ কোটি) ডলার আয় করেছেন পোশাক রপ্তানিকারকরা। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৯ শতাংশ বেশি

তিন মাসের প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশের ধারেকাছেও নেই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীন; এই তিন মাসে চীন ইউরোপের বাজারে ৬৬৭ কোটি ২২ লাখ (৬.৬৭ বিলিয়ন) ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। রপ্তানির অঙ্ক বড় হলেও তাদের প্রবৃদ্ধি ২৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ।

বড় বড় বাজারে রপ্তানি বাড়ায় পোশাক রপ্তানিকারকরা খুশি হলেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন বাণিজ্য নীতির ধাক্কায় শেষ পরিণতি কী হবে, তা নিয়ে শঙ্কাও রয়েছে। ২৭ দেশের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার। পোশাক রপ্তানি থেকে মোট যে আয় হয়, তার প্রায় ৬০ শতাংশ আসে এই বাজার থেকে।

অভ্যুত্থানে রাষ্ট্র ক্ষমতার পরিবর্তনের পর শ্রমিক অসন্তোষে কারখানা বন্ধসহ নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে গত বছরের শেষ দিকে ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বেশ কমে গিয়েছিল।

২০২৪ সালের নয় মাস (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক (-২ দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ) হয়ে পড়েছিল। অর্থাৎ ২০২৪ সালের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর সময়ে ইউরাপের বাজারে পোশাক রপ্তানি করে ২০২৩ সালের একই সময়ের চেয়ে ২ দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ কম আয় হয়েছিল।

তবে বছরের শেষ তিন মাসে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) রপ্তানি বাড়ায় শেষ পর্যন্ত ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে শেষ হয়েছিল বছর। ২০২৪ সালে ইউরোপের দেশগুলোতে মোট ১ হাজার ৯৭৭ কোটি ১২ লাখ (১৯.৭৭ বিলিয়ন) ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল। আগের বছরে অর্থাৎ ২০২৩ সালে রপ্তানির অঙ্ক ছিল ১ হাজার ৮৮৫ কোটি ৫৭ লাখ (১৮.৮৫ বিলিয়ন) ডলার। ২০২৫ সাল শুরু হয়েছে বড় চমক নিয়ে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিসংখ্যান অফিসের (ইউরোস্ট্যাট) সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, এই বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা ৫৯৭ কোটি ৬১ লাখ (৫.৯৮ বিলিয়ন) ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৯ দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ বেশি।

এর আগে তিন মাসে কখনই এত প্রবৃদ্ধি দেখা যায়নি এই বাজারে। প্রধান প্রতিযোগী দেশ চীন, ভিয়েতনাম, ভারত ও পাকিস্তান বাংলাদেশের এই প্রবৃদ্ধির ধারেকাছেও নেই। ২০২৪ সালের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে এই বাজারে ৪৬৩ কোটি ৫ লাখ (৪.৬৩ বিলিয়ন) ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল।

গতকাল সোমবার প্রকাশিত ইউরোস্ট্যাটের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম তিন মাসে ইইউর কোম্পানিগুলো বিভিন্ন দেশ থেকে ২ হাজার ৪৬৫ কোটি ২১ লাখ (২৪.৬৫ বিলিয়ন) মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি করেছে। এই আমদানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ বেশি। ইইউতে বাংলাদেশ দ্বিতীয় শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। চীন সবার শীর্ষে। তৃতীয় তুরস্ক।

জানুয়ারি-মার্চ সময়ে চীন ইউরোপের বাজারে ৬৬৭ কোটি ২২ লাখ (৬.৬৭ বিলিয়ন) ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ বেশি। ২০২৪ সালের এই তিন মাসে চীনের রপ্তানির অঙ্ক ছিল ৫ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার। তবে এই বাজারে তুরস্কের রপ্তানি কমেছে; ৪ দশমিক ১৪ শতাংশ নেতিবাচক (ঋণাত্মক বা নেগেটিভ) প্রবৃদ্ধি হয়েছে। জানুয়ারি-মার্চ সময়ে তুরস্ক ইউরোপে ২৩৬ কোটি ৯৬ লাখ (২.৩৭ বিলিয়ন) ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। ২০২৪ সালের এই তিন মাসে রপ্তানির অঙ্ক ছিল ২ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার।

