আর মাত্র আট দিন পরেই শেষ হবে ২০২৪-২৫ অর্থ বছর। এই আর্থিক বছরে রাজস্ব আদায়ে বিশাল ঘাটতির মুখে পড়তে যাচ্ছে সরকারের প্রধান রাজস্ব আদায়কারী সংস্থাটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) গত মার্চ মাসে বলেছিল, চলতি অর্থ বছরে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়ে ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকবে।
৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া অর্থ বছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৪৬০ কোটি ৪৫ লাখ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ৩ লাখ ২৭ হাজার ৭৮২ কোটি ২৬ লাখ টাকা। সে হিসাবে এই ১১ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬৬ হাজার ৬৭৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা কম আদায় হয়েছে।
বিদায়ী অর্থ বছরের জন্য বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার যে বাজেট দিয়েছিল তাতে এনবিআরের মাধ্যমে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। গত আগস্টে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর জানুয়ারিতে অর্থ মন্ত্রণালয় সেই লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা কমিয়ে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা করে।
সেই হিসাবে, এবার সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে অর্থ বছরের শেষ মাস জুনে রাজস্ব আদায় করতে হবে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা। প্রতিদিন গড়ে আদায় করতে হবে ৪ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) গত মার্চ মাসে বলেছিল, চলতি অর্থ বছরে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়ে ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকবে। এখন সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান বলছেন, ‘এই ঘাটতি আরও বেশি হবে। টানা ১২ দিন এনবিআর কর্মকর্তাদের আন্দোলনে প্রভাব রাজস্ব আদায়ে পড়েছে। এছাড়া আর্থিক বছরের শুরু থেকেই দেশজুড়ে অস্থিরতা, সংঘাতময় পরিস্থিতি ও আইন শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতিতে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতার প্রভাবও পড়েছে রাজস্ব আদায়ে।’ সব মিলিয়ে এবার ঘাটতি কোথায় গিয়ে ঠেকবে— সেটাই বড় উদ্বেগের বিষয় বলে মনে করছেন তৌফিকুল ইসলাম।
অর্থ বছরের মাঝপথে এসে বিভিন্ন পণ্য ও সেবায় বাড়তি শুল্ক-কর চাপিয়ে দিলেও তাতে রাজস্ব আদায়ে খুব একাটা সুফল মেলেনি। বৃহস্পতিবার এনবিআরের সম্মেলন কক্ষে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের মে মাস পর্যন্ত কাস্টমস ও ভ্যাট অনুবিভাগের রাজস্ব আহরণের অগ্রগতি পর্যালোচনা সভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান।
সভার পর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এনবিআর জানায়, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের মে মাস পর্যন্ত রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৪৬০ কোটি ৪৫ লাখ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ৩ লাখ ২৭ হাজার ৭৮২ কোটি ২৬ লাখ টাকা। রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে ৮৩ দশমিক ১০ শতাংশ। আহরণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ শতাংশ।
এর আগে রবিবার আয়কর অনুবিভাগের রাজস্ব আহরণ অগ্রগতি পর্যালোচনা সভা হয়। সেখানে এনবিআর কর্মকর্তাদের চলমান আন্দোলনের একটি দাবি অনুযায়ী চেয়ারম্যানকে সংস্থাটির কার্যালয়ে ‘অবাঞ্ছিত’ ও সকল কাজে তাকে ‘অসহযোগিতা’ করার পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী অনেক কর্মকর্তারা ভার্চুয়ালি বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন।
