করোনাভাইরাসের প্রথম ঢেউয়ের ধাক্কায় কাজ হারানোর পর আবার যোগদান করা শ্রমিকদের মধ্যে ৯ শতাংশের বেতন কমেছে। ৩০ শতাংশ শ্রমিক জানিয়েছেন, নতুন করে কাজে যোগ দিয়ে কাজের পরিধি বেড়েছে। ২২ শতাংশ শ্রমিক জানিয়েছেন, তারা কারখানায় হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ৭৭ দশমিক ৭ শতাংশ শ্রমিক আগের বেতনেই যোগদান করেছেন। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল সিপিডি ও সজাগ কোয়ালিশন আয়োজিত ‘পোশাক খাতে করপোরেট জবাবদিহিতা- পরিপ্রেক্ষিত কোভিড-১৯ মহামারী’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনায় মূল প্রবন্ধে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম জরিপের এ তথ্য তুলে ধরেন।
গোলাম মোয়াজ্জেম জানান, মহামারীকালে বন্ধ হয়ে যাওয়া ১২০টি কারখানা ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান, কোভিড-১৯ এর কারণে ছাঁটাইয়ের পর আবার কাজে যোগ দেয়া ৩০০ জন শ্রমিক, এখনও বেকার ১০০ জনসহ মোট ৪০০ শ্রমিকের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে এই জরিপ করা হয়েছে। মার্চ মাসে এই জরিপ পরিচালনা করা হয় এবং এতে গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারির তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে। জরিপে ৩০ শতাংশ শ্রমিক বলেছেন- নতুন করে কাজে যোগ দিয়ে কাজের পরিধি বেড়েছে। ২২ শতাংশ শ্রমিক জানিয়েছেন তারা কারখানায় হয়রানির শিকার হচ্ছেন। কারখানা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগা শ্রমিকের সংখ্যা ৬ শতাংশে নেমে এসেছে। এই সংখ্যা গত জুলাইয়ের জরিপে অনেক বেশি ছিল।
সিপিডি ও সজাগ কোয়ালিশন আয়োজিত এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেছেন, ‘কোভিড-১৯ এর কারণে গত এক বছরে পোশাক খাতের শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা কমেছে। এটাকে বাড়িয়ে আগের অবস্থায় নিয়ে আসতে হলে মালিক, শ্রমিক, ক্রেতা ও সরকার সব পক্ষকেই দায়িত্ব নিতে হবে। এই খাতের শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর জন্য আন্তর্জাতিক ভ্যালু চেইনের উন্নতিও করতে হবে।’
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিজিএমইএ এর নবনির্বাচিত সভাপতি মো. ফারুক হাসান বলেন, ‘কোভিড-১৯ কেন্দ্র করে সুতাসহ অনেক পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে, সার্বিকভাবে উৎপাদন কমে গেছে।’ এই পরিস্থিতিতেও বিজিএমইএ এই খাতের শ্রমিকদের করপোরেট দায়বদ্ধতা পূরণ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এর বাইরেও আরও বৃহত্তর পরিসরে শ্রমিক সমাজের কল্যাণ কীভাবে করা যায় তা নিয়েও কাজ করা হচ্ছে। এরইমধ্যে আমরা কিছু লক্ষণ দেখছি। আগামী বছর এই খাত ভালোমতো ঘুরে দাঁড়াতে পারে।’
আলোচনা সভায় শ্রমিক নেতাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠনের এই নেতা বলেন, ‘পোশাক খাতে কর্মীর তালিকা প্রায় ৪৭ থেকে ৫৭ লাখ লোকের। এত দীর্ঘ তালিকা থেকে কাউকে কালো তালিকাভুক্ত করা অসম্ভব। তাই কোন শ্রমিককে কালো তালিকাভুক্ত করার অভিযোগ ঠিক নয়।’ বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিকেএমইএ সহ-সভাপতি মো. হাতেম বলেন, ‘মুনাফার অর্থ নিয়ে কারখানার সম্প্রসারণ করে থাকি বরং যা মুনাফা করি তার চেয়েও বেশি পুনঃবিনিয়োগ করি। তাই আমাদের হাতে ৪-৫ মাস বেতন দেয়ার মতো অর্থ থাকে না।’ কর্মীদের বেতন কমানোর অভিযোগের প্রেক্ষিতে তার দাবি কোথাও বেতন কমানো হয়নি।
আলোচনা সভায় শ্রমিক নেতা মন্টু চন্দ্র ঘোষ, নমিতা নাথ, আহসান হাবিব বুলবুল, বাবুল আক্তারসহ অনেক শ্রমিক প্রতিনিধি বক্তব্য দেন। তারা এই খাতের শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে করপোরেট জবাবদিহিতা মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন। শ্রমিকদের বেতন কমিয়ে দেয়া, শ্রম ঘণ্টা বাড়ানো এবং আন্দোলনে জড়িত শ্রমিকদের চিহ্নিত করে কালো তালিকাভুক্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে তারা দাবি করেন।