ইউরোপে পোশাক রপ্তানিতে চতুর্থ স্থানে রয়েছে ভারত। জানুয়ারি-মার্চ সময়ে ভারত ইউরোপের বাজারে ১৪৪ কোটি ৪২ লাখ (১.৪৪ বিলিয়ন) ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৪ শতাংশ। কম্বোডিয়ার প্রবৃদ্ধি হয়েছে সবচেয়ে বেশি ৩৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এই তিন মাসে দেশটি ইউরোপে ১১৬ কোটি ৩৬ লাখ (১.১৬ বিলিয়ন) ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে তাদের রপ্তানির অঙ্ক ছিল ৮৭ কোটি ১৯ লাখ ডলার। অন্য দেশগুলোর মধ্যে জানুয়ারি-মার্চ সময়ে ভিয়েতনামের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৮ দশমিক শূন্য নয় শতাংশ। রপ্তানি হয়েছে ১১৩ কোটি ৭৫ লাখ (১.১৩ বিলিয়ন) ডলারের পোশাক।

পাকিস্তানের রপ্তানির অঙ্ক ১০৮ কোটি ৪৬ লাখ (১.০৮ বিলিয়ন) ডলার; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ। এছাড়া জানুয়ারি-মার্চ সময়ে ইউরোপের বাজারে শ্রীলঙ্কার রপ্তানি বেড়েছে ১৩ দশমিক ৩১ শতাংশ। ইন্দোনেশিয়ার ৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং মরক্কোর প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ১৮ শতাংশ।

২০২৪ সালে ইউরোপের কোম্পানিগুলো বিভিন্ন দেশ থেকে ৯২ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি করেছিল, যা ছিল ২০২৩ সালের চেয়ে ১ দশমিক ৫৩ শতাংশ বেশি। গত বছর চীন ইউরোপের বাজারে ২৬ দশমিক শূন্য সাত বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছিল যা ছিল আগের বছরের চেয়ে ২ দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি। তবে গত বছর এই বাজারে তুরস্কের রপ্তানি বেশ খানিকটা কমেছিল; ৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ। ইন্দোনেশিয়ার কমেছিল ৫ দশমিক ৮১ শতাংশ।

ভারতের বেড়েছিল প্রায় ২ শতাংশ। কম্বোডিয়ার বেড়েছিল ২০ দশমিক ৭৩ শতাংশ। অন্য দেশগুলোর মধ্যে ভিয়েতনামের বেড়েছিল ৪ দশমিক ২১ শতাংশ। পাকিস্তানের বেড়েছিল ১২ দশমিক ৪১ শতাংশ। মরক্কোর প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র‌্যাপিড) এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে ইইউর বাজারে বাংলাদেশের ৬৫ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করা সম্ভব। পোশাকের বৈশ্বিক বাজারের গতি-প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে এই পরিসংখ্যান দিয়েছে র‌্যাপিড। বর্তমান অবস্থায়ও ইইউতে বাড়তি ১৮ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানির সুযোগ রয়েছে বলে মনে করে র‌্যাপিড।

ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) যুক্তরাষ্ট্রে ২২২ কোটি ৩৯ লাখ (২.২২ বিলিয়ন) ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৭ শতাংশ বেশি।

ছবি

ইলন মাস্কের স্টারলিংক এবার বাংলাদেশে, সরকারের স্পেশাল সুবিধা কেন?

