‘ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণসহ আর্থিক নিরীক্ষায় আমাদের স্বাধীনতা ছিল না। বিভিন্ন চাপের মুখে নিরীক্ষকদের হাত-পা বাঁধা ছিল। আর্থিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংক ও আদালতের রায় উপেক্ষা করতে পারিনি।’ ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির কাউন্সিল বা পর্ষদ সদস্য মেহেদি হাসান এ কথা বলেন।
মেহেদি হাসান বলেন, ‘ব্যাংক খাতের কোন ঋণকে খেলাপি ঋণ হিসেবে গণ্য করা হবে, সেই মানদণ্ড নির্ধারণ করে দিত বাংলাদেশ ব্যাংক। সেটি অনুসরণ করে বিগত সময়ে ব্যাংকগুলোর আর্থিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করতে হতো। কারও কারও ব্যক্তিগত ব্যর্থতা আমরা অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদনে তুলে ধরেছি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালার বাইরে গিয়ে আমাদের কিছু করার সুযোগ ছিল না।’
গতকাল বৃহস্পতিবার আইসিএবি মিলনায়তনে ‘জাতীয় স্বার্থে নিরীক্ষা সুরক্ষা: স্থানীয় ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন আইসিএবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শুভাশীষ বসু। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আইসিএবির সাবেক সভাপতি শাহাদাৎ হোসেইন, মোহাম্মদ ফোরকান উদ্দিন ও মো. মনিরুজ্জামান; পর্ষদ সদস্য মোহাম্মদ রোকনুজ্জামান, জেরীন মাহমুদ, সাব্বীর আহমেদ ও কাউন্সিলের সদস্যরা।
সম্প্রতি ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি) এক সংবাদ সম্মেলনে নিরীক্ষা পেশা নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপন করেছে বলে জানান শুভাশীষ বসু। তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর বাজেট ঘোষণার আগে প্রাক্?-বাজেট আলোচনা করি, যেখানে সাধারণ মানুষের চাহিদার ভিত্তিতে প্রস্তাবনা রাজস্ব বোর্ডে জমা দিই। অন্যান্য মন্ত্রণালয়েও আমরা অর্থনীতি বিষয়ে নীতিগত পরামর্শ দিয়ে থাকি। বাজেটে দেশের সাধারণ মানুষের জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনার জন্যই আমাদের প্রচেষ্টা।’
আইসিএবির সভাপতি মারিয়া হাওলাদার লিখিত বক্তব্যে আইসিএমএবির সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত তথ্যের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের জনবলের কোনো ঘাটতি নেই। বর্তমানে ৬১৩ জন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট অনুশীলনরত আছেন, যাদের সহায়তা করছেন আরও ১৪৫ জন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। আইসিএমএবি দাবি করেছে যে দেশে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা তিন লাখ। ২০২৪ সালে নিরীক্ষাকৃত মোট ৫৭ হাজার ৯৯৩টি প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল ভেরিফিকেশন কোড (ডিভিসি) ইস্যু করা হয়। যা আয়কর রিটার্ন জমাদানের সংখ্যার সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাই দেশে নিরীক্ষকের ঘাটতি রয়েছে, আইসিএমএবির এমন বক্তব্য সঠিক নয়।’
মারিয়া হাওলাদার আরও বলেন, ‘দেশ থেকে ১৭ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার পাচারের ঘটনায় নিরীক্ষকেরা সহায়তা করেছেন বলে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, তা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও ভিত্তিহীন। মানি লন্ডারিং, খেলাপি ঋণ, শেয়ারবাজারের সংকট ও বিদেশি বিনিয়োগ হ্রাসের মতো বিষয়েও আর্থিক নিরীক্ষকদের জড়িয়ে আইসিএমএবির বক্তব্য আমাদের পেশাকে হেয় করার অপচেষ্টা।’
এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইসিএবির নির্বাচিত পর্ষদ সদস্য সাব্বীর আহমেদ বলেন, ‘কস্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টদের আর্থিক নিরীক্ষার অধিকার না থাকার বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবেই স্বীকৃত। চাইলে তাঁরা চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হতে পারেন। আইসিএলে সে সুযোগও দেয়। কিন্তু বিভ্রান্তি ছড়িয়ে এই পেশাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা অনুচিত।’
আইসিএমএবির সংবাদ সম্মেলনের সমালোচনা করে সাব্বীর আহমেদ আরও বলেন, ‘ভুল করলে আমরা নিজেরাও শাস্তি দিই। সদস্যদের বহিষ্কার করার তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করি। কিন্তু ঢালাওভাবে টাকা পাচারের মতো গুরুতর ইস্যুতে নিরীক্ষকদের দায় দেওয়া উচিত নয়। এই পেশা নিয়ে গঠনমূলক সমালোচনা হোক, তবে বিভ্রান্তি ছড়ানো দুঃখজনক।’
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপস্থিত অন্য চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টরা বলেন, ‘অনেক সময় ব্যাংকের চাপে নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বাস্তব তথ্য তুলে ধরা যায় না।
আমাদের কারও ঘাড়ে একাধিক মাথা নেই যে ঝুঁকি নিয়ে সব সত্য প্রকাশ করব। এ বিষয়ে আমরা অপপ্রচার নয়, গঠনমূলক সমালোচনা চাই।’
শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫
‘ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণসহ আর্থিক নিরীক্ষায় আমাদের স্বাধীনতা ছিল না। বিভিন্ন চাপের মুখে নিরীক্ষকদের হাত-পা বাঁধা ছিল। আর্থিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংক ও আদালতের রায় উপেক্ষা করতে পারিনি।’ ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির কাউন্সিল বা পর্ষদ সদস্য মেহেদি হাসান এ কথা বলেন।
মেহেদি হাসান বলেন, ‘ব্যাংক খাতের কোন ঋণকে খেলাপি ঋণ হিসেবে গণ্য করা হবে, সেই মানদণ্ড নির্ধারণ করে দিত বাংলাদেশ ব্যাংক। সেটি অনুসরণ করে বিগত সময়ে ব্যাংকগুলোর আর্থিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করতে হতো। কারও কারও ব্যক্তিগত ব্যর্থতা আমরা অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদনে তুলে ধরেছি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালার বাইরে গিয়ে আমাদের কিছু করার সুযোগ ছিল না।’
গতকাল বৃহস্পতিবার আইসিএবি মিলনায়তনে ‘জাতীয় স্বার্থে নিরীক্ষা সুরক্ষা: স্থানীয় ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন আইসিএবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শুভাশীষ বসু। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আইসিএবির সাবেক সভাপতি শাহাদাৎ হোসেইন, মোহাম্মদ ফোরকান উদ্দিন ও মো. মনিরুজ্জামান; পর্ষদ সদস্য মোহাম্মদ রোকনুজ্জামান, জেরীন মাহমুদ, সাব্বীর আহমেদ ও কাউন্সিলের সদস্যরা।
সম্প্রতি ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি) এক সংবাদ সম্মেলনে নিরীক্ষা পেশা নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপন করেছে বলে জানান শুভাশীষ বসু। তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর বাজেট ঘোষণার আগে প্রাক্?-বাজেট আলোচনা করি, যেখানে সাধারণ মানুষের চাহিদার ভিত্তিতে প্রস্তাবনা রাজস্ব বোর্ডে জমা দিই। অন্যান্য মন্ত্রণালয়েও আমরা অর্থনীতি বিষয়ে নীতিগত পরামর্শ দিয়ে থাকি। বাজেটে দেশের সাধারণ মানুষের জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনার জন্যই আমাদের প্রচেষ্টা।’
আইসিএবির সভাপতি মারিয়া হাওলাদার লিখিত বক্তব্যে আইসিএমএবির সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত তথ্যের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের জনবলের কোনো ঘাটতি নেই। বর্তমানে ৬১৩ জন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট অনুশীলনরত আছেন, যাদের সহায়তা করছেন আরও ১৪৫ জন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। আইসিএমএবি দাবি করেছে যে দেশে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা তিন লাখ। ২০২৪ সালে নিরীক্ষাকৃত মোট ৫৭ হাজার ৯৯৩টি প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল ভেরিফিকেশন কোড (ডিভিসি) ইস্যু করা হয়। যা আয়কর রিটার্ন জমাদানের সংখ্যার সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাই দেশে নিরীক্ষকের ঘাটতি রয়েছে, আইসিএমএবির এমন বক্তব্য সঠিক নয়।’
মারিয়া হাওলাদার আরও বলেন, ‘দেশ থেকে ১৭ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার পাচারের ঘটনায় নিরীক্ষকেরা সহায়তা করেছেন বলে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, তা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও ভিত্তিহীন। মানি লন্ডারিং, খেলাপি ঋণ, শেয়ারবাজারের সংকট ও বিদেশি বিনিয়োগ হ্রাসের মতো বিষয়েও আর্থিক নিরীক্ষকদের জড়িয়ে আইসিএমএবির বক্তব্য আমাদের পেশাকে হেয় করার অপচেষ্টা।’
এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইসিএবির নির্বাচিত পর্ষদ সদস্য সাব্বীর আহমেদ বলেন, ‘কস্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টদের আর্থিক নিরীক্ষার অধিকার না থাকার বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবেই স্বীকৃত। চাইলে তাঁরা চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হতে পারেন। আইসিএলে সে সুযোগও দেয়। কিন্তু বিভ্রান্তি ছড়িয়ে এই পেশাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা অনুচিত।’
আইসিএমএবির সংবাদ সম্মেলনের সমালোচনা করে সাব্বীর আহমেদ আরও বলেন, ‘ভুল করলে আমরা নিজেরাও শাস্তি দিই। সদস্যদের বহিষ্কার করার তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করি। কিন্তু ঢালাওভাবে টাকা পাচারের মতো গুরুতর ইস্যুতে নিরীক্ষকদের দায় দেওয়া উচিত নয়। এই পেশা নিয়ে গঠনমূলক সমালোচনা হোক, তবে বিভ্রান্তি ছড়ানো দুঃখজনক।’
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপস্থিত অন্য চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টরা বলেন, ‘অনেক সময় ব্যাংকের চাপে নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বাস্তব তথ্য তুলে ধরা যায় না।
আমাদের কারও ঘাড়ে একাধিক মাথা নেই যে ঝুঁকি নিয়ে সব সত্য প্রকাশ করব। এ বিষয়ে আমরা অপপ্রচার নয়, গঠনমূলক সমালোচনা চাই।’