আন্দোলনে থাকা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড–এনবিআরের পাঁচজনসহ ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই বলে দাবি করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
সোমবার সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “প্রথমত আমি দুদক সম্পর্কে কোনো উত্তর দেব না। ওদের আলাদা টার্মস অব কন্ডিশন আছে। ওটা দরকার হলে আপনি তাদের আলাদাভাবে জিজ্ঞাসা করবেন। অবশ্যই সরকার থেকে এখন কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করা হয় না।”
অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, “পক্ষপাতমূলকভাবে কাজ না করলে কারও কোনো সমস্যা হবে না। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সঙ্গে মানুষের সেবা করলে সেখানে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না। দুদক দেখবে, যদি ফ্যাক্ট থাকে।”
তিনি বলেন, “ভাবতে পারেন, এই সময় এটা শুরু করলো কেন? শুধু এনবিআর কেন, আমার কাছে প্রতিদিন দুনিয়ার লোক আসে—আমার ব্যাংক হিসাব বন্ধ হয়ে গেছে কেন।”
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে রোববারের বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে সালেহউদ্দিন বলেন, “আজকেও কয়েকজন ব্যবসায়ী ফোন করে বলেছেন, অনেক লস হয়ে গেছে। এটা কোনো ক্রমেই গ্রহণযোগ্য না। সরকারের সঙ্গে ইস্যু থাকতে পারে। কিন্তু জাতীয় স্বার্থের একটা সার্ভিস বন্ধ করে দেওয়া, এটা কোনো যুক্তিতে গ্রহণযোগ্য না।”
মে মাসে এনবিআরকে দুই ভাগ করে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ও রাজস্ব নীতি নামে দুটি পৃথক বিভাগ করার অধ্যাদেশ জারি হলে তা বাতিলের দাবিতে কলম বিরতি ও বিভিন্ন কর্মসূচি শুরু করেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এরপর আন্দোলনের মধ্যে সরকার পিছু হটে এবং জানায়, অধ্যাদেশ বাস্তবায়নে এনবিআর কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা হবে। তবে আন্দোলনকারীরা এনবিআর চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিতে অনড় থাকেন এবং তাকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করেন।
দাবি আদায়ে শনিবার থেকে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি শুরু করেন এনবিআর কর্মীরা। ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’ ব্যানারে এই আন্দোলনে স্থবির হয়ে পড়ে আমদানি-রপ্তানিসহ এনবিআরের কার্যক্রম।
এই প্রেক্ষাপটে রোববার এনবিআরের সেবাকে ‘অত্যাবশ্যকীয়’ ঘোষণা করে সরকার। এনবিআর কর্মীদের দ্রুত কর্মস্থলে ফিরে আসার এবং ‘জাতীয় স্বার্থবিরোধী’ কর্মসূচি থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানায়। সেই বিবৃতিতে সাড়া না দিলে কঠোর পদক্ষেপের হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়।
এরপরই ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত শুরুর তথ্য সামনে আসে। ‘শুল্ক, ভ্যাট ও কর ফাঁকির সুযোগ করে দেওয়া, নিজে লাভবান হওয়া এবং রাষ্ট্রের ক্ষতি করার মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জনের’ অভিযোগে এই তদন্ত শুরু হয়।
তদন্তাধীন কর্মকর্তারা হলেন— এনবিআরের সদস্য (আয়কর নীতি) এ কে এম বদিউল আলম, অতিরিক্ত কর কমিশনার ও এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মির্জা আশিক রানা, যুগ্ম কর কমিশনার মোহাম্মদ মোরশেদ উদ্দীন খান, সহসভাপতি মোনালিসা শাহরীন সুস্মিতা, অতিরিক্ত কমিশনার ও পরিষদের সভাপতি হাছান তারেক রিকাবদার এবং সদস্য সাধন কুমার কুন্ডু।
এরপর রাতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আন্দোলনের ঘোষণা দেয় ঐক্য পরিষদ।
দিনভর নাটকীয়তার পর আন্দোলন প্রত্যাহার করায় এনবিআর কর্মীদের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “আজকে আমরা একটু খুশি। প্রধান উপদেষ্টাও ছিলেন। এনবিআরের বিষয়টি সমাধান হয়েছে, বন্দর চালু হয়েছে।”
তিনি বলেন, “আমাদের সঙ্গে তাদের মতবিরোধ থাকতে পারে। আমি বহু আগে বলেছি। কিন্তু বন্দর বন্ধ করে দেওয়া—এটা তো ব্যক্তি মালিকানা না। সরকার আপনাদের বেতন দেয়। রাজস্ব বন্ধ করে দেওয়া কি কোনো যুক্তি?”