পরে কর্মকর্তাদের উপস্থিতি বাড়াতে বৈঠকে ‘ডনাল্ড ট্রাম্প’, ‘ইলন মাস্ক’ নামে অনেকে যুক্ত হোন। ‘মায়ের দোয়া স্যানিটারি’, ‘তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতি’ নামেও যুক্ত হতে দেখা যায়। সংখ্যা বাড়াতে ‘বট’ অ্যাকাউন্ট যুক্ত করা হয়েছে বলেও কিছু সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে।
সে পরিপ্রেক্ষিতে কাস্টমস ও ভ্যাট অনুবিভাগের এ বৈঠকে কর্মকর্তাদের ভার্চুয়ালি যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে অডিওর সঙ্গে ভিডিও চালু রাখার নির্দেশনা ছিল। এছাড়া এবার সভা শেষে প্রথমবারের মত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে বৈঠকের তথ্য তুলে ধরা হল।
বৈঠকের উপস্থিতি নিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কাস্টমস ও ভ্যাট অনুবিভাগের সদস্যরা, ঢাকায় পদস্থ কমিশনার ও মহাপরিচালক, প্রথম ও দ্বিতীয় সচিব (কাস্টমস ও ভ্যাট অনুবিভাগ) অংশগ্রহণ করেন। আর ঢাকার বাইরে পদস্থ সহকারী কমিশনার থেকে কমিশনার ও মহাপরিচালক পর্যন্ত কর্মকর্তারা অনলাইনে যুক্ত হন।
প্রত্যক্ষ করে জোর দিতে গিয়ে নানা সুবিধা প্রত্যাহার করে নেয় বিগত সরকার। অন্তর্বর্তী সরকারও সে পথেই হাঁটছে। তবে তার ছাপ মেলেনি এ খাতের রাজস্ব আদায়ে। আয়কর ও ভ্রমণ করের রাজস্ব পর্যালোচনায় দেখা যায়, ১১ মাসে লক্ষ্যের চেয়ে পিছিয়ে আছে ৩৭ দশমিক ২৭ শতাংশ। জুলাই-মে সময়ে ১ লাখ ৭১ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ১ লাখ ৭ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা।
ঘাটতির বিচারে এর পরেই রয়েছে ভ্যাট আদায়। অর্থ বছরের মাঝপথে শতাধিক পণ্য ও সেবায় ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েও এ খাতে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ। অর্থ বছরের প্রথম ১১ মাসে ১ লাখ ৭১ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকার লক্ষ্যের বিপরীতে আদায় হয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার ৩৭১ কোটি ২৩ লাখ টাকা। আমদানি ও রপ্তানি খাতে ১ লাখ ২০ হাজার ৫১০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যের বিপরীতে আদায় হয়েছে ৯২ হাজার ৮৩৪ কোটি ৩ লাখ টাকা। সে হিসাবে ঘাটতি ২২ দশমিক ৯৭ শতাংশ।
চলতি অর্থ বছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। পরে রাজস্ব আদায়ের নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি থেকে বের হতে না পেরে মাঝপথে সংশোধিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয় ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে বিদায়ী অর্থ বছরের জুলাই-মে সময়ে গত অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ বাড়লেও বড় অঙ্কের ঘাটতি নিয়েই অর্থ বছর শেষ হচ্ছে। গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয় ৩ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা; ঘাটতি ছিল প্রায় ৪৯ হাজার কোটি টাকা।
এনবিআর বিলুপ্ত করে দুটি আলাদা বিভাগ প্রতিষ্ঠার অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে গত মে মাসে টানা ১২ দিন সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে রাজস্ব আদায়ে। এমনিতেই রাজনৈতিক অস্থিরতায় চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের শুরু থেকেই সরকারের রাজস্ব আদায়ে ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে জুলাই মাসের প্রায় পুরোটা সময় দেশজুড়ে সহিংসতা, মৃত্যু, ইন্টারনেট বন্ধ, কারফিউ, মামলা, গ্রেপ্তারসহ অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করে। গণঅভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পরও দেশে সংঘাতময় পরিস্থিতি দেখা যায়।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের ১০ মাস হতে চললেও দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যেই অর্থ বছরের শেষ দিকে এসে এনবিআরের কর্মকর্তাদের টানা ১২ দিনের আন্দোলনে সব কিছু বন্ধ থাকায় সরকারের রাজস্ব আদায় মুখ থুবড়ে পড়েছে।