ছবি

বাংলাদেশের বাজারে অপোর নতুন স্মার্টফোন ‘এ৫এক্স’

১৫ বছর ধরে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা নষ্ট করা হয়েছে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

ছবি

‘তড়িঘড়ি নয়, দরকার ছিল বিকল্পের’—স্টারলিংক নিয়ে সরকারের ব্যাখ্যা

প্রকৃত মুদি ব্যবসায়ীর লাইসেন্স ছাড়া টিসিবির ডিলার হওয়া যাবে না

আগামী বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ছে, শেয়ারবাজারে করছাড় আসতে পারে

দশ মাসে এডিপি বাস্তবায়ন ৪১ দশমিক ৩১ শতাংশ, দেড় দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন

ছবি

প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট বিপ্লব আনতে প্রস্তুত স্টারলিংক, উদ্যোক্তাদের জন্য সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে

ছবি

স্টারলিংক চালু: জানুন সেবা, খরচ ও উদ্যোক্তাদের সুযোগ

ছবি

মহার্ঘ ভাতার বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনায় রয়েছে: অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

স্টারলিংকের প্রতিটি ডিভাইসের উপর ট্যাক্স আরোপ করবো: ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব

ছবি

যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি পণ্যে শুল্ক ছাড় দিচ্ছে সরকার

ছবি

এনবিআরকে ভাগ করা ঠিক, তবে ভুল পদ্ধতিতে করা হয়েছে: দেবপ্রিয়

ছবি

তারা অপকর্ম মুছে ফেলতে পারে: নগদের বর্তমান ব্যবস্থাপনা নিয়ে গভর্নরের শঙ্কা

ছবি

লুটপাটকারীদের অর্থ দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাংক ও জনকল্যাণে ব্যয় করবে সরকার

বিশ্ব পরিমাপ দিবস আজ

২৭ ব্যবসায় ডিজিটাল চালান বাধ্যতামূলক

ছবি

সব সময় আমার পদত্যাগের গুজব, শেয়ারবাজারে কি এর প্রভাব পড়ে না: বিএসইসি চেয়ারম্যান

ছবি

শেয়ারবাজারে বড় পতন, সূচক করোনার পরে সর্বনিম্ন

তিতাস গ্যাসের পূর্ণ পেলেন শাহনেওয়াজ পারভেজ

ছবি

সহজ কিস্তিতে স্মার্টফোন দিচ্ছে বাংলালিংক

ছবি

বাংলাদেশ-পাকিস্তান ব্যবসায়ীদের জন্য সহজ হচ্ছে ভিসা নীতি: হাইকমিশনার

ফের বড় পতন শেয়ারবাজারে

ছবি

অধ্যাদেশ বাতিল না হলে এনবিআরে কলম বিরতি চলবে

ছবি

১ জুলাই থেকে আর জাপানে যাবে না বিমান

ছবি

মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বিপ্লব, প্রতিদিন ৬ হাজার কোটি টাকা লেনদেন

ছবি

তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির করহারের ব্যবধান ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব

ছবি

ভারতের নিষেধাজ্ঞা, বেনাপোলে আটকে আছে ৩৬ ট্রাক পণ্য

ছবি

ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকায় বিকাশ পেমেন্টে ‘বাই ওয়ান গেট থ্রি’ অফার

ছবি

বাজারে রিয়েলমি ১৪ ৫জি সিরিজের নতুন দুটি স্মার্টফোন

ছবি

বাণিজ্যে ভারসাম্যহীনতা নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনা করবে বাংলাদেশ

ছবি

বন্ধ হচ্ছে বাংলাদেশ বিমানের জাপান অধ্যায়

ছবি

ভারতের সিদ্ধান্তে উভয় দেশের ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন: শেখ বশিরউদ্দীন

ছবি

স্থলপথে রপ্তানিতে বাধা, বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ট্রাক ফেরত

ছবি

স্থলপথে বাংলাদেশি পোশাকসহ বেশ কিছু পণ্যের আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিল ভারত