রোববার, ০৯ মে ২০২১
করোনাভাইরাসের প্রথম ঢেউয়ের ধাক্কায় কাজ হারানোর পর আবার যোগদান করা শ্রমিকদের মধ্যে ৯ শতাংশের বেতন কমেছে। ৩০ শতাংশ শ্রমিক জানিয়েছেন, নতুন করে কাজে যোগ দিয়ে কাজের পরিধি বেড়েছে। ২২ শতাংশ শ্রমিক জানিয়েছেন, তারা কারখানায় হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ৭৭ দশমিক ৭ শতাংশ শ্রমিক আগের বেতনেই যোগদান করেছেন। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল সিপিডি ও সজাগ কোয়ালিশন আয়োজিত ‘পোশাক খাতে করপোরেট জবাবদিহিতা- পরিপ্রেক্ষিত কোভিড-১৯ মহামারী’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনায় মূল প্রবন্ধে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম জরিপের এ তথ্য তুলে ধরেন।
গোলাম মোয়াজ্জেম জানান, মহামারীকালে বন্ধ হয়ে যাওয়া ১২০টি কারখানা ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান, কোভিড-১৯ এর কারণে ছাঁটাইয়ের পর আবার কাজে যোগ দেয়া ৩০০ জন শ্রমিক, এখনও বেকার ১০০ জনসহ মোট ৪০০ শ্রমিকের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে এই জরিপ করা হয়েছে। মার্চ মাসে এই জরিপ পরিচালনা করা হয় এবং এতে গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারির তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে। জরিপে ৩০ শতাংশ শ্রমিক বলেছেন- নতুন করে কাজে যোগ দিয়ে কাজের পরিধি বেড়েছে। ২২ শতাংশ শ্রমিক জানিয়েছেন তারা কারখানায় হয়রানির শিকার হচ্ছেন। কারখানা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগা শ্রমিকের সংখ্যা ৬ শতাংশে নেমে এসেছে। এই সংখ্যা গত জুলাইয়ের জরিপে অনেক বেশি ছিল।
সিপিডি ও সজাগ কোয়ালিশন আয়োজিত এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেছেন, ‘কোভিড-১৯ এর কারণে গত এক বছরে পোশাক খাতের শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা কমেছে। এটাকে বাড়িয়ে আগের অবস্থায় নিয়ে আসতে হলে মালিক, শ্রমিক, ক্রেতা ও সরকার সব পক্ষকেই দায়িত্ব নিতে হবে। এই খাতের শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর জন্য আন্তর্জাতিক ভ্যালু চেইনের উন্নতিও করতে হবে।’
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিজিএমইএ এর নবনির্বাচিত সভাপতি মো. ফারুক হাসান বলেন, ‘কোভিড-১৯ কেন্দ্র করে সুতাসহ অনেক পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে, সার্বিকভাবে উৎপাদন কমে গেছে।’ এই পরিস্থিতিতেও বিজিএমইএ এই খাতের শ্রমিকদের করপোরেট দায়বদ্ধতা পূরণ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এর বাইরেও আরও বৃহত্তর পরিসরে শ্রমিক সমাজের কল্যাণ কীভাবে করা যায় তা নিয়েও কাজ করা হচ্ছে। এরইমধ্যে আমরা কিছু লক্ষণ দেখছি। আগামী বছর এই খাত ভালোমতো ঘুরে দাঁড়াতে পারে।’
আলোচনা সভায় শ্রমিক নেতাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠনের এই নেতা বলেন, ‘পোশাক খাতে কর্মীর তালিকা প্রায় ৪৭ থেকে ৫৭ লাখ লোকের। এত দীর্ঘ তালিকা থেকে কাউকে কালো তালিকাভুক্ত করা অসম্ভব। তাই কোন শ্রমিককে কালো তালিকাভুক্ত করার অভিযোগ ঠিক নয়।’ বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিকেএমইএ সহ-সভাপতি মো. হাতেম বলেন, ‘মুনাফার অর্থ নিয়ে কারখানার সম্প্রসারণ করে থাকি বরং যা মুনাফা করি তার চেয়েও বেশি পুনঃবিনিয়োগ করি। তাই আমাদের হাতে ৪-৫ মাস বেতন দেয়ার মতো অর্থ থাকে না।’ কর্মীদের বেতন কমানোর অভিযোগের প্রেক্ষিতে তার দাবি কোথাও বেতন কমানো হয়নি।
আলোচনা সভায় শ্রমিক নেতা মন্টু চন্দ্র ঘোষ, নমিতা নাথ, আহসান হাবিব বুলবুল, বাবুল আক্তারসহ অনেক শ্রমিক প্রতিনিধি বক্তব্য দেন। তারা এই খাতের শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে করপোরেট জবাবদিহিতা মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন। শ্রমিকদের বেতন কমিয়ে দেয়া, শ্রম ঘণ্টা বাড়ানো এবং আন্দোলনে জড়িত শ্রমিকদের চিহ্নিত করে কালো তালিকাভুক্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে তারা দাবি করেন।