রোববার, ২২ জুন ২০২৫
আর মাত্র আট দিন পরেই শেষ হবে ২০২৪-২৫ অর্থ বছর। এই আর্থিক বছরে রাজস্ব আদায়ে বিশাল ঘাটতির মুখে পড়তে যাচ্ছে সরকারের প্রধান রাজস্ব আদায়কারী সংস্থাটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) গত মার্চ মাসে বলেছিল, চলতি অর্থ বছরে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়ে ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকবে।
৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া অর্থ বছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৪৬০ কোটি ৪৫ লাখ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ৩ লাখ ২৭ হাজার ৭৮২ কোটি ২৬ লাখ টাকা। সে হিসাবে এই ১১ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬৬ হাজার ৬৭৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা কম আদায় হয়েছে।
বিদায়ী অর্থ বছরের জন্য বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার যে বাজেট দিয়েছিল তাতে এনবিআরের মাধ্যমে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। গত আগস্টে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর জানুয়ারিতে অর্থ মন্ত্রণালয় সেই লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা কমিয়ে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা করে।
সেই হিসাবে, এবার সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে অর্থ বছরের শেষ মাস জুনে রাজস্ব আদায় করতে হবে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা। প্রতিদিন গড়ে আদায় করতে হবে ৪ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) গত মার্চ মাসে বলেছিল, চলতি অর্থ বছরে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়ে ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকবে। এখন সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান বলছেন, ‘এই ঘাটতি আরও বেশি হবে। টানা ১২ দিন এনবিআর কর্মকর্তাদের আন্দোলনে প্রভাব রাজস্ব আদায়ে পড়েছে। এছাড়া আর্থিক বছরের শুরু থেকেই দেশজুড়ে অস্থিরতা, সংঘাতময় পরিস্থিতি ও আইন শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতিতে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতার প্রভাবও পড়েছে রাজস্ব আদায়ে।’ সব মিলিয়ে এবার ঘাটতি কোথায় গিয়ে ঠেকবে— সেটাই বড় উদ্বেগের বিষয় বলে মনে করছেন তৌফিকুল ইসলাম।
অর্থ বছরের মাঝপথে এসে বিভিন্ন পণ্য ও সেবায় বাড়তি শুল্ক-কর চাপিয়ে দিলেও তাতে রাজস্ব আদায়ে খুব একাটা সুফল মেলেনি। বৃহস্পতিবার এনবিআরের সম্মেলন কক্ষে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের মে মাস পর্যন্ত কাস্টমস ও ভ্যাট অনুবিভাগের রাজস্ব আহরণের অগ্রগতি পর্যালোচনা সভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান।
সভার পর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এনবিআর জানায়, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের মে মাস পর্যন্ত রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৪৬০ কোটি ৪৫ লাখ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ৩ লাখ ২৭ হাজার ৭৮২ কোটি ২৬ লাখ টাকা। রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে ৮৩ দশমিক ১০ শতাংশ। আহরণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ শতাংশ।
এর আগে রবিবার আয়কর অনুবিভাগের রাজস্ব আহরণ অগ্রগতি পর্যালোচনা সভা হয়। সেখানে এনবিআর কর্মকর্তাদের চলমান আন্দোলনের একটি দাবি অনুযায়ী চেয়ারম্যানকে সংস্থাটির কার্যালয়ে ‘অবাঞ্ছিত’ ও সকল কাজে তাকে ‘অসহযোগিতা’ করার পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী অনেক কর্মকর্তারা ভার্চুয়ালি বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন।