“যাইহোক, এখন জিনিসটা সমাধান হয়েছে। আমি বলবো, এটার সমাধান কঠিন না। পাঁচজন উপদেষ্টা আছেন, তারা বিষয়টি শুনে সমাধান করবেন।”
রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোর বাজেট রিপোর্টিং, ঋণ ও প্রচ্ছন্ন দায় বিশ্লেষণসহ সার্বিক মূল্যায়নের প্রথম বছরের সমাপ্তি উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে অর্থ মন্ত্রণালয়।
অনুষ্ঠান শেষে সালেহউদ্দিন বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকে আপনি দেখেছেন অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে হস্তক্ষেপ করতে? আমার সময় পারে নাই, কারণ আমি ওখানে ছিলাম। বাংলাদেশ ব্যাংক তো চলতো সরকারের নির্দেশে, আদেশে। যারা গভর্নর ছিলেন, তারা সরকারের এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন। এখন কিন্তু সেটা নেই।”
অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, রাষ্ট্রায়ত্ত ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক ব্যবস্থাপনার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে বাজেট প্রণয়ন, ঋণ ও দায়ের বিশ্লেষণসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ‘সেবার+’ সফটওয়ার ব্যবহার করছে সরকার।
এই সফটওয়ারের মাধ্যমে চলতি বছরে ৭২টি প্রতিষ্ঠানের বাজেট প্রণয়নের কাজ সফলভাবে সমাপ্ত ঘোষণা করেন অর্থ উপদেষ্টা।
সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫
আন্দোলনে থাকা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড–এনবিআরের পাঁচজনসহ ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই বলে দাবি করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
সোমবার সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “প্রথমত আমি দুদক সম্পর্কে কোনো উত্তর দেব না। ওদের আলাদা টার্মস অব কন্ডিশন আছে। ওটা দরকার হলে আপনি তাদের আলাদাভাবে জিজ্ঞাসা করবেন। অবশ্যই সরকার থেকে এখন কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করা হয় না।”
অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, “পক্ষপাতমূলকভাবে কাজ না করলে কারও কোনো সমস্যা হবে না। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সঙ্গে মানুষের সেবা করলে সেখানে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না। দুদক দেখবে, যদি ফ্যাক্ট থাকে।”
তিনি বলেন, “ভাবতে পারেন, এই সময় এটা শুরু করলো কেন? শুধু এনবিআর কেন, আমার কাছে প্রতিদিন দুনিয়ার লোক আসে—আমার ব্যাংক হিসাব বন্ধ হয়ে গেছে কেন।”
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে রোববারের বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে সালেহউদ্দিন বলেন, “আজকেও কয়েকজন ব্যবসায়ী ফোন করে বলেছেন, অনেক লস হয়ে গেছে। এটা কোনো ক্রমেই গ্রহণযোগ্য না। সরকারের সঙ্গে ইস্যু থাকতে পারে। কিন্তু জাতীয় স্বার্থের একটা সার্ভিস বন্ধ করে দেওয়া, এটা কোনো যুক্তিতে গ্রহণযোগ্য না।”
মে মাসে এনবিআরকে দুই ভাগ করে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ও রাজস্ব নীতি নামে দুটি পৃথক বিভাগ করার অধ্যাদেশ জারি হলে তা বাতিলের দাবিতে কলম বিরতি ও বিভিন্ন কর্মসূচি শুরু করেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এরপর আন্দোলনের মধ্যে সরকার পিছু হটে এবং জানায়, অধ্যাদেশ বাস্তবায়নে এনবিআর কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা হবে। তবে আন্দোলনকারীরা এনবিআর চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিতে অনড় থাকেন এবং তাকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করেন।
