কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বাতিল ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট রবিবার(২২-৬-২০২৫) অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। প্রস্তাবিত বাজেটের চেয়ে আরও কিছু পরিবর্তনও এসেছে অনুমোদিত বাজেটে। এর মধ্যে রয়েছে, আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস। রবিবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
এর আগে গত ২ জুন টেলিভিশন ভাষণের মাধ্যমে জাতির সামনে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেন অর্থ উপদেষ্টা। প্রস্তাবিত বাজেটের তিনটি জায়গায় পরিবর্তন করে বাজেট পাস করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
ড. সালেহউদ্দিন বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ রাখা হয় ৮১ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা। সেটি বাড়িয়ে ৯১ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা করে বাজেট পাস করা হয়েছে। এতে এই খাতে বরাদ্দ বেড়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। আমরা জিডিপির প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা মাত্রা ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ ধরেছি। আর মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ।’
এর আগে গত ২ জুন সম্পদের সুষম বণ্টন ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে অর্থ উপদেষ্টা যে বাজেট প্রস্তাব উপস্থান করেন সেখানে অনুদান ছাড়া ঘাটতি ধরা হয় ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। অনুদানসহ সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হয় ২ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা। ৪ হাজার কোটি টাকা অনুদান পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধারা হয়।
এই ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করা হবে ৩৯ হাজার কোটি টাকা। এতে নিট বৈদেশিক ঋণ দাঁড়াবে ৯৬ হাজার কোটি টাকা। আর অভ্যন্তরীণ ঋণ নেয়া হবে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নেয়া হবে ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংকবহির্ভূত ঋণ নেয়া হবে ২১ হাজার কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে ঋণের সুদ পরিশোধের ব্যয় ধরা হয় ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ১ লাখ কোটি টাকা। আর বৈদেশিক ঋণের সুদ ২২ হাজার কোটি টাকা।
আগামী অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরবহির্ভূত কর ধরা হয়েছে ১৯ হাজার কোটি টাকা। আর কর ব্যতীত প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৬ হাজার কোটি টাকা।
বাজেটে পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা। পরিচালন ব্যয়ের মধ্যে আবর্তক ব্যয় ৪ লাখ ৯৮ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা। আর দেশি-বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা। এবার মূলধন ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৬ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকা।
বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬০৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে স্কিমে ব্যয় হবে ৫ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। এডিপিবহির্ভূত বিশেষ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। আর কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি (এডিপিবহির্ভূত) ও স্থানান্তরে ২ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
বাড়তি কর দিয়ে কালো টাকা বৈধ করার যে সুযোগ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে দেয়া হয়েছিল, তা বাতিল করে নতুন অর্থবছরের বাজেটে পাস করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। ফলে কালো টাকা সাদা করার পথ বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান।
রবিবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি। এ সময় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে বাড়তি কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছিল। তবে বিভিন্ন পক্ষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সেই বিধান বাতিল করা হয়েছে। ফলে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ আর থাকছে না।’
এদিকে অর্থ উপদেষ্টা আরও জানিয়েছেন, ‘সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়িয়ে আগামী (২০২৫-২৬) অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট পাস করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ রাখা হয় ৮১ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা। সেটি বাড়িয়ে ৯১ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা করে বাজেট পাস করা হয়েছে। এতে এ খাতে বরাদ্দ বেড়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। আমরা জিডিপির প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা মাত্রা ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ ধরেছি। মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ।’
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, বিশেষ কর প্রদানের মাধ্যমে বিল্ডিং বা অ্যাপার্টমেন্টে বিনিয়োগ প্রদর্শনসংক্রান্ত বিধান বিলোপ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে পাবলিকলি ট্রেডেবল কোম্পানি যাদের পরিশোধিত মূলধনের ন্যূনতম ১০ শতাংশ শেয়ার প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) বা ডাইরেক্ট লিস্টিংয়ের মাধ্যমে হস্তান্তরিত হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে ওই আয়ের ২২.৫ শতাংশ করারোপ করা হয়েছে। তবে বিবেচ্য আয়বর্ষে সব প্রকার আয় ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে সম্পন্ন করলে ওই কর হার ২০ শতাংশ করা হয়েছে।