পরে কর্মকর্তাদের উপস্থিতি বাড়াতে বৈঠকে ‘ডনাল্ড ট্রাম্প’, ‘ইলন মাস্ক’ নামে অনেকে যুক্ত হোন। ‘মায়ের দোয়া স্যানিটারি’, ‘তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতি’ নামেও যুক্ত হতে দেখা যায়। সংখ্যা বাড়াতে ‘বট’ অ্যাকাউন্ট যুক্ত করা হয়েছে বলেও কিছু সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে।
সে পরিপ্রেক্ষিতে কাস্টমস ও ভ্যাট অনুবিভাগের এ বৈঠকে কর্মকর্তাদের ভার্চুয়ালি যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে অডিওর সঙ্গে ভিডিও চালু রাখার নির্দেশনা ছিল। এছাড়া এবার সভা শেষে প্রথমবারের মত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে বৈঠকের তথ্য তুলে ধরা হল।
বৈঠকের উপস্থিতি নিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কাস্টমস ও ভ্যাট অনুবিভাগের সদস্যরা, ঢাকায় পদস্থ কমিশনার ও মহাপরিচালক, প্রথম ও দ্বিতীয় সচিব (কাস্টমস ও ভ্যাট অনুবিভাগ) অংশগ্রহণ করেন। আর ঢাকার বাইরে পদস্থ সহকারী কমিশনার থেকে কমিশনার ও মহাপরিচালক পর্যন্ত কর্মকর্তারা অনলাইনে যুক্ত হন।
প্রত্যক্ষ করে জোর দিতে গিয়ে নানা সুবিধা প্রত্যাহার করে নেয় বিগত সরকার। অন্তর্বর্তী সরকারও সে পথেই হাঁটছে। তবে তার ছাপ মেলেনি এ খাতের রাজস্ব আদায়ে। আয়কর ও ভ্রমণ করের রাজস্ব পর্যালোচনায় দেখা যায়, ১১ মাসে লক্ষ্যের চেয়ে পিছিয়ে আছে ৩৭ দশমিক ২৭ শতাংশ। জুলাই-মে সময়ে ১ লাখ ৭১ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ১ লাখ ৭ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা।
ঘাটতির বিচারে এর পরেই রয়েছে ভ্যাট আদায়। অর্থ বছরের মাঝপথে শতাধিক পণ্য ও সেবায় ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েও এ খাতে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ। অর্থ বছরের প্রথম ১১ মাসে ১ লাখ ৭১ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকার লক্ষ্যের বিপরীতে আদায় হয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার ৩৭১ কোটি ২৩ লাখ টাকা। আমদানি ও রপ্তানি খাতে ১ লাখ ২০ হাজার ৫১০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যের বিপরীতে আদায় হয়েছে ৯২ হাজার ৮৩৪ কোটি ৩ লাখ টাকা। সে হিসাবে ঘাটতি ২২ দশমিক ৯৭ শতাংশ।
চলতি অর্থ বছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। পরে রাজস্ব আদায়ের নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি থেকে বের হতে না পেরে মাঝপথে সংশোধিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয় ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে বিদায়ী অর্থ বছরের জুলাই-মে সময়ে গত অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ বাড়লেও বড় অঙ্কের ঘাটতি নিয়েই অর্থ বছর শেষ হচ্ছে। গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয় ৩ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা; ঘাটতি ছিল প্রায় ৪৯ হাজার কোটি টাকা।
এনবিআর বিলুপ্ত করে দুটি আলাদা বিভাগ প্রতিষ্ঠার অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে গত মে মাসে টানা ১২ দিন সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে রাজস্ব আদায়ে। এমনিতেই রাজনৈতিক অস্থিরতায় চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের শুরু থেকেই সরকারের রাজস্ব আদায়ে ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে জুলাই মাসের প্রায় পুরোটা সময় দেশজুড়ে সহিংসতা, মৃত্যু, ইন্টারনেট বন্ধ, কারফিউ, মামলা, গ্রেপ্তারসহ অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করে। গণঅভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পরও দেশে সংঘাতময় পরিস্থিতি দেখা যায়।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের ১০ মাস হতে চললেও দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যেই অর্থ বছরের শেষ দিকে এসে এনবিআরের কর্মকর্তাদের টানা ১২ দিনের আন্দোলনে সব কিছু বন্ধ থাকায় সরকারের রাজস্ব আদায় মুখ থুবড়ে পড়েছে।