ছবি

পদ্মা ব্যাংক: বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সমাধান চান আমানতকারীরা

tab

অর্থ-বাণিজ্য

ইউরোপে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে বড় উত্থান

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫

নানা বাধা-বিপত্তির মধ্যেও যুক্তরাষ্ট্রের মতো ইউরোপের বাজারে পোশাক রপ্তানিতে চমক দেখিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) ইউরোপের বাজার থেকে প্রায় ৬ বিলিয়ন (৬০০ কোটি) ডলার আয় করেছেন পোশাক রপ্তানিকারকরা। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৯ শতাংশ বেশি।

চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) ইউরোপের বাজার থেকে প্রায় ৬ বিলিয়ন (৬০০ কোটি) ডলার আয় করেছেন পোশাক রপ্তানিকারকরা। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৯ শতাংশ বেশি

তিন মাসের প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশের ধারেকাছেও নেই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীন; এই তিন মাসে চীন ইউরোপের বাজারে ৬৬৭ কোটি ২২ লাখ (৬.৬৭ বিলিয়ন) ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। রপ্তানির অঙ্ক বড় হলেও তাদের প্রবৃদ্ধি ২৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ।

বড় বড় বাজারে রপ্তানি বাড়ায় পোশাক রপ্তানিকারকরা খুশি হলেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন বাণিজ্য নীতির ধাক্কায় শেষ পরিণতি কী হবে, তা নিয়ে শঙ্কাও রয়েছে। ২৭ দেশের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার। পোশাক রপ্তানি থেকে মোট যে আয় হয়, তার প্রায় ৬০ শতাংশ আসে এই বাজার থেকে।

অভ্যুত্থানে রাষ্ট্র ক্ষমতার পরিবর্তনের পর শ্রমিক অসন্তোষে কারখানা বন্ধসহ নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে গত বছরের শেষ দিকে ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বেশ কমে গিয়েছিল।

২০২৪ সালের নয় মাস (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক (-২ দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ) হয়ে পড়েছিল। অর্থাৎ ২০২৪ সালের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর সময়ে ইউরাপের বাজারে পোশাক রপ্তানি করে ২০২৩ সালের একই সময়ের চেয়ে ২ দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ কম আয় হয়েছিল।

তবে বছরের শেষ তিন মাসে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) রপ্তানি বাড়ায় শেষ পর্যন্ত ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে শেষ হয়েছিল বছর। ২০২৪ সালে ইউরোপের দেশগুলোতে মোট ১ হাজার ৯৭৭ কোটি ১২ লাখ (১৯.৭৭ বিলিয়ন) ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল। আগের বছরে অর্থাৎ ২০২৩ সালে রপ্তানির অঙ্ক ছিল ১ হাজার ৮৮৫ কোটি ৫৭ লাখ (১৮.৮৫ বিলিয়ন) ডলার। ২০২৫ সাল শুরু হয়েছে বড় চমক নিয়ে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিসংখ্যান অফিসের (ইউরোস্ট্যাট) সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, এই বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা ৫৯৭ কোটি ৬১ লাখ (৫.৯৮ বিলিয়ন) ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৯ দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ বেশি।

এর আগে তিন মাসে কখনই এত প্রবৃদ্ধি দেখা যায়নি এই বাজারে। প্রধান প্রতিযোগী দেশ চীন, ভিয়েতনাম, ভারত ও পাকিস্তান বাংলাদেশের এই প্রবৃদ্ধির ধারেকাছেও নেই। ২০২৪ সালের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে এই বাজারে ৪৬৩ কোটি ৫ লাখ (৪.৬৩ বিলিয়ন) ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল।

গতকাল সোমবার প্রকাশিত ইউরোস্ট্যাটের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম তিন মাসে ইইউর কোম্পানিগুলো বিভিন্ন দেশ থেকে ২ হাজার ৪৬৫ কোটি ২১ লাখ (২৪.৬৫ বিলিয়ন) মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি করেছে। এই আমদানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ বেশি। ইইউতে বাংলাদেশ দ্বিতীয় শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। চীন সবার শীর্ষে। তৃতীয় তুরস্ক।