এছাড়া অন্য সব পাবলিকলি ট্রেডেবল কোম্পানির ক্ষেত্রে ২৭.৫ শতাংশ করারোপ করা হয়েছে। তবে বিবেচ্য আয়বর্ষে সব প্রকার আয় ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে সম্পন্ন করলে ওই কর হার ২৫ শতাংশ করা হয়েছে।
এছাড়া আয়করে আরও যেসব পরিবর্তন আনা হয়েছে সেগুলো হলো, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ, বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বা কেবল তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষাদানে নিয়োজিত বেসরকারি কলেজের কর হার ১৫ শতাংশের স্থলে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। সম্পত্তি হস্তান্তর হতে কর সংগ্রহের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কর কর্তনের হার ৮ শতাংশ, ৬ শতাংশ ও ৪ শতাংশ এর স্থলে যথাক্রমে ৫ শতাংশ, ৩ শতাংশ ও ২ শতাংশ করা হয়েছে।
মূল্য সংযোজন কর’র যেসব পরিবর্তন এসেছে সেগুলো হলো, রিফাইন্ড পেট্রোলিয়াম পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে আগামকর ৭.৫ শতাংশের পরিবর্তে ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। ঝুট হতে রিসাইক্লিং প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত তুলার উৎপাদন পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। নারী উদ্যোক্তা কর্তৃক পরিচালিত বিউটি পার্লারের স্থান ও স্থাপনা ভাড়ার ওপর মূসক অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। বল পয়েন্টের আমদানি পর্যায়ে মূসক অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। হার্টের রিং ও চোখের লেন্স আমদানির ক্ষেত্রে আগাম কর অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।
কাস্টমস শুল্কে যেসব পরিবর্তন এসেছে সেগুলো হলো, সব ধরনের পেট্রোলিয়াম পণ্য আমদানিতে ট্যারিফ মূল্যের পরিবর্তে ইনভয়েস মূল্যের ভিত্তিতে শুল্কায়ন ব্যবস্থা চালুর উদ্দেশ্যে বিগত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ক্রুড পেট্রোলিয়াম পণ্যের ক্ষেত্রে নির্ধারিত ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ককে কমিয়ে ৩ শতাংশ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে নির্ধারিত ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ককে কমিয়ে ৬ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। সৌরশক্তি উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতিকে আরও সহজলভ্য করার উদ্দেশ্যে সোলার ইনভেন্টরের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে জারি করা হাসপাতাল কর্তৃক চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ও উপকরণ রেয়াতি সুবিধায় আমদানিসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে আরও ১০টি আইটেম যুক্ত করা হয়েছে। ফলে জনগণের জন্য চিকিৎসাসেবা আরও সহজলভ্য করা যাবে। দেশে মানসম্পন্ন টায়ার উৎপাদনের জন্য টায়ার তৈরির অন্যতম কাঁচামাল টেকনিক্যালি স্পেসিফাইড ন্যাচারাল রাবারের (টিএসআর) আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
রোববার, ২২ জুন ২০২৫
কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বাতিল ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট রবিবার(২২-৬-২০২৫) অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। প্রস্তাবিত বাজেটের চেয়ে আরও কিছু পরিবর্তনও এসেছে অনুমোদিত বাজেটে। এর মধ্যে রয়েছে, আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস। রবিবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
এর আগে গত ২ জুন টেলিভিশন ভাষণের মাধ্যমে জাতির সামনে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেন অর্থ উপদেষ্টা। প্রস্তাবিত বাজেটের তিনটি জায়গায় পরিবর্তন করে বাজেট পাস করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
ড. সালেহউদ্দিন বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ রাখা হয় ৮১ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা। সেটি বাড়িয়ে ৯১ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা করে বাজেট পাস করা হয়েছে। এতে এই খাতে বরাদ্দ বেড়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। আমরা জিডিপির প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা মাত্রা ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ ধরেছি। আর মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ।’
এর আগে গত ২ জুন সম্পদের সুষম বণ্টন ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে অর্থ উপদেষ্টা যে বাজেট প্রস্তাব উপস্থান করেন সেখানে অনুদান ছাড়া ঘাটতি ধরা হয় ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। অনুদানসহ সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হয় ২ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা। ৪ হাজার কোটি টাকা অনুদান পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধারা হয়।
এই ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করা হবে ৩৯ হাজার কোটি টাকা। এতে নিট বৈদেশিক ঋণ দাঁড়াবে ৯৬ হাজার কোটি টাকা। আর অভ্যন্তরীণ ঋণ নেয়া হবে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নেয়া হবে ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংকবহির্ভূত ঋণ নেয়া হবে ২১ হাজার কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে ঋণের সুদ পরিশোধের ব্যয় ধরা হয় ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ১ লাখ কোটি টাকা। আর বৈদেশিক ঋণের সুদ ২২ হাজার কোটি টাকা।
আগামী অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরবহির্ভূত কর ধরা হয়েছে ১৯ হাজার কোটি টাকা। আর কর ব্যতীত প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৬ হাজার কোটি টাকা।
বাজেটে পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা। পরিচালন ব্যয়ের মধ্যে আবর্তক ব্যয় ৪ লাখ ৯৮ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা। আর দেশি-বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা। এবার মূলধন ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৬ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকা।
বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬০৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে স্কিমে ব্যয় হবে ৫ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। এডিপিবহির্ভূত বিশেষ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। আর কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি (এডিপিবহির্ভূত) ও স্থানান্তরে ২ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
বাড়তি কর দিয়ে কালো টাকা বৈধ করার যে সুযোগ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে দেয়া হয়েছিল, তা বাতিল করে নতুন অর্থবছরের বাজেটে পাস করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। ফলে কালো টাকা সাদা করার পথ বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান।
রবিবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি। এ সময় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে বাড়তি কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছিল। তবে বিভিন্ন পক্ষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সেই বিধান বাতিল করা হয়েছে। ফলে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ আর থাকছে না।’
এদিকে অর্থ উপদেষ্টা আরও জানিয়েছেন, ‘সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়িয়ে আগামী (২০২৫-২৬) অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট পাস করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ রাখা হয় ৮১ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা। সেটি বাড়িয়ে ৯১ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা করে বাজেট পাস করা হয়েছে। এতে এ খাতে বরাদ্দ বেড়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। আমরা জিডিপির প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা মাত্রা ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ ধরেছি। মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ।’
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, বিশেষ কর প্রদানের মাধ্যমে বিল্ডিং বা অ্যাপার্টমেন্টে বিনিয়োগ প্রদর্শনসংক্রান্ত বিধান বিলোপ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে পাবলিকলি ট্রেডেবল কোম্পানি যাদের পরিশোধিত মূলধনের ন্যূনতম ১০ শতাংশ শেয়ার প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) বা ডাইরেক্ট লিস্টিংয়ের মাধ্যমে হস্তান্তরিত হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে ওই আয়ের ২২.৫ শতাংশ করারোপ করা হয়েছে। তবে বিবেচ্য আয়বর্ষে সব প্রকার আয় ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে সম্পন্ন করলে ওই কর হার ২০ শতাংশ করা হয়েছে।
এছাড়া অন্য সব পাবলিকলি ট্রেডেবল কোম্পানির ক্ষেত্রে ২৭.৫ শতাংশ করারোপ করা হয়েছে। তবে বিবেচ্য আয়বর্ষে সব প্রকার আয় ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে সম্পন্ন করলে ওই কর হার ২৫ শতাংশ করা হয়েছে।
এছাড়া আয়করে আরও যেসব পরিবর্তন আনা হয়েছে সেগুলো হলো, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ, বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বা কেবল তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষাদানে নিয়োজিত বেসরকারি কলেজের কর হার ১৫ শতাংশের স্থলে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। সম্পত্তি হস্তান্তর হতে কর সংগ্রহের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কর কর্তনের হার ৮ শতাংশ, ৬ শতাংশ ও ৪ শতাংশ এর স্থলে যথাক্রমে ৫ শতাংশ, ৩ শতাংশ ও ২ শতাংশ করা হয়েছে।
মূল্য সংযোজন কর’র যেসব পরিবর্তন এসেছে সেগুলো হলো, রিফাইন্ড পেট্রোলিয়াম পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে আগামকর ৭.৫ শতাংশের পরিবর্তে ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। ঝুট হতে রিসাইক্লিং প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত তুলার উৎপাদন পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। নারী উদ্যোক্তা কর্তৃক পরিচালিত বিউটি পার্লারের স্থান ও স্থাপনা ভাড়ার ওপর মূসক অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। বল পয়েন্টের আমদানি পর্যায়ে মূসক অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। হার্টের রিং ও চোখের লেন্স আমদানির ক্ষেত্রে আগাম কর অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।
কাস্টমস শুল্কে যেসব পরিবর্তন এসেছে সেগুলো হলো, সব ধরনের পেট্রোলিয়াম পণ্য আমদানিতে ট্যারিফ মূল্যের পরিবর্তে ইনভয়েস মূল্যের ভিত্তিতে শুল্কায়ন ব্যবস্থা চালুর উদ্দেশ্যে বিগত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ক্রুড পেট্রোলিয়াম পণ্যের ক্ষেত্রে নির্ধারিত ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ককে কমিয়ে ৩ শতাংশ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে নির্ধারিত ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ককে কমিয়ে ৬ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। সৌরশক্তি উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতিকে আরও সহজলভ্য করার উদ্দেশ্যে সোলার ইনভেন্টরের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে জারি করা হাসপাতাল কর্তৃক চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ও উপকরণ রেয়াতি সুবিধায় আমদানিসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে আরও ১০টি আইটেম যুক্ত করা হয়েছে। ফলে জনগণের জন্য চিকিৎসাসেবা আরও সহজলভ্য করা যাবে। দেশে মানসম্পন্ন টায়ার উৎপাদনের জন্য টায়ার তৈরির অন্যতম কাঁচামাল টেকনিক্যালি স্পেসিফাইড ন্যাচারাল রাবারের (টিএসআর) আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।