দাবি আদায়ে শনিবার থেকে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি শুরু করেন এনবিআর কর্মীরা। ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’ ব্যানারে এই আন্দোলনে স্থবির হয়ে পড়ে আমদানি-রপ্তানিসহ এনবিআরের কার্যক্রম।
এই প্রেক্ষাপটে রোববার এনবিআরের সেবাকে ‘অত্যাবশ্যকীয়’ ঘোষণা করে সরকার। এনবিআর কর্মীদের দ্রুত কর্মস্থলে ফিরে আসার এবং ‘জাতীয় স্বার্থবিরোধী’ কর্মসূচি থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানায়। সেই বিবৃতিতে সাড়া না দিলে কঠোর পদক্ষেপের হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়।
এরপরই ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত শুরুর তথ্য সামনে আসে। ‘শুল্ক, ভ্যাট ও কর ফাঁকির সুযোগ করে দেওয়া, নিজে লাভবান হওয়া এবং রাষ্ট্রের ক্ষতি করার মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জনের’ অভিযোগে এই তদন্ত শুরু হয়।
তদন্তাধীন কর্মকর্তারা হলেন— এনবিআরের সদস্য (আয়কর নীতি) এ কে এম বদিউল আলম, অতিরিক্ত কর কমিশনার ও এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মির্জা আশিক রানা, যুগ্ম কর কমিশনার মোহাম্মদ মোরশেদ উদ্দীন খান, সহসভাপতি মোনালিসা শাহরীন সুস্মিতা, অতিরিক্ত কমিশনার ও পরিষদের সভাপতি হাছান তারেক রিকাবদার এবং সদস্য সাধন কুমার কুন্ডু।
এরপর রাতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আন্দোলনের ঘোষণা দেয় ঐক্য পরিষদ।
দিনভর নাটকীয়তার পর আন্দোলন প্রত্যাহার করায় এনবিআর কর্মীদের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “আজকে আমরা একটু খুশি। প্রধান উপদেষ্টাও ছিলেন। এনবিআরের বিষয়টি সমাধান হয়েছে, বন্দর চালু হয়েছে।”
তিনি বলেন, “আমাদের সঙ্গে তাদের মতবিরোধ থাকতে পারে। আমি বহু আগে বলেছি। কিন্তু বন্দর বন্ধ করে দেওয়া—এটা তো ব্যক্তি মালিকানা না। সরকার আপনাদের বেতন দেয়। রাজস্ব বন্ধ করে দেওয়া কি কোনো যুক্তি?”
“যাইহোক, এখন জিনিসটা সমাধান হয়েছে। আমি বলবো, এটার সমাধান কঠিন না। পাঁচজন উপদেষ্টা আছেন, তারা বিষয়টি শুনে সমাধান করবেন।”
রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোর বাজেট রিপোর্টিং, ঋণ ও প্রচ্ছন্ন দায় বিশ্লেষণসহ সার্বিক মূল্যায়নের প্রথম বছরের সমাপ্তি উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে অর্থ মন্ত্রণালয়।
অনুষ্ঠান শেষে সালেহউদ্দিন বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকে আপনি দেখেছেন অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে হস্তক্ষেপ করতে? আমার সময় পারে নাই, কারণ আমি ওখানে ছিলাম। বাংলাদেশ ব্যাংক তো চলতো সরকারের নির্দেশে, আদেশে। যারা গভর্নর ছিলেন, তারা সরকারের এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন। এখন কিন্তু সেটা নেই।”
অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, রাষ্ট্রায়ত্ত ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক ব্যবস্থাপনার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে বাজেট প্রণয়ন, ঋণ ও দায়ের বিশ্লেষণসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ‘সেবার+’ সফটওয়ার ব্যবহার করছে সরকার।
এই সফটওয়ারের মাধ্যমে চলতি বছরে ৭২টি প্রতিষ্ঠানের বাজেট প্রণয়নের কাজ সফলভাবে সমাপ্ত ঘোষণা করেন অর্থ উপদেষ্টা।