সেমিকন্ডাক্টর খাতে বর্তমানে বাংলাদেশের বছরে প্রায় ৬০ লাখ মার্কিন ডলারের (৬ মিলিয়ন) রপ্তানি আয় আসছে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এই রপ্তানি আয় এক বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলারে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। এ জন্য খাতটিতে বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০ বছর কর অব্যাহতি, নির্দিষ্ট যন্ত্রাংশে শুল্কছাড় ও বিশেষ তহবিল সুবিধা দেওয়া প্রয়োজন।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় বাংলাদেশের সেমিকন্ডাক্টরশিল্পের উন্নয়নে গঠিত জাতীয় টাস্কফোর্স কমিটি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সেমিকন্ডাক্টর টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন (আশিক চৌধুরী), বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের অধ্যাপক এ বি এম হারুন-উর-রশিদ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য সৈয়দ মাহফুজুল আজিজ ও সেমিকন্ডাক্টর প্রতিষ্ঠান উল্কাসেমির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ এনায়েতুর রহমান।
বাংলাদেশের সেমিকন্ডাক্টরশিল্পের চ্যালেঞ্জ, সম্ভাবনা ও ভবিষ্যতে করণীয় সম্পর্কে সুপারিশ প্রণয়নের লক্ষ্যে গত ১ জানুয়ারি ১৩ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। ওই সময় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, এক মাসের মধ্যে এই টাস্কফোর্স প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রতিবেদন জমা দেবে।
তবে সেই প্রতিবেদন তৈরি করতে প্রায় ছয় মাস লেগে যায়। চলতি সপ্তাহের শুরুতে প্রধান উপদেষ্টার কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দেয় টাস্কফোর্স। প্রতিবেদনের সুপারিশমালা আজ গণমাধ্যমের সামনে উপস্থাপন করা হয়।
দেশের সেমিকন্ডাক্টর খাতের উন্নয়নে তিনটি বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে একটি পথনকশা দিয়েছে টাস্কফোর্স। এগুলো হলো দক্ষতা উন্নয়ন, ব্যবসার অনুকূল পরিবেশ তৈরি ও নীতিগত সহায়তা এবং বৈশ্বিক সংযোগ। এ জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পথনকশা এবং নীতিগত সহায়তার সুপারিশ করা হয়েছে।
টাস্কফোর্স প্রতিবেদনে বলা হয়, সেমিকন্ডাক্টর খাতে তিনটি ধাপ রয়েছে—চিপ ডিজাইন, উৎপাদন এবং টেস্টিং ও প্যাকেজিং। এর মধ্যে চিপ ডিজাইনে তাৎক্ষণিকভাবে; টেস্টিং ও প্যাকেজিংয়ে স্বল্প ও মধ্য মেয়াদে প্রবেশের সুযোগ রয়েছে। তবে চিপ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বড় বিনিয়োগ ও দক্ষ লোকের দরকার। তাই এটিকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় রাখা যেতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী জানান, সেমিকন্ডাক্টর খাতের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে ২০২৫-২৬ সালের মধ্যেই স্পষ্ট ও লক্ষ্যভিত্তিক কিছু উদ্যোগ নিতে হবে। যেমন চিপ অ্যাসেম্বলিং ও প্যাকেজিং কারখানার জন্য গবেষণাকাজে যুক্ত প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট শর্ত সাপেক্ষে ১০ বছর পর্যন্ত কর অব্যাহতি দেওয়া যেতে পারে।
এ খাতের জন্য বন্ড-সুবিধা এবং শুল্ক ও কাস্টমস প্রক্রিয়া সহজ করতে বলা হয়েছে প্রতিবেদনে। পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ বা বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুকূলে একটি ‘সেমিকন্ডাক্টর তহবিল’ গঠনের প্রস্তাব করেছে টাস্কফোর্স। এ ছাড়া নির্দিষ্ট কিছু আমদানি করা যন্ত্রাংশ, যেমন সার্ভার, নেটওয়ার্ক ডিভাইস, সাইবার নিরাপত্তা সরঞ্জাম প্রভৃতিতে শুল্ক মওকুফের কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।
স্বল্প মেয়াদে অবকাঠামো খাতেও কিছু উদ্যোগ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে টাস্কফোর্স প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, হাইটেক পার্কে সেমিকন্ডাক্টর খাতের জন্য বিশেষ এলাকা বরাদ্দ, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি সরকারি কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানে একটি ‘ক্লিনরুম’ স্থাপন করা যেতে পারে, যেখানে প্রাথমিকভাবে চিপ প্যাকেজিং ও টেস্টিং মেশিন স্থাপন করা যাবে।
২০২৭ থেকে ২০২৯ সালে মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনায় সেমিকন্ডাক্টর খাতে গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য একটি জাতীয় কর্মসূচি প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়েছে টাস্কফোর্স প্রতিবেদনে। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রসহ বৈশ্বিকভাবে স্বীকৃত মডেল অনুসরণ করা যেতে পারে। আর দক্ষতা উন্নয়নের জন্য মধ্য মেয়াদে নির্দিষ্ট কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রশিক্ষণকেন্দ্রে কোর্স চালুর সুপারিশ করা হয়েছে। আর দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০৩০ সালের পর থেকে কিছু নির্বাচিত বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিকন্ডাক্টর বিষয়ে স্নাতকোত্তর, পিএইচডি ও পোস্টগ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা কোর্স চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫
সেমিকন্ডাক্টর খাতে বর্তমানে বাংলাদেশের বছরে প্রায় ৬০ লাখ মার্কিন ডলারের (৬ মিলিয়ন) রপ্তানি আয় আসছে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এই রপ্তানি আয় এক বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলারে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। এ জন্য খাতটিতে বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০ বছর কর অব্যাহতি, নির্দিষ্ট যন্ত্রাংশে শুল্কছাড় ও বিশেষ তহবিল সুবিধা দেওয়া প্রয়োজন।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় বাংলাদেশের সেমিকন্ডাক্টরশিল্পের উন্নয়নে গঠিত জাতীয় টাস্কফোর্স কমিটি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সেমিকন্ডাক্টর টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন (আশিক চৌধুরী), বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের অধ্যাপক এ বি এম হারুন-উর-রশিদ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য সৈয়দ মাহফুজুল আজিজ ও সেমিকন্ডাক্টর প্রতিষ্ঠান উল্কাসেমির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ এনায়েতুর রহমান।
বাংলাদেশের সেমিকন্ডাক্টরশিল্পের চ্যালেঞ্জ, সম্ভাবনা ও ভবিষ্যতে করণীয় সম্পর্কে সুপারিশ প্রণয়নের লক্ষ্যে গত ১ জানুয়ারি ১৩ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। ওই সময় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, এক মাসের মধ্যে এই টাস্কফোর্স প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রতিবেদন জমা দেবে।
তবে সেই প্রতিবেদন তৈরি করতে প্রায় ছয় মাস লেগে যায়। চলতি সপ্তাহের শুরুতে প্রধান উপদেষ্টার কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দেয় টাস্কফোর্স। প্রতিবেদনের সুপারিশমালা আজ গণমাধ্যমের সামনে উপস্থাপন করা হয়।
দেশের সেমিকন্ডাক্টর খাতের উন্নয়নে তিনটি বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে একটি পথনকশা দিয়েছে টাস্কফোর্স। এগুলো হলো দক্ষতা উন্নয়ন, ব্যবসার অনুকূল পরিবেশ তৈরি ও নীতিগত সহায়তা এবং বৈশ্বিক সংযোগ। এ জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পথনকশা এবং নীতিগত সহায়তার সুপারিশ করা হয়েছে।
টাস্কফোর্স প্রতিবেদনে বলা হয়, সেমিকন্ডাক্টর খাতে তিনটি ধাপ রয়েছে—চিপ ডিজাইন, উৎপাদন এবং টেস্টিং ও প্যাকেজিং। এর মধ্যে চিপ ডিজাইনে তাৎক্ষণিকভাবে; টেস্টিং ও প্যাকেজিংয়ে স্বল্প ও মধ্য মেয়াদে প্রবেশের সুযোগ রয়েছে। তবে চিপ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বড় বিনিয়োগ ও দক্ষ লোকের দরকার। তাই এটিকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় রাখা যেতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী জানান, সেমিকন্ডাক্টর খাতের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে ২০২৫-২৬ সালের মধ্যেই স্পষ্ট ও লক্ষ্যভিত্তিক কিছু উদ্যোগ নিতে হবে। যেমন চিপ অ্যাসেম্বলিং ও প্যাকেজিং কারখানার জন্য গবেষণাকাজে যুক্ত প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট শর্ত সাপেক্ষে ১০ বছর পর্যন্ত কর অব্যাহতি দেওয়া যেতে পারে।
এ খাতের জন্য বন্ড-সুবিধা এবং শুল্ক ও কাস্টমস প্রক্রিয়া সহজ করতে বলা হয়েছে প্রতিবেদনে। পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ বা বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুকূলে একটি ‘সেমিকন্ডাক্টর তহবিল’ গঠনের প্রস্তাব করেছে টাস্কফোর্স। এ ছাড়া নির্দিষ্ট কিছু আমদানি করা যন্ত্রাংশ, যেমন সার্ভার, নেটওয়ার্ক ডিভাইস, সাইবার নিরাপত্তা সরঞ্জাম প্রভৃতিতে শুল্ক মওকুফের কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।
স্বল্প মেয়াদে অবকাঠামো খাতেও কিছু উদ্যোগ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে টাস্কফোর্স প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, হাইটেক পার্কে সেমিকন্ডাক্টর খাতের জন্য বিশেষ এলাকা বরাদ্দ, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি সরকারি কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানে একটি ‘ক্লিনরুম’ স্থাপন করা যেতে পারে, যেখানে প্রাথমিকভাবে চিপ প্যাকেজিং ও টেস্টিং মেশিন স্থাপন করা যাবে।
২০২৭ থেকে ২০২৯ সালে মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনায় সেমিকন্ডাক্টর খাতে গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য একটি জাতীয় কর্মসূচি প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়েছে টাস্কফোর্স প্রতিবেদনে। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রসহ বৈশ্বিকভাবে স্বীকৃত মডেল অনুসরণ করা যেতে পারে। আর দক্ষতা উন্নয়নের জন্য মধ্য মেয়াদে নির্দিষ্ট কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রশিক্ষণকেন্দ্রে কোর্স চালুর সুপারিশ করা হয়েছে। আর দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০৩০ সালের পর থেকে কিছু নির্বাচিত বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিকন্ডাক্টর বিষয়ে স্নাতকোত্তর, পিএইচডি ও পোস্টগ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা কোর্স চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে প্রতিবেদনে।