জানুয়ারি-মার্চ সময়ে চীন ইউরোপের বাজারে ৬৬৭ কোটি ২২ লাখ (৬.৬৭ বিলিয়ন) ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ বেশি। ২০২৪ সালের এই তিন মাসে চীনের রপ্তানির অঙ্ক ছিল ৫ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার। তবে এই বাজারে তুরস্কের রপ্তানি কমেছে; ৪ দশমিক ১৪ শতাংশ নেতিবাচক (ঋণাত্মক বা নেগেটিভ) প্রবৃদ্ধি হয়েছে। জানুয়ারি-মার্চ সময়ে তুরস্ক ইউরোপে ২৩৬ কোটি ৯৬ লাখ (২.৩৭ বিলিয়ন) ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। ২০২৪ সালের এই তিন মাসে রপ্তানির অঙ্ক ছিল ২ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার।

ইউরোপে পোশাক রপ্তানিতে চতুর্থ স্থানে রয়েছে ভারত। জানুয়ারি-মার্চ সময়ে ভারত ইউরোপের বাজারে ১৪৪ কোটি ৪২ লাখ (১.৪৪ বিলিয়ন) ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৪ শতাংশ। কম্বোডিয়ার প্রবৃদ্ধি হয়েছে সবচেয়ে বেশি ৩৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এই তিন মাসে দেশটি ইউরোপে ১১৬ কোটি ৩৬ লাখ (১.১৬ বিলিয়ন) ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে তাদের রপ্তানির অঙ্ক ছিল ৮৭ কোটি ১৯ লাখ ডলার। অন্য দেশগুলোর মধ্যে জানুয়ারি-মার্চ সময়ে ভিয়েতনামের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৮ দশমিক শূন্য নয় শতাংশ। রপ্তানি হয়েছে ১১৩ কোটি ৭৫ লাখ (১.১৩ বিলিয়ন) ডলারের পোশাক।

পাকিস্তানের রপ্তানির অঙ্ক ১০৮ কোটি ৪৬ লাখ (১.০৮ বিলিয়ন) ডলার; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ। এছাড়া জানুয়ারি-মার্চ সময়ে ইউরোপের বাজারে শ্রীলঙ্কার রপ্তানি বেড়েছে ১৩ দশমিক ৩১ শতাংশ। ইন্দোনেশিয়ার ৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং মরক্কোর প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ১৮ শতাংশ।

২০২৪ সালে ইউরোপের কোম্পানিগুলো বিভিন্ন দেশ থেকে ৯২ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি করেছিল, যা ছিল ২০২৩ সালের চেয়ে ১ দশমিক ৫৩ শতাংশ বেশি। গত বছর চীন ইউরোপের বাজারে ২৬ দশমিক শূন্য সাত বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছিল যা ছিল আগের বছরের চেয়ে ২ দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি। তবে গত বছর এই বাজারে তুরস্কের রপ্তানি বেশ খানিকটা কমেছিল; ৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ। ইন্দোনেশিয়ার কমেছিল ৫ দশমিক ৮১ শতাংশ।

ভারতের বেড়েছিল প্রায় ২ শতাংশ। কম্বোডিয়ার বেড়েছিল ২০ দশমিক ৭৩ শতাংশ। অন্য দেশগুলোর মধ্যে ভিয়েতনামের বেড়েছিল ৪ দশমিক ২১ শতাংশ। পাকিস্তানের বেড়েছিল ১২ দশমিক ৪১ শতাংশ। মরক্কোর প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র‌্যাপিড) এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে ইইউর বাজারে বাংলাদেশের ৬৫ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করা সম্ভব। পোশাকের বৈশ্বিক বাজারের গতি-প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে এই পরিসংখ্যান দিয়েছে র‌্যাপিড। বর্তমান অবস্থায়ও ইইউতে বাড়তি ১৮ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানির সুযোগ রয়েছে বলে মনে করে র‌্যাপিড।

ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) যুক্তরাষ্ট্রে ২২২ কোটি ৩৯ লাখ (২.২২ বিলিয়ন) ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৭ শতাংশ বেশি।

back to top